হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩২৯৯

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিন তালাকপ্রাপ্তা রমণীর বর্ণনা

৩২৯৯-[৫] আবূ সালামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় সালমান ইবনু সখর, যাকে সালামাহ্ ইবনু সখর আল বায়াযী বলা হতো, তিনি রমাযান মাসে স্বীয় স্ত্রীকে নিজের মায়ের পিঠের মতো বলে ফেললেন, কিন্তু অর্ধেক রমাযানের পর এক রাতে তার সাথে সহবাস করে বসলেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এতদসম্পর্কে বর্ণনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, একটি ক্রীতদাস মুক্ত করে দাও। তিনি বললেন, আমার তো দাস নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে বিরতিহীনভাবে দু’ মাস সওম পালন কর। তিনি বললেন, আমার এমন সামর্থ্য নেই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে ষাটজন মিসকীনকে খাইয়ে দাও। তিনি বললেন, আমার এ ক্ষমতাও নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফার্ওয়াহ্ ইবনু ’আমর -কে বললেন, তাকে ’আরক দান কর যাতে সে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারে।

عَرَقْ (’আরক) হলো (খেজুর পাতার প্রস্তুতকৃত) এক প্রকার ঝুড়ি, যেখানে ১৫ বা ১৬ সা’ পরিমাণ খেজুর ধরে। [উল্লেখ্য যে, এক সা’ = ৩ সের ৯ ছটাক, ১৫ সা’ = ১ মণ ১৩ সের ৭ ছটাক, ১৬ সা’ = ১ মণ ১৭ সের] (তিরমিযী)[1]

وَعَن أبي سلمةَ: أَنَّ سَلْمَانَ بْنَ صَخْرٍ وَيُقَالُ لَهُ: سَلَمَةُ بْنُ صَخْرٍ الْبَيَاضِيُّ جَعَلَ امْرَأَتَهُ عَلَيْهِ كَظَهْرِ أُمِّهِ حَتَّى يَمْضِيَ رَمَضَانُ فَلَمَّا مَضَى نِصْفٌ مِنْ رَمَضَانَ وَقَعَ عَلَيْهَا لَيْلًا فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ لَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْتِقْ رَقَبَةً» قَالَ: لَا أَجِدُهَا قَالَ: «فَصُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ» قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ قَالَ: «أَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا» قَالَ: لَا أَجِدُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِفَرْوَةَ بْنِ عَمْرٍو: «أَعْطِهِ ذَلِكَ الْعَرَقَ» وَهُوَ مِكْتَلٌ يَأْخُذُ خَمْسَةَ عَشَرَ صَاعًا أَوْ سِتَّةَ عَشَرَ صَاعا «ليُطعِمَ سِتِّينَ مِسْكينا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: শারী‘আতের পরিভাষায় যিহার হলোঃ নিজ স্ত্রীকে বা স্ত্রীর এমন কোনো অঙ্গ যা দ্বারা পুরো শরীর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এমন কোনো অঙ্গকে চিরতরে বিবাহ হারাম কোনো মহিলার সাথে সাদৃশ্য উপস্থাপন করা। যেমন মা, বোন ইত্যাদি। ‘আরবরা যিহার করার সময় স্ত্রীকে মায়ের পিঠের সাথে তুলনা করে বলত (انْتِ عَلَيَّ كَظَهْرِ اُمِّيْ) অর্থাৎ তুমি আমার নিকট আমার মায়ের পিঠের মতো। উদ্দেশ্য হলো আমার মায়ের পিঠ যেমন আমার জন্য ব্যবহার করা হারাম ঠিক তুমিও আমার জন্য হারাম। এ থেকেই এভাবে স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম করা যিহার হিসেবে পরিচিত হয়। আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতে কেউ স্ত্রিকে যিহার করলে স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যেত। খাওলা বিনতে সা‘লাবাহ্ নামক মহিলা সাহাবীর সাথে যিহারের ঘটনা ঘটলে কাফ্ফারার বিধান নাযিল হয়। (দেখুন ৫৮ নং সূরা আল মুজাদালাহ্ অবতীর্ণের শানে নুযূল)

(أَعْتِقْ رَقَبَةً) তুমি একজন দাস আযাদ করে দাও। এখান থেকে যিহারের বিধান বর্ণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কেউ যিহার করে আবারো সেই স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক জীবন যাপন করতে হলে তাকে কাফফারা স্বরূপ একটি দাস আযাদ বা মুক্ত করে দিতে হবে। হাদীসের ইবারতের বাহযত থেকে প্রতীয়মান হলো, দাস ঈমানদার বা মুসলিম হওয়া আবশ্যক নয়। যে কোনো একটি দাস বা দাসী স্বাধীন করে দিলেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। ইমাম ‘আত্বা, নাখ‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। অপরদিকে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও অন্যদের নিকট কাফির দাস বা দাসী স্বাধীন করলে কাফফারা আদায় হবে না। কুরআনে হত্যার কাফফারা ঈমানদার দাস বা দাসী দিয়ে আদায় করতে বলা হয়েছে। তাই এখানে ঈমানের শর্ত না থাকলেও অন্য আয়াত দ্বারা এ আয়াতটিও শর্তযুক্ত হয়ে যাবে। এর উত্তর এই দেয়া হয় যে, এক হুকুমকে অন্য আরেকটির হুকুম দিয়ে শর্তযুক্ত করা যায় না। অর্থাৎ কুরআনে হত্যার কাফ্ফারার ক্ষেত্রে ঈমানদার দাসের শর্ত করা হয়েছে। তাই এ হুকুম এই শর্তের সাথে যুক্ত থাকবে। অপরদিকে যিহারের কাফ্ফারায় ঈমানের শর্ত করা হয়নি। তাই যিহারের হুকুম এই শর্তমুক্ত থাকবে। কুরআনের এক হুকুমকে আরেক হুকুমের শর্ত দিয়ে শর্তযুক্ত করলে কুরআনের শর্তমুক্ত বিধানকে শর্তযুক্ত করে দেয়া হবে, যা শুদ্ধ নয়। তবে ইমাম শাফি‘ঈ-এর মত মু‘আবিয়াহ্ থেকে বর্ণিত একটি হাদীস দ্বারা সমর্থিত হয়। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার একটি দাসী আযাদ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যা আদায় করা তার ওপর করণীয় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই দাসীকে প্রশ্ন করেন, «أَيْنَ اللّٰهُ قَالَتْ فِي السَّمَاءِ قَالَ مَنْ أَنَا قَالَتْ أَنْتَ رَسُولُ اللّٰهِ قَالَ أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ» ‘‘আল্লাহ কোথায়? সে বললো, আসমানে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কে? সে বললো, আপনি আল্লাহ তা‘আলার রসূল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আযাদ করে দাও; কেননা সে মু’মিনাহ্।’’ (সহীহ মুসলিম- অধ্যায় : মসজিদ ও সালাতের স্থান, অনুচ্ছেদ : সালাতের মাঝে কথা হারাম... হাঃ ৮৩৬)

(فَصُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ) ধারাবাহিক দুই মাস সওম পালন কর। যিহারের কাফ্ফারার দ্বিতীয় বিধান। অর্থাৎ যে ব্যক্তি দাস আযাদ করতে অপারগ হবে সে দুই মাস ধারাবাহিক সওম পালন করবে। দুই মাস সওম পালনের মাঝে কোনো বিরতি দেয়া যাবে না। একদিন সওম পালন না করলেই আবার তাকে পুনরায় সওম শুরু করে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দুই মাস সওম পালন করতে হবে।

(أَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا) ষাট মিসকীনকে খাবার দাও। যিহারের কাফ্ফারার তৃতীয় বিধান। অর্থাৎ সওম পালনে অপারগ হলে ষাট জন মিসকীনকে এক বেলা খাবার দিবে। প্রশ্নকারী সওম পালনে অপারগতা প্রকাশ করায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই হুকুম দেন। মিসকীনের সংখ্যা ষাট পূর্ণ হতে হবে নাকি এর কম সংখ্যায় ষাটবার খাবার দিলে চলবে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কুরআন বা হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হিসেবে ষাট সংখ্যা পূর্ণ করা জরুরী বলে মনে করেন ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ আরো অনেকে। অপরদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও তার অনুসারীদের মতে একজনকে ষাট দিন খাবার প্রদান করলেও আদায় হয়ে যাবে। এক মিসকীন তার প্রতিদিনের প্রয়োজন হিসেবে পরের দিন নতুন মিসকীন বলে গণ্য হবে।

(أَعْطِه ذٰلِكَ الْعَرَقَ) তাকে ঐ ‘আর্ক্বটি দিয়ে দাও। ‘আরাক বা ‘আর্ক্ব পরিমাপের একটি পাত্র। হাদীসের বর্ণনাকারীর মতে যে পাত্রে ১৫ বা ১৬ সা‘ খেজুর সংকুলান। এর আলোকে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে একজন মিসকীনকে এক মুদ্দ তথা এক সা‘-এর চার ভাগের এক ভাগ খাবার দান করে দিলে চলবে। অপরদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে প্রত্যেক মিসকীনকে একটি ফিতরার পরিমাণ অর্থাৎ খেজুর, ভুট্টা, যব, কিশমিশ হলে এক সা‘ আর গম হলে অর্ধ সা‘ পরিমাণ দিতে হবে। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনা দিয়ে এই মতের পক্ষে দলীল দেয়া হয়। কেননা আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে, (فَأَطْعِمْ وَسْقًا مِنْ تَمْرٍ بَيْنَ سِتِّينَ مِسْكِينًا) অর্থাৎ তুমি এক ওয়াসাক খেজুর ষাটজন মিসকীনকে খাবার প্রদান কর। এক ওয়াসাক সমান ষাট সা‘। অতএব প্রত্যেক মিসকীনকে এক সা‘ করে প্রদান করতে হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২০০; মিরকাতুল মাফাতীহ :৪০৯-১০)