পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৬৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে পুণ্যবান হলে সম্ভবতঃ সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তওবা করতে পারবে। (বুখারী ৫৬৭৩, ৭২৩৫)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে কেউ যেন তার জন্য দু’আ না করে। কারণ, সে মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মু’মিনের আয়ু কেবল মঙ্গলই বৃদ্ধি করবে। (মুসলিম ৬৯৯৫)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَلا يَتَمَنَّ أحَدُكُمُ المَوْتَ إمَّا مُحْسِناً فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ وَإمَّا مُسِيئاً فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ متفقٌ عليه وهذا لفظ البخاري
وَفِيْ رِوَايَةٍ لِّمُسلِمٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَلاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أنْ يَأتِيَهُ ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْراً
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৬৮) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোন বিপদে পড়ার কারণে যেন মরার আকাঙ্ক্ষা না করে। আর যদি তা করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে, ’হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ; যে পর্যন্ত জীবিত থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর আমাকে মরণ দাও; যদি মরণ আমার জন্য মঙ্গলময় হয়।
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوتَ لضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فاعلاً فَليَقُلْ : اللَّهُمَّ أحْيني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيراً لِي، وَتَوفّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيراً لي متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৬৯) কাইস ইবনে আবী হাযেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খাববাব বিন আরাত্ (রাঃ) কে দেখা করতে গেলাম। সে সময় তিনি (তাঁর দেহে চিকিৎসার জন্য) সাতবার দেগেছিলেন। তিনি বললেন, ’আমাদের সাথীরা যাঁরা (পূর্বেই) মারা গেছেন তাঁরা এমতাবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাদের আমলের সওয়াবে কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন (সম্পদ) লাভ করেছি, যা মাটি ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মৃত্যু-কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে (রোগ-যন্ত্রণার কারণে) আমি মৃত্যুর জন্য দু’আ করতাম। (কাইস বলেন,) অতঃপর আমরা অন্য এক সময় তাঁর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর (বাড়ির) দেওয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেন, মুসলিম ব্যক্তিকে তার সকল প্রকার ব্যয়ের উপর সওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে ব্যয়কৃত জিনিস ব্যতীত।
وَعَن قَيسِ بنِ أَبي حَازِمٍ قَالَ : دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابِ بنِ الأرَتِّ نَعُودُهُ وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ فَقَالَ : إنَّ أَصْحَابَنَا الَّذِينَ سَلَفُوا مَضَوْا وَلَمْ تَنْقُصْهُمُ الدُّنْيَا وَإنَّا أصَبْنَا مَا لاَ نَجِدُ لَهُ مَوْضِعاً إِلاَّ التُّرَابَ وَلَولاَ أنَّ النَّبيَّ ﷺنَهَانَا أنْ نَدْعُوَ بالمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ ثُمَّ أتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ يَبْنِي حَائِطاً لَهُ فَقَالَ : إنَّ المُسْلِمَ لَيُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُنْفِقُهُ إِلاَّ فِي شَيْءٍ يَجْعَلُهُ في هَذَا التُّرَابِ متفقٌ عَلَيْهِ وهذا لفظ رواية البخاري
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৭০) উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূলের চাচা পীড়িত হলে তিনি তাঁর নিকট এলেন। আব্বাস মৃত্যুকামনা প্রকাশ করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, হে চাচাজান! মৃত্যু কামনা করেন না। কারণ, আপনি নেক লোক হলে এবং হায়াত বেশী পেলে বেশী-বেশী নেকী করে নিতে পারবেন; যা আপনার জন্য মঙ্গলময়। আর গোনাহগার হলে এবং বেশী হায়াত পেলে আপনি গোনাহ থেকে তওবা করার সুযোগ পাবেন, সুতরাং তাও আপনার জন্য মঙ্গলময়। অতএব মৃত্যুকামনা করেন না।
عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ)امْرَأَةِ الْعَبَّاسِ (أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهِمْ وَعَبَّاسٌ عَمُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْتَكِي فَتَمَنَّى عَبَّاسٌ الْمَوْتَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا عَمِّ لَا تَتَمَنَّ الْمَوْتَ فَإِنَّكَ إِنْ كُنْتَ مُحْسِنًا فَإِنْ تُؤَخَّرْ تَزْدَدْ إِحْسَانًا إِلَى إِحْسَانِكَ خَيْرٌ لَكَ، وَإِنْ كُنْتَ مُسِيئًا فَإِنْ تُؤَخَّرْ فَتُسْتَعْتَبْ مِنْ إِسَاءَتِكَ خَيْرٌ لَكَ فَلَا تَتَمَنَّ الْمَوْتَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৭১) আবূ বকরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! সবচেয়ে উত্তম লোক কে? তিনি বললেন, যার আয়ু লম্বা হয় এবং কর্ম উত্তম হয়। লোকটি বলল, আর সবচেয়ে খারাপ লোক কে? তিনি বললেন, যার আয়ু লম্বা হয় এবং কর্ম খারাপ হয়।
عن أَبِي بَكْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ؟ قَالَ مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ قَالَ: فَأَيُّ النَّاسِ شَرٌّ؟ قَالَ مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَسَاءَ عَمَلُهُ
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৭২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির কথা বলব না কি? সাহাবাগণ বললেন, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে তোমাদের মধ্যে বয়সে বেশি এবং (নেক) কাজে উত্তম।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِكُمْ قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ خِيَارُكُمْ أَطْوَلُكُمْ أَعْمَارًا وَأَحْسَنُكُمْ أَعْمَالًا
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৭৩) আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, বানী উযরার তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করল। অতঃপর তারা ত্বালহার তত্ত্বাবধানে বাস করতে লাগল। এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে কিছু লোক প্রেরণ করলেন। তাদের মধ্যে একজন লোকে তাতে যোগদান করে শহীদ হয়ে গেল। তারপর আরো এক অভিযানে লোক পাঠালে তাদের মধ্যে দ্বিতীয়জন যোগ দিয়ে শহীদ হয়ে গেল। আর তৃতীয়জন বিছানায় মৃত্যুবরণ করল।
ত্বালহা বলেন, অতঃপর এক রাতে আমি ঐ তিনজনকে স্বপ্নে দেখি, ওদের মধ্যে যে বিছানায় মারা গেছে সে সবার আগে আছে, অতঃপর যে পরে শহীদ হয়েছে সে আছে এবং সর্বপ্রথম যে শহীদ হয়েছে সে সবার শেষে রয়েছে। এতে আমার সন্দেহ হলে আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, এতে আপত্তিকর কি আছে? আল্লাহর নিকট সেই মু’মিন অপেক্ষা উত্তম কেউ নয়, যাকে ইসলামে তার তসবীহ, তকবীর ও তহলীলের জন্য বেশি বয়স দেওয়া হবে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ أَنَّ نَفَرًا مِنْ بَنِي عُذْرَةَ ثَلَاثَةً أَتَوْا النَّبِيَّ ﷺ فَأَسْلَمُوا قَالَ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَنْ يَكْفِنِيهِمْ قَالَ طَلْحَةُ أَنَا قَالَ فَكَانُوا عِنْدَ طَلْحَةَ فَبَعَثَ النَّبِيُّ ﷺ بَعْثًا فَخَرَجَ أَحَدُهُمْ فَاسْتُشْهِدَ قَالَ ثُمَّ بَعَثَ بَعْثًا فَخَرَجَ فِيهِمْ آخَرُ فَاسْتُشْهِدَ قَالَ ثُمَّ مَاتَ الثَّالِثُ عَلَى فِرَاشِهِ قَالَ طَلْحَةُ فَرَأَيْتُ هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَةَ الَّذِينَ كَانُوا عِنْدِي فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ الْمَيِّتَ عَلَى فِرَاشِهِ أَمَامَهُمْ وَرَأَيْتُ الَّذِي اسْتُشْهِدَ أَخِيرًا يَلِيهِ وَرَأَيْتُ الَّذِي اسْتُشْهِدَ أَوَّلَهُمْ آخِرَهُمْ قَالَ فَدَخَلَنِي مِنْ ذَلِكَ قَالَ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَمَا أَنْكَرْتَ مِنْ ذَلِكَ لَيْسَ أَحَدٌ أَفْضَلَ عِنْدَ اللهِ مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَمَّرُ فِي الْإِسْلَامِ لِتَسْبِيحِهِ وَتَكْبِيرِهِ وَتَهْلِيلِهِ
পরিচ্ছেদঃ কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
(১২৭৪) অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন,
(أَلَيْسَ قَدْ مَكَثَ هَذَا بَعْدَهُ سَنَةً) ؟ قَالُوا بَلَى (وَأَدْرَكَ رَمَضَانَ فَصَامَهُ) ؟ قَالُوا بَلَى (وَصَلَّى كَذَا وَكَذَا سَجْدَةً فِي السَّنَةِ) ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ رَسُولُ اللهِ (فَلَمَا بَيْنَهُمَا أَبْعَدُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْض
(ওদের মধ্যে দীর্ঘজীবী ব্যক্তি যে) সে কি ঐ (দ্বিতীয় ব্যক্তির) পরে এক বছর বেশি জীবিত ছিল না। সকলে বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, সে (ঐ বছরে) রমযান পেয়ে কি সিয়াম রাখেনি, এত এত নামায পড়েনি ও সিজদাহ করেনি? সকলে বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাই ওদের উভয়ের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, তা আসমান-যমীনের মধ্যবর্তীর দূরত্ব থেকেও বেশি!
-