পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ ও তার মর্যাদা
৯৩৩-[১৫] খলীফাহ্ ’আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত কৃপণ হলো সে ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হবার পর আমার ওপর দরূদ পাঠ করেনি। (তিরমিযী ও আহমাদ;[1]
হাদীসটি ইমাম আহমাদ হুসায়ন ইবনু ’আলী হতে নকল করেছেন; আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান, সহীহ ও গরীব।
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَخِيلُ الَّذِي ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَاهُ أَحْمَدُ عَنِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: (الْبَخِيْلُ) কৃপণতা এখানে পূর্ণ কৃপণতার পরিচয় ফুটিয়ে উঠেছে। কেননা (দরূদ পাঠ করতে) তার কোন ক্ষতি বা লোকসান হয় না এবং কোন কষ্ট নেই। বরং অনেক সাওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে।
(فَلَمْ يُصَلِّ عَلَـيَّ) যে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করলো না, সে নিজের ওপর কৃপণতা করলো। আল্লাহর রহমাত দশবার লাভ করা হতে বঞ্চিত হলো। কারণ একবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলে দশবার আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হয়।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ যে ব্যক্তি তাঁর ওপর দরূদ পাঠ করলো না সে কৃপণতা করলো এবং নিজকে বঞ্চিত করলো সাওয়াবের পাল্লা পরিপূর্ণ করতে। সুতরাং এর চেয়ে আর বড় কেউ কৃপণ হতে পারে না।
যেমন অন্য রিওয়ায়াতে আছে- (اَلْبَخِيْلُ كُلُّ الْبَخِيْلِ) ‘‘কৃপণ সত্যিকারে কৃপণ।’’
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস- ‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ সে দরূদ পাঠ করেনি’’।
আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীস ত্ববারানীতে মারফূ‘ সূত্রে- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘হতভাগা সে বান্দা যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে অথচ আমার ওপর দরূদ পাঠ করেনি।’’
মুসান্নাফ ইবনু ‘আবদুর রাযযাক্বে ক্বাতাদাহ্ হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘উপেক্ষামূলক আচরণ হলো যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয় আর সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না’’।
আর ‘আম্মার ইবনু ইয়াসার এর হাদীস ত্ববারানীতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে আর সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করেনি, আল্লাহ তাকে দূরে ঠেলে দিবেন’’। আর এর সমর্থনে আরো অনেক হাদীস রয়েছে যেমন মালিক ইবনু হুওয়াইরিস। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ত্ববারানীতে।
হাফিয ইবনু হাজার বলেন, এ সকল হাদীস সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণ করে যখন তাঁর নাম উচ্চারিত হয় তখন তাঁর ওপর দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। কেননা ধূলায় ধূসরিত হওয়া ও দুর্ভাগা হওয়ার কামনা এবং কৃপণতার বৈশিষ্ট্য ও উপেক্ষামূলক আচরণ দাবী করে শাস্তির। আর শাস্তিই হলো ওয়াজিব হওয়ার নিদর্শন।
আবার কেউ হাদীসসমূহকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে সে সালাতে শেষ জবাবে তাঁর ওপর দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব। কেননা তাঁর নাম উচ্চারণের সময় তাঁর ওপর দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হিসেবে প্রমাণ করে আর তাশাহুদে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়েছে। যারা এভাবে দলীল গ্রহণ করেছে এটাও একটি গ্রহণযোগ্য মত বা বিষয়।