পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنٰى وَكَذَّبَ بِالحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى
অর্থাৎ, পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। আর সদ্বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করে, অচিরেই তার জন্য আমি সুগম করে দেব (জাহান্নামের) কঠোর পরিণামের পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না। (সূরা লাইল ৮-১১)
তিনি আরো বলেন,
وَمَنْ يُّوقَ شُحَّ نَفسِهِ فَأولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
অর্থাৎ, যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম। (সূরা তাগাবূন ১৬)
এ বিষয়ে একাধিক হাদীস গত পরিচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে। আরো কিছু নিম্নরূপঃ
(৯৮২) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহকে হালাল ক’রে নিয়েছিল।
وَعَن جَابِرٍ أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ وَاتَّقُوا الشُّحَّ فَإنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْرواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনও বান্দার পেটে আল্লাহ রাস্তায় ধুলো ও দোযখের ধুঁয়ো কখনই একত্রিত হবে না। আর কৃপণতা ও ঈমান কোন বান্দার অন্তরে কখনই জমা হতে পারে না।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ في سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ في جَوْفِ عَبْدٍ أَبَداً وَلاَ يَجْتَمِعُ الشُّحُّ وَالإِيمَانُ في قَلْبِ عَبْدٍ أَبَداً
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৪) উক্ত আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মাঝে দু’টি চরিত্র বড় নিকৃষ্টতম; কাতরতাপূর্ণ কার্পণ্য এবং সীমাহীন ভীরুতা।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرُّ مَا فِى رَجُلٍ شُحٌّ هَالِعٌ وَجُبْنٌ خَالِعٌ
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৫) জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন (গরীব) নিকটাত্মীয় যখন তার (ধনী) নিকটাত্মীয়র নিকট এসে আল্লাহর দানকৃত অনুগ্রহ তার কাছে প্রার্থনা করে, তখন সে (ধনী) ব্যক্তি তা দিতে কার্পণ্য করলে (পরকালে) আল্লাহ তার জন্য দোযখ থেকে একটি ’শুজা’ নামক সাপ বের করবেন; যে সাপ তার জিব বের করে মুখ হিলাতে থাকবে। এই সাপকে বেড়িস্বরূপ তার গলায় পরানো হবে।
عَنْ جَرِيرِ بن عَبْدِ اللهِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا مِنْ ذِي رَحِمٍ يَأْتِي رَحِمَهُ فَيَسْأَلُهُ فَضْلًا أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ فَيَبْخَلُ عَلَيْهِ إِلا أُخْرِجَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ جَهَنَّمَ حَيَّةٌ يُقَالُ لَهَا : شُجَاعٌ يَتَلَمَّظُ فَيُطَوَّقُ بِهِ
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৬) আমর বিন শুআইব, তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোনও ব্যক্তির নিকট তার চাচাতো ভাই এসে তার উদ্বৃত্ত মাল চায় এবং সে যদি তাকে তা না দেয় তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ হতে তাকে বঞ্চিত করবেন। আর যে ব্যক্তি অতিরিক্ত ঘাস না দেওয়ার উদ্দেশ্যে তার (কুয়া বা ঝরনার) অতিরিক্ত পানিও (গবাদি পশুকে) দান করে না, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তিকে নিজ অনুগ্রহ দান করবেন না।
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَيُّمَا رَجُلٍ أَتَاهُ ابْنُ عَمِّهِ فَسَأَلَهُ مِنْ فَضْلِهِ فَمَنَعَهُ مَنَعَهُ اللهُ فَضْلَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَنَعَ فَضْلَ الْمَاءِ لِيَمْنَعَ بِهِ فَضْلَ الْكَلأِ مَنَعَهُ اللهُ فَضْلَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৭) আবূ যার (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি বল যে, বেশী ধন হলে, তার নামই ধনবত্তা? আমি বললাম, ’হ্যাঁ।’ তারপর বললেন, তুমি কি বল যে, ধন কম হলে, তার নামই দরিদ্রতা? আমি বললাম, ’হ্যাঁ।’ এরূপ তিনবার বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (না,) বরং প্রকৃত ধনবত্তা হল হৃদয়ের ধনবত্তা এবং প্রকৃত দরিদ্রতা হল হৃদয়ের দরিদ্রতা। যার হৃদয়ে ধনবত্তা থাকে, দুনিয়ার কোন বঞ্চনা তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যার হৃদয়ে দরিদ্রতা থাকে, দুনিয়ার ধনাধিক্য তাকে অভাবমুক্ত করতে পারে না। আসলে হৃদয়ের কার্পণ্যই তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ قَالَ له رَسُولُ اللهِ ﷺ : يَا أَبَا ذَرٍّ تَقُولُ كَثْرَةُ الْمَالِ الْغِنَى ؟ قُلْتُ : نَعَمْ قَالَ : تَقُولُ قِلَّةُ الْمَالِ الْفَقْرُ ؟ قُلْتُ : نَعَمْ قَالَ ذَلِكَ ثَلاثًا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : الْغِنَى فِي الْقَلْبِ وَالْفَقْرُ فِي الْقَلْبِ مَنْ كَانَ الْغِنَى فِي قَلْبِهِ لا يَضُرُّهُ مَا لَقِيَ مِنَ الدُّنْيَا وَمَنْ كَانَ الْفَقْرُ فِي قَلْبِهِ فَلا يُغْنِيهِ مَا أَكْثَرَ لَهُ فِي الدُّنْيَا وَإِنَّمَا يَضُرُّ نَفْسَهُ شُحُّها
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺمَا مِنْ يَوْمٍ يُصبِحُ العِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أعْطِ مُنْفِقاً خَلَفاً وَيَقُولُ الآخَرُ : اللَّهُمَّ أعْطِ مُمْسِكاً تَلَفاً متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৮৯) একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির নিকট থেকে অন্য এক ব্যক্তির জন্য একটি খেজুর গাছ দান চাইলেন। কিন্তু লোকটি তা দিল না। তিনি তাকে মূল্যের বিনিময়ে তা বিক্রি করতে বললে তাতেও সে রাজি হল না। পরিশেষে জান্নাতের একটি গাছের বিনিময়ে তা দান করতে উৎসাহিত করলেন, কিন্তু তাতেও সে সম্মত হল না! লোকটির কার্পণ্য দেখে বললেন, এ হল সবচেয়ে বড় কৃপণ।
عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ لِفُلَانٍ نَخْلَةً فِي حَائِطِي فَمُرْهُ فَلْيَبِعْنِيهَا أَوْ لِيَهَبْهَا لِي قَالَ فَأَبَى الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ افْعَلْ وَلَكَ بِهَا نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ فَأَبَى فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ هَذَا أَبْخَلُ النَّاسِ
পরিচ্ছেদঃ কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
(৯৯০) ক্বুররাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় লজ্জাশীলতা, যৌন-পবিত্রতা, মুখচোরামি ও দ্বীনী জ্ঞান ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল বৃদ্ধি করবে এবং ইহকালের সম্বল হ্রাস করবে। পক্ষান্তরে কার্পণ্য, অশ্লীলতা ও নোংরা ভাষা মুনাফিকীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল হ্রাস করে এবং ইহকালের সম্বল বৃদ্ধি করে। আর পরকালের যা হ্রাস পায়, তা ইহকালের যা বৃদ্ধি করে তা অপেক্ষা অধিক।
عَنْ قُرَّةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْحَيَاءَ وَالْعَفَافَ وَالْعِيَّ عِيُّ اللِّسَانِ لَاعِيَّ الْقَلْبِ وَالْعَمَلَ مِنَ الإِيمَانِ وَإِنَّهُنَّ يَزِدْنَ فِيِ الآخِرَةِ وَيُنْقِصْنَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمَا يَزِدْنَ فِي الآخِرَةِ أَكْثَرُ مِمَّا يُنْقِصْنَ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ الشُّحَّ وَالْبَذَاءَ مِنَ النِّفَاقِ وَإِنَّهُنَّ يَزِدْنَ فِي الدُّنْيَا وَيُنْقِصْنَ مِنَ الآخِرَةِ، وَلَمَا يُنْقِصْنَ فِي الآخِرَةِ أَكْثَرُ مِمَّا يَزِدْنَ فِي الدُّنْيَا