পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭১) উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) ও আম্মার বিন ইয়াসের (রাঃ) এর কাহিনী। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রয়োজনে উভয়কে কোথাও পাঠিয়েছিলেন। সফরে উমার ও আম্মার উভয়েই (স্বপ্নদোষ হওয়ার ফলে) অপবিত্র হয়ে যান। (পানি ছিল না কাছে।) আম্মার (রাঃ) নিজ ইজতিহাদে স্থির করলেন যে, পানি যেমন দেহকে পবিত্র করে, তেমনি মাটিও করবে। ফলে তিনি পশুর মাটিতে গড়াগড়ি দেওয়ার মত গড়াগড়ি দিলেন। কারণ, তিনি সর্ব শরীরে মাটি লাগানো জরুরী মনে করলেন, যেমন সারা শরীরকে পানি দিয়ে ধোয়া ওয়াজেব। সুতরাং তিনি ঐভাবে পবিত্রতা অর্জন করে নামায আদায় করলেন।
পক্ষান্তরে উমার (রাঃ) নামাযই পড়লেন না। অতঃপর যখন তাঁরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন, তখন (ঘটনা জেনে) তিনি তাঁদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। আম্মার (রাঃ) কে বললেন, তুমি তোমার হাত দ্বারা এইরূপ করলেই যথেষ্ট হত। এই বলে তিনি নিজের উভয় হাতকে মাটিতে একবার মারলেন। অতঃপর (তাতে ফুঁক দিয়ে) উভয় হাত দ্বারা চেহারা মাসাহ করলেন। তারপর বাম হাতের চেটো দ্বারা ডান হাতের এবং ডান হাতের চেটো দ্বারা বাম হাতের চেটো মাসাহ করলেন।
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ إِنِّي أَجْنَبْتُ فَلَمْ أُصِبْ الْمَاءَ فَقَالَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَمَا تَذْكُرُ أَنَّا كُنَّا فِي سَفَرٍ أَنَا وَأَنْتَ فَأَمَّا أَنْتَ فَلَمْ تُصَلِّ وَأَمَّا أَنَا فَتَمَعَّكْتُ فَصَلَّيْتُ فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ هَكَذَا) فَضَرَبَ النَّبِيُّ ﷺ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭২) হুযাইফা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল মানুষ (উম্মতের) উপর আমাদেরকে ৩টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে; আমাদের কাতারকে করা হয়েছে ফিরিশতাবর্গের কাতারের মত, সারা পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া গেলে মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে।
عَن حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فُضِّلْنَا عَلَى النَّاسِ بِثَلاَثٍ جُعِلَتْ صُفُوفُنَا كَصُفُوفِ الْمَلاَئِكَةِ وَجُعِلَتْ لَنَا الأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدًا وَجُعِلَتْ تُرْبَتُهَا لَنَا طَهُورًا إِذَا لَمْ نَجِدِ الْمَاءَ
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭৩) ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এক সময় তিনি লোকেদের নিয়ে নামায পড়লেন। যখন তিনি নামায শেষ করলেন, তখন দেখলেন একটি লোক একটু সরে পৃথক দাঁড়িয়ে আছে। সে জামাআতে নামাযও পড়েনি। তিনি তাকে বললেন, কি কারণে তুমি জামাআতে নামায পড়লে না? লোকটি বলল, আমি নাপাকে আছি, আর পানিও নেই। তিনি বললেন, পাক মাটি ব্যবহার কর। তোমার জন্য তাই যথেষ্ট।
عَن عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ الْخُزَاعِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ رَأَى رَجُلًا مُعْتَزِلًا لَمْ يُصَلِّ فِي الْقَوْمِ فَقَالَ يَا فُلَانُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ فِي الْقَوْمِ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلَا مَاءَ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّعِيدِ فَإِنَّهُ يَكْفِيكَ
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭৪) আবূ যার্র (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দশ বছর যাবৎ পানি না পাওয়া গেলে মুসলিমের ওযুর উপকরণ হল পাক মাটি। পানি পাওয়া গেলে গোসল করে নেওয়া উচিত। আর এটা অবশ্যই উত্তম।
عَنْ أَبيْ ذر قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ وَضُوءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ وَإِذَا وَجَدَ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذَلِكَ هُوَ خَيْرٌ
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭৫) জাবের (রাঃ) বলেন, একদা আমরা কোন সফরে বের হলাম। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মাথায় পাথরের আঘাত লেগে ক্ষত হয়েছিল। এরপর তার স্বপ্নদোষও হল। সে সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করল, আমার জন্য কি তায়াম্মুম বৈধ মনে কর? সকলে বলল, তুমি পানি ব্যবহার করতে অক্ষম নও। অতএব তোমার জন্য আমরা তায়াম্মুম বৈধ মনে করি না। তা শুনে লোকটি গোসল করল এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সে মারা গেল।
অতঃপর আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এলাম তখন তাঁকে সেই লোকটার ঘটনা খুলে বললাম। তা শুনে তিনি বললেন, ওরা ওকে মেরে ফেলল, আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুক! যদি ওরা জানত না, তবে জেনে কেন নেয়নি? অজ্ঞতার ওষুধ তো প্রশ্নই। তার জন্য তায়াম্মুম ও (পটি বেঁধে) মাসাহ যথেষ্ট ছিল।
عَن جَابِرٍ قَالَ خَرَجْنَا فِى سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلاً مِنَّا حَجَرٌ فَشَجَّهُ فِى رَأْسِهِ ثُمَّ احْتَلَمَ فَسَأَلَ أَصْحَابَهُ فَقَالَ هَلْ تَجِدُونَ لِى رُخْصَةً فِى التَّيَمُّمِ فَقَالُوْا مَا نَجِدُ لَكَ رُخْصَةً وَأَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِىِّ ﷺ أُخْبِرَ بِذَلِكَ فَقَالَ قَتَلُوهُ قَتَلَهُمُ اللهُ أَلاَّ سَأَلُوا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيهِ أَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭৬) আমর বিন আস (রাঃ) বলেন, যাতুস সালাসিল যুদ্ধ-সফরে এক শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হল। আমার ভয় হল যে, যদি গোসল করি তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করে সঙ্গীদেরকে নিয়ে (ইমাম হয়ে) ফজরের নামায পড়লাম। আমার সঙ্গীরা একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, হে আমর! তুমি নাপাক অবস্থায় তোমার সঙ্গীদের ইমামতি করেছ? আমি গোসল না করার কারণ তাঁকে বললাম। আরো বললাম যে, আল্লাহ তা’আলার এ বাণীও আমি শুনেছি, তিনি বলেন, তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড় দয়াশীল। (নিসাঃ ২৯) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং কিছুই বললেন না।
عَن عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ احْتَلَمْتُ فِى لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ فِى غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلاَسِلِ فَأَشْفَقْتُ إِنِ اغْتَسَلْتُ أَنْ أَهْلِكَ فَتَيَمَّمْتُ ثُمَّ صَلَّيْتُ بِأَصْحَابِى الصُّبْحَ فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ يَا عَمْرُو صَلَّيْتَ بِأَصْحَابِكَ وَأَنْتَ جُنُبٌ فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِى مَنَعَنى مِنَ الاِغْتِسَالِ وَقُلْتُ إِنِّى سَمِعْتُ اللهَ يَقُولُ (وَلاَ تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا) فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا
পরিচ্ছেদঃ তায়াম্মুম
(৫৭৭) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, দুই ব্যক্তি সফরে বের হল। নামাযের সময় হলে তাদের নিকট পানি না থাকার কারণে তায়াম্মুম করে উভয়েই নামায পড়ে নিল। অতঃপর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বেই তারা পানি পেয়ে গেল। ওদের মধ্যে একজন পানি দ্বারা ওযু করে পুনরায় ঐ নামায ফিরিয়ে পড়ল। কিন্তু অপর জন পড়ল না। তারপর তারা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলে ঘটনা খুলে বলল। তিনি যে নামায ফিরিয়ে পড়েনি তার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমার আমল সুন্নাহর অনুসারী হয়েছে এবং তোমার নামাযও যথেষ্ট (শুদ্ধ) হয়ে গেছে। আর যে ওযু করে নামায ফিরিয়ে পড়েছিল, তার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, তোমার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব।
عَن أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ خَرَجَ رَجُلاَنِ فِى سَفَرٍ فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ وَلَيْسَ مَعَهُمَا مَاءٌ فَتَيَمَّمَا صَعِيدًا طَيِّبًا فَصَلَّيَا ثُمَّ وَجَدَا الْمَاءَ فِى الْوَقْتِ فَأَعَادَ أَحَدُهُمَا الصَّلاَةَ وَالْوُضُوءَ وَلَمْ يُعِدِ الآخَرُ ثُمَّ أَتَيَا رَسُولَ اللهِ ﷺ فَذَكَرَا ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ لِلَّذِى لَمْ يُعِدْ أَصَبْتَ السُّنَّةَ وَأَجْزَأَتْكَ صَلاَتُكَ وَقَالَ لِلَّذِى تَوَضَّأَ وَأَعَادَ لَكَ الأَجْرُ مَرَّتَيْنِ