পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

মহান আল্লাহ বলেছেন,

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَـحْزَنُوْنَ، الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوا يَتَّقُوْنَ، لَهُمُ البُشْرٰى فِـيْ الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِـي الْاَخِرَةِ لَا تَبْدِيْلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

অর্থাৎ, মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা আছে আর না তারা বিষণ্ণ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনে তাক্বওয়া (সাবধানতা, পরহেযগারী) অবলম্বন ক’রে থাকে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই; এটাই হচ্ছে বিরাট সফলতা। (সূরা ইউনুস ৬২-৬৪) তিনি আরো বলেন,

وَهُزِّي إِلَيْكِ بِـجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا، فَكُلِـيْ وَاشْرَبِـيْ

অর্থাৎ, তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কা- হিলিয়ে দাও; ওটা তোমার সামনে সদ্যপক্ক তাজা খেজুর ফেলতে থাকবে। সুতরাং আহার কর, পান কর---। (সূরা মারয়্যাম ২৫-২৬) তিনি আরো বলেছেন,

كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكرِيّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِنْدَهَا رِزْقًا قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنّٰـى لَكِ هٰذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَرْزُقُ مَنْ يَّشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

অর্থাৎ, যখনই যাকারিয়া মিহরাবে (কক্ষে) তার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখনই তার নিকট খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত, ’হে মারয়্যাম! এসব তুমি কোথা থেকে পেলে?’ সে বলত, ’তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপর্যাপ্ত জীবিকা দান ক’রে থাকেন।’ (সূরা আলে ইমরান ৩৭)

তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوْهُمْ وَمَا يَعْبُدُوْنَ إِلاَّ اللهَ فَأْوُوْا إِلٰـى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَّحْمَتِهِ وَيُهَيِّـيءْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرْفَقًا وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ

অর্থাৎ, তোমরা যখন তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হলে তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর; তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করবার ব্যবস্থা করবেন। তুমি দেখলে দেখতে, সূর্য উদয়কালে তাদের গুহার ডান দিকে হেলে অতিক্রম করছে এবং অস্তকালে তাদেরকে অতিক্রম করছে বাম পাশ দিয়ে---। (সূরা কাহাফ ১৬-১৭)


(২৮৯৮) আবূ মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত, ’আসহাবে সুফ্ফাহ’ (তৎকালীন মসজিদে নববীতে একটি ছাউনিবিশিষ্ট ঘর ছিল। সেখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তত্ত্বাবধানে কিছু সাহাবা আশ্রয় গ্রহণ করতেন ও বসবাস করতেন। তাঁরা) গরীব মানুষ ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাদের মধ্য থেকে) তৃতীয় জনকে সাথে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের ব্যবস্থা আছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠজনকে সাথে নিয়ে যায়।’’ আবূ বকর (রাঃ) তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে সাথে নিয়ে গেলেন।

আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং এশার নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এশার নামাযের পর তিনি পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে ফিরে আসেন এবং আল্লাহর ইচ্ছামত রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, ’বাইরে কিসে আপনাকে আটকে রেখেছিল?’ তিনি বললেন, ’তুমি এখনো তাঁদেরকে খাবার দাওনি?’ স্ত্রী বললেন, ’আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাজি হলেন না। তাঁদের সামনে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তা খাননি।’ আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি লুকিয়ে গেলাম। তিনি (রাগাম্বিত হয়ে) বলে উঠলেন, ’ওরে মূর্খ!’ অতঃপর নাক কাটা ইত্যাদি বলে গালাগালি করলেন এবং (মেহমানদের উদ্দেশ্যে) বললেন, ’আপনারা স্বচ্ছন্দে খান, আল্লাহর কসম! আমি মোটেই খাব না।’

আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, ’আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা (খাদ্যগ্রাস) উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ’সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে বেশি খাবার রয়ে গেল।’ আবূ বকর (রাঃ) খাবারের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ’হে বনু ফিরাসের বোন! এ কী?’ তিনি বললেন, ’আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এ তো পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি!’ সুতরাং আবূ বকর (রাঃ)ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, ’আমার (খাব না বলে) সে কসম শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’ তারপর তিনি আরো খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাবার তাঁর নিকটেই ছিল।

এদিকে আমাদের এবং অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে চুক্তি ছিল তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে।) অতঃপর আমরা তাদেরকে তাদের বারো জনের নেতৃত্বে ভাগ ক’রে দিই। প্রত্যেকের সাথেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যেকের সাথে কতজন ছিল তা আল্লাহই বেশি জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য আহার করে।

অন্য বর্ণনায় আছে, আবূ বকর ’খাবেন না’ বলে কসম করলেন, তা দেখে তাঁর স্ত্রীও ’খাবেন না’ বলে কসম করলেন। আর তা দেখে মেহমানরাও তিনি সঙ্গে না খেলে ’খাবেন না’ বলে কসম করলেন! আবূ বকর বললেন, ’এ সব (কসম) শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খাবার আনতে বলে নিজে খেলেন এবং মেহমানরাও খেলেন। তাঁরা যখনই লুকমা (খাদ্যগ্রাস) উঠিয়ে খাচ্ছিলেন, তখনই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) (স্ত্রীকে) বললেন, ’হে বনু ফিরাসের বোন! এ কী?’ স্ত্রী বললেন, ’আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এখন এ তো খেতে শুরু করার আগের চেয়ে অধিক বেশি!’ সুতরাং সকলেই খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান বলেন, ’তিনি তা হতে খেলেন।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, আবূ বকর আব্দুর রহমানকে বললেন, ’তোমার মেহমান নাও। (তুমি তাদের খাতির কর) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাচ্ছি। আমার ফিরে আসার আগে আগেই তুমি (খাইয়ে) তাঁদের খাতির সম্পন্ন করো।’ সুতরাং আব্দুর রহমান তাঁর নিকট যে খাবার ছিল, তা নিয়ে তাঁদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ’আপনারা খান।’ কিন্তু মেহমানরা বললেন, ’আমাদের বাড়ি-ওয়ালা কোথায়?’ তিনি বললেন, ’আপনারা খান।’ তাঁরা বললেন, ’আমাদের বাড়ি-ওয়ালা না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না।’ আব্দুর রহমান বললেন, ’আপনারা আমাদের পক্ষ থেকে মেহমাননেওয়াযী গ্রহণ করুন। কারণ তিনি এসে যদি দেখেন যে, আপনারা খাননি, তাহলে অবশ্যই আমরা তাঁর নিকট থেকে (বড় ভৎর্সনা) পাব।’ কিন্তু তাঁরা (খেতে) অস্বীকার করলেন।

(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি বুঝে নিলাম যে, তিনি আমার উপর খাপ্পা হবেন। অতঃপর তিনি এলে আমি তাঁর নিকট থেকে সরে গেলাম। তিনি বললেন, ’কী করেছ তোমরা?’ তাঁরা তাঁকে ব্যাপারটা খুলে বললেন। অতঃপর তিনি ডাক দিলেন, ’আব্দুর রহমান!’ আব্দুর রহমান নিরুত্তর থাকলেন। তিনি আবার ডাক দিলেন, ’আব্দুর রহমান?’ কিন্তু তখনও তিনি নীরব থাকলেন। তারপর আবার বললেন, ’এ বেওকুফ! আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, যদি তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছ, তাহলে এসে যাও।’

(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি (বাধ্য হয়ে) বের হয়ে এলাম। বললাম, ’আপনি আপনার মেহমানদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, (আমি তাঁদেরকে খেতে দিয়েছিলাম কি না?)’ তাঁরা বললেন, ’ও সত্যই বলেছে। ও আমাদের কাছে খাবার নিয়ে এসেছিল। (আমরাই আপনার অপেক্ষায় খাইনি।)’ আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’তোমরা আমার অপেক্ষা ক’রে বসে আছ। কিন্তু আল্লাহর কসম! আজ রাতে আমি আহার করব না।’ তাঁরা বললেন, ’আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমরাও খাব না।’ তিনি বললেন, ’ধিক্কার তোমাদের প্রতি! তোমাদের কি হয়েছে যে, আমাদের পক্ষ থেকে মেহমাননেওয়াযী গ্রহণ করবে না?’ (অতঃপর আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্য বললেন,) ’নিয়ে এস তোমার খাবার।’ তিনি খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর তাতে হাত রেখে বললেন, ’বিস্মিল্লাহ। প্রথম (রাগের অবস্থায় কসম) ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খেলেন এবং মেহমানরাও আহার করলেন।

وَ عَنْ أَبِـيْ مُحَمَّدٍ عَبدِ الرَّحْمَانِ بنِ أَبِـيْ بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفّةِ كَانُوا أُنَاساً فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ مَرَّةً مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ فَلْيَذْهَبْ بثَالِثٍ وَمنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ بِسَادِسٍ أَوْ كَمَا قَالَ وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ جَاءَ بِثَلاَثَةٍ وَانْطَلَقَ النَّبِيِّ ﷺ بعَشَرَةٍ وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيّ ﷺ ثُمَّ لَبِثَ حَتّٰـى صَلَّى العِشَاءَ ثُمَّ رَجَعَ فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ قَالَتِ امْرَأتُهُ : مَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ ؟ قَالَ : أَوَمَا عَشَّيْتِهمْ ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتّٰـى تَجِيءَ وَقَدْ عَرَضُوا عَلَيْهِمْ قَالَ : فَذَهَبتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ فَقَالَ : يَا غُنْثَرُ فَجَدَّعَ وَسَبَّ وَقَالَ : كُلُوا لاَ هَنِيئاً وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَداً قَالَ : وَايْمُ اللهِ مَا كُنَّا نَأخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلاَّ رَبَا مِنْ أَسفَلِهَا أَكْثَرَ مِنهَا حَتّٰـى شَبِعُوا وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبلَ ذٰلِكَ فَنَظَرَ إِلَيهَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لاِمرَأَتِهِ : يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هٰذَا ؟ قَالَتْ : لاَ وَقُرَّةِ عَينِيْ لَهِيَ الآنَ أَكثَرُ مِنهَا قَبلَ ذٰلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ فَأَكَلَ مِنهَا أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ : إنَّمَا كَانَ ذٰلِكَ مِنَ الشَّيطَانِ يَعنِيْ : يَمِينَهُ ثُمَّ أَكَلَ مِنهَا لُقْمَةً ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ، فَمَضَى الأَجَلُ فَتَفَرَّقْنَا اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلاً مَعَ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أُنَاسٌ اللهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ فَأَكَلُوا مِنْهَا أَجْمَعُونَ
وَفِي رِوَايةٍ : فَحَلَفَ أَبُو بَكْرٍ لاَ يَطْعَمُهُ فَحَلَفَتِ المَرْأَةُ لاَ تَطْعَمُهُ فَحَلَفَ الضَّيْفُ - أَو الأَضْيَافُ - أَنْ لاَ يَطْعَمُهُ أَوْ يَطْعَمُوهُ حَتّٰـى يَطْعَمَهُ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ : هَذِهِ مِنَ الشَّيْطَانِ فَدَعَا بِالطَّعَامِ فَأكَلَ وَأَكَلُوا فَجَعَلُوا لاَ يَرْفَعُونَ لُقْمَةً إِلاَّ رَبَتْ مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرُ مِنْهَا فَقَالَ : يَا أُخْتَ بَني فِرَاسٍ مَا هٰذَا ؟ فَقَالَتْ : وَقُرَّةِ عَيْنِي إنَّهَا الآنَ لأَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ أنْ نَأكُلَ فَأكَلُوا وَبَعَثَ بِهَا إِلَى النَّبيِّ ﷺ فَذَكَرَ أنَّهُ أكَلَ مِنْهَا
وَفِي رِوايَةٍ : إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَالَ لِعَبْدِ الرَّحْمَانِ : دُونَكَ أَضْيَافَكَ فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ إِلَى النَّبيِّ ﷺ فَافْرُغْ مِنْ قِرَاهُم قَبْلَ أَنْ أَجِيءَ فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمانِ فَأَتَاهُمْ بِمَا عِنْدَهُ فَقَالَ : اِطْعَمُوا ؛ فَقَالَوا : أَينَ رَبُّ مَنْزِلِنا ؟ قَالَ : اِطْعَمُوا قَالَوا : مَا نحنُ بِآكِلِينَ حَتّٰـى يَجِيءَ رَبُّ مَنْزِلِنَا قَالَ : اقْبَلُوا عَنَّا قِرَاكُمْ فَإِنَّهُ إِنْ جَاءَ وَلَمْ تَطْعَمُوا لَنَلْقَيَنَّ مِنْهُ فَأبَوْا فَعَرَفْتُ أَنَّهُ يَجِدُ عَلَيَّ فَلَمَّا جَاءَ تَنَحَّيْتُ عَنْهُ فَقَالَ : مَا صَنَعْتُمْ ؟ فَأَخْبَرُوهُ فَقَالَ : يَا عَبْدَ الرَّحمانِ فَسَكَتُّ : ثُمَّ قَالَ : يَا عَبْدَ الرَّحْمانِ فَسَكَتُّ فَقَالَ: يَا غُنْثَرُ أَقْسَمْتُ عَلَيْكَ إِنْ كُنْتَ تَسْمَعُ صَوتِي لَمَا جِئْتَ فَخَرَجْتُ فَقُلْتُ : سَلْ أَضْيَافَكَ فَقَالَوا : صَدَقَ أَتَانَا بِهِ فَقَالَ : إِنَّمَا انْتَظَرْتُمُونِي وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ اللَّيْلَةَ فَقَالَ الآخَرُونَ : وَاللهِ لاَ نَطْعَمُهُ حَتّٰـى تَطْعَمَهُ فَقَالَ : وَيْلَكُمْ مَا لَكُمْ لاَ تَقْبَلُونَ عَنَّا قِرَاكُمْ ؟ هَاتِ طَعَامَكَ، فَجَاءَ بِهِ فَوَضَعَ يَدَهُ فَقَالَ: بِسْمِ اللهِ الأُولَى مِنَ الشَّيْطَانِ فَأَكَلَ وَأَكَلُوا متفق عَلَيْهِ

و عن ابـي محمد عبد الرحمان بن ابـي بكر الصديق رضي الله عنهما : ان اصحاب الصفة كانوا اناسا فقراء وان النبي ﷺ قال مرة من كان عنده طعام اثنين فليذهب بثالث ومن كان عنده طعام اربعة فليذهب بخامس بسادس او كما قال وان ابا بكر جاء بثلاثة وانطلق النبي ﷺ بعشرة وان ابا بكر تعشى عند النبي ﷺ ثم لبث حتـى صلى العشاء ثم رجع فجاء بعد ما مضى من الليل ما شاء الله قالت امراته : ما حبسك عن اضيافك ؟ قال : اوما عشيتهم ؟ قالت: ابوا حتـى تجيء وقد عرضوا عليهم قال : فذهبت انا فاختبات فقال : يا غنثر فجدع وسب وقال : كلوا لا هنيىا والله لا اطعمه ابدا قال : وايم الله ما كنا ناخذ من لقمة الا ربا من اسفلها اكثر منها حتـى شبعوا وصارت اكثر مما كانت قبل ذلك فنظر اليها ابو بكر فقال لامراته : يا اخت بني فراس ما هذا ؟ قالت : لا وقرة عيني لهي الان اكثر منها قبل ذلك بثلاث مرات فاكل منها ابو بكر وقال : انما كان ذلك من الشيطان يعني : يمينه ثم اكل منها لقمة ثم حملها الى النبي ﷺ فاصبحت عنده وكان بيننا وبين قوم عهد، فمضى الاجل فتفرقنا اثني عشر رجلا مع كل رجل منهم اناس الله اعلم كم مع كل رجل فاكلوا منها اجمعون وفي رواية : فحلف ابو بكر لا يطعمه فحلفت المراة لا تطعمه فحلف الضيف - او الاضياف - ان لا يطعمه او يطعموه حتـى يطعمه فقال ابو بكر : هذه من الشيطان فدعا بالطعام فاكل واكلوا فجعلوا لا يرفعون لقمة الا ربت من اسفلها اكثر منها فقال : يا اخت بني فراس ما هذا ؟ فقالت : وقرة عيني انها الان لاكثر منها قبل ان ناكل فاكلوا وبعث بها الى النبي ﷺ فذكر انه اكل منها وفي رواية : ان ابا بكر قال لعبد الرحمان : دونك اضيافك فاني منطلق الى النبي ﷺ فافرغ من قراهم قبل ان اجيء فانطلق عبد الرحمان فاتاهم بما عنده فقال : اطعموا ؛ فقالوا : اين رب منزلنا ؟ قال : اطعموا قالوا : ما نحن باكلين حتـى يجيء رب منزلنا قال : اقبلوا عنا قراكم فانه ان جاء ولم تطعموا لنلقين منه فابوا فعرفت انه يجد علي فلما جاء تنحيت عنه فقال : ما صنعتم ؟ فاخبروه فقال : يا عبد الرحمان فسكت : ثم قال : يا عبد الرحمان فسكت فقال: يا غنثر اقسمت عليك ان كنت تسمع صوتي لما جىت فخرجت فقلت : سل اضيافك فقالوا : صدق اتانا به فقال : انما انتظرتموني والله لا اطعمه الليلة فقال الاخرون : والله لا نطعمه حتـى تطعمه فقال : ويلكم ما لكم لا تقبلون عنا قراكم ؟ هات طعامك، فجاء به فوضع يده فقال: بسم الله الاولى من الشيطان فاكل واكلوا متفق عليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৮৯৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে অনেক ’মুহাদ্দাস’ লোক ছিল। যদি আমার উম্মতের মধ্যে কেউ ’মুহাদ্দাস’ থাকে, তাহলে সে হল উমার। (বুখারী ৩৪৬৯, ৩৬৮৯)

ইমাম মুসলিমও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। উক্ত দুই গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, ইবনে অহাব বলেন, ’মুহাদ্দাস’ হলেন তাঁরা, যাঁদের মনে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ইলহাম (ভালো-মন্দের জ্ঞান প্রক্ষেপ) করা হয়। (মুসলিম ৬৩৫৭)

وَ عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ نَاسٌ مُحَدَّثُوْنَ، فَإنْ يَكُ فِي أُمَّتِي أَحَدٌ فَإِنَّهُ عُمَرُ رواه البخاري ورواه مسلم
من رواية عَائِشَةَ وفي روايتهما قَالَ ابن وهب مُحَدَّثُونَ أَيْ مُلْهَمُونَ

و عن ابـي هريرة قال : قال رسول الله ﷺ لقد كان فيما قبلكم من الامم ناس محدثون، فان يك في امتي احد فانه عمر رواه البخاري ورواه مسلم من رواية عاىشة وفي روايتهما قال ابن وهب محدثون اي ملهمون

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০০) জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, কুফাবাসীরা উমার ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) এর কাছে সা’দ ইবনে আবী অক্কাস (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ক’রে বলল, ’সে ভালভাবে নামায পড়তে জানে না।’ কাজেই তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং (যখন তিনি উমার (রাঃ) এর কাছে হাযির হলেন, তখন) তিনি তাঁকে বললেন, ’হে ইসহাকের পিতা! ওরা বলছে যে, তুমি উত্তমভাবে নামায আদায় কর না।’ জবাবে তিনি বললেন, ’যাই হোক, আল্লাহর কসম! আমি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামাযের মত নামায পড়াই, তা থেকে (একটুও) কম করি না। যোহর ও আসরের দুই নামাযের প্রথম দু’ রাকআতে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করি এবং দ্বিতীয় দু-রাকআতকে সংক্ষিপ্ত করি।’

উমার (রাঃ) (এ কথা শুনে বললেন,) ’ইসহাকের পিতা! তোমার সম্পর্কে ঐ ধারণাই ছিল।’ পরে তিনি তাঁর সঙ্গে একজন বা কয়েকজন লোক কূফা নগরীতে প্রেরণ করলেন। যাতে করে কূফা নগরীর প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সা’দ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সুতরাং প্রত্যেক মসজিদেই তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগল এবং সকলেই তাঁর প্রশংসা করল। শেষ পর্যন্ত যখন তারা বনু আব্সার মসজিদে উপনীত হল। তখন সেখানে আবূ সা’দাহ উসামাহ ইবনে ক্বাতাদাহ নামক এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, ’যখন আপনারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসাই করলেন, তখন (প্রকাশ ক’রে দিচ্ছি শুনুন,) সা’দ সেনা বাহিনীর সঙ্গে (জিহাদে) যান না, নায্যভাবে (কোন জিনিস) বন্টন করেন না এবং ইনসাফের সাথে বিচার করেন না।’

সা’দ তখন (জবাবে) বলে উঠলেন, ’আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তিনটি বদ্দুআ করবঃ হে আল্লাহ! যদি তোমার বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, রিয়া (লোকপ্রদর্শন হেতু) ও খ্যাতির জন্য এভাবে দণ্ডায়মান হয়ে থাকে, তাহলে তুমি ওর আয়ু দীর্ঘ ক’রে দাও এবং ওর দরিদ্রতা বাড়িয়ে দাও এবং ওকে ফিতনার কবলে ফেল।’ (বাস্তবিক তার অবস্থা ঐরূপই হয়েছিল।) সুতরাং যখন তাকে (কুশল) জিজ্ঞাসা করা হত, তখন উত্তরে বলত, ’অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং ফিতনায় পতিত হয়েছি; সা’দের বদ্দুআ আমাকে লেগে গেছে।’

জাবের ইবনে সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী আব্দুল মালিক বিন উমাইর বলেন, ’আমি পরে তাকে দেখেছি যে, সে অত্যন্ত বার্ধক্যের কারণে তার চোখের ভ্রূগুলি চোখের উপরে লটকে পড়েছে আর রাস্তায় রাস্তায় দাসীদেরকে উত্যক্ত করত ও আঙ্গুল বা চোখ দ্বারা তাদেরকে ইশারা করত।’

وَ عَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : شَكَا أَهْلُ الكُوفَةِ سَعْداً يَعنِي : ابنَ أَبِـيْ وَقَّاصٍ إِلَى عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ فَعَزَلَهُ وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ عَمَّاراً فَشَكَوا حَتّٰـى ذَكَرُوا أَنَّهُ لاَ يُحْسِنُ يُصَلِّي، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَقَالَ : يَا أَبَا إسْحَاقَ إنَّ هَؤُلاَءِ يَزْعُمُونَ أَنَّكَ لاَ تُحْسِنُ تُصَلِّي فَقَالَ : أَمَّا أَنَا وَاللهِ فَإنِّي كُنْتُ أُصَلِّي بِهِمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ ﷺ لاَ أَخْرِمُ عَنْها أُصَلِّي صَلاَتَي العِشَاءِ فَأَرْكُدُ فِي الأُولَيَيْنِ وَأُخِفُّ فِي الأُخْرَيَيْنِ قَالَ : ذٰلِكَ الظَّنُّ بِكَ يَا أَبَا إِسْحَاقَ وَأَرْسَلَ مَعَهُ رَجُلاً أَوْ رِجَالاً - إِلَى الكُوفَةِ يَسْأَلُ عَنْهُ أَهْلَ الكُوفَةِ فَلَمْ يَدَعْ مَسْجِداً إِلاَّ سَأَلَ عَنْهُ وَيُثْنُونَ مَعْرُوفاً حَتّٰـى دَخَلَ مَسْجِداً لِبَنِي عَبْسٍ فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ يُقَالَ لَهُ أُسَامَةُ بْنُ قَتَادَةَ يُكَنَّى أَبَا سَعْدَةَ، فَقَالَ: أَمَا إِذْ نَشَدْتَنَا فَإِنَّ سَعْداً كَانَ لاَ يَسِيرُ بِالسَّرِيَّةِ وَلاَ يَقْسِمُ بِالسَّوِيَّةِ وَلاَ يَعْدِلُ فِي القَضِيَّةِ قَالَ سَعْدٌ : أَمَا وَاللهِ لأَدْعُوَنَّ بِثَلاَثٍ : اَللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ عَبْدُكَ هٰذَا كَاذِباً قَامَ رِيَاءً وَسُمْعَةً فَأَطِلْ عُمُرَهُ وَأَطِلْ فَقْرَهُ وَعَرِّضْهُ لِلْفِتَنِ وَكَانَ بَعْدَ ذٰلِكَ إِذَا سُئِلَ يَقُوْلُ : شَيْخٌ كَبيرٌ مَفْتُونٌ أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعْدٍ قَالَ عَبدُ المَلِكِ بنُ عُمَيْرٍ الرَّاوِي عَن جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ : فَأَنَا رَأَيْتُهُ بَعْدُ قَدْ سَقَطَ حَاجِبَاهُ عَلَى عَيْنَيْهِ مِنَ الكِبَرِ وَإِنَّهُ لَيَتَعَرَّضُ لِلْجَوارِي فِي الطُّرُقِ فَيَغْمِزُهُنَّ متفق عَلَيْهِ

و عن جابر بن سمرة رضي الله عنهما قال : شكا اهل الكوفة سعدا يعني : ابن ابـي وقاص الى عمر بن الخطاب فعزله واستعمل عليهم عمارا فشكوا حتـى ذكروا انه لا يحسن يصلي، فارسل اليه فقال : يا ابا اسحاق ان هولاء يزعمون انك لا تحسن تصلي فقال : اما انا والله فاني كنت اصلي بهم صلاة رسول الله ﷺ لا اخرم عنها اصلي صلاتي العشاء فاركد في الاوليين واخف في الاخريين قال : ذلك الظن بك يا ابا اسحاق وارسل معه رجلا او رجالا - الى الكوفة يسال عنه اهل الكوفة فلم يدع مسجدا الا سال عنه ويثنون معروفا حتـى دخل مسجدا لبني عبس فقام رجل منهم يقال له اسامة بن قتادة يكنى ابا سعدة، فقال: اما اذ نشدتنا فان سعدا كان لا يسير بالسرية ولا يقسم بالسوية ولا يعدل في القضية قال سعد : اما والله لادعون بثلاث : اللهم ان كان عبدك هذا كاذبا قام رياء وسمعة فاطل عمره واطل فقره وعرضه للفتن وكان بعد ذلك اذا سىل يقول : شيخ كبير مفتون اصابتني دعوة سعد قال عبد الملك بن عمير الراوي عن جابر بن سمرة : فانا رايته بعد قد سقط حاجباه على عينيه من الكبر وانه ليتعرض للجواري في الطرق فيغمزهن متفق عليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০১) উরওয়াহ বিন যুবাইর হতে বর্ণিত, সাঈদ ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল (রাঃ) এর বিরুদ্ধে আরওয়া বিনতে আওস নামক এক মহিলা মারওয়ান ইবনে হাকামের দরবারে মোকাদ্দামা পেশ করল; সে দাবি জানাল যে, ’সাঈদ আমার কিছু জমি আত্মসাৎ করেছেন।’ সাঈদ বললেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (এ বিষয়ে ধমক) শোনার পরও কি আমি তার কিছু জমি দাবিয়ে নিতে পারি?’ মারওয়ান বললেন, ’আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কি (ধমক) শুনেছেন?’

তিনি বললেন, ’আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ’’যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দাবিয়ে নেবে, (কিয়ামতের দিনে) সাত তবক যমীন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।’’ এ কথা শুনে মারওয়ান বললেন, ’এরপর আমি আপনার কাছে কোন প্রমাণ তলব করব না।’ সুতরাং সাঈদ (বাদী পক্ষীয়) মহিলার প্রতি বদ্দুআ ক’রে বললেন, ’হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে ওর চক্ষু অন্ধ ক’রে দাও এবং ওকে ওর জমিতেই মৃত্যু দাও।’

বর্ণনাকারী বলেন, ’মহিলাটির মৃত্যুর পূর্বে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল এবং একবার সে নিজ জমিতে চলছিল। হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে মারা গেল।’

মুহাম্মাদ বিন যায়দ বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার কর্তৃক মুসলিমের অনুরূপ এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাকে দেখেছেন, সে অন্ধ অবস্থায় দেওয়াল হাতড়ে বেড়াত। বলত, ’আমাকে সাঈদের বদ্দুআ লেগে গেছে।’ আর সে যে জায়গার ব্যাপারে সাঈদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ করেছিল, সেই জায়গার এক কুঁয়াতে পড়ে গিয়ে সেটাই তার কবর হয়ে গেছে!

وَ عَنْ عُرْوَةَ بنِ الزُّبَيرِ : أَنَّ سَعِيدَ بنَ زَيدِ بنِ عَمرِو بنِ نُفَيلٍ خَاصَمَتْهُ أَرْوَى بِنْتُ أَوْسٍ إِلَى مَرْوَانَ بْنِ الحَكَمِ وَادَّعَتْ أَنَّهُ أَخَذَ شَيْئاً مِنْ أَرْضِهَا فَقَالَ سَعِيدٌ : أَنَا كُنْتُ آخُذُ شَيئاً مِنْ أَرْضِهَا بَعْدَ الَّذِي سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ : مَاذَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ أَخَذَ شِبْراً مِنَ الأَرْضِ ظُلْماً طُوِّقَهُ إِلَى سَبْعِ أَرْضِينَ فَقَالَ لَهُ مَرْوَانُ : لاَ أَسْألُكَ بَيِّنَةً بَعْدَ هٰذَا فَقَالَ سَعِيدٌ : اَللّٰهُمَّ إنْ كَانَتْ كَاذِبَةً فَأَعْمِ بَصَرَها وَاقْتُلْهَا فِي أَرْضِهَا قَالَ : فَمَا مَاتَتْ حَتّٰـى ذَهَبَ بَصَرُهَا وَبَيْنَمَا هِيَ تَمْشِي فِي أَرْضِهَا إِذْ وَقَعَتْ فِي حُفْرَةٍ فَماتَتْ متفق عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَن مُحَمَّدِ بنِ زَيدِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ بِمَعْنَاهُ وَأَنَّهُ رَآهَا عَمْيَاءَ تَلْتَمِسُ الجُدُرَ تَقُوْلُ : أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعِيدٍ وَأنَّهَا مَرَّتْ عَلَى بِئرٍ فِي الدَّارِ الَّتي خَاصَمَتْهُ فِيهَا فَوَقَعَتْ فِيهَا وكانتْ قَبْرَها

و عن عروة بن الزبير : ان سعيد بن زيد بن عمرو بن نفيل خاصمته اروى بنت اوس الى مروان بن الحكم وادعت انه اخذ شيىا من ارضها فقال سعيد : انا كنت اخذ شيىا من ارضها بعد الذي سمعت من رسول الله ﷺ قال : ماذا سمعت من رسول الله ﷺ ؟ قال : سمعت رسول الله ﷺ يقول من اخذ شبرا من الارض ظلما طوقه الى سبع ارضين فقال له مروان : لا اسالك بينة بعد هذا فقال سعيد : اللهم ان كانت كاذبة فاعم بصرها واقتلها في ارضها قال : فما ماتت حتـى ذهب بصرها وبينما هي تمشي في ارضها اذ وقعت في حفرة فماتت متفق عليه وفي رواية لمسلم عن محمد بن زيد بن عبد الله بن عمر بمعناه وانه راها عمياء تلتمس الجدر تقول : اصابتني دعوة سعيد وانها مرت على بىر في الدار التي خاصمته فيها فوقعت فيها وكانت قبرها

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০২) জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, উহুদের যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়। রাতে আমাকে আমার পিতা ডেকে বললেন, ’আমার মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচরবৃন্দের মধ্যে যাঁরা সর্বপ্রথম শহীদ হবেন, আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর, তোমাকে ছাড়া ধরাপৃষ্ঠে প্রিয়তম আর কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমার উপর ঋণ আছে, তা পরিশোধ ক’রে দেবে। তোমার বোনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ সুতরাং যখন আমরা ভোরে উঠলাম, তখন দেখলাম যে, সর্বপ্রথম উনিই শাহাদত বরণ করেছেন। আমি তাঁর সাথে আর এক ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করলাম। তারপর অন্যজনকে তাঁর সঙ্গে একই কবরে দাফন করাতে আমার মনে শান্তি হল না। সুতরাং ছমাস পর আমি তাঁকে কবর হতে বের করলাম। (দেখা গেল) তার কান ব্যতীত (তার দেহ) সেদিনকার মত অবিকল ছিল, যেদিন তাকে কবরে রাখা হয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে একটি আলাদা কবরে দাফন করলাম।

وَعَنْ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : لَمَّا حَضَرَتْ أُحُدٌ دعَانِي أَبِـيْ مِنَ اللَّيلِ فَقَالَ : مَا أُرَاني إِلاَّ مَقْتُولاً فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ غَيْرَ نَفْسِ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَإِنَّ عَلَيَّ دَيْناً فَاقْضِ وَاسْتَوْصِ بِأَخَوَاتِكَ خَيْراً فَأَصْبَحْنَا فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ وَدَفَنْتُ مَعَهُ آخَرَ فِي قَبْرِهِ ثُمَّ لَمْ تَطِبْ نَفْسِي أَنْ أَتْرُكَهُ مَعَ آخَرَ فَاسْتَخْرَجْتُهُ بَعْدَ سِتَّةِ أَشْهُرٍ فَإِذَا هُوَ كَيَوْمِ وَضَعْتُهُ غَيْرَ أُذنِهِ فَجَعَلْتُهُ فِي قَبْرٍ عَلَى حِدَةٍ رواه البخاري

وعن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما قال : لما حضرت احد دعاني ابـي من الليل فقال : ما اراني الا مقتولا في اول من يقتل من اصحاب النبي ﷺ واني لا اترك بعدي اعز علي منك غير نفس رسول الله ﷺ وان علي دينا فاقض واستوص باخواتك خيرا فاصبحنا فكان اول قتيل ودفنت معه اخر في قبره ثم لم تطب نفسي ان اتركه مع اخر فاستخرجته بعد ستة اشهر فاذا هو كيوم وضعته غير اذنه فجعلته في قبر على حدة رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবার মধ্য থেকে দু’জন সাহাবী অন্ধকার রাতে তাঁর নিকট হতে বাইরে গমন করেন। আর তাঁদের আগে আগে প্রদীপের ন্যায় কোন আলো বিদ্যমান ছিল। পরে যখন তাঁরা একে অপর থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, তখনও প্রত্যেকের সঙ্গে আলো ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌঁছে গেলেন।

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلَينِ مِنْ أَصحَابِ النَّبِيِّ ﷺ خَرَجَا مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ ﷺ فِي لَيْلَةٍ مُظْلِمَةٍ وَمَعَهُمَا مِثْلُ المِصْبَاحَيْنِ بَيْنَ أَيْديهِمَا فَلَمَّا افْتَرَقَا، صَارَ مَعَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا وَاحِدٌ حَتّٰـى أَتَى أَهْلَهُ رواهُ البُخاري مِنْ طُرُقٍ؛ وفي بَعْضِهَا أنَّ الرَّجُلَيْنِ أُسَيْدُ بنُ حُضير، وَعَبّادُ بنُ بِشْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا

وعن انس ان رجلين من اصحاب النبي ﷺ خرجا من عند النبي ﷺ في ليلة مظلمة ومعهما مثل المصباحين بين ايديهما فلما افترقا، صار مع كل واحد منهما واحد حتـى اتى اهله رواه البخاري من طرق؛ وفي بعضها ان الرجلين اسيد بن حضير، وعباد بن بشر رضي الله عنهما

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসেম ইবনে সাবেত আনসারীর নেতৃত্বে একটি গুপ্তচরের দল কোথাও পাঠালেন। যেতে যেতে তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদ্আহ নামক স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বানী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর তারা প্রায় একশজন তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাঁদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগল। আসেম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে একটি (উঁচু) জায়গায় (পাহাড়ে) আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, ’নেমে এসে আত্মসমর্পণ কর, তোমাদের জন্য (নিরাপত্তার) প্রতিশ্রুতি রইল; তোমাদের কাউকে আমরা হত্যা করব না।’ আস্বেম বিন সাবেত বললেন, ’আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছিয়ে দাও।’

অতঃপর তারা মুসলিম গোয়েন্দাদলের প্রতি তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। তারা আস্বেমকে শহীদ ক’রে দিল। আর তাঁদের মধ্যে তিনজন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেমে এলেন। তাঁরা হলেন, খুবাইব, যায়দ বিন দাসিনাহ ও অন্য একজন (আব্দুল্লাহ বিন ত্বারিক)। অতঃপর তারা তাঁদেরকে কাবু ক’রে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে তার দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথে তৃতীয় সাহাবী (আব্দুল্লাহ) বললেন, ’এটা প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাব না। ঐ শহীদগণই আমার আদর্শ।’ কিন্তু তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন। অবশেষে কাফেরগণ তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ বিন দাসিনাকে বদর যুদ্ধের পরে মক্কার বাজারে গিয়ে বিক্রি ক’রে দিল।

বনী হারেস বিন আমের বিন নাওফাল বিন আব্দে মানাফ গোত্রের লোকেরা খুবাইবকে ক্রয় ক’রে নিল। আর খুবাইব বদর যুদ্ধের দিন হারেসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছুদিন বন্দী অবস্থায় কাটালেন। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে একমত হল। একদা তিনি নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য হারেসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। সে অন্যমনস্ক থাকলে তার একটি শিশু বাচ্চা (খেলতে খেলতে) তাঁর নিকট চলে গেল। অতঃপর সে খুবাইবকে দেখল যে, তিনি বাচ্চাটাকে নিজের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছেন এবং ক্ষুরটি তাঁর হাতে রয়েছে। এতে সে ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেল। খুবাইব তা বুঝতে পেরে বললেন, ’একে হত্যা করে ফেলব ভেবে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? আমি তা করব না।’

(পরবর্তী কালে মুসলিম হওয়ার পর) হারেসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেন যে, ’আল্লাহর কসম! আমি খুবাইব অপেক্ষা উত্তম বন্দী আর কখনও দেখিনি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে একদিন আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তাঁর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত রিয্ক ছাড়া আর কিছুই নয়।’

অতঃপর তাঁকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের বাইরে নিয়ে গেল, তখন তিনি তাদেরকে বললেন, ’আমাকে দু’ রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও।’ সুতরাং তারা তাঁকে ছেড়ে দিল এবং তিনি দু’ রাকআত নামায আদায় করলেন। (নামায শেষে তিনি তাদেরকে) বললেন, ’আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে, তাহলে আমি (নামাযকে) আরও দীর্ঘায়িত করতাম।’ অতঃপর তিনি বললেন, ’হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংস কর এবং তাদের মধ্যে কাউকেও বাকী রেখো না।

তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন,

’যেহেতু আমি মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করছি

তাই আমার কোন পরোয়া নেই।

আল্লাহর সমুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন্ পার্শেব আমি লুটিয়ে পড়ি।

আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি,

আর তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন।’

খুবাইবই প্রথম ছিলেন, যিনি প্রত্যেক সেই মুসলিমের জন্য (হত হওয়ার পূর্বে দুই রাকআত) নামায সুন্নাত ক’রে যান, যাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়।

এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাবর্গকে সেই দিনই তাঁদের খবর জানালেন, যেদিন তাঁদেরকে হত্যা করা হয়।

অপর দিকে কুরাইশের কিছু লোক আস্বেম বিন সাবেতের খুন হওয়া শুনে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে পরিচিত কোন অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়ে দিল। আর তিনি বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন; যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আস্বেমের লাশকে রক্ষা করল। সুতরাং তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ কেটে নিতে সক্ষম হল না। (বুখারী ৩০৪৫, ৩৯৮৯, ৪০৮৬, ৭৪০২)

এ পরিচ্ছেদে আরো অন্যান্য বহু সহীহ হাদীস রয়েছে, যার কিছু এই কিতাবের যথাস্থানে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন সেই কিশোরের হাদীস, যে একজন পাদরী ও যাদুকরের কাছে যাতায়াত করত, জুরাইজের হাদীস, গুহার মুখে পাথর চাপা পড়া তিন গুহাবন্দীর হাদীস, সেই সৎলোকের হাদীস, যিনি মেঘ থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন, ’অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ কর’ ইত্যাদি। এ পরিচ্ছেদের দলীল প্রচুর ও প্রসিদ্ধ। আর আল্লাহই তাওফীকদাতা।

وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَشْرَةَ رَهْطٍ عَيْناً سَرِيَّة، وَأَمَّرَ عَلَيْهَا عَاصِمَ بنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ فَانْطَلَقُوا حَتّٰـى إِذَا كَانُوا بِالهَدْأَةِ ؛ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ ؛ ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْل يُقَالَ لَهُمْ : بَنُو لِحيَانَ فَنَفَرُوا لَهُمْ بِقَرِيبٍ مِنْ مِئَةِ رَجُلٍ رَامٍ فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ فَلَمَّا أَحَسَّ بِهِمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ لَجَأُوْا إِلَى مَوْضِعٍ فَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ فَقَالَوا : انْزِلُوا فَأَعْطُوا بِأَيْدِيكُمْ وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ أَنْ لاَ نَقْتُلَ مِنْكُمْ أَحَداً فَقَالَ عَاصِمُ بنُ ثَابِتٍ : أَيُّهَا القَوْمُ أَمَّا أَنَا فَلاَ أَنْزِلُ عَلَى ذِمَّةِ كَافِرٍ : اَللّٰهُمَّ أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ ﷺ فَرَمَوهُمْ بِالنّبْلِ فَقَتلُوا عَاصِماً وَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ عَلَى العَهْدِ وَالمِيثاقِ، مِنْهُمْ خُبَيْبٌ، وَزَيدُ بنُ الدَّثِنَةِ وَرَجُلٌ آخَرُ فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ فَرَبطُوهُمْ بِهَا قَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ : هٰذَا أَوَّلُ الغَدْرِ وَاللهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ إنَّ لِي بِهَؤُلاَءِ أُسْوَةً يُرِيدُ القَتْلَى فَجَرُّوهُ وعَالَجُوهُ فَأَبَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ فَقَتَلُوهُ وَانْطَلَقُوا بِخُبَيبٍ وَزَيْدِ بنِ الدَّثِنَةِ حَتّٰـى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ ؛ فَابْتَاعَ بَنُو الحارِثِ بنِ عامِرِ بنِ نَوْفَلِ بنِ عبدِ مَنَافٍ خُبيباً وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ يَوْمَ بَدْرٍ فَلِبثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيراً حَتّٰـى أَجْمَعُوا عَلَى قَتْلِهِ، فاسْتَعَارَ مِنْ بَعْضِ بَنَاتِ الحَارثِ مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا فَأَعَارَتْهُ فَدَرَجَ بُنَيٌّ لَهَا وَهِيَ غَافِلَةٌ حَتّٰـى أَتَاهُ فَوَجَدَتهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخْذِهِ وَالمُوسَى بِيَدِهِ فَفَزِعَتْ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ فَقَالَ : أَتَخَشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ مَا كُنْتُ لأَفْعَلَ ذٰلِكَ قَالَتْ : وَاللهِ مَا رَأيْتُ أَسِيراً خَيراً مِنْ خُبَيْبٍ فَوَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْماً يَأكُلُ قِطْفاً مِنْ عِنَبٍ فِي يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ بِالحَدِيدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرَةٍ وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ رَزَقَهُ اللهُ خُبَيْباً فَلَمَّا خَرَجُوا بِهِ مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ : دَعُونِي أُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ فَتَرَكُوهُ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ : وَاللهِ لَوْلاَ أَنْ تَحْسَبُوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَزِدْتُ : اَللّٰهُمَّ أَحْصِهِمْ عَدَداً وَاقْتُلهُمْ بِدَدَاً وَلاَ تُبْقِ مِنْهُمْ أَحَداً وَقَالَ :
فَلَسْتُ أُبَالِي حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِماً * عَلَى أيِّ جَنْبٍ كَانَ للهِ مَصْرَعِي
وَذٰلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ * يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
وَكَانَ خُبَيبٌ هُوَ سَنَّ لِكُلِّ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْراً الصَّلاَةَ وَأَخْبَرَ - يَعنِي : النَّبِيَّ ﷺ أَصْحَابَهُ يَوْمَ أُصِيبُوا خَبَرَهُمْ وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمِ بنِ ثَابِتٍ حِيْنَ حُدِّثُوا أَنَّهُ قُتِلَ أَنْ يُؤْتَوا بِشَيءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ وكَانَ قَتَلَ رَجُلاً مِنْ عُظَمَائِهِمْ فَبَعَثَ اللهُ لِعَاصِمٍ مِثْلَ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ فَحَمَتْهُ مِنْ رُسُلِهِمْ فَلَمْ يَقْدِرُوا أَنْ يَقْطَعُوا مِنْهُ شَيْئاً رواه البخاري

وعن ابـي هريرة قال : بعث رسول الله ﷺ عشرة رهط عينا سرية، وامر عليها عاصم بن ثابت الانصاري فانطلقوا حتـى اذا كانوا بالهداة ؛ بين عسفان ومكة ؛ ذكروا لحي من هذيل يقال لهم : بنو لحيان فنفروا لهم بقريب من مىة رجل رام فاقتصوا اثارهم فلما احس بهم عاصم واصحابه لجاوا الى موضع فاحاط بهم القوم فقالوا : انزلوا فاعطوا بايديكم ولكم العهد والميثاق ان لا نقتل منكم احدا فقال عاصم بن ثابت : ايها القوم اما انا فلا انزل على ذمة كافر : اللهم اخبر عنا نبيك ﷺ فرموهم بالنبل فقتلوا عاصما ونزل اليهم ثلاثة نفر على العهد والميثاق، منهم خبيب، وزيد بن الدثنة ورجل اخر فلما استمكنوا منهم اطلقوا اوتار قسيهم فربطوهم بها قال الرجل الثالث : هذا اول الغدر والله لا اصحبكم ان لي بهولاء اسوة يريد القتلى فجروه وعالجوه فابى ان يصحبهم فقتلوه وانطلقوا بخبيب وزيد بن الدثنة حتـى باعوهما بمكة بعد وقعة بدر ؛ فابتاع بنو الحارث بن عامر بن نوفل بن عبد مناف خبيبا وكان خبيب هو قتل الحارث يوم بدر فلبث خبيب عندهم اسيرا حتـى اجمعوا على قتله، فاستعار من بعض بنات الحارث موسى يستحد بها فاعارته فدرج بني لها وهي غافلة حتـى اتاه فوجدته مجلسه على فخذه والموسى بيده ففزعت فزعة عرفها خبيب فقال : اتخشين ان اقتله ما كنت لافعل ذلك قالت : والله ما رايت اسيرا خيرا من خبيب فوالله لقد وجدته يوما ياكل قطفا من عنب في يده وانه لموثق بالحديد وما بمكة من ثمرة وكانت تقول: انه لرزق رزقه الله خبيبا فلما خرجوا به من الحرم ليقتلوه في الحل، قال لهم خبيب : دعوني اصلي ركعتين فتركوه فركع ركعتين فقال : والله لولا ان تحسبوا ان ما بي جزع لزدت : اللهم احصهم عددا واقتلهم بددا ولا تبق منهم احدا وقال : فلست ابالي حين اقتل مسلما * على اي جنب كان لله مصرعي وذلك في ذات الاله وان يشا * يبارك على اوصال شلو ممزع وكان خبيب هو سن لكل مسلم قتل صبرا الصلاة واخبر - يعني : النبي ﷺ اصحابه يوم اصيبوا خبرهم وبعث ناس من قريش الى عاصم بن ثابت حين حدثوا انه قتل ان يوتوا بشيء منه يعرف وكان قتل رجلا من عظماىهم فبعث الله لعاصم مثل الظلة من الدبر فحمته من رسلهم فلم يقدروا ان يقطعوا منه شيىا رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল

পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

(২৯০৫) ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখনই কোন বিষয়ে আমি উমার (রাঃ) কে বলতে শুনতাম, ’আমার মনে হয়, এটা এই হবে’ তখনই (দেখতাম) বাস্তবে তাই হত; যা তিনি ধারণা করতেন!

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : مَا سَمِعْتُ عُمَرَ يَقُوْلُ لِشَيءٍ قَطُّ : إِنِّي لأَظُنُّهُ كَذَا إِلاَّ كَانَ كَمَا يَظُنُّ رواه البخاري

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال : ما سمعت عمر يقول لشيء قط : اني لاظنه كذا الا كان كما يظن رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৬/ ফাযায়েল
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে