হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
২২১৩

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে

২২১৩-[৩] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে আছি, এমন সময় এক লোক মসজিদে এসে সালাত আদায় করতে শুরু করল। সে এমন পদ্ধতিতে কিরাআত পড়ল যা আমার জানা ছিল না। এরপর আর একজন লোক এলো। সে প্রথম ব্যক্তির কিরাআতের ভিন্ন ধরনে পড়ল। সালাত শেষে আমরা সকলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যক্তি সালাতে এভাবে কিরাআত পড়েছে, যা আমার জানা নেই। আবার দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ওর চেয়ে ভিন্নভাবে কিরাআত পড়ল। এসব কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হুকুম দিলেন, আবার কুরআন পড়তে। তারা আবার পড়ল। পড়া শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উভয়ের পাঠকেই ঠিক বললেন। এ কথা শুনে আমার মনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি এমন এক সন্দেহের জন্ম দিলো যা জাহিলিয়্যাতের সময়েও আমার মধ্যে ছিল না। সন্দেহের ছায়া আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে লক্ষ্য করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সিনার উপর হাত মারলেন। এতে আমি ঘামে ভিজে গেলাম।

আমি এতই ভীত হলাম, যেন আমি আল্লাহকে দেখছি। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, হে উবাই! আমার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছিল এক রীতিতে কুরআন পাঠের। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট আবেদন করলাম। (হে আল্লাহ!) আপনি আমার উম্মাতের জন্য কুরআন পাঠ পদ্ধতি সহজ করে দিন। আল্লাহ দ্বিতীয়বার বললেন, তবে দু’ রীতিতে কুরআন পড়ো। আমি আবার নিবেদন করলাম, (হে আল্লাহ!) আপনি আমার উম্মাতের জন্য কুরআন পাঠ আরো সহজ করে দিন। তিনি তৃতীয়বার আমাকে বলে দিলেন, তাহলে সাত রীতিতে কুরআন পড়ো। কিন্তু তোমার প্রতিটি নিবেদনের পরিবর্তে আমি তোমাকে যা দিয়েছি এর বাইরেও আরো নিবেদন অধিকার তোমার রইল। তুমি তা চাইতে পারো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ক্ষমা করুন। আর তৃতীয় আবেদনটি আমি এমন এক দিনের জন্য পিছিয়ে রাখলাম যেদিন সব সৃষ্টি আমার সুপারিশের দিকে চেয়ে থাকবে। এমনকি ইব্রাহীম (আঃ)-ও। (মুসলিম)[1]

بَابُ اِخْتِلَافِ الْقِرَاءَاتِ وَجَمْعِ الْقُرْاٰنِ

وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: كُنْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَدَخَلَ رَجُلٌ يُصَلِّي فَقَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ ثُمَّ دَخَلَ آخَرُ فَقَرَأَ قِرَاءَةً سِوَى قِرَاءَةِ صَاحِبِهِ فَلَمَّا قَضَيْنَا الصَّلَاةَ دَخَلْنَا جَمِيعًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ إِنَّ هَذَا قَرَأَ قِرَاءَةً أَنْكَرْتُهَا عَلَيْهِ وَدخل آخر فَقَرَأَ سوى قِرَاءَة صَاحبه فَأَمَرَهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَرَآ فَحَسَّنَ شَأْنَهُمَا فَسَقَطَ فِي نَفْسِي مِنَ التَّكْذِيبِ وَلَا إِذْ كُنْتُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا قَدْ غَشِيَنِي ضَرَبَ فِي صَدْرِي فَفِضْت عَرَقًا وكأنما أنظر إِلَى الله عز وَجل فَرَقَا فَقَالَ لِي: «يَا أُبَيُّ أُرْسِلَ إِلَيَّ أَن اقْرَأِ الْقُرْآنَ عَلَى حَرْفٍ فَرَدَدْتُ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِي فَرَدَّ إِلَيَّ الثَّانِيَةَ اقْرَأْهُ عَلَى حَرْفَيْنِ فَرَدَّدَتْ إِلَيْهِ أَنْ هَوِّنْ عَلَى أُمَّتِي فَرَدَّ إِلَيَّ الثَّالِثَةِ اقْرَأْهُ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ وَلَكَ بِكُلِّ رَدَّةٍ رَدَدْتُكَهَا مَسْأَلَةٌ تَسْأَلُنِيهَا فَقُلْتُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأُمَّتِي اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأُمَّتِي وَأَخَّرْتُ الثَّالِثَةَ لِيَوْمٍ يَرْغَبُ إِلَيَّ الْخَلْقُ كُلُّهُمْ حَتَّى إِبْرَاهِيم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের ভিন্ন ভিন্ন কিরাআতকে শুদ্ধ বলার কারণে উবাই বিন কা‘ব-এর অন্তরে অবিশ্বাস ও খটকার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তার ধারণা ছিল যে, আল্লাহর বাণী একই পদ্ধতিতে পড়তে হবে। প্রত্যেকের ইচ্ছানুযায়ী পড়া ঠিক নয়। আর এজন্য তার মনে ইসলাম গ্রহণের পূর্বের চাইতে বেশি সংশয় তৈরি হয়েছে। কেননা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সে তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবজ্ঞা প্রদর্শন করত। ফলে তাকে মিথ্যা মনে করা খটকা সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব মনে করত না। কিন্তু যখন ইসলাম গ্রহণ করেছে তখন তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়েছে এবং তাকে চিনতে পেরেছে। এরপর তার সম্পর্কে মনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া যেন বড় ব্যাপার। তাই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন জাহিলী যুগের চাইতে আমার অন্তরে তাকে অস্বীকার করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, উবাই বিন কা‘ব ছিলেন উঁচু স্তরের সাহাবী ও দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত। আসলে তাদের দু’জনের ভিন্ন কিরাআতকে শুদ্ধ বলায় উবাই-এর অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের দ্বারা প্রহারের বারাকাতে তার ভয়-ভীতি ঘামের সাথে বের হয়ে গেল। তিনি দৃঢ় বিশ্বাসী হলেন। এ সময় তিনি যেন শায়ত্বনী কুমন্ত্রণার কারণে লজ্জিত হয়ে ভয়ে আল্লাহর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় প্রার্থনা পিছিয়ে দিয়েছেন কিয়ামতের দিনে আবেদন করার জন্য। তৃতীয় আবেদনটি হচ্ছে الشفاعة الكبراى (বড় সুপারিশ)। সমস্ত সৃষ্টি জীবের এই সুপারিশের প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি ইব্রাহীম (আঃ)-এরও প্রয়োজন আছে। এ উক্তি দ্বারা ইব্রাহীম (আঃ)-এর মর্যাদা অন্যান্য নাবীদের ওপর ও আমাদের নাবীর শ্রেষ্ঠত্ব সকল নাবী-রসূলের ওপর প্রমাণিত হয়।