পরিচ্ছেদঃ ৪/২৮. উযূর সময় কুলি করা।
১৬৪. ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাযি.)-এর মুক্ত করা দাস হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান (রাযি.)-কে উযূর পানি আনাতে দেখলেন। অতঃপর তিনি সে পাত্র হতে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত পানিতে ঢুকালেন। অতঃপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর তাঁর মুখমণ্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর উভয় পা তিনবার ধোয়ার পর বললেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করতে দেখেছি এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং তার মধ্যে অন্য কোন চিন্তা মনে আনবে না, আল্লাহ্ তা‘আলা তার পূর্বকৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (১৫৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৫)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
পাত্রের বাইরে হাত ধোয়ার বিধান
পাত্রের বাইরে দু'হাতের উপর পানি ঢেলে হাত ধোয়ার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন হুকুম হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে মতভেদ পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার বিধান এ বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা, মালিক ও শাফেয়ী রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, অযুতে এ দু'টিই সুন্নাত। ইমাম আহমাদ ইবন আবী লাইলা ও দাউদ আয যাহেরী বলেন, দু'টোই ফরয। ইমাম আবু সাওর, আবূ উবাইদ ও আহলে যাহেরদের অপর গোষ্ঠীর নিকট কুলি করা সুন্নাত কিন্তু নাকে পানি নেয়া ফরয।
মাথা কতটুকু মাসেহ করবে?
মাথা মাসাহ করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের আলেমগণের ঐকমতা রয়েছে। অনুরূপভাবে পূর্ণ মাথা মাসাহ করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারেও তাদের ঐকমত্য রয়েছে কিন্তু মাথার কতটুকু মাসাহ করা ফরয তা নির্ধারণে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালিক ও আহমাদ রাহিমাহুমাল্লাহার মতে পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ফরয।
ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী বলেন, মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই। ফরয আদায় হয়ে যাবে; এ কিছু অংশ নির্ধারণে তারা আবার মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা বলেন, এক-চতুর্থাংশ এবং মালেকী মাযহাবের কারো কারো মতে এক-তৃতীয়াংশ। তবে ইমাম শাফেয়ী কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। বরং তার নিকট মাসাহ বলতে যা বুঝায় তা হলেই হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে যে, পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও মাথার কিছু অংশ মাসাহ করা যথেষ্ট মনে করেছেন তেমন প্রমাণ নেই। যেখানে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার সামনের অংশ মাসাহ করেছেন সেখানেও এসেছে যে, তিনি বাকী মাথার মাসাহ করার জন্য পাগড়ীর উপর তা সম্পন্ন করেছেন। (আর পাগড়ীর ওপর মাসাহ তখনই হবে যখন তা মুহান্নাক বা গলার নিচ দিয়ে পেঁচ দিয়ে শক্ত করে মজবুতভাবে আটকে পাগড়ী বাঁধা হবে।)
অযুতে আবশ্যকীয় কাজ
"উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এ হাদীসটি অযুর বর্ণনার ক্ষেত্রে অনন্য। এ হাদীসটি যদি আমরা কুরআনুল কারীমের সূরা আল-মায়েদাহ'র ৬নং আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেখি, তখন অযুতে কী কী করা অত্যাবশ্যক তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। সে হিসেবে অযুতে নিম্নোক্ত কাজগুলো অত্যাবশ্যক
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা, আর মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ। যেমনটি এ হাদীসে এসেছে।
২. কনুইসহ দুহাত ধৌত করা।
৩. মাথা মাসাহ করা আর দু'কান মাথারই অংশ।
৪. দু'পা ধৌত করা।
তাছাড়া আরো যেগুলো বাস্তবেই এসে যায় কিন্তু কুরআনে শব্দ দিয়ে উল্লেখ করা হয়নি, তা হচ্ছে
৫. ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বজায় রাখা। কেননা আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং দু'অঙ্গ ধোয়ার মধ্যে একটি মাসাহ করার বিষয় উল্লেখ করেছেন যা ক্রমবিন্যাস আবশ্যক হওয়া বুঝায়।
৬. অযু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার সাথে সাথেই বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে করেছেন।
অনুরূপভাবে আরো একটি কাজ রয়েছে যা করার আবশ্যকতা কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে:
৭. নিয়ত করা, অর্থাৎ অন্তরে সুদৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে সালাতে দাঁড়ানো।
হাদীসের শিক্ষা
১. অযুর পানির পাত্রে হাত ঢুকানোর পূর্বে তিনবার তা বাইরে ধুয়ে ফেলাই হচ্ছে বৈধ নিয়ম।
২. অযুর অঙ্গ ধোয়ার জন্য ডান হাত ব্যবহার করাই শরীআতসম্মত পদ্ধতি।
৩. কুলি, নাকে পানি নেয়া, নাকের পানি ঝাড়ার বিষয়টি এভাবে ক্রমান্বয়ে করা হবে।
৪. মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পার্শ্ব দিক থেকে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং লম্বায় মাথার চুল গজানোর স্থান থেকে থুতনী পর্যন্ত পুরো জায়গায় সম্পন্ন হয়। আর তা তিনবার করা সুন্নাত। মনে রাখা দরকার নাক ও মুখ চেহারার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, আরবদের নিকট চেহারা হচ্ছে যা দেখা করার সময় সামনে প্রতিভাত হয়ে থাকে।
৫. দু'হাত কনুই সমেত তিনবার ধৌত করাই শরীআতসম্মত। আগে হাত ধৌত করলেও এখন আবারও পূর্ণ হাত কনুই সমেত তিনবার ধৌত করা বিধিসম্মত।
৬. পুরো মাথা একবার মাসাহ করতে হবে। দু'হাত দিয়ে মাথার সামনের দিক থেকে পিছনে নিবে, তারপর পিছন দিক থেকে সামনে আসবে।
৭. দু'পা টাখনু সমেত তিনবার ধৌত করবেন।
৮. এসব কাজের মধ্যে তারতীব বা ক্রমধারা অনুসরণ করতে হবে; কারণ আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৌত করার বিষয়াবলির মাঝখানে মাসাহ করার জিনিস উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা বুঝা যায় এ তারতীব রক্ষা করা জরুরী।
৯. হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতিটিই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু করার পূর্ণ পদ্ধতি।
১০. অযুর পরে দু'রাক'আত সালাত আদায় করা বিধিসম্মত।
১১. আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া। তাছাড়া ইখলাসের সাথে তা পালন করা। যদি দুনিয়ার জিনিস তাতে ঘটে যায় তখন তা কবুল নাও হতে পারে। আর কারো সালাতের মধ্যে দুনিয়ার জিনিসের অনুপ্রবেশ ঘটলে সে যদি তা তাড়াতে সক্ষম হয় তবে সেটার জন্য তার সাওয়াব রয়েছে।
১২. পূর্ণ অযুর সাওয়াব অনেক। কারণ এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
১৩. হাদীসে উক্ত সাওয়াব পেতে হলে দু'টি জিনিস লাগবে- (ক) যেভাবে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু পূর্ণাঙ্গ অযু করে দেখিয়েছেন সে রকম অযু করা। (খ) তারপর দু' রাকআত সালাত পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করা। এ দু'টি মিলেই ক্ষমার ঘোষণা। তবে আলেমগণ বলেন, এ ক্ষমা কেবল ছোট ছোট গুনাহের জন্য। বড় বা কবীরা গুনাহের জন্য তাওবাহ লাগবে।
* এই হাদীস হতে আরো শিক্ষণীয় বিষয়:
১। এটি একটি মহা হাদীস, এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ওজু করার মৌলিক বিবরণ। তাই সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত, তারা যেন ওজু করার এই মৌলিক বিবরণটির জ্ঞান লাভ করে ও যত্ন করে। তবে জেনে রাখা দরকার যে, একবার মাত্র মাথা মাসাহ করার সাথে সাথে দুই কানেরও মাসাহ করতে হবে। কেননা কান দুইটি তো হলো মাথারই অংশ।
২। ওজু এবং নামাজ হলো মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তাই যে ব্যক্তি ওজু করবে, তার উচিত যে, সে যেন ওজু করার পর দুই রাকাআত নামাজ পড়ে।
৩। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন ওজু করার শেষে এই দোয়াটি পাঠ করে।
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।
যেহেতু আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে:
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
(অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।)
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।
[দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭ – (২২৪) ]।
بَاب الْمَضْمَضَةِ فِي الْوُضُوءِ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ حُمْرَانَ، مَوْلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ أَنَّهُ رَأَى عُثْمَانَ دَعَا بِوَضُوءٍ، فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ مِنْ إِنَائِهِ، فَغَسَلَهُمَا ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَمِينَهُ فِي الْوَضُوءِ، ثُمَّ تَمَضْمَضَ، وَاسْتَنْشَقَ، وَاسْتَنْثَرَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ، ثُمَّ غَسَلَ كُلَّ رِجْلٍ ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا وَقَالَ " مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ، غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ".
Narrated Humran:
(the freed slave of `Uthman bin `Affan) I saw `Uthman bin `Affan asking (for a tumbler of water) to perform ablution (and when it was brought) he poured water from it over his hands and washed them thrice and then put his right hand in the water container and rinsed his mouth and washed his nose by putting water in it and then blowing it out. Then he washed his face thrice and (then) forearms up to the elbows thrice, then passed his wet hands over his head and then washed each foot thrice. After that `Uthman said, "I saw the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) performing ablution like this of mine, and he said, 'If anyone performs ablution like that of mine and offers a two-rak`at prayer during which he does not think of anything else (not related to the present prayer) then his past sins will be forgiven. '