পরিচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
কৃতজ্ঞ ধনী ঐ ব্যক্তি যে বৈধ পন্থায় ধনার্জন করে এবং তা বৈধ ও বিধেয় পথে ব্যয় করে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَأَمَّا مَنْ أعْطٰى وَاتَّقٰـى وَصَدَّقَ بِالْـحـُسْنٰـى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْـيُسْرَى
অর্থাৎ, সুতরাং যে দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে, এবং সদ্বিষয়কে সত্যজ্ঞান করে। অচিরেই আমি তার জন্য সুগম ক’রে দেব (জান্নাতের) সহজ পথ। (সূরা লায়ল ৫-৭)
তিনি আরো বলেন,
وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقٰـى الَّذِيْ يُؤْتِـي مَالَهُ يَتَزَكّٰـى وَمَا لِأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِّعْمَةٍ تُـجْزٰى إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلٰـى وَلَسَوْفَ يَرْضٰـى
অর্থাৎ, আর আল্লাহভীরুকে তা থেকে দূরে রাখা হবে। যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ দান করে এবং তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়। কেবল তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায়। আর সে অচিরেই সন্তুষ্ট হবে। (সূরা লায়ল ১৭-২১)
তিনি আরো বলেন,
إنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإنْ تُـخْفُوْهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقراءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ
অর্থাৎ, তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। এতে তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ মোচন করবেন, বস্তুতঃ তোমরা যা কর, আল্লাহ তা অবহিত। (সূরা বাক্বারাহ ২৭১)
তিনি আরো বলেছেন,
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰـى تُنْفِقُوا مِمَّا تُـحِبُّوْنَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيْمٌ
অর্থাৎ, তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। (সূরা আলে ইমরান ৯২)
(২৫২৯) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী ৭৩, ১৪০৯, মুসলিম ১৯৩৩)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ : رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلٰى هَلَكَتِهِ في الحَقّ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
(২৫৩০) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ (১) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে আল্লাহ কুরআন (শিক্ষা) দিয়েছেন অতঃপর সে দিবারাত্রি তার যত্ন করে (তেলাঅত ও আমল করে) এবং (২) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর সে দিবারাত্রি তা দান করে।
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لاَ حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ : رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ القُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ آتَاهُ مَالاً فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
(২৫৩১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা গরীব মুহাজির (সাহাবাগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল।’ তিনি বললেন, ’’তা কিভাবে?’’ তাঁরা বললেন, ’তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তারা সাদকাহ করছে, আর আমরা করতে পারছি না। তারা দাস মুক্ত করছে, আর আমরা পারছি না।’ এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না? তাঁরা বললেন, ’অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, ’’প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার ক’রে ’সুবহানাল্লাহ’, ’আল্লাহু আকবার’ ও ’আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে।’’ অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ’আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু ক’রে দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।
وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنَّ فُقَراءَ المُهَاجِرينَ أتَوْا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَقَالَوا : ذَهَبَ أهْلُ الدُّثُورِ بِالدَّرَجَاتِ العُلَى وَالنَّعِيم المُقِيمِ فَقَالَ وَمَا ذَاك فَقَالَوا : يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ وَلاَ نَتَصَدَّقُ وَيَعْتِقُونَ وَلاَ نَعْتِقُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺأفَلا أُعَلِّمُكُمْ شَيْئاً تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ وَلاَ يَكُونُ أحَدٌ أفْضَلَ مِنْكُمْ إِلاَّ مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ ؟ قَالُوا : بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ تُسَبِّحُونَ وَتُكَبِّرُونَ وَتَحْمِدُونَ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ مَرَّةً فَرَجَعَ فُقَرَاء المُهَاجِرِينَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَوا: سَمِعَ إخْوَانُنَا أهلُ الأمْوالِ بِمَا فَعَلْنَا فَفَعَلُوا مِثلَهُ ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ذَلِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ متفقٌ عَلَيْهِ وَهَذا لفظ رواية مسلم
পরিচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
(২৫৩৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদা আইয়ুব নবী (আঃ) (নির্জনে) উলঙ্গ গোসল করছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর সম্মুখে একদল সোনার পঙ্গপাল পড়লে তিনি তা নিজের কাপড়ে ভরতে লাগলেন। মহান আল্লাহ তাঁকে বললেন, ’হে আইয়ুব! আমি কি তোমাকে এ সব থেকে অমুখাপেক্ষী (ধনী) করিনি?’ আইয়ুব বললেন, ’অবশ্যই হে আমার প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমার এতটুকু অমুখাপেক্ষিতা নেই।
وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ بَيْنَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا فَخَرَّ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ فَجَعَلَ أَيُّوبُ يَحْتَثِي فِي ثَوْبِهِ فَنَادَاهُ رَبُّهُ يَا أَيُّوبُ أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى قَالَ بَلَى وَعِزَّتِكَ وَلَكِنْ لَا غِنَى بِيْ عَنْ بَرَكَتِكَ
পরিচ্ছেদঃ কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
(২৫৩৪) আমর বিন আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠিয়ে আমাকে আমার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং অস্ত্র সহ ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম আর তখন তিনি ওযূ করছিলেন। আমার দিকে মাথা তুলে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নিয়ে বললেন, ’’আমি তোমাকে এক সৈন্যদলের আমীর হিসাবে পাঠাতে ইচ্ছা করেছি। আল্লাহ তোমাকে গনীমতের মাল সহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন। আর আমার সদিচ্ছা যে, তোমার মাল হোক।’’ তখন আমি বললাম, ’হে আল্লাহর রাসূল! আমি মালের জন্য ইসলাম গ্রহণ করিনি। বরং ইসলাম গ্রহণ করেছি ইসলামকে ভালোবেসে এবং আপনার সঙ্গ লাভের আশায়।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আমর! সৎ মানুষের জন্য পবিত্র মাল কতই না উত্তম!
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ بَعَثَ إِلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ خُذْ عَلَيْكَ ثِيَابَكَ وَسِلَاحَكَ ثُمَّ ائْتِنِي، فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ فَصَعَّدَ فِيَّ النَّظَرَ ثُمَّ طَأْطَأَهُ فَقَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَبْعَثَكَ عَلٰى جَيْشٍ فَيُسَلِّمَكَ اللهُ وَيُغْنِمَكَ وَأَرْغَبُ لَكَ مِن الْمَالِ رَغْبَةً صَالِحَةً قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا أَسْلَمْتُ مِنْ أَجْلِ الْمَالِ وَلَكِنِّي أَسْلَمْتُ رَغْبَةً فِي الْإِسْلَامِ وَأَنْ أَكُونَ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا عَمْرُو نِعْمَ الْمَالُ الصَّالِحُ لِلْمَرْءِ الصَّالِحِ