পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)
৩২৩৩-[৫] আবূ ক্বিলাবাহ্ (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেছেনঃ সুন্নাত তরীকাহ্ হলো, কেউ যদি পূর্ব বিবাহিতা স্ত্রী থাকাকালীন কুমারী বিয়ে করে তার নিকট সাতদিন অবস্থান করে, পরে পালা বণ্টন করবে। আর যদি বিধবা (বা তালাকপ্রাপ্তা) বিয়ে করে তার নিকট তিনদিন অবস্থান করে, পরে বণ্টন করবে। আবূ ক্বিলাবাহ্ বলেন, আমি যদি বলতে ইচ্ছা করি তবে তা হলো, হাদীসটি আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقَسْمِ
وَعَنْ أَبِي قِلَابَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا تَزَوَّجَ الرَّجُلُ الْبِكْرَ عَلَى الثَّيِّبِ أَقَامَ عِنْدهَا سبعا وَقسم إِذا تَزَوَّجَ الثَّيِّبَ أَقَامَ عِنْدَهَا ثَلَاثًا ثُمَّ قَسَمَ. قَالَ أَبُو قلَابَة: وَلَو شِئْت لَقلت: إِن أَنَسًا رَفْعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ব্যাখ্যা : কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী থাকতে আরো একাধিক বিয়ে করতে চায় তাহলে সে যদি কুমারী নারীকে বিবাহ করে তাহলে অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের পূর্বেই নববিবাহিতা কুমারী স্ত্রীর নিকট সাত দিন কাটাবে, অতঃপর পালাক্রমের আওতাভুক্ত হবে। আর যদি সায়্যেবাহ বা অকুমারী নারীকে বিয়ে করে তাহলেও অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে পালাবণ্টনের আওতাভুক্ত হওয়ার আগে তার সাথে তিন দিন কাটাবে, এরপর পালার অন্তর্ভুক্ত হবে। কুমারী কিংবা অকুমারীকে বিবাহের পর পরই সাত কিংবা তিনের এই ভেদাভেদ মাত্র, এই দিনে অতিবাহিত হলে কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।
অনেক হানাফী ‘আলিমসহ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) অত্র হাদীসের ভিত্তিতে এই মতের প্রবক্তা; পক্ষান্তরে সামনের মুতালাক বা সাধারণ নির্দেশসূচক দু’টি হাদীসের ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবের আরেক দল ‘আলিম বলেন, কুমারী-অকুমারী বা নতুন-পুরাতনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সূরা আন্ নিসার ৩ নং আয়াত এবং ১২৯ নং আয়াতকেও তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করে থাকে না সেখানে উল্লেখ হয়েছে: ‘‘যদি তোমরা আশংকা কর যে, (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে পারবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ৩)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘‘তোমরা কক্ষনো (স্ত্রীদের মধ্যে) ন্যায় বিচার করতে সক্ষম হবে না।’’ (সূরাহ আন্ নিসা ৪ : ১২৯)
এখানে স্ত্রীদের অধিকার সমানরূপে বলা হয়েছে। এটা কুরআন, যা অকাট্য, আর হাদীস হলো খবরে ওয়াহিদ যা অকাট্য নয়, সুতরাং তা দ্বারা অকাট্য বস্তুকে রহিত করা যাবে না।
এর উত্তরে বলা হয়, কুরআন যেমন অকাট্য হাদীস সহীহ হলে সেটিও অকাট্য, উপরন্তু এখানে হাদীস দ্বারা কুরআনকে রহিত করাও হচ্ছে না, সুতরাং এরূপ দাবী অবান্তর।
এ হাদীসটি আনাস থেকে বর্ণিত, তিনি এটি মারফূ‘ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেননি। বরং তিনি বলেছেন, সুন্নাত হলো যখন কেউ কুমারীকে বিবাহ করবে ...। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয় এটি মারফূ‘ নয়, কিন্তু আনাস -এর শাগরেদ পরবর্তী রাবী আবূ ক্বিলাবাহ্ (রহঃ) বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে বলতে পার এ হাদীসটিকে আনাস মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা কোনো সাহাবী যদি বলেন ‘সুন্নাত হলো’ ... তাহলে এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ছাড়া আর কি বুঝাবে? নিশ্চয় নিজে ইজতিহাদ করে বলেননি, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেই বলেছেন, সুতরাং সেটা মারফূ‘ হাদীসেরই মর্যাদাসম্পন্ন।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ কোনো সাহাবীর মুখে ‘সুন্নাত’ বলা মুহাদ্দিসীন এবং জুমহূর সালাফদের মাযহাব মতে বর্ণনাটি মারফূ‘ হাদীসের মর্যাদা পায়।
কেউ কেউ এটাকে মাওকূফ হাদীসের মর্যাদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের কথার কোনই ভিত্তি নেই।
‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ কোনো সাহাবীর মুখে সুন্নাতের দাবী হাদীসটি মুসনাদ তথা সানাদ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে হিসেবে বিবেচিত হয়, কেননা সাহাবীগণ সুন্নাত দ্বারা সুন্নাত রসূলই উদ্দেশ্য নিতেন। এছাড়াও এ হাদীসটি আনাস থেকে একাধিক ব্যক্তি মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেছেন যেমন দারাকুত্বনী প্রমুখ মুহাদ্দিস আনাস থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, আনাস বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুমারীর জন্য সাতদিন এবং অকুমারীর জন্য তিনদিন...। ইমাম বাযযারও অনুরূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২১৩; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৬১; মিরকাতুল মাফাতীহ)