পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
মাতম করা হারাম। কাঁদা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে। আর যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ’’মৃতকে তার পরিবার-পরিজনদের কাঁদার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়’’ তার অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি কাঁদার অসিয়ত ক’রে মারা যাবে। পক্ষান্তরে কেবলমাত্র সেই কান্না নিষিদ্ধ, যাতে মৃতের প্রশংসা করা হয় অথবা মাতম করা হয়। আর প্রশংসা ও মাতমবিহীন কান্নার বৈধতার ব্যাপারেও বহু হাদীস রয়েছে; তার কিছু নিম্নরূপঃ
পূর্বের এক হাদীস, যা ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনে উবাদার সাক্ষাতে গেলেন। তাঁর সঙ্গে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবী অক্কাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)ও ছিলেন। সেখানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁদা দেখে লোকেরাও কাঁদতে আরম্ভ করল। অতঃপর তিনি বললেন, ’’তোমরা কি শুনতে পাও না যে, আল্লাহ চোখের অশ্রু এবং অন্তরের দুঃখের উপর শাস্তি দেন না। কিন্তু তিনি এটার কারণে শাস্তি দেন অথবা দয়া করেন।’’ সেই সাথে তিনি নিজের জিভের দিকে ইঙ্গিত করলেন। (বুখারী ১৩০৪, মুসলিম ২১৭৬)
(১৩৫৮) উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাঁর নাতিকে তার মুমূর্ষ অবস্থায় নিয়ে আসা হল। (ওকে দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু ঝরতে লাগল। সা’দ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ কী? তিনি বললেন, এটা রহমত (দয়া); যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখেছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়ালুদের প্রতিই দয়া করেন। (বুখারী ১২৮৪, মুসলিম ২১৭৪)
وَعَنْ أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺرُفِعَ إِلَيْهِ ابنُ ابْنَتِهِ وَهُوَ فِي المَوتِ فَفَاضَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ لَهُ سَعدٌ : مَا هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَهَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ وَإنَّمَا يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৫৯) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুত্র ইব্রাহীমের নিকট গেলেন, যখন সে মারা যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হতে লাগল। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ তাঁকে বললেন, ’আপনিও (কাঁদছেন)? হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), হে আওফের পুত্র! এটা তো মমতা। অতঃপর দ্বিতীয়বার কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, চোখ অশ্রুপাত করছে এবং অন্তর দুঃখিত হচ্ছে। আমরা সে কথাই বলব, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে। আর হে ইব্রাহীম! আমরা তোমার বিরহে দুঃখিত।
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺدَخَلَ عَلَى ابْنِهِ إبْرَاهيمَ وَهُوَ يَجُودُ بِنَفسِهِ فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللهِ ﷺ تَذْرِفَانِ فَقَالَ لَهُ عَبدُ الرَّحمَانِ بنُ عَوفٍ : وَأَنتَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ يَا ابْنَ عَوْفٍ إنَّهَا رَحْمَةٌ ثُمَّ أَتْبَعَهَا بأُخْرَى فَقَالَإنَّ العَيْنَ تَدْمَعُ والقَلبُ يَحْزنُ وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يُرْضِي رَبَّنَا وَإِنَّا لِفِرَاقِكَ يَا إِبرَاهِيمُ لَمَحزُونُونَ رواه البخاري وروى مسلم بعضه
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬০) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কন্যা (উম্মে কুলসুম) এর দাফন কার্যের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে বসে আছেন। আর তাঁর চোখ দু’টি অশ্রুসিক্ত ছিল। অতঃপর (লাশ নামানোর সময়) তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে (গত) রাত্রে স্ত্রী সহবাস করেনি? আবু তালহা বললেন, আমি আছি, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, তাহলে তুমি ওর কবরে নামো। এ কথা শুনে আবূ তালহা কবরে নামলেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ شَهِدْنَا بِنْتًا لِرَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ وَرَسُولُ اللهِ ﷺ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ قَالَ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ قَالَ فَقَالَ هَلْ مِنْكُمْ رَجُلٌ لَمْ يُقَارِفْ اللَّيْلَةَ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ أَنَا قَالَ فَانْزِلْ قَالَ فَنَزَلَ فِي قَبْرِهَا
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬১) বুরাইদাহ আসলামী কর্তৃক বর্ণিত, প্রায় এক হাজার সাহাবা সহ এক সফরের এক মঞ্জিলে নেমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকআত নামায পড়লেন। অতঃর তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরালে আমরা দেখলাম, তাঁর দু’টি চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। তাঁর কান্না দেখে সাহাবাগণ কাঁদতে লাগলেন। উমার (রাঃ) তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, আমার মা-বাপ আপনার জন্য কুরবান হোক, হে আল্লাহর রসূল! আপনার কী হয়েছে? (আপনি কাঁদছেন কেন?) তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আমি আমার মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে যিয়ারতের অনুমতি দিলেন। কিন্তু তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন না। তাই আমি তাঁর উপর জাহান্নামের ভয়ে কাঁদছি! .........."
وَعَنْ بُرَيْدَةَ الْأَسْلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَنَحْنُ مَعَهُ قَرِيبٌ مِنْ أَلْفِ رَاكِبٍ فَنَزَلَ بِنَا فَانْتَهَى إِلَى رَسْمِ قَبْرٍ فَجَلَسَ وَجَلَسَ النَّاسُ حَوْلَهُ فَجَعَلَ يُحَرِّكُ رَأْسَهُ كَالْمُخَاطِبِ ثُمَّ بَكَى فَقَامَ إِلَيْهِ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ - فَقَالَ : فِدَاكَ أَبِي وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ مَا يُبْكِيكَ فَقَالَ هَذَا قَبْرُ أُمِّي آمِنَةَ بِنْتِ وَهْبٍ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي الاسْتِغْفَارِ لَهَا فَأَبَى عَلَيَّ فَدَمَعَتْ عَيْنَايَ رَحْمَةً لَهَا مِنْ النَّارِ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬২) আয়েশা (রাঃ) বলেন, উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) মারা গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি তাঁর চেহারার কাপড় খুলে ঝুঁকে তাঁকে চুম্বন করলেন। অতঃপর তিনি এমন কাঁদলেন যাতে দেখলাম, তাঁর চোখের পানি তাঁর গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺيُقَبِّلُ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ وَهُوَ مَيِّتٌ حَتَّى رَأَيْتُ الدُّمُوعَ تَسِيلُ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬৩) আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মু’তা যুদ্ধে যায়দ, জা’ফর ও আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ (রাযিয়ালল্লাহু আনহুম) শহীদ হলে ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত খবর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় বলতে লাগলেন, যায়দ পতাকা ধারণ করেছিল, সে শহীদ হয়ে গেল। তারপর জা’ফর পতাকা ধারণ করেছিল, সে শহীদ হয়ে গেল। তারপর আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ পতাকা ধারণ করেছিল, সেও শহীদ হয়ে গেল। তারপর আল্লাহর এক তরবারি খালেদ বিন অলীদ পতাকা ধারণ করল এবং আল্লাহ তার হাতে বিজয় দান করলেন। এ কথা তিনি বলছিলেন, আর তাঁর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু ঝরছিল।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَطَبَ النَّبِيُّ ﷺ فَقَالَ أَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَهَا جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَهَا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَهَا خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ عَنْ غَيْرِ إِمْرَةٍ فَفُتِحَ لَهُ وَقَالَ مَا يَسُرُّنَا أَنَّهُمْ عِنْدَنَا قَالَ أَيُّوبُ أَوْ قَالَ مَا يَسُرُّهُمْ أَنَّهُمْ عِنْدَنَا وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬৪) জাবের (রাঃ) বলেন, যখন আমার পিতা (আব্দুল্লাহ) ইন্তেকাল করলেন, তখন আমি তাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে কাঁদতে লাগলাম। এ দেখে সকলে আমাকে নিষেধ করল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেন নি। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশত্রুমে তাঁর জানাযা উঠানো হল। এতে আমার ফুফু ফাতেমা কাঁদতে শুরু করলেন। নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ’’কাঁদ অথবা না কাঁদ, ওর লাশ উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতাবর্গ নিজেদের পক্ষ দ্বারা ওকে ছায়া করে রেখেছিল।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قُتِلَ أَبِي جَعَلْتُ أَكْشِفُ الثَّوْبَ عَنْ وَجْهِهِ أَبْكِي وَيَنْهَوْنِي عَنْهُ وَالنَّبِيُّ ﷺ لَا يَنْهَانِي فَجَعَلَتْ عَمَّتِي فَاطِمَةُ تَبْكِي فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ تَبْكِينَ أَوْ لَا تَبْكِينَ مَا زَالَتْ الْمَلَائِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا حَتَّى رَفَعْتُمُوهُ
পরিচ্ছেদঃ মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
(১৩৬৫) আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) তাঁর বাসা সুন্হ থেকে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে এলেন। ঘোড়া থেকে নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলেন। তিনি তখন চেককাটা ইয়ামানী চাদরে ঢাকা ছিলেন। আববা (আবু বকর) তাঁর চেহারার কাপড় খুলে দিয়ে ঝুঁকে পড়ে তাঁর দুই চক্ষুর মাঝে চুম্বন করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, আমার মা ও বাপ আপনার জন্য কুরবান হোক, হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ আপনার মধ্যে দুটি মরণ একত্রিত করবেন না। এখন যে মরণ আপনার উপর অবধার্য ছিল তা আপনি বরণ করে নিয়েছেন।
عن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى فَرَسِهِ مِنْ مَسْكَنِهِ بِالسُّنْحِ حَتَّى نَزَلَ فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ فَلَمْ يُكَلِّمْ النَّاسَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا فَتَيَمَّمَ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ مُسَجًّى بِبُرْدِ حِبَرَةٍ فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِهِ ثُمَّ أَكَبَّ عَلَيْهِ فَقَبَّلَهُ ثُمَّ بَكَى فَقَالَ بِأَبِي أَنْتَ يَا نَبِيَّ اللهِ لَا يَجْمَعُ اللهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ أَمَّا الْمَوْتَةُ الَّتِي كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا