পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮৭-[১] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আলী (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে বলেছেন, মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে হারূন আলায়হিস সালাম-এর যে মর্যাদা ছিল, তুমিও আমার কাছে সে পর্যায়ে রয়েছ। তবে তারতম্য এটা যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)
عَن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِي» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3706) و مسلم (30 / 2404)، (6217) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى) অর্থাৎ আখিরাতে আর মর্তবায় তাঁর নিকটবর্তী হবে। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে নবী (সা.) এ কথাটি বলেছিলেন তাবুকের যুদ্ধে বের হওয়াকে কেন্দ্র করে। তিনি ‘আলী (রাঃ)-কে তাঁর পরিবারের নিকটে ছেড়ে যান এবং সেখানে থাকতে বলেন। এদিকে মুনাফিকরা তাঁকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়াতে লাগল যে, তাঁকে তিনি (সা.) ছেড়ে গেছেন। কারণ তিনি তাকে ভারী মনে করেছিলেন। এটা তার জন্য বিপদের কারণ জেনে তিনি তাকে ছেড়ে গেছেন। এ কথা শুনে তিনি তার তরবারি বের করে যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন। তখন নবী (সা.) জুরফ নামক স্থানে ছিলেন। তিনি নবী (সা.) -এর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, মুনাফিকরা এই এই কথা বলছে। তখন নবী (সা.) তাকে সান্তনা দিতে গিয়ে বলেন, তারা মিথ্যা কথা বলেছে। আমি তোমাকে আমার পিছনে রেখে এসেছি যাতে তুমি আমার অনুপস্থিতে আমার স্থলাভিষিক্ত হতে পার। তুমি আমার ও তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও। হে ‘আলী! তুমি কি পছন্দ কর না যে, তুমি আমার স্থানে থাক যেভাবে হারূন আলায়হিস সালাম মূসা আলায়হিস সালাম-এর জায়গায় ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এ হাদীস দ্বারা ‘আলী (রাঃ) নবী (সা.) -এর পরে খলীফাহ্ হবেন এরূপ বুঝায় না; বরং তিনি তাঁর কাছের লোক। তাকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসেন এটাই বুঝায়। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮৮[২] যির ইবনু হুবায়শ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ) বলেছেন, সেই মহান পবিত্র সত্তার শপথ। যিনি বীজ ফাটিয়ে অঙ্কুর বের করেন এবং বীর্য হতে প্রাণী সৃষ্টি করেন, নবীয়ে উম্মী - আমাকে এ অসিয়ত করেছেন যে, মু’মিনই আমাকে ভালোবাসবে এবং মুনাফিকই আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)
وَعَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ: أَنْ لَا يُحِبَّنِي إِلَّا مؤمنٌ وَلَا بيغضني إِلَّا مُنَافِق. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (131 / 78)، (240) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَعَهْدُ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيَّ) অর্থাৎ নবী (সা.) তা গুরুত্বারোপ করেছেন ও আর তা আমার কাছে পৌছেছেন যেন তিনি আমাকে অঙ্গীকার করেছেন।
(إِلَّا مؤمنٌ) অর্থাৎ পূর্ণ ঈমানদার নয়। যেমন কেউ যদি তাকে ভালোবাসে আর শায়খায়ন তথা আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)-কে ঘৃণা করে, তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তাহলে সেও পূর্ণ মু'মিন নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮৯-[৩] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের সময় বললেন, আগামীকাল আমি এ পতাকা এমন এক লোকের হাতে প্রদান করব, যার হাতে আল্লাহ তা’আলা (খায়বার দূর্গ) জয় করাবেন, যিনি আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসেন। অতঃপর ভোর হতেই লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে উপস্থিত হলো। তারা প্রত্যেকেই (মনে মনে) এ আশা পোষণ করছিল যে, পতাকা তাকেই প্রদান করা হবে। কিন্তু নবী (সা.)- প্রশ্ন করলেন, ’আলী ইবনু আবূ ত্বালিব কোথায়? লোকজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চোখে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। তিনি (সা.) বললেন, তাঁকে ডেকে আনার জন্য কাউকে পাঠাও। অতঃপর আলী (রাঃ)-কে আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন তার চোখে কোনরূপ রোগ-ব্যথাই ছিল না।
অতঃপর তিনি (সা.) পতাকা তাঁর হাতেই প্রদান করলেন। পতাকা হাতে নিয়ে ’আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের (শত্রুদের) বিরুদ্ধে আমি সেই অবধি লড়ে যাব যে পর্যন্ত তারা আমাদের মতো (মুসলিম) না হবে। নবী (সা.) বললেন, তুমি ধীরে-সুস্থে চল, এমনকি যখন তুমি তাদের অঞ্চলে পৌছবে, তখন সর্বপ্রথম তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবে এবং ইসলামের মধ্যে আল্লাহর সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবে। আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা যদি একটি লোককেও আল্লাহ তা’আলা হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লাল রঙের উট অপেক্ষাও অধিকতর উত্তম হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আর ’আলী (রাঃ)-এর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে ’আলী (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে বলেছিলেন- (أَنْت مني وَأَنا مِنْك) “তুমি ’আমর এবং আমি তোমার” بَاب «بُلُوغ الصَّغِير» ’শিশুর বয়ঃপ্রাপ্তি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب عَليّ بن أبي طَالب)
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَوْمَ خَيْبَرَ: «لَأُعْطِيَنَّ هَذِهِ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهَ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ» . فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كلهم يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ: «أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ؟» فَقَالُوا: هُوَ يَا رَسُولَ اللَّهِ يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ. قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ» . فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ فَقَالَ عَلِيٌّ: يَا رَسُولَ الله أقاتلهم حَتَّى يَكُونُوا مثلنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِي اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذكر حَدِيث الْبَراء قَالَ لعَلي: «أَنْت مني وَأَنا مِنْك» فِي بَاب «بُلُوغ الصَّغِير»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2942) و مسلم (34 / 2406)، (6223) 0 حدیث البراء تقدم (3377) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ‘আলী (রাঃ)-এর মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি চোখের অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকার পরও নবী (সা.) তাকে ডেকে এনে খায়বার যুদ্ধের পতাকা দিয়ে দিলেন। আর তার হাতে খায়বার বিজয়ের সুসংবাদও আগাম বলে দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) মু'জিযাহ্ দেখিয়ে তার চোখে থুথু লাগিয়ে তার চোখের সমস্যা সমাধান করে দিলেন। সুবহা-নাল্ল-হ! তারপরে তাকে যুদ্ধের কিছু নীতিমালা শিখিয়ে তাকে মানুষকে হত্যা করার আগে তাদেরকে দা'ওয়াত দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আর দাওয়াতি কাজের ফলাফল বর্ণনা করেন। (সম্পাদকীয়)।