পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫২-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (বাল্যকালে দুধ-মা হালীমার কাছে থাকাকালীন) একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সমবয়সী বালকদের সাথে খেলাধুলা করছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেললেন। অতঃপর তার বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা হতে একখণ্ড বের করে বললেন, তোমার দেহের ভিতরে এটা শয়তানের অংশ। তারপর তাকে একটি স্বর্ণ-পাত্রে রেখে জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর উক্ত পিণ্ডটিকে যথাস্থানে রেখে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। এ ঘটনা দেখে খেলার সঙ্গী বালকেরা দৌড়ে এসে তার দুধ-মায়ের কাছে এসে বললেন, মুহাম্মাদ-কে হত্যা করা হয়েছে। এ সংবাদ শুনে তারা ঘটনাস্থলে এসে তাকে সুস্থ পেল, তবে তার চেহারার বর্ণ খুবই বিষন্ন। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, আমি প্রায়শ রাসূল (সা.) -এর বুকের সেলাইটি দেখতে পেতাম। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ وَهُوَ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ فَأَخَذَهُ فَصَرَعَهُ فَشَقَّ عَنْ قَلْبِهِ فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ عَلَقَةً. فَقَالَ: هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ لَأَمَهُ وَأَعَادَهُ فِي مَكَانِهِ وَجَاءَ الْغِلْمَانُ يَسْعَوْنَ إِلَى أُمِّهِ يَعْنِي ظِئْرَهُ. فَقَالُوا: إِنْ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ فَاسْتَقْبَلُوهُ وَهُوَ مُنْتَقَعُ اللَّوْنِ قَالَ أَنَسٌ: فَكُنْتُ أَرَى أَثَرَ الْمِخْيَطِ فِي صَدْرِهِ. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (261 / 162)، (413) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مِنْهُ عَلَقَةً) অর্থাৎ মোটা রক্তকে। আর তা হলো অন্তরে পাপাচার ও নষ্টের মূল।
(مِنْ ذَهَبٍ) ইসলামী শারী'আতে স্বর্ণ ব্যবহার করাকে হারাম করা হয়েছে দুনিয়ায় পুরুষের জন্য। নবী (সা.) -এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়েছিল কয়েকবার।
১. শিশুকালে হালিমার কাছে থাকাকালীন সময়ে। তখন তাঁর বয়স ছিল দশ বছর।
২. হিরা গুহায় তার জন্য জিবরীলের মুনাজাতের সময়।
৩. তারপর মি'রাজের রাতে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৩-[২] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি মক্কার ঐ পাথরকে এখনো চিনি, যে আমার নুবুওয়্যাত লাভের পূর্বে আমাকে সালাম করত। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ أُبعث إِني لأعرفه الْآن» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (2 / 2277)، (5939) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: বলা হয়ে থাকে হাজারে আসওয়াদ পাথরটি নবী (সা.) -এর সাথে কথা বলত। এটারও সম্ভাবনা আছে যে, তার সাথে কথা বলত হাজারে যুকাক যার অবস্থান ছিল মাসজিদ ও খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর বাড়ির মাঝে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মক্কার লোকেরা একটি নিদর্শন (মু’জিযাহ্) দেখতে পান, যখন তিনি (সা.) চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। এমনকি তারা উভয় খণ্ডের মাঝখানে হেরা পর্বত দেখতে পেল। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَن أنسٍ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ مَكَّةَ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرِيَهُمْ آيَةً فَأَرَاهُمُ الْقَمَرَ شِقَّتَيْنِ حَتَّى رَأَوْا حِرَاءً بَيْنَهُمَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3868) و مسلم (46 / 2802)، (7076) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: মক্কার কাফির কুরায়শগণ নবী (সা.) -কে তাঁর নুবুওয়্যাত ও রিসালাতের নিদর্শনস্বরূপ চাদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাতে বললে নবী (সা.) তা তাদেরকে তা দ্বিখণ্ডিত করে দেখান।
(حَتَّى رَأَوْا حِرَاءً بَيْنَهُمَا) অর্থাৎ একখণ্ড মেঘ পাহাড়ের উপরে এবং অন্য খণ্ড মেঘ পাহাড়ের নিচে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৫-[৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়। তার একখণ্ড পাহাড়ের উপরের দিকে এবং অপর খণ্ড পাহাড়ের নিম্নদিকে ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: انْشَقَّ الْقَمَرُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِرْقَتَيْنِ: فِرْقَةً فَوْقَ الْجَبَلِ وَفِرْقَةً دُونَهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْهَدُوا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4864) و مسلم (45 ۔ 43 / 2800)، (7071 و 7073) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (اشْهَدُوا) অর্থাৎ তোমরা আমার নুবুওয়্যাতের অথবা মু'জিযার সাক্ষ্য থাকবে। যুজাজ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, একদল লোক এ ঘটনাকে তাওয়ীল বা ভুল ব্যাখ্যা করেন। আর তা হলো চাঁদ কিয়ামতের দিন খণ্ডিত হবে। আর এ কথাটি স্পষ্ট মহান আল্লাহ বলেন,
(وَ اِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَ یَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ) “আর তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, চলমান যাদু।” (সূরা আল কমার ৫৪ : ০২)।
তাহলে এটা কিয়ামতের দিন কিভাবে হবে? আয়াতে চলমান যাদু বলতে বুঝা যাচ্ছে তারা ইতোপূর্বে আরো অনেক নিদর্শন ও মু'জিযাহ্ দেখেছিল। ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিরোধিতাকারা অনেকেই বলে, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া কাজটি একটি প্রকাশ্য কাজ। এটি ঘটলে তো অনেক মানুষ দেখত। আর এটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের হত।
এর জবাবে বলা হয়: এ ঘটনা তো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছে গেছে। আর যারা বিরোধী তারা হয়তো মূর্খতা প্রকাশ করে অথবা চন্দ্রগ্রহণের মতো ধারণা করে। আর প্রথম যুগের মানুষেরা এর সাক্ষ্য ছিলেন। আর এতে কোন সন্দেহ নেই তার কারণ হলো নবী (সা.) এটা সংবাদ দিয়েছেন। আর শারহে মুসলিমের মধ্যে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ চাদের খণ্ডন হয়েছিল রাতের বেলায় আর বেশিরভাগ মানুষ তখন ঘুমন্ত ছিল। আর দরজা ছিল বন্ধ। আর তারা কাপড় মুড়ি দিয়েছিল। আর অল্প সংখ্যক যারা আসমানের দিকে তাকিয়ে ছিল তারা এটা লক্ষ্য করেছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৬-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ জাহল (মক্কার কাফির কুরায়শদেরকে) বলল, তোমাদের সামনে মুহাম্মাদ কি তার চেহারা মাটিতে লাগায়? (অর্থাৎ সে সালাত আদায় করে?) বলা হলো, হ্যাঁ।
তখন আবূ জাহল বলল, লাত ও ’উযযার শপথ! আমি যদি তাকে এরূপ করতে দেখি, তাহলে আমি (পা দিয়ে) তার ঘাড় মাড়িয়ে দেব। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসলো, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবূ জাহল নবী (সা.)- এর দিকে অগ্রগামী হচ্ছিল, তৎক্ষণাৎ দেখা গেল, সে তড়িৎবেগে পিছনের দিকে হটছে এবং উভয় হাত দ্বারা নিজেকে আত্মরক্ষা করে চলছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি দেখছি আমার ও মুহাম্মাদ-এর মধ্যস্থলে আগুনের পরিখা ও ভয়ঙ্কর দৃশ্য এবং ডানাবিশিষ্ট দল। উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি সে (আবূ জাহল) আমার কাছাকাছি হত, তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার এক এক অঙ্গ ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলত। (মুসলিম)।
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ أَبُو جَهْلٍ: هَلْ يُعَفِّرُ مُحَمَّدٌ وَجْهَهُ بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ؟ فَقِيلَ: نَعَمْ. فَقَالَ: وَاللَّاتِ وَالْعُزَّى لَئِنْ رَأَيْتُهُ يَفْعَلُ ذَلِكَ لَأَطَأَنَّ عَلَى رَقَبَتِهِ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي - زَعَمَ لِيَطَأَ عَلَى رَقَبَتِهِ - فَمَا فَجِئَهُمْ مِنْهُ إِلَّا وَهُوَ يَنْكُصُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَيَتَّقِي بِيَدَيْهِ فَقِيلَ لَهُ مَالك؟ فَقَالَ: إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ لَخَنْدَقًا مِنْ نَارٍ وَهَوْلًا وَأَجْنِحَةً. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ دَنَا مِنِّي لَاخْتَطَفَتْهُ الْمَلَائِكَةُ عُضْواً عُضْواً» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (38 / 2797)، (7065) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فىالتراب) অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.) কি মাটিতে সালাত আদায় করে ও সিজদাহ্ দেয়? ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা দ্বারা সে মাটিতে সিজদাহ্ করার কথা বুঝিয়েছে। আর আমি যদি তাকে মাটিতে সিজদাহ্ করা অবস্থায় পাই তবে তার মাথা মাটিতে পিষে দিব। এ কথা দিয়ে সে বুঝাতে চেয়েছিল, যাতে নবী (সা.) অপমানিত, লজ্জিত ও হেয় প্রতিপন্ন হয়। আর সে তার ক্ষমতা অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৭-[৬] ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা.) -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে দরিদ্রতার অভিযোগ করল। এরপর আরেক লোক এসে পথে ডাকাতির অভিযোগ করল। তখন তিনি (সা) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ’আদী! তুমি কি হীরাহ্ দেখেছ? কূফার একটি প্রসিদ্ধ শহর (বর্তমানে ’ইরাকের একটি প্রদেশ) যদি তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাক তাহলে অবশ্যই দেখতে পাবে যে, একটি মহিলা হীরাহ থেকে ভ্রমণ করে মক্কায় গমন করবে এবং নিরাপদে কা’বা ঘর ত্বওয়াফ করবে, অথচ এক আল্লাহ তা’আলা ছাড়া তার অন্তরে আর কারো ভয় থাকবে না।
আর যদি তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাক তাহলে দেখতে পাবে, অচিরেই পারস্যের ধনভাণ্ডার বিজিত হবে (অর্থাৎ তা গনীমত হিসেবে মুসলিমদের হাতে আসবে)। আর যদি তুমি দীর্ঘজীবী হও, তাহলে এমনও দেখবে যে, এক ব্যক্তি দান-খয়রাত করার উদ্দেশে মুষ্টি ভরে সোনা অথবা রূপা নিয়ে বের হয়েছে এবং তা গ্রহণ করার জন্য লোক সন্ধান করছ। কিন্তু তার নিকট হতে তা গ্রহণ করার মতো কোন একজন লোকও সে খুঁজে পাবে না। আর নিশ্চয় তোমাদের কেউ একদিন আল্লাহর মাঝে এমন কোন একজন লোকও সে খুঁজে পাবে না। আর নিশ্চয় তোমাদের কেউ একদিন আল্লাহর সম্মুখে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে এমন কোন লোক থাকবে না, যে তার অবস্থা আল্লাহর সামনে পেশ করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমার কাছে কোন রাসূল (সা.)ই পাঠাইনি, যিনি দীন শারী’আতের কথা তোমার কাছে পৌছাবে?
সে বলবে, হ্যাঁ, নিশ্চয় পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা আবার প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ দান করিনি এবং আমি তোমার ওপর দয়া করিনি। সে বলবে, হ্যাঁ, করেছেন। অতঃপর সে স্বীয় ডানদিকে তাকাবে, কিন্তু জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার স্বীয় বামদিকে তাকাবে, কিন্তু সেখানেও জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। তোমরা খেজুরের এক টুকরা দান করে হলেও নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও। যদি কেউ এতটুকুও না পায়, তবে অন্তত মিষ্টি কথা দ্বারা আত্মরক্ষা কর। বর্ণনাকারী [আদী (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী মোতাবেক একজন মহিলাকে হীরাহ্ হতে একাকিনী ভ্রমণ করে কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে আমি নিজে দেখেছি। অথচ সে আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনি। আর কিসরা ইবনু হরমুযের (অর্থাৎ পারস্যের) ধনভাণ্ডার যারা উন্মুক্ত করেছেন, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী ’আদী (রাঃ) তার পরবর্তী লোকেদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, যদি তোমরা দীর্ঘায়ু হও তাহলে নবী আবূল কাসিম -এর এ ভবিষ্যদ্বাণী কোন লোক মুষ্টি ভরে.... ও দেখতে পাবে। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ: بَيْنَا أَنَا عِنْد النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَاهُ رَجُلٌ فَشَكَا إِلَيْهِ الْفَاقَةَ ثُمَّ أَتَاهُ الْآخَرُ فَشَكَا إِلَيْهِ قَطْعَ السَّبِيلِ. فَقَالَ: يَا عدي هَل رَأَيْتَ الْحِيرَةَ؟ فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ فَلَتَرَيَنَّ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ لَا تَخَافُ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَلَئِنْ طَالَتْ بك حَيَاةٌ لَتُفْتَحَنَّ كُنُوزُ كِسْرَى وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتَرَيَنَّ الرَّجُلَ يَخْرُجُ مِلْءَ كَفِّهِ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ يَطْلُبُ مَنْ يَقْبَلُهُ فَلَا يجد أحدا يقبله مِنْهُ وَلَيَلْقَيَنَّ اللَّهَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ فَلَيَقُولَنَّ: أَلَمْ أَبْعَثْ إِليك رَسُولا فليبلغك؟ فَيَقُولُ: بَلَى. فَيَقُولُ: أَلَمْ أُعْطِكَ مَالًا وَأُفْضِلْ عَلَيْكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ وَيَنْظُرُ عَنْ يَسَارِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ قَالَ عَدِيٌّ: فَرَأَيْتُ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ لَا تَخَافُ إِلَّا اللَّهَ وَكُنْتُ فِيمَنِ افْتَتَحَ كُنُوزَ كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ وَلَئِنْ طَالَتْ بِكُمْ حَيَاةٌ لَتَرَوُنَّ مَا قَالَ النَّبِيُّ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَخْرُجُ ملْء كفيه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3595) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসে যে লোক দারিদ্রতার ও ভয়ের অভিযোগ করেছিল তা ছিল কঠিন সময়ের। আর এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, (اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا) “নিশ্চয় কঠিনের পর সহজ রয়েছে”- (সূরাহ আশ শারহ ৯৪: ৬)। আর কোন দেশ বিজয়ের আগে সাহাবীদের এরূপ অবস্থা ছিল।
এখানে প্রশ্নকারীর উত্তর দেয়া হয়েছে আর ‘আদী (রাঃ)-ও অন্যান্য সাহাবীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা অচিরেই সহজতা ও নিরাপত্তা লাভ করবে।
এরপর উল্লেখ করলেন দুনিয়াবী এ সকল আরাম-আয়েশ পরকালে কঠিন ও অপমানের কারণ হবে। তবে যাকে আল্লাহ তা থেকে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন আর সে তা কল্যাণের কাজে ব্যায় করে তার ব্যাপারটি ভিন্ন। যেমনটি হাদীসে এসেছে- সেদিন তোমাদের কেমন হবে যখন তোমরা সকালে পরিধান করবে এক সেট নতুন কাপড় আর সন্ধ্যায় পরিধান করবে আর এক সেট নতুন কাপড়। আর তার সামনে রাখা প্লেট। তিনি বললেন, তোমরা সেদিনের চেয়ে আজকে ভালো আছ। সেদিন মানুষের মাঝে পরিবর্তন দেখা দিবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৮-[৭] খব্বাব ইবনুল আরত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি (সা.) একখানা চাদর মাথার নিচে রেখে কা’বা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। যেহেতু মুশরিকদের পক্ষ হতে আমাদের ওপর কঠোর নির্যাতন চলছিল, তাই আমরা বললাম, আপনি আল্লাহর কাছে কেন দু’আ করেন না? এ কথা শুনে তিনি (সা.) সোজা হয়ে বসলেন। এ সময় তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের আগের যুগে যারা ঈমানদার ছিল, এক আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোড়া হয়েছে। অতঃপর তাকে সে গর্তে রেখে তার মাথার উপর করাত চালিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। তবুও ঐ নির্যাতন তাকে তার দীন ও ঈমান হতে ফিরাতে পারেনি। আবার কারো শরীরের হাড় হতে যাবতীয় মাংস ও শিরা লোহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে ফেলা হয়, তবুও সেই নির্যাতন তাকে তার দীন হতে ফিরাতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় এ দীন ইসালামকে আল্লাহ তা’আলা পরিপূর্ণ করবেন। এমনকি তখন একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ হতে হাযরামাওত পর্যন্ত (এতটা নির্ভয়ে অতিক্রম করবে যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করবে না। অথবা নবী (সা.) বলেছেন: সে স্বীয় মেষপাল সম্পর্কে নেকড়ে বাঘ ছাড়া অপর কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা অনেক বেশি তাড়াহুড়া করছ। (বুখারী)।
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَن خبَّاب بن الأرتِّ قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ وَقد لَقينَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ شِدَّةً فَقُلْنَا: أَلَا تَدْعُو اللَّهَ فَقَعَدَ وَهُوَ مُحْمَرٌّ وَجْهُهُ وَقَالَ: «كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهِ فَيُجَاءُ بِمِنْشَارٍ فَيُوضَعُ فَوْقَ رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَيْنِ فَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللَّهِ لَيَتِمَّنَّ هَذَا الْأَمْرُ حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا الله أَو الذِّئْب على غنمه ولكنَّكم تَسْتَعْجِلُون» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (6943) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: খাব্বাব ইবনুল আরত তাঁর উপনাম আবূ আবদুল্লাহ আত্ তামীমী। তিনি জাহিলী যুগে যুদ্ধবন্দি হন। ফলে খুযাআহ্ গোত্রের এক মহিলা তাকে কিনে নেন এবং তাকে আযাদ বা স্বাধীন করে দেন। নবী (সা.) দারুল আরকামে প্রবেশের আগে তিনি ইসালাম গ্রহণ করেন। তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে ইসালাম গ্রহণের কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আর তিনি তার ওপর ধৈর্যধারণ করেছিলেন। তিনি কূফা নগরীতে চলে যান এবং সেখানে মারা যান। তার থেকে এক জামা'আত লোক হাদীস বর্ণনা করেন। একদিন নবী (সা.) কা'বার চত্বরে কোন জিনিস মাথার নিচে দিয়ে বালিশ বানিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। তখন সাহাবীগণ তার কাছে এসে তাদের ওপর চলা মক্কার মুশরিকদের সীমালঙ্ঘন ও নির্যাতনের অভিযোগ জানাল। তখন নবী (সা.) তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য পূর্ববর্তী লোকেদের ওপর আসা নানা নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। এমন তারা তাদের নবীদের সাথেও যে খারাপ আচরণ করত তাও তিনি উল্লেখ করেছেন। তারা শাস্তি দিয়ে বহু মানুষকে ও নবীদেরকে হত্যা করেছিল সে ঘটনা তিনি মানুষকে শোনান। শেষে তিনি তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ধৈর্যধারণের উপদেশ দেন। আর কাফিরদের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথাও তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দেন। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৫৯-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়শ উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। [তিনি রাসূল (সা.)-এর দুধ-খালা হিসেবে মাহরাম ছিলেন] উম্মু হারাম (রাঃ) প্রসিদ্ধ সাহাবী ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন নবী (সা.) তার বাড়িতে গেলে উম্মু হারাম (রাঃ) তাঁকে খানা খাওয়ালেন। অতঃপর উম্মু হারাম (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার উকুন দেখতে বসলেন। এরই মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা.) - ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে?
তিনি (সা.) বললেন, এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোককে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে উপস্থিত করা হয়। তারা বাদশাহী জাকজমকে অথবা বলেছেন বাদশাহের মতো জাঁকজমকে সমুদ্রের বুকে সফর করছে। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, আল্লাহ তা’আলা আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি (সা.) তার জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি (সা.) মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পরে পুনরায় হাসিমুখে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি কি কারণে হাসছেন?
উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কতিপয় লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়... ঠিক তেমনই বলেছেন যেমনটি তিনি প্রথমবার বলেছিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উম্মু হারাম মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর শাসনকালে জিহাদের উদ্দেশে সমুদ্রে ভ্রমণে যাত্রা করেন এবং সমুদ্র হতে অবতরণের পর বাহনের পৃষ্ঠ হতে পড়ে ইন্তিকাল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ وَكَانَتْ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ فَدَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمًا فَأَطْعَمَتْهُ ثُمَّ جَلَسَتْ تَفْلِي رَأسه فَنَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ قَالَتْ: فَقُلْتُ: مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ مُلُوكًا عَلَى الْأَسِرَّةِ أَوْ مِثْلَ الْمُلُوكِ عَلَى الْأَسِرَّةِ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ فَدَعَا لَهَا ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ فَنَامَ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يُضْحِكُكَ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . كَمَا قَالَ فِي الأولى. فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ: «أَنْتِ مِنَ الْأَوَّلِينَ» . فَرَكِبَتْ أُمُّ حَرَامٍ الْبَحْرَ فِي زَمَنِ مُعَاوِيَةَ فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ الْبَحْرِ فَهَلَكَتْ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6282) و مسلم (160 / 1912)، (4934) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ) হলেন আনাস (রাঃ)-এর সম্পর্কের খালা। তিনি এবং তার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ছিলেন নবী (সা.) -এর দুধ খালা বা সম্পর্কের খালা। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি নবী (সা.) -এর মাহরাম ছিলেন- এ ব্যাপারে সকল ‘আলিম একমত। তবে তারা কিভাবে মাহরাম এটা নিয়ে মতভেদ করেছেন। ইবনু ‘আবদুল বার এবং অন্যরা বলেন, তিনি নবী (সা.) -এর দুধ সম্পর্কের একজন খালা হতেন। অন্যরা বলেন, বরং তিনি তার পিতার দিক থেকে খালা ছিলেন অথবা তার দাদা আবদুল মুত্ত্বালিব-এর দিক থেকে। আর তার মা ছিলেন বানূ নাযযার গোত্রের মানুষ।
উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর স্বামীর নাম ছিল 'উবাদাহ্ ইবনুস সামিত। তিনি তার স্বামীর সাথে ইসালাম কবুল করেন, বায়আত করেন এবং গাজী হিসেবে রোমে মৃত্যুবরণ করেন। তার কবর কুবরুসে। তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তার বোনের ছেলে বা ভাগিনা ও তার স্বামী ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ)। ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, আমি তার উপনাম ছাড়া তার কোন আসল নাম পায়নি। আর তিনি উসমান (রাঃ) -এর খিলাফাতকালীন সময়ে মারা যান। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ
৫৮৬০-[৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আযদ শানুয়াহ্’ গোত্রের ’যিমাদ’ নামে এক লোক একদিন মক্কায় আগমন করল। যিমাদ মন্ত্র দ্বারা জিন-ভূতের ঝাড়-ফুঁক করত। সে মক্কার অজ্ঞ নির্বোধ লোকেদের কাছে শুনতে পেল যে, মুহাম্মাদ পাগল হয়ে গেছে। এটা শুনে সে বলল, যদি আমি ঐ লোককে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.) -কে] দেখতাম তাহলে চিকিৎসা করতাম। হয়তো আমার চিকিৎসায় আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাতে সুস্থ করে দিতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’যিমাদ’ রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জিন-ভূতের চিকিৎসা করব। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঠ করলেন, (অর্থাৎ) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তারই প্রশংসা করি এবং তাঁর সাহায্য কামনা করি। তিনি যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউই সোজা পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (সা.)।
অতঃপর যিমাদ বলল, আপনি উক্ত বাক্যগুলো আমাকে আবার শুনান। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাক্যগুলো তিনবার পাঠ করলেন। এতদশ্রবণে যিমাদ বলল, আমি গণকের কথাও শুনেছি, জাদুকরের কথাও শুনেছি এবং কবিদের কথাও শুনেছি। কিন্তু আপনার এ বাক্যগুলোর মতো এমন বাক্য আমি আর কখনো শুনিনি। মূলত আপনার প্রতিটি বাক্য অথৈ সাগরের তলদেশ পর্যন্ত পৌছে গেছে। অতএব আপনি আপনার হাতখানা প্রশস্ত করুন। আমি আপনার হাতে ইসালামের বায়আত করব। বর্ণনাকারী বলেন, তখনই সে রাসূল (সা.) -এর হাতে বায়’আত করল। (মুসলিম)
(গ্রন্থকার বলেন) মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় (بَلَغْنَ قَامُوسَ الْبَحْرِ) “তারা পৌছল গভীর সমুদ্রে” এর স্থলে (بَلَغْنَا نَاعُوسَ الْبَحْر) রয়েছে।
আলোচ্য বিষয়ে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) -এর বর্ণিত হাদীস (يهْلك كسْرَى) “কিসরা ধ্বংস হবে এবং জাবির (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস (ليفتحنَّ عِصَابَةٌ) “অবশ্যই একদল বিজয় লাভ করবে” “মালাহিম অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ: إِنَّ ضِمَادًا قَدِمَ مَكَّةَ وَكَانَ مِنْ أَزْدِ شَنُوءَةَ وَكَانَ يَرْقِي مِنْ هَذَا الرِّيحِ فَسَمِعَ سُفَهَاءَ أَهْلِ مَكَّةَ يَقُولُونَ: إِنَّ مُحَمَّدًا مَجْنُونٌ. فَقَالَ: لَوْ أَنِّي رَأَيْتُ هَذَا الرَّجُلَ لَعَلَّ اللَّهَ يَشْفِيهِ عَلَى يَدَيَّ. قَالَ: فَلَقِيَهُ. فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَرْقِي مِنْ هَذَا الرِّيحِ فَهَلْ لَكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَمَّا بَعْدُ» فَقَالَ: أَعِدْ عَلَيَّ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ فَأَعَادَهُنَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثٌ مَرَّاتٍ فَقَالَ: لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ وَقَوْلَ السَّحَرَةِ وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ. وَلَقَدْ بَلَغْنَ قَامُوسَ الْبَحْرِ هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الْإِسْلَامِ قَالَ: فَبَايَعَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي بَعْضِ نُسَخِ «الْمَصَابِيحِ» : بَلَغْنَا نَاعُوسَ الْبَحْر وَذَكَرَ حَدِيثَا أَبِي هُرَيْرَةَ وَجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ «يهْلك كسْرَى» وَالْآخر «ليفتحنَّ عِصَابَةٌ» فِي بَابِ «الْمَلَاحِمِ» وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَن: الْفَصْل الثَّانِي
رواہ مسلم (46 / 868)، (2008) 0 حدیث ابی ھریرۃ تقدم (5418) و حدیث جابر بن سمرۃ تقدم 5417) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مِنْ هَذَا الرِّيحِ) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এটা এক ধরনের সমস্যা ছিল। তিনি এটাকে এক ধরনের পাগলামী বলে উল্লেখ করেছেন। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা যে রোগটাকে ‘রীহ' বলে নামকরণ করত তা হলো, তারা মনে করত জিন-ভূত মানুষকে আক্রমণ করত। আর তারা জিন ভূতের এ আসর-কে ‘রীহ’ বলে নামকরণ করত। আবূ মূসা বলেন, এখানে ‘রীহ’ অর্থ জিন। তারা তাকে রীহ বলত, কারণ বাতাস যেমন দেখা যায় না তেমনি জিনও দেখা যায় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)