পরিচ্ছেদঃ ৩০২. দিনের নফল সালাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে
১২৯৫। ইবনু ’উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতের এবং দিনের (নফল) সালাত দু’ রাক’আত করে আদায় করতে হয়।[1]
সহীহ।
-
নফল সালাতের ব্যাপারে কতিপয় লক্ষণীয় বিষয়ঃ
(ক) নফল সালাত মাত্রাতিরিক্ত আদায় না করাঃ ইসলামী শারীআতের দৃষ্টিতে নফল সালাত এতো বেশি পরিমাণে আদায় করা উচিত নয় যা স্বাস্থ্যহানি ও স্বাভাবিক কাজ-কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। হাদীসে এসেছে-
‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সারাদিন রোযা রাখতেন এবং সারারাত নফল সালাত আদায়ে কুরআন খতম করতেন। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বিনিদ্র রাত কাটাতে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ এমনটি করলে তোমার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে এবং চোখ কোঠরাগত হয়ে যাবে। মনে রেখো, তোমার শরীরেরও হক রয়েছে, তোমার চোখেরও নিদ্রার হক আছে, তোমার স্ত্রীরও হক আছে এবং তোমার মেহমানদেরও হক আছে। কাজেই কিছু সময় নফল সালাত আদায় করবে একং কিছু সময় ঘুমিয়ে নিবে। অনুরূপভাবে কিছুদিন রোযা রাখবে এবং কিছুদিন বিরতী দিবে। (সহীহুল বুখারী)
(খ) অধিক পরিমাণে নফল আদায় করতে গিয়ে ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদায় যেন ত্রুটি না হয়- হাদীসে এসেছেঃ একদা ‘উমার (রাঃ) ফজরের সালাতে সুলায়মান ইবনু আবূ হাসমাকে উপস্থিত পেলেন না। অতঃপর সকালবেলায় উমার (রাঃ) বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। সুলায়মানের বাড়ি মসজিদে নাববী ও বাজারের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। পথিমধ্যে সুলায়মানের মায়ের সাথে উমার (রাঃ) এর সাক্ষাৎ ঘটে। উমার (রাঃ) বললেনঃ আজ ফজরের জামা‘আতে সুলায়মানকে যে দেখলাম না! উত্তরে তার মা বললেনঃ সে সারারাত জেগে নফল সালাত আদায় করেছিলো। তাই শেষ রাতে তার চোখ লেগে যায়। (ফলে জাগ্রত হয়ে জামা‘আতে উপস্থিত হতে পারেনি)। তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করাটা আমার কাছে সারারাত নফল সালাত আদায়ের চাইতে অধিক প্রিয়। (মুয়াত্তা মালিক)
সুতরাং নফল ইবাদাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং প্রতিটি ইবাদাতে তার প্রাপ্য গুরুত্ব প্রদান করাই শারীআতের বিধান। এদিকে সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত।
(গ) সফর অবস্থায় নফল সালাত-
সফরে কেবল ফরয সালাত আদায় করতে হবে, না সুন্নাতও পড়তে হবে এ বিষয়ে মতভেদ আছে। রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্মপন্থা থেকে শুধু এতোটুকুই জানা যায় যে, তিনি সফর অবস্থায় ফজরের সুন্নাত এবং বিতর সালাত আদায় করতেন, কিন্তু অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল ফরয সালাত আদায় করতেন, নিয়মিত সুন্নাত আদায়ের কথা প্রমাণিত নয়। অবশ্য সময়-সুযোগ হলে তিনি নফল সালাত আদায় করতেন, আরোহী অবস্থায় ও চলতে চলতেও কখনো নফল সালাত আদায় করতেন। এ জন্য আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সফররত অবস্থায় ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য ওয়াক্তের সুন্নাত পড়তে লোকদের নিষেধ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ আলিম সুন্নাত পড়া বা না পড়া উভয়টিই সংগত মনে করেন। তারা ব্যাপারটি লোকদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
কতিপয় বিদআতী ও ভিত্তিহীন নফল সালাতঃ
মাগরিবের পর ছয় কিংবা বিশ রাক‘আত সালাত
কোন ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাক‘আত সালাত আদায় করলে এবং এর মাঝে কোনরূপ মন্দ কথা না বললে তাকে এর বিনিময়ে বার বৎসরের ‘ইবাদাতের সওয়াব দেয়া হবে।
আরেক বর্ণনায় রয়েছে, পঞ্চাশ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
উভয়টি খুবই দুর্বল : ইবনু মাজাহ, রাওযুন নাযীর, তা‘লীকুর রাগীব, যঈফাহ্ হা/৪৬৯, তিরমিযী, ইবনু নাসর, ইবনু শাহীন ‘আত-তারগীব’। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব। আমরা এটিকে ‘উমার ইবনু আবূ খাস‘আম ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে অবহিত নই। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি, ‘উমার ইবনু আবূ খাস‘আম হাদীস বর্ণনায় মুনকার। তিনি তাকে খুবই দুর্বল বলেছেন। ইমাম যাহাবী তার জীবনীতে বলেছেন, তার দুটি মুনকার হাদীস রয়েছে। যার অন্যতম এ হাদীসটি। আর দ্বিতীয় হাদীসের সনদে মুহাম্মাদ ইবনু গাযওয়ান রয়েছে। তিনি মুনকারুল হাদীস। ইমাম আবূ যুর‘আহ বলেন : তার হাদীস বানোয়াট হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যঈফ জামি‘ হা/৫৬৬১, ৫৬৬৫, সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৬৮, ৪৬৯।
যে ব্যক্তি মাগরিব ও ‘ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ রাক‘আত সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি মহল তৈরি করে দিবেন।
বানোয়াট : তিরমিযী, ইবনু মাজাহ। শায়খ আলবানী বলেনঃ হাদীসটি জাল। যঈফ আল-জামি‘ হা/৫৬৬২, সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ হা/৪৬৭। আল্লামা বুসয়রী বলেনঃ হাদীসের সনদে ইয়াকূব রয়েছে। সে দুর্বল এ ব্যাপারে সকলে একমত। তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ সে বড় বড় মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত, সে হাদীস জাল করতো। ইমাম ইবনু মাঈন এবং আবূ হাতিমও তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেনঃ জেনে রাখুন, মাগরিব এবং ‘ইশার মধ্যে রাক‘আত সংখ্যা উল্লেখ করে উৎসাহমূলক যেসব হাদীস এসেছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ নয়। বরং এর একটি অন্যটির চাইতে বেশি দুর্বল। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাক‘আতের সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সালাত আদায় করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। কিন্তু তাঁর বাণী হিসেবে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা খুবই দুর্বল। তার উপর আমল করা জায়িয হবে না।
যে ব্যক্তি মাগরিব ও ‘ইশার মাঝে সালাত আদায় করলো তা আওয়াবীনের সালাত।
দুর্বল : ইবনু নাসর, ইবনুল মুবারক-মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির হতে মুরসালভাবে। আলবানী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন যঈফ আল-জামি‘ হা/৫৬৭৬, সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৪৬১৭।
উল্লেখ্য, কেউ কেউ এ সালাতকে আওয়াবীন সালাত নামে অভিহিত করেন। কিন্তু কোন সহীহ হাদীসেই একে এ নামে অভিহিত করা হয়নি। তাই মাগরিবের পরের সালাতের নাম আওয়াবীন বলা ভিত্তিহীন। বরং সহীহ হাদীসে চাশতের সালাতকে আওয়াবীন সালাত বলা হয়েছে।
রজব মাসে সালাতুর রাগায়িবঃ
ইমাম গাযযালী এবং ‘আবদুল কাদির জিলানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রজব মাসের প্রথম জুম্মার দিন মাগরিব ও ‘ইশার মাঝখানে কেউ যদি ১২ রাক‘আত সালাত (তাদের বর্ণিত বিশেষ নিয়মে) আদায় করে তাহলে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা, গাছের পাতা ও বালুকারাশির মত অসংখ্য হয়। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/৩৫১, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন ১/১৫৩-১৫৪)
এ সালাতের নাম সালাতুর রাগায়িব। এ সম্পর্কে নাওয়াব খান বলেনঃ এ সালাত কোন সহীহ কিংবা হাসান অথবা যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নেই- (বাযলুল মানফা‘আহ ৪৩ পৃষ্ঠা)। বরং মুহাক্কিক ‘আলিমগণ একে বিদ‘আত বলেছেন।
মুহাদ্দিস আবূ শা-মাহ ‘আলবা-য়িস’ নামক গ্রন্থে বলেনঃ ইহইয়াউ উলূমে এ সালাতের বর্ণনা থাকায় অনেকে ধোঁকায় পড়েছেন। কিন্তু হাদীসের হাফিযগণ এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে জাল ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাফিয আবুল খাত্তাব বলেনঃ সালাতুর রাগায়িবের হাদীসটি জাল করার অপবাদ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু জাহযামের উপর দেয়া হয়- (ইসলা-হুল মাসজিদ, উর্দূ অনুবাদ ১২৭ পৃষ্ঠা)।
আল্লামা সুয়ূতী বলেনঃ এ হাদীসটি জাল ও বানোয়াট। (আল-লাআলিল মসনুআহ ২য় খন্ড ৫৬ পৃষ্ঠা)।
আল্লামা শামী হানাফী বলেনঃ এই সালাত আদায় করা বিদআত। মুনয়্যার দুই ব্যাখ্যাকার বলেনঃ এ ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তার সবই জাল হাদীস। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪২)।
এই সালাত ৪৮০ হিজরীর পর আবিস্কৃত হয়েছে। (ঐ ৬৬৪ পৃষ্ঠা)
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী, হাফিয যাহাবী, হাফিয ইরাক্বী, ইবনুল জাওযী, ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম নাবাবী ও সুয়ূতী প্রমুখ ইমামগণ উক্ত হাদীসকে জাল বলেছেন। (আমরু বিল ইত্তিবা আননাইযু আনিল ইবতিদা-আ ১৬৭ পৃষ্ঠা ২নং টীকা আসসুনান অলমুবতাদাআত ১২৪ পৃষ্ঠা)
শবে-বরাতের হাজারী সালাতঃ
ইমাম গাযযালী ও ‘আবদুল কাদির জীলানী বর্ণনা করেছেন শা’বানের ১৫ই রাতে যদি কেউ একশ’ রাক‘আত সালাতে এক হাজার বার সূরাহ ইখলাস পড়ে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি ৭০ বার দৃষ্টিপাত করবেন এবং প্রত্যেক দৃষ্টিপাতে তার ৭০টি মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন। (ইহইয়া ১/৩৫১, গুনইয়াতুত ত্বালিবীন ১/১৬৬-১৬৭)
ইমাম সিদ্দীক হাসান খান বলেনঃ এ সালাতের প্রমাণ হাদীস থেকে পাওয়া যায় না। (বাযনুল মানফা‘আহ ৪৩ পৃষ্ঠা)
সিরিয়ার মুজাদ্দিদ আল্লামা মুহাম্মাদ জামালুদ্দীন কাসিমী (রহ.) বলেন : ১৫ই শা’বানের রাতে ৪৪৮ হিজরীতে ‘হাজারী সালাতের’ বিদআত আবিস্কৃত হয়েছিল। যাতে একশত রাক‘আত সালাতে এক হাজার বার ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়া হয়। ইবনু অযযাহু বলেন, ইবনু মুলায়কাহ্কে বলা হলো, যিয়াদ নুমাইরী বলতেন, শা’বানের ১৫ই রাত লাইলাতুল ক্বদরের মত। এ কথা শুনে ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেনঃ আমার হাতে যদি লাঠি থাকতো তাকে পিটাতাম। যিয়াদ হল বক্তা। হাফিয আবুল খাত্তাব বলেনঃ কিছু অজ্ঞাত পরিচয় লোক শা’বানের ১৫ই রাতের সালাত সংক্রান্ত জাল হাদীস তৈরী করে লোকদের উপর একশ’ রাক‘আত সালাতের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। (ইসলাহুল মাসাজিদ উর্দূ তরজমা ১২৮-১২৯ পৃষ্ঠা)
এ সালাত সম্পর্কে আল্লামা সুয়ূতী কতিপয় হাদীস বর্ণনা করে মন্তব্য করেছেন যে, সবগুলো হাদীসই জাল ও বানোয়াট। (আল্লাআ-লিল মাসনু‘আহ ২/৫৭-৫৯)
কিছু সালাফ বা পূর্ববর্তী ‘আলিম বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব কাজ করেননি তাকে ভাল মনে করে করা ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি। ঐরূপ বাড়াবাড়ি আমলের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কখনই কোন সওয়াব দেন না যা তাঁর রসূল করেননি কিংবা হুকুম দেননি। ঈমানের মিষ্টতা, ইহসানের বৈশিষ্ট্য ও ইসলামের মাহাত্ম্য বাড়াবাড়ি না করার মধ্যে আছে। (বাযলুল মানফা‘আহ ৪৪ পৃষ্ঠা)
আরো কিছু বিদআতী সালাত
সপ্তাহের প্রত্যেক দিন ও রাতে ইমাম গাযযালী এবং ‘আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) কতিপয় বিশেষ সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন রবিবার দিনে ৪ এবং রাতে ২০ রাক‘আত, সোমবার দিনে ২ অথবা ১২ এবং রাতে ৪ রাক‘আত, মঙ্গলবার দিনে ১০ রাতে ২ কিংবা ১২ রাক‘আত, বুধবার দিনে ১২ এবং রাতে ২ অথবা ১৬ রাক‘আত, বৃহস্পতিবার দিনে ২ রাক‘আত এবং রাতেও ২ রাক‘আত, শুক্রবার দিনে ২ কিংবা ৪ এবং রাতে ১২ কিংবা ১৩ রাক‘আত এবং শনিবার দিনে ৪ এবং রাতে ১২ রাক‘আত সালাত। (ইহ্ইয়াউ উলুমুদ্দীন, মাওঃ ফযলুল করীমর অনূদিত ১/৩৪৫-৩৪৮, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন মাওঃ মেহরুল্লা অনূদিত ২/৫৯-৬৭)
উক্ত দুই মনীষী বলেন, উপরোক্ত সালাতসমূহ তাদের গ্রন্থে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী পড়লে বহু অকল্পনীয় নেকী পাওয়া যাবে। কিন্তু মজার কথা এ যে, ঐসব সালাত এবং ওর সওয়াবের প্রমাণে তারা একটি সহীহ হাদীসও পেশ করেন নাই। তাই আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.) উক্ত দুই মনীষী বর্ণিত সপ্তাহের প্রত্যেক দিনের বিশেষ সালাত সম্পর্কে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করে বলেছেনঃ সব হাদীসগুলোই জাল ও বানোয়াট। (আল-লাআলিল মাসনুআহ ২/৪৮-৫২)
তাই হিজরী তের শতকের মুজাদ্দিদ ইমাম নাওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেনঃ ঐ সালাতগুলো কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় না- (বাযলুল মানফা‘আহ লিয়ীযাহিল আরকা-নিল আরবা‘আহ ৪২ পৃষ্ঠা)। তিনি আরো বলেনঃ এসব সালাত সুফী ও সাধকগণ সময় কাটাবার জন্য আবিষ্কার করেছেন। তারপর তারা ঐসবের জন্য এমন সব নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য তৈরী করেন যে, মুহাক্কিক ও গবেষক ‘আলিমগণ ওগুলোকে বিদ‘আত বলতে বাধ্য হয়েছেন- (ঐ- ৪৪পৃষ্ঠা)।
আল্লামা সুয়ূতী ১০ই মুহাররমের আশূরার রাতে ৪ রাক‘আত এবং ঈদুল ফিতরের রাতে ১০ রাক‘আত ও দিনে ৪ রাক‘আত এবং হাজ্জের দিন যুহর ও ‘আসরের মাঝে ৪ রাক‘আত ও দিনের যে কোন সময় ২ রাক‘আত এবং ঈদুল আযহার রাতে ২ রাক‘আত সালাত আদায়ের অকল্পনীয় ফাযীলাতপূর্ণ হাদীস পেশ করে প্রমাণসহ মন্তব্য করেছেন যে, সবগুলো হাদীসই জাল ও বানোয়াট। (আল-লাআলিল মাসনুআহ পৃঃ ৫৪, ৬০-৬৩, সূত্র : আইনী তুহফা সালাতে মুস্তফা)
باب فِي صَلَاةِ النَّهَارِ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَرْزُوقٍ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَارِقِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " صَلَاةُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مَثْنَى مَثْنَى " .
- صحيح
Narrated Abdullah ibn Umar:
The Prophet (ﷺ) said: Prayer by night and day should consist of pairs of rak'ahs.
পরিচ্ছেদঃ ৩০২. দিনের নফল সালাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে
১২৯৬। আল-মুত্তালিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সালাত দু’ রাক’আত দু’ রাক’আত করে আদায় করতে হয়। প্রত্যেক দু’ রাক’আতে তোমার তাশাহহুদ পড়তে হবে। অতঃপর তুমি তোমার বিপদাপদ ও দারিদ্রের কথা দু’ হাত উঠিয়ে দু’আ করবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি এরূপ করে না তার আচরণ হবে ক্রটিপূর্ণ।[1]
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ)-কে রাতে দু’ রাক’আত করে সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে দু’ রাক’আত আদায় করতে পারো, আবার ইচ্ছে হলে চার রাক’আত করেও আদায় করতে পারো।
দুর্বল।
باب فِي صَلَاةِ النَّهَارِ
حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنِي عَبْدُ رَبِّهِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ أَبِي أَنَسٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ : " الصَّلَاةُ مَثْنَى مَثْنَى أَنْ تَشَهَّدَ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَأَنْ تَبَاءَسَ وَتَمَسْكَنَ وَتُقْنِعَ بِيَدَيْكَ وَتَقُولَ : اللَّهُمَّ اللَّهُمَّ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ " . سُئِلَ أَبُو دَاوُدَ عَنْ صَلَاةِ اللَّيْلِ مَثْنَى قَالَ : إِنْ شِئْتَ مَثْنَى وَإِنْ شِئْتَ أَرْبَعًا .
- ضعيف
Narrated Muttalib:
The Prophet (ﷺ) said: Prayer is to be offered in two rak'ahs; and you should recite the tashahhud at the end of two rak'ahs, and express your distress and humility and raise your hands and say praying: O Allah, O Allah. He who does not do so does not offer a perfect prayer.
Abu Dawud was asked about offering prayer at night in two rak'ahs. He said: They may be two if you like and four if you like.