পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
অর্থাৎ, যারা তাদের পর আগমন করে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রগামী আমাদের ভ্রাতৃগণকে ক্ষমা করে দেন। (সূরা হাশর ১০)
(১৩৮৬) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছে। আমার ধারণা যে, সে কথা বলার সুযোগ পেলে সাদকাহ করত। সুতরাং আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি, তাহলে কি সে নেকী পাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهُا : أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ ﷺ : إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَأُرَاهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَهَلْ لَهَا أجْرٌ إنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا ؟ قَالَ نَعَمْ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৮৭) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, সা’দ বিন উবাদাহর মা যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার অনুপস্থিত থাকা কালে আমার আম্মা মারা গেছেন। এখন যদি তাঁর পক্ষ থেকে কিছু দান করি তাহলে তিনি উপকৃত হবেন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ হবে। সা’দ বললেন, তাহলে আমি আপনাকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, আমার মিখরাফের বাগান তাঁর নামে সদকাহ করলাম।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا أَيَنْفَعُهَا شَيْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِيَ الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৮৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয়; (১) সাদকা জারিয়াহ, (২) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দু’আ করে।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عنه عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُرواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৮৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ আযযা অজাল্ল জান্নাতে নেক বান্দার দরজা উঁচু করেন। সে তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! এ উন্নতি কীভাবে? আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য তোমার ছেলের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَنَّى لِي هَذِهِ فَيَقُولُ بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৯০) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক মহিলা সমুদ্র-সফরে বের হলে সে নযর মানল যে, যদি আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা তাকে সমুদ্র থেকে পরিত্রাণ দান করেন, তাহলে সে একমাস সিয়াম রাখবে। অতঃপর সে সমুদ্র থেকে পরিত্রাণ পেয়ে ফিরে এল। কিন্তু সিয়াম না রেখেই সে মারা গেল। তার এক কন্যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে সে ঘটনার উল্লেখ করলে তিনি বললেন, মনে কর, তার যদি কোন ঋণ বাকী থাকত, তাহলে তা তুমি পরিশোধ করতে কি না? বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ অধিকরূপে পরিশোধ-যোগ্য। সুতরাং তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে সিয়াম কাযা করে দাও।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : أَنَّ امْرَأَةً رَكِبَتِ الْبَحْرَ فَنَذَرَتْ إِنْ نَجَّاهَا اللهُ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَنَجَّاهَا اللهُ فَلَمْ تَصُمْ حَتَّى مَاتَتْ فَجَاءَتِ ابْنَتُهَا أَوْ أُخْتُهَا إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَأَمَرَهَا أَنْ تَصُومَ عَنْهَا
وَفِيْ رِوَايَةٍ: قَالَ: أَتَتِ النَّبِيَّ ﷺ امْرَأَةٌ فَقالتْ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا وَإِنَّهَا تُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ تَصُومَ قَالَ:أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟قالتْ: نَعَمْ قَالَ:دَيْنُ اللهِ أَحَقُّ أَنْ يُقْضَى
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৯১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমার বোন হজ্জ করার নযর মেনে মারা গেছে। (এখন কি করা যায়?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার ঋণ বাকী থাকলে কি তুমি পরিশোধ করতে? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করে দাও। কারণ, তা অধিক পরিশোধ-যোগ্য।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ لَهُ إِنَّ أُخْتِي قَدْ نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ وَإِنَّهَا مَاتَتْ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَوْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَاقْضِ اللهَ فَهُوَ أَحَقُّ بِالْقَضَاءِ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৯২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি রমযান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং তারপর সিয়াম না রাখা অবস্থায় মারা গেলে তার পক্ষ থেকে মিসকীন খাওয়াতে হবে; তার কাযা নেই। পক্ষান্তরে নযরের সিয়াম বাকী রেখে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক (বা ওয়ারেস) সিয়াম রাখবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ إِذَا مَرِضَ الرَّجُلُ فِى رَمَضَانَ ثُمَّ مَاتَ وَلَمْ يَصُمْ أُطْعِمَ عَنْهُ وَلَمْ يَكُنْ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَإِنْ كَانَ عَلَيْهِ نَذْرٌ قَضَى عَنْهُ وَلِيُّهُ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৯৩) আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন, আস বিন ওয়াইল সাহমী তার পক্ষ হতে ১০০টি ক্রীতদাস মুক্ত করার অসিয়ত করে মারা যায়। সুতরাং তার ছোট ছেলে হিশাম ৫০টি দাস মুক্ত করে। অতঃপর তার বড় ছেলে আমর বাকী ৫০টি দাস মুক্ত করার ইচ্ছা করলে বললেন, ’(বাপ তো কাফের অবস্থায় মারা গেছে) তাই আমি এ কাজ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা না করে করব না। সুতরাং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ঘটনা খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলেন, ’’আমি কি বাকী ৫০টি দাস তার পক্ষ থেকে মুক্ত করব? উত্তরে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি মুসলিম হতো এবং তোমরা তার পক্ষ থেকে দাস মুক্ত করতে, অথবা সদকাহ করতে অথবা হজ্জ করতে তাহলে তার সওয়াব তার নিকট পৌঁছত। (আবূ দাউদ ২৮৮৫, বাইহাকী ৬/২৭৯, আহমাদ ৬৭০৪)
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ الْعَاصَ بْنَ وَائِلٍ أَوْصَى أَنْ يُعْتَقَ عَنْهُ مِائَةُ رَقَبَةٍ فَأَعْتَقَ ابْنُهُ هِشَامٌ خَمْسِينَ رَقَبَةً فَأَرَادَ ابْنُهُ عَمْرٌو أَنْ يَعْتِقَ عَنْهُ الْخَمْسِينَ الْبَاقِيَةَ فَقَالَ حَتَّى أَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَأَتَى النَّبِىَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ أَبِى أَوْصَى بِعِتْقِ مِائَةِ رَقَبَةٍ وَإِنَّ هِشَامًا أَعْتَقَ عَنْهُ خَمْسِينَ وَبَقِيَتْ عَلَيْهِ خَمْسُونَ رَقَبَةً أَفَأُعْتِقُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّهُ لَوْ كَانَ مُسْلِمًا فَأَعْتَقْتُمْ عَنْهُ أَوْ تَصَدَّقْتُمْ عَنْهُ أَوْ حَجَجْتُمْ عَنْهُ بَلَغَهُ ذَلِكَ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দু‘আ করা
(১৩৯৪) আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুর পর তার আমল ও পুণ্যকর্মসমূহ হতে নিশ্চিতভাবে যা এসে তার সাথে মিলিত হয় তা হল; সেই ইলম, যা সে শিক্ষা করে প্রচার করেছে অথবা নেক সন্তান যাকে রেখে সে মারা গেছে, অথবা কুরআন শরীফ যা সে মীরাসরূপে ছেড়ে গেছে, অথবা মসজিদ যা সে নিজে নির্মাণ করে গেছে, অথবা মুসাফিরখানা যা সে মুসাফিরদের সুবিধার্থে নির্মাণ করে গেছে, অথবা পানির নালা যা সে (সেচ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে) প্রবাহিত করে গেছে, অথবা সাদকাহ যা সে নিজের মাল থেকে তার সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় বের (দান) করে গেছে এসব কর্মের সওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার সাথে এসে মিলিত হবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺإِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ وَمُصْحَفًا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لاِبْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ