পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫২৯-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন অসুস্থ বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর কোন রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ’ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ’ভয় নেই, তুমি ভাল হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِيٍّ يَعُودُهُ وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُودُهُ قَالَ: «لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» فَقَالَ لَهُ: «لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ» . قَالَ: كَلَّا بَلْ حُمَّى تَفُورُ عَلَى شَيْخٍ كَبِيرٍ تزيره الْقُبُور. فَقَالَ: «فَنعم إِذن» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: কারও মতে বেদুঈন ব্যক্তির নাম ক্বায়স বিন আবূ হাযিম।
(لَا بَأْسَ) তথা তোমার ওপর এ অসুস্থে কোন আশংকা ও দুর্বলতা নেই। ইবনু হাজার বলেন, নিশ্চয় অসুস্থতা গুনাহকে মিটিয়ে দেয় যদি সুস্থতা অর্জিত হয় তাহলে দু’টি উপকার হয় আর তা না হলে গুনাহ মিটানোর মাত্রা আর বেশী অর্জিত হয়। (طَهُوْرٌ إِنْ شَآءَ اللّهُ) শব্দ দ্বারা দু‘আ প্রমাণিত হয় সংবাদ হয় না।
(فقا له) বেদুঈন লোকটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি বলছেন পবিত্রতার কারণে হবে। (كَلَّا) কখনও না তথা পবিত্রতার কারণ হবে না। মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেন, বিষয়টি তেমন যা তুমি বল অথবা তুমি বলবে না যে তার কথা কুফরী হওয়া ও কুফরী না হওয়া উভয় সম্ভবনা রয়েছে। এর সমর্থনে বলা যায় যে, গ্রামটি বেদুঈন লোকটি কঠিনপ্রকৃতির ছিল তার ইচ্ছা ছিল না মুরতাদ হওয়া বা মিথ্যা বলার। আর সে হতাশা বা নিরাশার সীমানায় পৌঁছেনি।
(تَفُوْرُ عَلى شَيْخٍ كَبِيْرٍ) গরমের তীব্রতা প্রকাশ পাচ্ছিল তার শরীর যেন টগবগ করছিল যেমন পাতিল টগবগ করে। إِذًا হ্যাঁ তবে (তোমার জন্য) তা হবে।
ত্বীবী বলেন, আমি তোমাকে আমার এ বক্তব্য (لا بأس عليك) (তোমার কোন ভয় বা আশংকা নেই) দ্বারা পথ দেখাচ্ছি যে, তোমার জ্বর তোমাকে তোমার গুনাহ হতে পবিত্র করাবে, সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং এর জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অতঃপর তুমি অস্বীকার করলে কিন্তু নিরাশা ও কুফরী ব্যক্ত করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ। এটা দ্বারা নিজকে যথেষ্ট মনে করলে না বরং আল্লাহর নি‘আমাতকে প্রত্যাখ্যান করলে আর তুমি নি‘আমাতের মধ্যে ছিলে তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগতস্বরে বললেন ইবনু তীন বলেনঃ সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ স্বরূপ বলেছেন।
আবার কেউ বলেছেন, হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরেছেন যে, এ অসুখে মারা যাবে, সুতরাং তিনি দু‘আ করছিলেন এই জ্বর যেন তার গুনাহ দূরীভূত হওয়ার কারণ হয়; অতঃপর সে মারা গেল। হতে পারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে বেদুঈন লোকটি এমনটি জবাব দিবে। ত্ববারানীতে অতিরিক্ত শব্দ এসেছে-
أَنَّ النَّبِيَّ - ﷺ - قَالَ لِلْأَعْرَاِبِيِّ إِذَا أَبَيْتَ فَهِيَ كَمَا تَقُوْلُ قَضَاءُ اللهِ كَائِنٌ فَمَا أَمْسى مِنَ الْغَدِ إِلَّا مَيِّتًا.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুঈন লোকটিকে বললেন, যখন তুমি প্রত্যাখ্যান করলে তেমনটি হবে যেমনটি তুমি ধারণা করেছ পরের দিন সন্ধায় লোকটি মারা গেছে।
হাদীসের শিক্ষাঃ
* বাদশার জন্য তার প্রজার কোন ব্যক্তি রুগী হলে তাকে দেখতে যাওয়া সম্মানহানী নয়, ‘আলিমের জন্য সম্মানহানী নয়, অজ্ঞ রুগী ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া বরং তাকে শিক্ষা দিবে স্মরণ করাবে যা তার উপকার আসবে এবং তাকে ধৈর্যের শিক্ষা দিবে যাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ভাগ্যের প্রতি তার রাগ না জন্মে এর জন্য আল্লাহও রাগ না করে তার প্রতি এবং তাকে সান্ত্বনা দিবে ব্যথা হতে। বরং তাকে ঈর্ষা করাবে তার রোগের জন্য অন্যের প্রতি তার এবং তার পরিবারের ওপর মুসীবাত আসাতে।
* আর রুগী ব্যক্তির উচিত হবে সে সাক্ষাৎ প্রার্থীর উপদেশ ভালভাবে গ্রহণ করবে এবং যে এ সমস্ত উপদেশ দিবে চমৎকার জবাব তাকে দিবে।