পরিচ্ছেদঃ ৩৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইশরাক ও চাশ্তের সালাত
আল্লামা ’আয়নী (রহঃ) ’শারহুল বুখারী’তে বলেন যে, الضُّحى এটি পেশ যোগে মাদহীনভাবে যার অর্থ হলো দিনের প্রথমাংশের সূর্য উপরে উঠা, আরالضَّحَاء যবর যোগে এবং মাদসহ হলে তার অর্থ হবে সূর্য আসমানের এক চতুর্থাংশ উপরে উঠা অতঃপর তার পরবর্তী সময়। কেউ বলেছেনঃ সালাতুয্ যুহা এর সময় হলো দিনের একচতুর্থাংশ থেকে সূর্যে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
’আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন যে, সালাতুয্ যুহা এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ববর্তী নবীগণের সালাত ছিল, আল্লাহ তা’আলা দাঊদ (আঃ)-এর পক্ষ থেকে সে সম্পর্কে বলেন,
إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهٗ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ
’’আমি পর্বতসমূহকে নির্দেশ দিয়েছি তার সাথে তারাও যেন সকাল-সন্ধ্যা তাসবীহ পাঠ করে।’’
(সূরাহ্ আস্ সোয়াদ ৩৮: ১৮)
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো সালাতুয্ যুহা সম্পর্কে; তিনি বললেনঃ নিশ্চয় তা আল্লাহ তা’আলার কিতাবে রয়েছে..... অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন,
فِي بُيُوْتٍ أَذِنَ اللّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاصَالِ
অর্থাৎ ঘরসমূহের (মসজিদের) মর্যাদা সমুন্নত এবং তাতে যিকর করতে আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন, তার সম্মানার্থে সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় লোকজন তাসবীহ পাঠ করেন। (সূরাহ্ আনূ নূর- ২৪ : ৩৬)
সালাতুয্ যুহার হুকুম সম্পর্কে ’উলামাগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে, হাফিয ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) তা যাদুল মা’আদ ১ম খন্ডের ৯৬, ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন এবং তার রাক্’আত সংখ্যা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, সর্বনিম্ন রাক্’আত সংখ্যা ২ এবং সর্বোচ্চ ও উত্তম হলো ৮ রাক্’আত এবং হাম্বালী, শাফি’ঈ ও মালিকী মাযহাবের নিকট নির্ভরযোগ্য মত এটাই। আবার কেউ বলেছেন, সর্বোচ্চ ১২ রাক্’আত ও মাধ্যম হলো আট রাক্’আত এবং ৮ রাক্’আতই উত্তম এবং এটাই হানাফী ও শাফি’ঈ মাযহাবের মত। ’আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, উত্তম হলো ৮ রাক্’আত আর সর্বোচ্চ ১২ রাক্’আত।
সালাতুয্ যুহার হুকুম সম্পর্কে ’উলামাগণের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও প্রসিদ্ধ ও প্রাধান্য মত অনুযায়ী সালাতুয্ যুহা মুস্তাহাব এবং চার ইমাম ও তাদের অনুসারীগণের মত এটাই। কেননা তার মুস্তাহাব সাব্যস্তকরণে অনেক হাদীস বর্ণিত রয়েছে, তন্মধ্যে সহীহ এবং হাসান হাদীস রয়েছে।
ইমাম হাকিম (রহঃ) এ ব্যাপারে জুয্’ই আল মুফরাদে অনেক হাদীস প্রায় ২০ জন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) আল আহাদীস আল ওয়ারিদে সালাতুয্ যুহা মুস্তাহাব প্রমাণে একটি অধ্যায় সাজিয়েছেন সেখানে তিনি একদল সাহাবা (সাহাবা) থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তারা সকলেই সালাতুয্ যুহা আদায় করতেন। শারহুল আহ্ইয়া গ্রন্থে আল্লামা যুবায়দী (রহঃ) বলেন যে, এ ব্যাপারে অসংখ্য সহীহ, মাশহুর হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ’আল্লামা ইবনু জারীর তাবারী (রহঃ) বলেন, তা মুতাওয়াতির সমপরিমাণ ’’শারহুশ্ শামায়িল’’ গ্রন্থে আললামা বায়যূরী (রহঃ) বলেন, সালাতুয্ যুহা মুস্তাহাব হওয়ার উপর ইজমা রয়েছে এবং এ ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
১৩০৯-[১] (’আলী (রাঃ) এর বোন) উম্মু হানী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন যখন আমার ঘরে আসলেন, প্রথমে তিনি গোসল করলেন। এরপর তিনি আট রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। এর আগে আমি কোন দিন তাঁকে এত সংক্ষেপে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখিনি। কিন্তু তিনি রুকূ’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ঠিক মতো করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, এটা ছিল চাশ্তের (চাশতের) সালাত। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَلَاةِ الضُّحى
عَن أم هَانِئ قَالَتْ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ بَيْتَهَا يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ فَاغْتَسَلَ وَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ فَلَمْ أَرَ صَلَاةً قَطُّ أَخَفَّ مِنْهَا غَيْرَ أَنَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ. وَقَالَتْ فِي رِوَايَة أُخْرَى: وَذَلِكَ ضحى
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে সালাতুয্ যুহা ৮ রাক্‘আত হওয়ার উপরই প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এটাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা ও কর্ম থেকে অধিক বর্ণিত হয়েছে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম থেকে সালাতুয্ যুহার সর্বনিম্ন ২ রাক্‘আত, ৪ রাক্‘আত ও ৬ রাক্‘আত ও বর্ণিত রয়েছে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় ৮ রাক্‘আতের বেশীও বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে আবূ যার (রাঃ) থেকে মারফূ‘ভাবে বর্ণিত হাদীস রয়েছে যে, যদি তুমি সালাতুয্ যুহা ১০ রাক্‘আত আদায় করো তবে ঐদিনে তোমার জন্য কোন গুনাহ লিখা হবে না এবং যদি ১২ রাক্‘আত আদায় কর তবে তোমার জন্য জান্নাতে একটি ঘর আল্লাহ তা‘আলা নির্মাণ করবেন।