পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৭৮. বিদায় হজ্জ
৪৪১৪. আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ঈশার সালাত এক সঙ্গে আদায় করেছেন। [1] [১৬৭৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৬৯)
[1] সফরের অবস্থায় দু ওয়াক্তের সালাত আদায় করলে কসর সহ করতে হবে। মুকীম অবস্থায় বৃষ্টি বাদল, যে কোন শংকা, কিংবা অসুবিধা সৃষ্টিকারী কারণে দু ওয়াক্তের সালাতকে জমা করে আদায় করলে সালাতের রাক‘আত সংখ্যা পূর্ণ আদায় করতে হবে । প্রমাণঃ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ثَمَانِيًا جَمِيعًا وَسَبْعًا جَمِيعًا
ইব্নু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আট রাক‘আত একত্রে (যুহ্র ও আসরের) এবং সাত রাক‘আত একত্রে (মাগরিব-‘ইশার) সালাত আদায় করেছি। (বুখারী পর্ব ১৯ঃ /৩০ হাঃ ১১৭৪, মুসলিম হাঃ , লুলু ওয়াল মারজান হাদীস নং ৪১১)
* একটি যাত্রীদল সিরিয়া হতে এসে জানালো যে, রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদীনা আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। আরবের নহম, জুযাম, আমিলাহ, গাসসান প্রভৃতি খৃস্টান গোত্রগুলি তাদের সাথে মিলিত হয়েছে। মুতা যুদ্ধে হিরাক্লিয়াসের অধীনস্থ শাসনকর্তার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণই যেন এই অভিযানে উদ্দেশ্য ছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, এই আক্রমণমুখী শত্রু বাহিনী আরবের নিজস্ব যমীনে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে যাতে দেশে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বাধা সৃষ্টি না হয়। এই মুকাবালা এমন সম্রাটের বিরুদ্ধে ছিল, যে সে সময় অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিল এবং যে বাহিনী তখনই ইরান সাম্রাজ্যকে পদানত করে ফেলেছিল।
মুসলিমদের অস্ত্রশস্ত্র যানবাহন ও রসদাদির অত্যন্ত অভাব ছিল। তার উপর রৌদ্র ও গ্রীষ্মের ছিল ভীষণ প্রকোপ। মদীনায় ফল পেকে গিয়েছিল। সুতরাং তখন ছিল ফল খাওয়া ও ছায়ায় বসে থাকার দিন।
রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসদ সংগ্রহের জন্য যে সাধারণ চাঁদার তহবিল খুললেন, তাতে ‘উসমান (রাঃ) ৯০০ উট, ১০০ ঘোড়া, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন, তাকে মুজহেযু জায়শিল উসরাহ অর্থাৎ অভাবগ্রস্ত ও ক্ষধার্ত সেনাবাহিনীর রসদ প্রস্ত্ততকারী উপাধি দেয়া হলো। ‘আবদুর রহমান বিন ‘আওফ দিলেন চল্লিশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা। ‘উমার ফারুক (রাঃ) দিলেন সমস্ত গৃহের অর্ধেক যা কয়েক হাজার মুদ্রা ছিল। আবূ বাক্র (রাঃ) যা কিছু আনলেন তা মূল্যের দিক দিয়ে নিতান্ত কম হলেও জানা গেল তিনি বাড়িতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহবব্ত ছাড়া আর কিছুই রেখে আসেননি। আবূ উফায়েল আনসারী (রাঃ) সারা রাত ধরে একটি জমিতে পানি দিয়ে চার সের খেজুর পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন তা থেকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের জন্য দুই সের রেখে বাকী দই সের দিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খেজুরগুলোকে সমস্ত মাল ও রসদের উপর ছিটিয়ে দাও। প্রায় ৮২জন লোক যারা টালবাহানা করে বাড়িতে রয়ে গিয়েছিল, প্রসিদ্ধ মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবাই ইবনু সালূল ঐ লোকগুলোকে এ কথা বলে শান্ত করেছিল যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সঙ্গী সাথীরা আর মদীনাহ্তে ফিরে আসতে পারবে না। রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাদেরকে বন্দী করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ হাজারের একটি বাহিনী নিয়ে তাবূক অভিমুখে যাত্রা করলেন। সেনাবাহিনীতে যানবাহনের স্বল্পতা ছিল, ১৮ জন লোকের জন্য একটি উট নির্ধারিত ছিল। রসদপত্র না থাকার কারণে অধিকাংশ জায়গায় গাছের পাতা খেতে হয়। ফলে ঠোঁটে ক্ষত হয়ে যায়। কোন কোন জায়গায় পানি পাওয়াই যাইনি। এক্ষেত্রে উট যবহ করে তার পাকস্থলির পানি পান করা হয়। অসীম সহনশীলতা ও ধৈর্যের সাথে সমস্ত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে তাবূক পৌঁছৈ যান। তথায় নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস অবস্থান করেন। সিরিয়াবাসীর উপর এটার এমন প্রভাব পড়ে যে, তারা ঐ সমস্ত আরবের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা ত্যাগ করে এবং আক্রমণ করার সুবর্ণ সুযোগ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইনতিকালের পরবর্তী সময়ে ঠিক করে। (রহমাতুল লিল ‘আলামীন)
بَاب حَجَّةِ الْوَدَاعِ.
عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ عَنْ مَالِكٍ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيْدَ الْخَطْمِيِّ أَنَّ أَبَا أَيُّوْبَ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ صَلَّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيْعًا.