পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা
২৬৬১-[৩] সালিম (রহঃ) (তাঁর পিতা) ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তিনি [’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] প্রথম জামারায় (নিকটবর্তী জামারায়) সাতটি পাথর মারতেন এবং প্রত্যেক পাথরের মারার সময় ’আল্লা-হু আকবার’ বলতেন। তারপর তিনি কিছু দূর আগে বেড়ে নরম মাটিতে যেতেন এবং সেখানে কিবলার দিকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় হাত তুলে দু’আ করতেন। তারপর জামারায়ে উস্ত্বা’য় (মধ্যম জামারায়) এসে আবার সাতটি পাথর মারতেন। প্রত্যেক (ছোট) পাথর মারার সাথে ’আল্লা-হু আকবার’ বলতেন। তারপর বামদিকে কিছু দূর এগিয়ে নরম মাটিতে পৌঁছে কিবলার দিকে দাঁড়িয়ে দু’আ করতেন। এরপর জামারাতুল ’আক্বাবায় গিয়ে বাত্বনি ওয়াদী (খোলা নিচু জায়গা) হতে সাতটি পাথর মারতেন। প্রত্যেক পাথর মারার সাথে ’আল্লা-হু আকবার’ বলতেন। কিন্তু এখানে দাঁড়াতেন না, বরং (গন্তব্য পথে) চলে যেতেন এবং বলতেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে পাথর (কঙ্কর) মারতে দেখেছি। (বুখারী)[1]
بَابٌ خُطْبَةُ يَوْمِ النَّحْرِ وَرَمْىِ أَيَّامِ التَّشْرِيْقِ وَالتَّوْدِيْعِ
وَعَن سالمٍ عَن ابنِ عمر: أَنَّهُ كَانَ يَرْمِي جَمْرَةَ الدُّنْيَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكبِّرُ على إِثْرَ كُلِّ حَصَاةٍ ثُمَّ يَتَقَدَّمُ حَتَّى يُسْهِلَ فَيَقُومُ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ طَوِيلًا وَيَدْعُو وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ ثُمَّ يَرْمِي الْوُسْطَى بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ كُلَّمَا رَمَى بِحَصَاةٍ ثُمَّ يَأْخُذُ بِذَاتِ الشِّمَالِ فَيُسْهِلُ وَيَقُومُ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ ثُمَّ يَدْعُو وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ وَيَقُومُ طَوِيلًا ثُمَّ يَرْمِي جَمْرَةَ ذَاتِ الْعَقَبَةِ مِنْ بَطْنِ الْوَادِي بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ عِنْدَ كُلِّ حَصَاةٍ وَلَا يَقِفُ عِنْدَهَا ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيَقُولُ: هَكَذَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَله. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (كَانَ يَرْمِىْ جَمْرَةَ الدُّنْيَا) এ রকম বর্ণনাই সবগুলো নুসখা (পান্ডুলিপি)-তে রয়েছে এমনকি মিশকাতুল মাসাবীহ-তেও অর্থাৎ- জামারা শব্দটিকে الدنيا শব্দের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তবে সহীহুল বুখারীতে রয়েছে ভিন্নরূপ সেখানে (الجمرة الدنيا) রয়েছে।
ইমাম তুরবিশতী (রহঃ) বলেন, الجمرة শব্দটি একবচনের শব্দ আর জামারাহ্ মূলত তিনটি তার অন্যতম হলো যাতুল ‘আক্বাবাহ্ যা মক্কা নগরীর নিকটে অবস্থিত। আর কুরবানীর দিন শুধু-ই এ যাতুল ‘আক্বাবাতে কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। আর কুরবানীর পরের দিন তিনটি কংকর নিক্ষেপ করতে হয় এ ক্ষেত্রে নিয়ম তাই যা অত্র হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।
جمرة الدنيا একে جمرة الدنيا নামকরণের কারণ হলো মাসজিদুল খায়ফ-এ যারা সেখানে অবতীর্ণ হন সে অবতীর্ণ হওয়ার স্থানসমূহের নিকটবর্তী স্থানে এটি অবস্থিত আর دنيا শব্দের অর্থই হলো নিকটবর্তী। আর এ স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উট বসাতেন। এ জামারাটিকে ‘‘দুনিয়া’’ শব্দের দিকে ইযাফাতের বিষয়টি اضافة ال صفة إلى الموصوف এর ন্যায়। যেমনঃ মাসজিদ শব্দটিকে الجامع-এর দিকে সম্পৃক্ত করে مسجد الجامع তথা জামি' মাসজিদ নামকরণ করা হয়।
(يُكبِّرُ عَلٰى إِثْرَ كُلِّ حَصَاةٍ) অর্থাৎ- اثر শব্দটি হামযাহতে যের ও ‘‘সা’’-কে সাকিন দিয়ে اثر অথবা হামযা ও ‘‘সা’’ উভয়টিকে যবর দিয়ে اثر-ও পড়া যায়। এর অর্থ হল প্রতিটি কংকর নিক্ষেপ করার পর الله أكبر বলতে হবে। আর হাদীসের বাহ্যিক থেকে বুঝা যায়, কংকর নিক্ষেপ করার পরই الله أكبر বলতে হবে। অপরদিকে ইমাম আহমাদ-এর এক বর্ণনায় (মুসনাদে আহমাদ ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৫২) আছে।
(كبر مع كل حصاة) তথা প্রতি কংকরের সাথে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলার কথা। ঠিক এ রকমই বর্ণিত হয়েছে ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবির (রাঃ)-এর বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনায় এবং ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম কর্তৃক ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনাও ঠিক এ রকম এবং আসছে যে হাদীসটি ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাতে রয়েছে (يكبر عند كل حصاة)-এর কথা। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) যাকে বেশি ‘‘আম্’’ ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক বলেছেন।
অপরদিকে যে হাদীসে مع তথা কংকর নিক্ষেপের সাথে সাথে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলার কথা বর্ণিত হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কংকরটি হাত থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই তাকবীর বলতে হবে এখানে সাথে অর্থ হলো যেহেতু কংকরটি তার নিকট থেকে বের হয়ে শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত তা তার সাথেই রয়েছে। কেউ কেউ اثر كل حصاة এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন এভাবে যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো কংকর নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করার পর।
معية তথা একই সাথে হতে হবে বলে মত দিয়েছেন চার ইমামের অনুসারী তথা ছাত্ররা যেমনঃ এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, ইমাম বাজী, ইবনু কুদামাহ্ ও ইমাম নাবাবী (রহঃ)। ইমাম দাসূকী (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে ‘‘আল মুদাওয়ানাহ্’’ গ্রন্থে যা সন্নিবেশিত হয়েছে তার বাহ্যিক থেকে বুঝা যায় (إن التكبير مع كل حصاة سنة) তথা প্রত্যেক কংকরের সাথে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা সুন্নাহ। অপরদিকে ‘‘আল হিদায়া’’ নামক কিতাবেও (يكبر مع كل حصاة)-এর কথা এসেছে। আর এমন বর্ণনাই এসেছে ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ ও ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায়।
(ثُمَّ يَتَقَدَّمُ) অর্থাৎ- যে স্থানে ছিলেন সেখান থেকে একটু সরে গেলেন। অন্য বর্ণনায় এসছে, (ثم تقدم امامها) তথা একটু সামনে বাড়লেন।
(حَتّٰى يُسْهِلَ) ‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এখানে উদ্দেশ্য হলো সমতল ভূমি যেখানে কোন প্রকার উঁচু নিচু নেই।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, المكان السهل বলতে নরম মাটি যা শক্ত নয় এমন মাটিকে বুঝানো হয়।
(ثُمَّ يَرْمِى الْوُسْطٰى) অন্য বর্ণনায় আছে, ثم يرمى الجمرة الوسطى التى الاولى والأخرى
‘আল্লামা ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেন, জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাটি আবশ্যক না উত্তম- এ ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে তবে আমার নিকট উত্তম, আবশ্যক নয়। (আল্লাহই ভালো জানেন)
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, তারতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই যুক্তিসঙ্গত কারণ তা ইমাম শাফি‘ঈসহ অন্যান্যদের মতে ওয়াজিব এবং الموالاة তথা অবিচ্ছিন্নভাবে কংকর নিক্ষেপ করা سنة। যেমনঃ উযূর ক্ষেত্রে উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ধোয়ার ক্ষেত্রে موالاة করা سنة মালিকী মাযহাব অনুপাতে।
‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, (মুগনী তৃতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ৪৫২)
والترتيب فى هذه الجمرات واجب على ما وقع فى حديث ابن عمر وحديث عائشة عند أبى داودزد....................................
অর্থাৎ- এ জামারাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব যা বুঝা যায় ইমাম আবূ দাঊদ কর্তৃক বর্ণিত ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা। তবে যদি কেউ উল্টিয়ে করতে চায় তাহলে প্রথমে শুরু করবে জামারায়ে ‘আক্বাবাহ্ থেকে, তারপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর প্রথমটি অথবা শুরু করবে দ্বিতীয়টি দ্বারা এবং তিনটি করে কংকর নিক্ষেপ করা যথেষ্ট হবে না যতক্ষণ না প্রথমটিতে মারবে এবং মাঝখানের ও প্রান্তেরটির নিক্ষেপ না করবে- এমনটাই বলেছিলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)। আর যদি শেষ প্রান্তেরটি নিক্ষেপ করে অতঃপর প্রথমটি এবং তারপর মাঝখানেরটি তাহলে প্রান্তেরটি পুনঃরায় করবে- এমনই বলেছেন ইমাম মালিক ও ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)।
হাসান বাসরী ও ‘আত্বা বলেন, তারতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব নয় এবং এটাই ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর কথা। কেননা তার যুক্তি হলো, যদি কেউ উল্টাভাবে কংকর নিক্ষেপ করে তাহলে তার উচিত হলো পুনরায় করা আর যদি পুনরায় না করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
হানাফী বিদ্বানের কেউ কেউ দলীল হিসেবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (من قدم نسكا يدي نسك فلا حرج) অর্থাৎ- একটি ‘ইবাদাত আগে আরেকটি করাতে কোন অসুবিধা নেই। এ হাদীসটিতে ‘ইবাদাত বলতে জামারায় কংকর নিক্ষেপ উদ্দেশ্য। আর যেহেতু এ জামারায় কংকর নিক্ষেপ করার বিষয়টি একই সময় বিভিন্ন স্থানে হয়ে থাকে যার একটির সাথে আরেকটির কোনই সম্পর্ক নেই, তাই এক্ষেত্রে তীর নিক্ষেপ ও কুরবানীর মতো ধারাবাহিকতা রক্ষার শর্ত করা হয়নি। আর আমরা (জমহূর ‘উলামাহগণ) বলি ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং বলেছেন, (خذاء عنى منامككم) অর্থাৎ- তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জের বিধানগুলো আকড়ে ধর। হানাফী বিদ্বানগণ যে হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করেছেন তা সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে যিনি একটি কুরবানীর পর আরেকটি কুরবানী করেন, কুরবানী আগে-পিছে করলে কোন অসুবিধা নেই- এ অর্থে হাদীসটি গ্রহণ করা ঠিক হবে না। পক্ষান্তরে তাওয়াফ ও সা‘ঈ করার ক্ষেত্রে তাদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কারণে তাদের বক্তব্য স্ববিরোধী হয়ে যায় এবং তাদের তথাকথিত অযৌক্তিক ক্বিয়াস বাতিল বলে পরিগণিত হয়।
‘আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) বলেন,
اعلم انه يجب الترتيب فى رمى من الجمار ايام التشريق فيبدأ بالجمرة الاولى التى بلى مسجدا الخيف..................
অর্থাৎ- জেনে রেখ আইয়্যামে তাশরীক্ব যে জামারাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করা হয়, এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক, সুতরাং (হাজী সাহব) প্রথমে (الجمرة الاولى) প্রথম জামারার মাধ্যমে যা মাসজিদুল খায়ফ-এর নিকট অবস্থিত সেখান থেকে শুরু করবেন আর সেখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন প্রত্যেকটির সাথে ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলবেন তারপর সেখান থেকে ফিরে الجمرة الوسطى তথা মধ্যবর্তী জামারার নিকটে আসবেন সেখানেও পূর্বের মতই নিক্ষেপ করবেন। আর শেষে জামারায় ‘আক্বাবাতে এসেও তেমনি নিক্ষেপ করবে। আর এ তারতীব (ধারাবাহিকতা) যা আমরা উল্লেখ করলাম এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজ তিনি এভাবেই করেছেন আর আমাদের এভাবে করতে আদেশ করেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত তার অনুসরণ করা। অতঃপর ‘আল্লামা শানক্বীতী ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে যার ব্যাখ্যা আমরা এখন করছি তা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেন।
অতঃপর বলেন, ইমাম বুখারী (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে পরপর তিনটি করে (অধ্যায়) উল্লেখ করেছেন। যা ধারাবাহিকতা রক্ষার পক্ষে বিশুদ্ধ এবং স্পষ্ট প্রমাণ। অপরদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তার এ রীতি অনুসরণ করতে বলেছেন, তিনি বলেছেন, (خذ عنى مناسككم) তোমরা আমার থেকে এর নিয়ম গ্রহণ কর। সুতরাং কেউ যদি ধারাবাহিকতা রক্ষা না করে আগ-পিছ করে জামারায় কংকর নিক্ষেপ করে থাকে তাহলে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল বলে গণ্য হবে। অন্য এক হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (من عمل عملا ليس عليه امرنا فهو رد)
যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করলো যা আমাদের নির্দেশনার মধ্যে নেই তা পরিত্যাজ্য। আর জামারায় কংকর নিক্ষেপে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনার মধ্যে নেই তাই তাও পরিত্যাজ্য। এটাই ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক ও অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত।
অত্র হাদীসটি থেকে বুঝা যায় প্রত্যেক কংকরের সাথে তাকবীর দেয়া বিধি সুন্নাত। সকল ‘আলিমের ঐকমত্য যদি কেউ তাকবীর না দেয় তাহলে তার কোনই কাফফারাহ দেয়া লাগবে না তবে সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) বলেছেন ভিন্ন কথা, তিনি বলেছেন, সে খাদ্য খাওয়াবে তবে একটি কুরবানী দিয়ে ক্ষতি পূরণ আমার নিকট সর্বোত্তম।
‘উলামাহগণ আরো একমত হয়েছেন যে, কংকর নিক্ষেপের সংখ্যা সাতটি হওয়ার ব্যাপারে এবং কংকর নিক্ষেপের মুহূর্তে কিবলামুখী হওয়া ও প্রথম এবং দ্বিতীয় জামারার নিকটে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ও বিনয়ী হওয়ার ব্যাপারে। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আ করার সময় কংকর নিক্ষেপের স্থান থেকে সরে গিয়ে দু‘আ করতে হবে যাতে করে অন্যের কংকর এসে নিজের শরীরে না লাগে।
এ হাদীস থেকে কংকর নিক্ষেপের সময় দু‘আর ক্ষেত্রে রফ্‘উল ইয়াদায়ন তথা দু’হাত উঁচু করার কথা বুঝা যায়। দু‘আ না করার কথাও বুঝা যায় এবং বুঝা যায় জামারায় ‘আক্বাবাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন,
لا نعلم لما تضمنه حديث ابن عمر هذا مخالفا الا ما روى عن مالك أنه ترك رفع اليدين عند الدعاء بعد رمى الجمار.
অর্থাৎ- আমাদের জানা মতে এ দু‘আর ক্ষেত্রে কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আর সময় দু’হাত উত্তোলন করতে হবে এতে কোন বিরোধ নেই। তবে ইমাম মালিক (রহঃ)-এর বিপরীত অবস্থান গ্রহই করেছেন।
‘আল্লামা ইবনুল মুনযীর (রহঃ) বলেন, (لا أعلم أحدا انكر رفع اليدين فى الدعاء عند الجمرة الا ما حكاه ابن القاسم عن مالك) জামারার নিকটে দু‘আর সময় রফ্‘উল ইয়াদায়ন করতে হবে এতে কারো দ্বিমত নেই তবে ইবনুল কাসিম ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে যে বর্ণনা করেছেন তা ব্যতীত।
‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইবনুল মুনযীর রফ্‘উল ইয়াদায়নের বিষয়টি এভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, যদি তা سنة ثابتة (প্রমাণিত সুন্নাত) হতো তাহলে তা মদীনার ‘আলিমরাই সর্বাগ্রে বর্ণনা করতেন। এ বিষয়ে তারা অমনোযোগী হতেন না। তবে ‘আল্লামা কুসত্বালানী (রহঃ) মালিকী মাহযহাবের ইবনু ফারহুন থেকে হজ্জের জামারায় ‘আক্বাবাতে কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আর ক্ষেত্রে রফ্‘উল ইয়াদায়ন করা বা না করা এ দু’ধরনের কথাই ইমাম মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন।
অত্র হাদীসটিতে কংকর নিক্ষেপ কি হেঁটে চলে করতে হবে না সওয়ারী হয়ে সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। তবে অন্যান্য হাদীসের বিবরণ রয়েছে। যেমনঃ ইবনু আবী শায়বাহ্ সহীহ সনদে বর্ণনা করেন, ان ابن عمر كان عشى الى الجمار مقبلا ومدبرا অর্থাৎ- নিশ্চয়ই ইবনু ‘উমার জামারার দিকে হেঁটে হেঁটে যেতেন এবং জাবির (রাঃ) থেকে আরো একটি বর্ণনা এসেছে, তিনি খুব প্রয়োজন না হলে সওয়ারী হতেন না।
ইমাম তিরমিযী ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন এমনকি ইমাম বায়হাক্বীও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে,
(ان النبى ﷺ كان اذا رمى الجمار مشى اليها ذاهبا وراجعا) অর্থাৎ- নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কংকর নিক্ষেপ করতে ইচ্ছা করতেন তখন জামারায় যাওয়া-আসা করতেন পায়ে হেঁটে।
অন্য শব্দে এসেছে, (كان يرمى الجمرة يوم النحر ركبا وسائر ذلك ماشيا) অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু কুরবানীর দিন সওয়ারী হওয়া ছাড়া বাদ বাকী সব সময় পায়ে হেঁটেই জামারায় কংকর নিক্ষেপ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১১৪, ১৩৭, ১৫৬, ১৫২, বুখারী, আবূ দাঊদ, বায়হাক্বী ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৪৮)