পরিচ্ছেদঃ ২৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান
১১১২-[৭] ’আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি (একদিন) মাঠে (সালাতে) মানুষের ইমামতি করছিলেন। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্যে তিনি একটি চত্বরের উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ ছিলেন তার নীচে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থা দেখে হুযায়ফাহ্ কাতার থেকে বেরিয়ে এসে সামনের দিকে গেলেন এবং ’আম্মারের হাত ধরলেন। ’আম্মার তাঁকে অনুকরণ করলেন। হুযায়ফাহ্ তাঁকে নীচে নামিয়ে দিলেন। ’আম্মারের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পর হুযায়ফাহ্ তাঁকে বললেন। আপনি কি জানেননি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন লোক জামা’আতে সালাতের ইমাম হলে তার দাঁড়াবার স্থান যেন মুক্তাদীদের দাঁড়াবার স্থান হতে উঁচু না হয়। অথবা এ রকমের কোন শব্দ উচ্চারণ করেছেন। ’আম্মার উত্তর দিলেন, এ জন্যেই তো আপনি যখন আমার হাত ধরেছেন আমি আপনার অনুসরণ করেছি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ: أَنَّهُ أَمَّ النَّاسَ بِالْمَدَائِنِ وَقَامَ عَلَى دُكَّانٍ يُصَلِّي وَالنَّاسُ أَسْفَلَ مِنْهُ فَتَقَدَّمَ حُذَيْفَةُ فَأَخَذَ عَلَى يَدَيْهِ فَاتَّبَعَهُ عَمَّارٌ حَتَّى أَنْزَلَهُ حُذَيْفَةُ فَلَمَّا فَرَغَ عَمَّارٌ مِنْ صَلَاتِهِ قَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ: أَلَمْ تَسْمَعْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا أَمَّ الرَّجُلُ الْقَوْمَ فَلَا يَقُمْ فِي مَقَامٍ أَرْفَعَ مِنْ مَقَامِهِمْ أَوْ نَحْوَ ذَلِكَ؟» فَقَالَ عَمَّارٌ: لِذَلِكَ اتَّبَعْتُكَ حِينَ أَخَذْتَ عَلَى يَدي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইমাম তাঁর মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানো মাকরূহ হাদীসটি এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। চাই উচ্চতার পরিমাণ ব্যক্তির পায়া বা তার অপেক্ষা কম বা বেশি হোক কিন্তু এর সানাদে একজন মাজহূল বা অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছে তবে ইমাম আবূ দাঊদ, হাকিম, বায়হাক্বী হুমাম থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা মুক্তাদী অপেক্ষা ইমাম উঁচু স্থানে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে জোরদার করেছে আর তা হচ্ছে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) একবার মাদায়েন শহরে মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষের ইমামতি করলেন তখন আবূ মাস্‘ঊদ হুযায়ফার জামা ধরে টানলেন, অতঃপর হুযায়ফাহ্ তার সালাত শেষ করলে আবূ মাস্‘ঊদ তাকে বললেন তুমি কি জান না রসূলের সময় ইমামদের এ ধরনের উঁচু জায়গাতে দাঁড়ানো থেকে নিষেধ করা হত?
হুযায়ফাহ্ বলল, হ্যাঁ আপনি যখন আমাকে টেনেছিলেন তখন আমার স্মরণ পরেছিল তবে মুনযিরী ও আবূ দাঊদ এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন এবং নাবাবী বলেন আবূ দাঊদ একে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাফিয তালখীসে ১২৮ পৃষ্ঠাতে বলেন, ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ বলেছেন। এ ব্যাপারে মারফূ' সূত্রে হাকিম-এর এক বর্ণনা রয়েছে তাতে আছে হুযায়ফাহ্ তিনি ইমাম ছিলেন আর আবূ মাস্‘ঊদ তিনি কাপড় ধরে টেনেছিলেন। বর্ণনাটি পরস্পর বিরোধী হবে না।
কেননা উভয় বর্ণনাতে একই সমস্যা এবং কোনতেই অসম্ভব না যে, হুযায়ফার এ ধরনের ঘটনা আবূ মাস্‘ঊদের সাথে ঘটার পূর্বে ‘আম্মারের সাথে ঘটেছিল। সালাতে ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞাটিকে আরও জোরদার করেছে দারকুতনী ও হাকিম আবূ মাস্‘ঊদ থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা। আবূ মাস্‘ঊদ বলেন, ইমাম উঁচু স্থানে দাঁড়াবে এ অবস্থায় মুক্তাদী তার অপেক্ষা নীচু স্থান দাঁড়াবে এমন করাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। হাফিয তালখীসে এটা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
হাকিম এবং ত্বহাবীও এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। অচিরেই এ হাদীসটি ‘জানাযার সাথে চলা এবং তার উপর সালাত আদায় করা’ এ অধ্যায়ের শেষে আসছে। শাওকানী ‘‘নায়লুল আওতার’’-এ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারের উপর উঁচু হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত না হলে আবূ মাস্‘ঊদের হাদীসে নিষেধাজ্ঞার বাহ্যিক দিকটি হারাম সাব্যস্ত হত। মাসজিদ ও অন্যান্য স্থানে পায়া সমপরিমাণ বা তার অপেক্ষা কম বা বেশি উঁচুতে দাঁড়ানোর মাঝে পার্থক্য না করে ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সাব্যস্ত হল।
আর তা আবূ মাস্‘ঊদ-এর মারফূ' হুকমী উক্তির কারণে বা সুস্পষ্ট মারফূ' উক্তির কারণে। মিম্বারের উপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার যে হাদীস রয়েছে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে; রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য করেছিলেন যেমন এর উপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘যাতে তোমরা আমার সালাতের অনুসরণ করতে পার’ প্রমাণ বহন করছে।
এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা হচ্ছে ইমাম যখন মুক্তাদীদেরকে শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছে করবে তখন মুক্তাদী অপেক্ষা ইমামের উঁচু স্থানে দাঁড়ানো জায়িয। ইবনু দাক্বীক্ব আল ঈদ এ ব্যাপারে তথা সাহল বিন সা‘দ-এর আগত হাদীসের ব্যাপারে বলেন, হাদীসটি ঐ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা করছে যে, ইমাম যখন শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছে করবে তখন ইমামের মুক্তাদীদের অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা জায়িয। তবে এ ধরনের উদ্দেশ্য ছাড়া ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার ব্যাপারে বলা তা মাকরূহ। ইবনু দাক্বীক্ব আল ঈদ বলেন, শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া যে ব্যক্তি মুক্তাদী অপেক্ষা ইমামের উঁচু স্থানে দাঁড়ানোকে জায়িয বলার ইচ্ছে করবে তার কথা গ্রহণ করা যাবে না এবং গ্রহণযোগ্য বর্ণনার বিপরীতে ক্বিয়াস করাও ঠিক হবে না আর ক্বিয়াস এভাবে যে, উসূলের ক্ষেত্রে নিয়ম আছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কিছু থেকে নিষেধ করবেন তখন সে বিষয়টি বাহ্যিক দৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করবে। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন কাজ করা যা পূর্বের নিষেধাজ্ঞার বিপরীত। এক্ষেত্রে বুঝাতে হবে তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট, অন্যান্যাদের জন্য নয়।
শাওকানী ‘‘সায়লুল জারাব’’-এ বলেন, এ দু’টি হাদীসে ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দলীল রয়েছে। তবে মিম্বারের উপর রসূলের সালাত আদায়ের হাদীস থাকার কারণে নিষেধাজ্ঞাটি নাহ্ইয়ি তানযিহী তথা সতর্কতাজনিত নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা রাখছে। তবে যে ব্যক্তি বলবে নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশে করেছেন যেমন হাদীসের শেষে তা উল্লেখ হয়েছে তাহলে তা নাহ্ইয়ি তানযীহির ফায়দা দিবে না। কেননা কোন ইমামের পক্ষে শিক্ষা দেয়ার নিমিত্তে মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা বৈধ হবে না যদি তা অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈধ না হয় এবং মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা বিষয়টি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস এমন উক্তি করাও বিশুদ্ধ হবে না।
আমরা এ বিতর্কে কতক বিদ্বান লোকদের প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ একটি স্বয়ংসম্পন্ন পুস্তিকা লিখেছি। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, ইবনু হাযম এ বিষয়টিকে কোন ধরনের মাকরূহ মনে না করে স্বাভাবিকভাবে একে জায়িয মনে করেন। যেমন তিনি মুহাল্লা গ্রন্থে ৪র্থ খন্ডে ৮৪ পৃষ্ঠাতে সাহল-এর হাদীসকে দলীল গ্রহণপূর্বক এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আর তা শাফি‘ঈ এবং আবূ সুলায়মানের উক্তি এবং আমাদের উক্তির মতো উক্তি করেন আহমাদ বিন হাম্বাল, লায়স বিন সা‘দ, ইমাম বুখারী ও অন্যান্যগণ।
তবে আমার কাছে প্রাধান্যতর উক্তি, ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানো নিষেধ। পক্ষান্তরে সাহল-এর হাদীসে উঁচু স্থানে রসূলের সালাত আদায় করা মূলত শিক্ষা দেয়ার জন্য। অর্থাৎ রসূলের সালাত কারো কাছে যেন গোপন না থাকে সেজন্য এ হাদীস থেকে ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানো নিষেধ। পক্ষান্তরে সাহল-এর হাদীসে উঁচু স্থানে রসূলের সালাত আদায় করা মূলত শিক্ষা দেয়ার জন্য। অর্থাৎ রসূলের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কারো কাছে যেন গোপন না থাকে সেজন্য। এ হাদীস থেকে ইমাম মুক্তাদী অপেক্ষা উঁচু স্থানে দাঁড়ানো সাব্যস্ত হয় না। আল্লাহই সর্বজ্ঞাত।