পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮৩-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) ও আবূ বকর, ’উমার এবং উসমান (রাঃ)-সহ উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন, (খুশিতে) পাহাড় তাদেরকে নিয়ে দুলতে লাগল। তখন নবী (সা.) পা দ্বারা আঘাত করে বললেন, উহুদ স্থির থাক। কেননা একমাত্র তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَعِدَ أُحُدًا وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ بِهِمْ فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ فَقَالَ: «اثْبُتْ أُحُدُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (3686) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مَازِلْنَاأعِزَّةًمُنْذُأَسْلَمَ) কেননা তিনি ছিলেন আল্লাহর আদেশ পালনে অবিচল ও দৃঢ়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, “উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ ছিল সম্মান, হিজরত ছিল সাহায্য, শাসন ছিল দয়া। কারণ আল্লাহর শপথ ‘উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের আগ পর্যন্ত আমরা কা'বার চারপার্শ্বে প্রকাশ্যে সালাত আদায় করতে পারিনি।
(فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ فَقَالَ: اثْبُتْ أُحُدُ) মিরক্বাত ব্যাখ্যাকার বলেন: পাহাড়কে বলছেন আগন্তুকের কারণে তোমার পৃষ্ঠে কোন চিহ্ন প্রকাশ করো না, দৃঢ়চেতা ব্যক্তির ন্যায় অটল থাক। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। জুনায়দ নামক এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ভিতরগত কোন অবস্থা নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বাহ্যিক কোন বিষয় শ্রবণের সময় তোমার মাঝে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? তখন তিনি সূরাহ্ আন্ নামল-এর ৮৮নং আয়াত পাঠ করে শুনান। আয়াতটি হলো, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(وَ تَرَی الۡجِبَالَ تَحۡسَبُهَا جَامِدَۃً وَّ هِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ) “তুমি পাহাড়কে দেখতে পাও অনঢ় অথচ তা মেঘমালার ন্যায় চলে।” (২৭:৮৮)
(فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ) মর্যাদাবান ও সম্মানিত সাথিগণ তার উপর উঠার কারণে পাহাড়কেও সকল প্রকার বিরক্তিভাব প্রকাশ করা হতে মুক্ত থাকা অবশ্যক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ৭/৩৬৮৪)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - (আবূ বাকর সিদ্দীক, ‘উমার ফারূক এবং উসমান গনী রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তিনজনের একত্রে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮৪-[২] আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী (সা.) -এর সাথে মদীনার কোন একটি বাগানে ছিলাম। তখন এক লোক এসে (বাগানের) দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করল। নবী (সা.) বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। অতঃপর আমি দরজা খুলে দিতেই দেখলাম, তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)। তখন আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথানুযায়ী (জান্নাতের) সুসংবাদ দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন।
অতঃপর আরেক লোক এসে দরজা খুলে দিতে অনুরোধ করল। নবী (সা.) বললেন, আগন্তুক ব্যক্তির জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর। আমি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম, আগন্তুক “উমার ফারূক (রাঃ)। তখন আমি তাঁকে নবী (সা.) -এর দেয়া সুসংবাদটি জানালাম। তিনিও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খুলতে অনুরোধ করল। তখন নবী (সা.) আমাকে বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তার ওপর মারাত্মক বিপদের আগমনসহ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর। আমি দরজা খুলে দিতেই দেখলাম, তিনি হলেন উসমান গনী (রাঃ)।
আমি তাঁকে নবী (সা.) যা বলেছেন তা জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, আল্লাহই (আমার) সাহায্যকারী। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب هَؤُلَاءِ الثَّلَاثَة)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ فَجَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَفْتَحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» فَفَتَحْتُ لَهُ فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ فَبَشَّرْتُهُ بِمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثُمَّ جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَفْتَحَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ» . فَفَتَحْتُ لَهُ فَإِذا هُوَ عُمَرُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ فَقَالَ لِي: «افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ عَلَى بَلْوَى تُصِيبُهُ» فَإِذَا عُثْمَانُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ ثمَّ قَالَ: الله الْمُسْتَعَان. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3693) و مسلم (28 / 2403)، (6212) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ‘উমার (রাঃ) -এর সময়েও পরীক্ষা ছিল তবে ‘উসমান (রাঃ)-কে খাস করার কারণ হলো তার পরীক্ষা বড় ছিল। আর তার সময়ও বেশি ছিল, কিন্তু তার উত্তম সঙ্গী কম ছিল।
(فَحَمِدَ اللَّهَ ثمَّ قَالَ: الله الْمُسْتَعَان) অর্থাৎ যাবতীয় কাজে তার সহযোগিতা কামনা করেছেন। আর ঐ সকল বিপদাপদে ধৈর্য ধরার জন্য চেষ্টা করতে চেয়েছেন। এর ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করবেন। আর সে আল্লাহর নিকটে অবস্থানের সুযোগ লাভে ধন্য হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)