পরিচ্ছেদঃ ২৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
১০৭২-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দেখেছি জামা’আতে সালাত আদায় করা থেকে শুধু মুনাফিক্বরাই বিরত থাকত যাদের মুনাফিক্বী অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। তবে যে রুগ্ন লোক দু’ব্যক্তির ওপর ভর করে চলতে পারতো সেও জামা’আতে আসত। এরপর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর শিখানো হিদায়াতের পথসমূহ থেকে একটি এই যে, যে মসজিদে আযান দেয়া হয় সেটাতে জামা’আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা।
অপর একটি বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত উপযুক্ত সময়ে আদায় করার প্রতি যত্নবান হয়ে যেখানে সালাতের জন্যে আযান দেয়া হয় সেখানে সালাত আদায় করে। কারণ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের রসূলের জন্যে ’সুনানুল হুদা’ (হিদায়াতের পথ) নির্দিষ্ট করেছেন। জামা’আতের সাথে এ পাঁচ বেলা সালাত আদায় করাও এ ’সুনানুল হুদার’ মধ্যে একটি অন্যতম। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর, যেভাবে এ পিছে পড়ে থাকা লোকগুলো (মুনাফিক্ব) তাদের বাড়িতে সালাত আদায় করে, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর হিদায়াতসমূহ ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।
তোমাদের মধ্যে যারা ভাল করে পাক-পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর এসব মসজিদের কোন মসজিদে সালাত আদায় করতে যায়, তবে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি কদমে একটি করে নেকী দান করবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করবেন এবং তার একটি পাপ মাফ করে দেন। আমি আমাদেরকে দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক্বরা ছাড়া অন্য কেউ সালাতের জামা’আত থেকে পিছে থাকতো না বরং তাদেরকে দু’জনের কাঁধে হাত দিয়ে এনে সালাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। (মুসলিম)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُهُ أَوْ مَرِيضٌ إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلَاةَ وَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلَاةُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ وَفِي رِوَايَة: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللَّهَ غَدًا مُسْلِمًا فليحافظ على هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ فَإِنَّ اللَّهَ شرع لنبيكم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم سُنَنَ الْهُدَى وَإِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَعْمِدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الْمَسَاجِدِ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً وَرَفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً ويحط عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَام فِي الصَّفّ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (مَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ) ‘‘মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকত না’’। এতে বুঝা গেল যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় থেকে বিরত থাকার কারণ হলো নিফাক্ব।
(سُنَنُِ الْهُدَى) হিদায়াতের তরীকা বা পদ্ধতি। এখানে সুন্নাত দ্বারা পরিভাষাগত সুন্নাত উদ্দেশ্য নয় বরং শাব্দিক অর্থ উদ্দেশ্য।
(لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ) ‘‘তোমরা যদি তোমাদের নাবীর সুন্নাত (পদ্ধতি) ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হয়ে যাবে’’। অর্থাৎ তোমাদের নাবীর বর্ণিত পদ্ধতি পরিত্যাগ করার কারণে তা তোমাদেরকে কুফরীর দিকে নিয়ে যাবে। এভাবে যে, তোমরা ধীরে ধীরে ইসলামের মৌলিক বিষয় ছেড়ে দিতে থাকবে ফলে তোমরা ধীরে ধীরে ইসলামের সীমানা পেরিয়ে তার গন্ডির বহির্ভূত হয়ে পড়বে।