পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মৃত ব্যক্তির জন্য কাঁদা
১৭৪২-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উসমান ইবনু ’আফফান-এর কন্যা মক্কায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জানাযাহ্ ও দাফনের কাজে যোগ দিতে মক্কায় এলাম। ইবনু ’উমার (রাঃ) ও ইবনু ’আব্বাসও এখানে আসলেন। আমি এ দু’জনের মধ্যে বসেছিলাম। এমন সময় ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ), ’আমর ইবনু ’উসমান (রাঃ) কে বললেন, আর তিনি তখন তাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন। তুমি (পরিবারের লোকজনকে আওয়াজ করে) কান্নাকাটি করতে কেন নিষেধ করছ না? অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য ’আযাব দেয়া হয়। তখন ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, ’উমার (রাঃ) এ ধরনের কথা বলতেন। তারপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন, ’’আমি যখন ’উমার (রাঃ)-এর সাথে মক্কা হতে ফেরার পথে ’বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, হঠাৎ করে ’উমার (রাঃ) একটি কাঁকর গাছের ছায়ার নীচে এক কাফেলা দেখতে পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওখানে গিয়ে দেখো কাফেলায় কে কে আছে। আমি সুহায়বকে দেখতে পাই। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ফিরে এসে ’উমার (রাঃ) কে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ডেকে আনো।
আমি আবার সুহায়ব-এর নিকট গেলাম। তাকে বললাম, ’চলুন, আমীরুল মু’মিনীন ’উমারের সাথে দেখা করুন।’ এরপর যখন মদীনায় ’উমার (রাঃ) কে আহত করা হলো, সুহায়ব কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে এলেন এবং বলতে থাকলেন, হায় আমার ভাই, হায় আমার বন্ধু! (এটা কি হলো!) সে অবস্থায়ই ’উমার (রাঃ) বললেন, সুহায়ব! তুমি আমার জন্য কাঁদছ অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন’আযাব দেয়া হয়। ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন ’উমার (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, আমি এ কথা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে বললাম। তিনি শুনে বলতে লাগলেন, আল্লাহ তা’আলা ’উমারের উপর দয়া করুন। কথা এটা নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে, পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তিকে ’আযাব দেয়া হয়। বরং আল্লাহ তা’আলা পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য কাফিরের ’আযাব বাড়িয়ে দেন। তারপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, কুরআনের এ আয়াতই দলীল হিসেবে তোমাদের জন্য যথেষ্ট, অর্থাৎ ’’কোন ব্যক্তি অন্য কারো বোঝা বহন করবে না’’- (সূরাহ্ ইসরা ১৭: ১৫)। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের মর্মবাণীও প্রায় এ রকমই, অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাই হাসান ও কাঁদান। ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এসব কথা শুনার পর কিছুই বললেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لِعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ بِمَكَّةَ فَجِئْنَا لِنَشْهَدَهَا وَحَضَرَهَا ابْنُ عُمَرَ وَابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنِّي لَجَالِسٌ بَيْنَهُمَا فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بن عمر لعَمْرو بْنِ عُثْمَانَ وَهُوَ مُوَاجِهُهُ: أَلَا تَنْهَى عَنِ الْبُكَاءِ؟ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» . فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَدْ كَانَ عُمَرُ يَقُولُ بَعْضَ ذَلِكَ. ثُمَّ حَدَّثَ فَقَالَ: صَدَرْتُ مَعَ عُمَرَ مِنْ مَكَّةَ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالْبَيْدَاءِ فَإِذَا هُوَ بِرَكْبٍ تَحْتَ ظِلِّ سَمُرَةٍ فَقَالَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ مَنْ هَؤُلَاءِ الرَّكْبُ؟ فَنَظَرْتُ فَإِذَا هُوَ صُهَيْبٌ. قَالَ: فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: ادْعُهُ فَرَجَعْتُ إِلَى صُهَيْبٍ فَقُلْتُ: ارْتَحِلْ فَالْحَقْ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ فَلَمَّا أَنْ أُصِيبَ عُمَرُ دَخَلَ صُهَيْبٌ يبكي يَقُول: وَا أَخَاهُ واصاحباه. فَقَالَ عُمَرُ: يَا صُهَيْبُ أَتَبْكِي عَلَيَّ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبَعْضِ بُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ؟» فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَلَمَّا مَاتَ عُمَرُ ذَكَرْتُ ذَلِك لعَائِشَة فَقَالَت: يَرْحَمُ اللَّهُ عُمَرَ لَا وَاللَّهِ مَا حَدَّثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ وَلَكِنْ: إِنَّ اللَّهَ يَزِيدُ الْكَافِرَ عَذَابًا بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ. وَقَالَتْ عَائِشَةُ: حَسْبُكُمُ الْقُرْآنُ: (وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وزر أُخْرَى) قَالَ ابْن عَبَّاس عِنْد ذَلِك: وَالله أضح وأبكي. قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ: فَمَا قَالَ ابْنُ عمر شَيْئا
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন করলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। আর কোন কাফিরের জন্য কাঁদলে তার শাস্তিকে বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ কোন মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যুতে যদি তার পরিবারের লোকেরা উচ্চ আওয়াজে বিলাপ সহকারে কাঁদে, তবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যাচ্ছে যে, যদি কেউ মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যুতে উচ্চ আওয়াজে বিলাপসহ কাঁদে তবে তাকে নিষেধ করতে হবে। হাদীসের শেষাংশে দেখা যাচ্ছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, মৃত মু’মিন ব্যক্তির পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হয় না। আর কাফিরের পরিবারের কান্নার কারণে তার শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ কাফির তো এমনিতেই শাস্তি ভোগ করে আর তার পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে তার চলমান শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া হয়।
সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে শাস্তি দেন। কাফিরদের শাস্তি বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে প্রমাণ পাওয়া যায়। সূরাহ্ আন্ নাহল-এ ৮৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আমি তাদের ওপর ‘আযাবের উপর আমার বৃদ্ধি করে দেব।
সূরাহ্ আন্ নাবা’র ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের ‘আযাব ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করা হয় না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, কাফিরদের শাস্তির উপর শস্তি বাড়িয়ে দেয়া হবে।
আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, বান্দার কান্না-হাসি, আনন্দ-দুঃখ এ সবই আল্লাহ পক্ষ থেকে। তাই এগুলোর দ্বারা কোন প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য কেউ কাঁদলে তকে শাস্তি দেয়া ও না দেয়া সবই তাঁর হাতে।
আবার কেউ কেউ বলেন, এ হাদীস মানুষের সাধারণ কান্নাকে জায়িয করেছে।