পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০১) আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর দ্বীনের প্রচারের কাজে আমাকে যেভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত করা হয়েছে, অন্য কাউকে সেভাবে করা হয়নি। আমাকে যেভাবে কষ্ট দেওয়া হয়েছে, অন্য কাউকে সেভাবে দেওয়া হয়নি। ত্রিশ দিন ও রাত আমার উপর এমনও অতিবাহিত হয়ে গেছে যে, আমার ও বিলালের কাছে কোন প্রাণীর খাওয়ার মতো কিছুই ছিল না, কেবল সেই স্বল্প পরিমাণটুকু ছাড়া, যা বিলাল তাঁর বগলের নিচে লুকিয়ে আনত।
عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَا يَخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِي اللهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَيَّ ثَلَاثُونَ مِنْ بَيْنِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَمَا لِي وَلَا لِبِلَالٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلَّا شَيْءٌ يُوَارِيهِ إِبِطُ بِلَالٍ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০২) নু’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা ক’রে ফেলেছে, সে কথা উল্লেখ ক’রে বললেন, ’আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’
عَنِ النُّعْمَان قَالَ ذَكَرَ عُمَرُ مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا فَقَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِى مَا يَجِدُ دَقَلاً يَمْلأُ بِهِ بَطْنَهُ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৩) আয়েশা (রায়িবল্লাহু আনহা) বলেন, ’মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পর পর দু’দিন যবের রুটি পেট-পুরে খাননি। আর এই অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتّٰـى قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৪) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো (টেবিল জাতীয় উঁচু স্থানে)এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পাতলা (চাপাতি) রুটি খাননি। (৩৩১ দ্রঃ)
(অন্য এক বর্ণনায় আছে,) আমি জানি না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চাপাতি রুটি এবং ভুনা (গোটা) বকরী স্বচক্ষে দেখেছেন।’ (বুখারী ৬৪৫০, ৬৪৫৭)
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمْ يَأْكُلْ النَّبِيُّ ﷺ عَلَى خِوَانٍ حَتّٰـى مَاتَ وَمَا أَكَلَ خُبْزًا مُرَقَّقًا حَتّٰـى مَاتَ
وفي رواية: فَمَا أَعْلَمُ النَّبِيَّ ﷺ رَأَى رَغِيفًا مُرَقَّقًا حَتّٰـى لَحِقَ بِاللهِ وَلَا رَأَى شَاةً سَمِيطًا بِعَيْنِهِ قَطُّ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৫) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (রসূলরূপে) পাঠিয়েছেন, তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত (চালুনে চালা) ময়দা দেখেননি। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কি আপনাদের আটা চালার চালুনি ছিল?’ তিনি বললেন, ’আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (রসূলরূপে) পাঠানোর পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি আটা চালার চালুনি দেখেননি।’ তাঁকে বলা হল, ’তাহলে আপনারা আচালা যবের আটা কিভাবে খেতেন?’ তিনি বললেন, ’আমরা যব পিষে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার উড়ে যেত, আর যা অবশিষ্ট থাকত তা ভিজিয়ে খমীর বানাতাম।’
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قاَلَ: مَا رَأَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ النَّقِيَّ مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ حَتّٰـى قَبَضَهُ اللهُ قَالَ فَقُلْتُ هَلْ كَانَتْ لَكُمْ فِي عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مَنَاخِلُ قَالَ مَا رَأَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مُنْخُلًا مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ حَتّٰـى قَبَضَهُ اللهُ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ كُنْتُمْ تَأْكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ قَالَ كُنَّا نَطْحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ فَيَطِيرُ مَا طَارَ وَمَا بَقِيَ ثَرَّيْنَاهُ فَأَكَلْنَاهُ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৬) আমর ইবনে হারেস (রাঃ) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুকালে কোন সোনা-রূপা এবং কোন দাস-দাসী রেখে যাননি। তিনি কেবল তাঁর একটি সাদা রঙের খচ্চর রেখে গেছেন, যাতে তিনি সওয়ার হতেন। আর রেখে গেছেন তাঁর যুদ্ধাস্ত্র ও একখণ্ড জমি। পরন্তু উক্ত জমিটিও তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদক্বা করে গেছেন।’
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ قَالَ مَا تَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ دِينَارًا وَلَا دِرْهَمًا وَلَا عَبْدًا وَلَا أَمَةً إِلَّا بَغْلَتَهُ الْبَيْضَاءَ الَّتِي كَانَ يَرْكَبُهَا وَسِلَاحَهُ وَأَرْضًا جَعَلَهَا لِابْنِ السَّبِيلِ صَدَقَةً
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৭) আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রায়িবল্লাহু আনহা) আমাদের সামনে একটি তালিদেওয়া চাদর এবং একটি মোটা ইযার (লুঙ্গি) বের করলেন এবং বললেন, ’এই দু’টির মধ্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু হয়েছে।’
عَنْ أَبِـيْ بُرْدَةَ قَالَ أَخْرَجَتْ إِلَيْنَا عَائِشَةَ إِزَارًا غَلِيظًا مِمَّا يُصْنَعُ بِالْيَمَنِ وَكِسَاءً مِنْ هَذِهِ الَّتِي يَدْعُونَهَا الْمُلَبَّدَةَ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৮) আনাস (রাঃ) বলেন, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যবের বিনিময়ে তাঁর লৌহবর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যবের রুটি ও (নষ্ট হওয়া) দুর্গন্ধময় পুরানো চর্বি নিয়ে গেছি। আমি তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলতে শুনেছি যে, মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি কোন খাদ্যবস্তু) থাকে না। (আনাস (রাঃ) বলেন,) তখন তাঁরা মোট নয় ঘর (পরিবার) ছিলেন।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ وَلَقَدْ رَهَنَ النَّبِيُّ ﷺ دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ وَمَشَيْتُ إِلَـى النَّبِيِّ ﷺ بِخُبْزِ شَعِيرٍ وَإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُوْلُ مَا أَصْبَحَ لِآلِ مُحَمَّدٍ ﷺ إِلَّا صَاعٌ وَلَا أَمْسَى وَإِنَّهُمْ لَتِسْعَةُ أَبْيَاتٍ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮০৯) আয়েশা (রাঃ) আরো বলেছেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমার বাড়ীতে এমন কিছু ছিল না, যা কোন প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। তবে আমার ঘরের তাকে সামান্য কিছু যব ছিল, যা থেকে আমি কিছু দিন খেয়েছি। অতঃপর যখন আমি তা মাপলাম, তখন শেষ হয়ে গেল।’
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَمَا فِي بَيْتِي مِنْ شَيْءٍ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلَّا شَطْرُ شَعِيرٍ فِي رَفٍّ لِي فَأَكَلْتُ مِنْهُ حَتّٰـى طَالَ عَلَيَّ فَكِلْتُهُ فَفَنِيَ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮১০) আয়েশা (রাঃ) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর লৌহবর্মখানি ত্রিশ সা’ (প্রায় ৭৫ কেজি) যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক ছিল।’
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِيٍّ بِثَلَاثِينَ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর অর্থনৈতিক জীবন
(২৮১১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, ’এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসেছিলাম। (আববা) আবূ বকর তাঁর জন্য ছাগলের একটি ঠ্যাং হাদিয়া পাঠালেন। আমরা তা ঘরের অন্ধকারে কাটলাম।’ বর্ণনাকারী জিজ্ঞাসা করলেন, ’হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনাদের কি বাতি ছিল না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ’বাতি জ্বালাবার তেল থাকলে আমরা তা ভক্ষণ করতাম।’
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: أُهْدِيَ لَنَا ذَاتَ لَيْلَةٍ رِجْلُ شَاةٍ مِنْ بَيْتِ أَبِي بَكْرٍ، قَالَتْ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُمْسِكُهَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَجُزُّهَا أَوْ أَمْسَكَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَجُزُّهَا، فَقُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ، عَلَى مِصْبَاحٍ ذَاكَ؟ قَالَتْ: «لَوْ كَانَ عِنْدَنَا دُهْنُ مِصْبَاحٍ لَأَكْلَنْاهُ