পরিচ্ছেদঃ ৬৭/৯৭. ‘আয্ল প্রসঙ্গে।
৫২১০. আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময়ে গানীমাত হিসাবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাদের সঙ্গে ’আযল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ কী! তোমরা কি এমন কাজও কর? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করলেন এবং পরে বললেন, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হবে। [1] [৫২০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩০)
[1] স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় স্ত্রী-অঙ্গের বাইরে শুক্র স্খলিত করার নাম আযল। নাবীযুগে কোন কোন সাহাবী একাজ করতেন। বুখারী ও মুসলিমে আবূ সাঈদ (রাঃ) বর্ণিত অপর হাদীস থেকে বুঝা যায় তারা সাময়িক অসুবিধা এড়ানোর জন্য এমন কাজ করতেন। সন্তান জন্মিলে তার রিযিকের ব্যবস্থা করা যাবে না- এমন কোন আশঙ্কা বা ভয়ে তারা তা করতেন না। যে মানুষই জন্মিবে, আল্লাহই যে তার রিযিকদাতা এ ব্যাপারে তাঁরা বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করতেন না। সন্তানের জন্মদানকে আপাতত ঠেকানো যাবে এরকম সুবিধালাভের আশায় তারা আযল করতেন। আযল দ্বারা যে সন্তানের জন্মদানকে ঠেকানো যাবে না তা আল্লাহর রসূলের কথায় অতি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইবনে সিরীন- এর মতে আযল সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও তা যে নিষেধের একেবারে কাছাকাছি তাতে কোন সন্দেহ নেই। হাসান বসরী বলেছেন- আল্লাহর শপথ! রসূলের কথায় আযল সম্পর্কে স্পষ্ট ভৎর্সনা ও হুমকি রয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেছেন- সাহাবীগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন- ফলে এর অর্থ দাঁড়ায়- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন বলেছেন- তোমরা আযল কর না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য।
বর্তমানে সন্তানের জন্মদানকে বন্ধ করার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের নানান পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আর এ কথা সবারই জানা যে, এ পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে এ কথা বলে যে, মানুষ বেশি হলে অভাব দারিদ্র দেখা দিবে, রিযিকের ঘাটতি পড়ে যাবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করছেন-
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
‘‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমি করব’’- (আন‘আম ৬ঃ ১৫১)। আল্লাহ আরো বলেন-
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا
‘‘এবং তোমরা হত্যা কর না তোমাদের সন্তানদের দারিদ্রের ভয়ে, আমি তাদের রিযিক দেব এবং তোমাদেরও; নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা বিরাট ভুল’’- (বানী ইসরাঈল ১৭ঃ ৩১)।
ভবিষ্যতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় যারা সন্তান জন্মদানে ভয় পায়, যারা মনে করে যে, আরো অধিক সন্তান হলে জীবনযাত্রার মান রক্ষা করা সম্ভব হবে না, এবং এজন্য জন্মনিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের পন্থা গ্রহণ করে, উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে তাদের সম্পর্কে নিষেধবানী উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- বর্তমানে তোমাদের যেমন আমিই রিযিক দিচ্ছি, তোমাদের সন্তান হলে অভিষ্যতে আমিই তাদের রিযিক দেব, ভয়ের কোন কারণ নেই।
এখানে দু’টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, (১) জন্মনিরোধ (সম্পূর্ণরূপে সন্তান দানের ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করে দেয়া)। আর (২) জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা। জন্মনিরোধ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তবে যদি মহিলার অবস্থা এরূপ হয় যে, সে কয়েকটি সন্তান নিয়েছে আর প্রতিবারই তার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় ডাক্তার যদি পরামর্শ দেয় যে, এরপরে সন্তান নিলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ ফাতওয়া দিয়েছেন যে, এ অবস্থায় সন্তান জন্মের উৎসকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করলে হারাম বলা যাবে না। বরং সৎ পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।
আর জন্ম নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ সন্তান জন্মের পরে তাড়াতাড়ি না করে এক/দুই বছর পরে সন্তান গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় সন্তান জন্মের পরে তার মায়ের অবস্থা খুবই নাজুক ও শারীরিকভাবে এমনই দুর্বল যে, এখনই পুনরায় সন্তান গ্রহণ করলে রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে এবং তার জীবনের উপরে ঝুঁকি আসতে পারে অথবা বর্তমান শিশু সন্তানের দেখা-শুনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাহলে শুধুমাত্র এ ক্ষেত্রে বাচ্চার মায়ের শরীরের দিকে লক্ষ্য রেখে এক/দুই বছর দেরীতে সন্তান নিলে এরূপ দেরী করাকে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ সমর্থন দিয়েছেন।
بَاب الْعَزْلِ
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ حَدَّثَنَا جُوَيْرِيَةُ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ ابْنِ مُحَيْرِيزٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ أَصَبْنَا سَبْيًا فَكُنَّا نَعْزِلُ فَسَأَلْنَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَوَإِنَّكُمْ لَتَفْعَلُونَ قَالَهَا ثَلاَثًا مَا مِنْ نَسَمَةٍ كَائِنَةٍ إِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلاَّ هِيَ كَائِنَةٌ.