পরিচ্ছেদঃ সহিষ্ণুতার মাহাত্ম্য
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُـحِبُّ المُحْسِنِيْنَ
অর্থাৎ, (সেই ধর্মভীরুদের জন্য বেহেশত্ প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ১৩৪)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
وَلَـمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
অর্থাৎ, অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ। (সূরা শূরা ৪৩)
(৩৪৭০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ, এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অবিচল থাকবে।
عَن أَبِـيْ هُرَيرَةَ أَنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إنّ لِي قَرَابةً أصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوني وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ وَأحْلَمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكأنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلٰى ذٰلِكَ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সহিষ্ণুতার মাহাত্ম্য
(৩৪৭১) উবাদাহ বিন স্বামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তির দেহ (কারো অত্যাচারের ফলে) ক্ষতবিক্ষত হয়, অতঃপর তা সে সদকা করে দেয়, (অর্থাৎ, অত্যাচারীকে ক্ষমা করে দেয়) আল্লাহ তাআলা অনুরূপ তার পাপ খণ্ডন করে দেন যেরূপ সে (ক্ষমা প্রদর্শন করে যে পরিমাণে) সদকা করে থাকে।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ رَجُلٍ يُجْرَحُ فِي جَسَدِهِ جِرَاحَةً فَيَتَصَدَّقُ بِهَا إِلَّا كَفَّرَ اللهُ عَنْهُ مِثْلَ مَا تَصَدَّقَ بِهِ
পরিচ্ছেদঃ সহিষ্ণুতার মাহাত্ম্য
(৩৪৭২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’নাজদ’ অভিমুখে এক অশ্বারোহী দলকে পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর তাঁরা বনূ হানীফা বংশের একজন লোককে ধরে আনলেন। যার নাম, ’সুমামাহ বিন উসাল।’ য়্যামামা (বর্তমানে রিয়ায) শহরবাসীর তিনি ছিলেন একজন নেতা। তাঁকে মসজিদের স্তম্ভসমূহের মধ্যে একটি স্তম্ভে সাহাবীরা বেঁধে দিলেন। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাক্যালাপের জন্যে বের হলেন। তিনি বললেন,
مَاذَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟
অর্থাৎ, হে সুমামাহ! আমাদের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? উত্তরে তিনি বললেন,
عِنْدِىْ يَا مُـحَمَّدُ خَيْرٌ إِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلٰى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيْدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ
অর্থাৎ, আমার কাছে আপনার সম্পর্কে ধারণা খুব উত্তম। যদি আমাকে আপনি হত্যা করেন, তবে আমি তার যোগ্য (অর্থাৎ, আমার মত অপরাধীকে হত্যা করতে পারেন। অথবা আমাকে খুন করলে সে খুনের বদলা নেওয়া হবে।) আর যদি হত্যা না করে সৌজন্য প্রদর্শন করেন, তবে আপনি একজন কৃতজ্ঞের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করবেন। আর যদি মাল-ধন চান, তাহলে আপনি যতটা চাইবেন, আপনাকে দেওয়া হবে। এই উত্তর শুনে তিনি তাঁকে ছেড়ে দিলেন। (আর কোন কথা বললেন না।)
আবার আগামী কাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে ঐ একই প্রশ্ন করলেন। সুমামাও উত্তরে তাই বললেন, যা তিনি প্রথম দিনে বলেছিলেন। এ দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কিছু না বলে চলে গেলেন। তৃতীয় দিন আবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে প্রথম দু’দিনের মত প্রশ্ন করলেন। সুমামাও উত্তরে প্রথম দু’দিনের উত্তর পুনরাবৃত্তি করলেন। আজকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন, সুমামার বাঁধনটা খুলে দাও।
সুতরাং বাঁধনমুক্ত হয়ে সুমামা মসজিদের নিকটবর্তী খেজুর বাগানে গেলেন এবং গোসল করলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে পাঠ করলেন,
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُـحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবূদ (পূজ্য) নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রসূল। অর্থাৎ, তিনি মুসলিম হয়ে গেলেন।
তারপর মন্তব্য করলেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে আপনার মুখমণ্ডল আমার কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় ছিল, কিন্তু আজ আপনার মুখমণ্ডল আমার নিকট সব থেকে প্রিয় মনে হচ্ছে। আল্লাহর কসম! আপনার দ্বীন আমার নিকটে সবচেয়ে অপ্রিয় ছিল, কিন্তু আজ আপনার দ্বীনই সব থেকে প্রিয় বলে মনে হচ্ছে। আল্লাহর কসম! আপনার শহর আমার নিকট সব থেকে বেশী অপ্রিয় ছিল, কিন্তু আজ আপনার শহর আমার নিকটে সব চেয়ে বেশী প্রিয় মনে হচ্ছে। আপনার অশ্বারোহী দল যখন আমাকে গ্রেফতার করে, তখন আমি উমরা উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। এক্ষণে এ ব্যাপারে আপনার রায় কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শুভ সংবাদ দিলেন এবং তাঁকে উমরা করার অনুমতি প্রদান করলেন।
অনুমতি পেয়ে তিনি উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা হয়ে গেলেন এবং যখন মক্কায় উপস্থিত হলেন, তখন একজন ব্যক্তি বলল, আপনি শেষ কালে বিধর্মী হয়ে গেছেন? উত্তরে বললেন, না, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর শোনো! আল্লাহর কসম! আগামীতে আমার এলাকা থেকে গমের একটা দানাও তোমাদের এখানে আসবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি না পাওয়া যাবে।
-
পরিচ্ছেদঃ সহিষ্ণুতার মাহাত্ম্য
(৩৪৭৩) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, এক যুদ্ধ সফরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে এক বাবলা গাছে নিজের তরবারি লটকে রেখে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় এক কাফের বেদুঈন এসে সেই তরবারি নিয়ে (তাঁর উপর তুলে ধরে) বলল, ’এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে?’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’আল্লাহ।’ এ কথা শোনামাত্র তরবারি তাঁর হাত হতে পড়ে গেল। তিনি তা উঠিয়ে নিয়ে (তার উপর তুলে ধরে) বললেন, এখন তোমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে? বেদুঈন বলল, ’কেউ না।’ অথবা ’আপনি।’
দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাফ ক’রে দিলেন। ফলে সে মুসলিম হয়ে গেল। অন্য বর্ণনা মতে সে মুসলিম হয়নি; কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ হল যে, সে তাঁর বিরুদ্ধে কোনক্রমেই আর যুদ্ধ করবে না।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ نَزَلَ تَحْتَ شَجَرَةٍ وَاسْتَظَلَّ بِهَا وَعَلَّقَ سَيْفَهُ فَتَفَرَّقَ النَّاسُ فِي الشَّجَرِ يَسْتَظِلُّونَ وَبَيْنَا نَحْنُ كَذٰلِكَ إِذْ دَعَانَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَجِئْنَا فَإِذَا أَعْرَابِيٌّ قَاعِدٌ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ إِنَّ هَذَا أَتَانِي وَأَنَا نَائِمٌ فَاخْتَرَطَ سَيْفِي فَاسْتَيْقَظْتُ وَهُوَ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِي مُخْتَرِطٌ صَلْتًا قَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي قُلْتُ اللهُ فَشَامَهُ ثُمَّ قَعَدَ فَهُوَ هَذَا قَالَ وَلَمْ يُعَاقِبْهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ