পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪৪-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.): এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (یَوۡمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخۡبَارَهَا) “কিয়ামতের দিন জমিন তার বৃত্তান্তসমূহ প্রকাশ করে দেবে”- (সূরাহ্ আয-যিলযাল ৯৯: ৪)। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, জমিনের বর্ণনা কি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, জমিনের বক্তব্য হলো, প্রত্যেক পুরুষ ও প্রত্যেক নারী সম্পর্কে এ সাক্ষ্য দিবে যে, সে তার পিঠে থাকাকালে কী কী কর্মকাণ্ড করেছে। তা এভাবে বলবে যে, অমুকে অমুক কাজটি অমুক দিন করেছে। এটাই জমিনের বৃত্তান্ত। [আহমাদ ও তিরমিযী এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটি হাসান, সহীহ ও গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَشْر)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الْآيَةَ: (يَوْمَئِذٍ تُحدِّثُ أخبارَها) قَالَ: أَتَدْرُونَ مَا أَخْبَارُهَا؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كلِّ عَبْدٍ وَأَمَةٍ بِمَا عَمِلَ عَلَى ظَهْرِهَا أَنْ تَقول: عمِلَ عَليَّ كَذَا وَكَذَا يومَ كَذَا وَكَذَا . قَالَ: «فَهَذِهِ أَخْبَارُهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 374 ح 8854) و الترمذی (2429) * یحیی بن ابی سلیمان ضعیف ضعفہ الجمھور (انظر نیل المقصود : 893) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (تُحدِّثُ) অর্থাৎ (জমিন) বর্ণনা করবে।
(أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كلِّ عَبْدٍ وَأَمَةٍ بِمَا عَمِلَ) বান্দা-বান্দী বলতে প্রত্যেক নর-নারীর ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া যে, অমুক এমন সৎকাজ বা এমন পাপ কাজ সম্পাদন করেছে।
(يومَ كَذَا وَكَذَا) অর্থাৎ এই মাসে বা এই বছরে। (قَالَ: هَذِهِ) অর্থাৎ এই সাক্ষ্যসমূহ বা উপরোক্ত ব্যাপারগুলো হলো তার বর্ণনা। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪২৯, মিকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪৫-[১৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই অনুশোচনার কারণ কী? তিনি বললেন, যদি সে ভালো হয়, তখন এজন্য অনুতপ্ত হয় যে, কেন সে আরো অধিক পুণ্যের কাজ করেনি। আর যদি খারাপ হয়, তখন এজন্য লজ্জিত হয় যে, কেন সে নিজেকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখেনি। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَشْر)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَمُوتُ إِلَّا نَدِمَ» . قَالُوا: وَمَا نَدَامَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ مُحْسِنًا نَدِمَ أَنْ لَا يَكُونَ ازْدَادَ وَإِنْ كَانَ مُسِيئًا نَدِمَ أَنْ لَا يكونَ نزع» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ الترمذی (2403) * یحیی بن عبید اللہ : متروک (تقدم : 5323) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (إِلَّا نَدِمَ) এর অর্থ আফসোস করা বা আক্ষেপ করা, অনুতপ্ত হওয়া। অতএব প্রত্যেকের উচিত মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে গনীমতরূপে গ্রহণ করা এবং মরণ আসার আগেই ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা। সাহাবীগণের প্রশ্ন (مَا نَدَامَتُهُ) তাদের আফসোসের কারণ কী? আর তা হলো যদি সে সৎকর্মশীল হয় তাহলে সে দুঃখিত হয়ে বলবে, কেন যে তার ভালো ‘আমালকে বাড়ায়নি। আর যদি সে মন্দ ব্যক্তি হয় তাহলে সে দুঃখ করে বলবে, কেন যে গুনাহ পরিত্যাগ করেনি এবং নিজকে পাপকাজে জড়ানো থেকে বিরত রাখেনি। যদি সে গুনাহ ছেড়ে দিত ও মন্দ কাজে জড়ানো থেকে মুক্ত থাকত এবং তাওবাহ্ করে ভালো হয়ে। যেত! (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২৪০৩)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪৬-[১৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানুষদেরকে তিন ভাগে একত্রিত করা হবে। একদল আসবে পায়ে হেঁটে, দ্বিতীয় দল আসবে আরোহীত হয়ে এবং তৃতীয় দল আসবে নিজেদের মুখের উপরে ভর করে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তারা নিজেদের চেহারা উপরে ভর করে কিভাবে চলবে। তিনি (সা.) বললেন, নিশ্চয় যিনি তাদেরকে দু’পায়ে চালিত করতে পারেন, তিনি তাদেরকে চেহারার উপরে ভর দিয়ে চালাবার সাধ্যও রাখেন। তোমরা জেনে রাখা তারা নিজেদের মুখের উপরে চলাকলে প্রতিটি টিলা-টঙ্কর ও কাঁটা-কুটা ইত্যাদি থেকে আত্মরক্ষা করে চলবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَشْر)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلَاثَةَ أَصْنَافٍ: صِنْفًا مُشَاةً وَصِنْفًا رُكْبَانًا وَصِنْفًا عَلَى وُجُوهِهِمْ قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَمْشُونَ عَلَى وُجُوهِهِمْ؟ قَالَ: «إِنَّ الَّذِي أَمْشَاهُمْ عَلَى أَقْدَامِهِمْ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُمْ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَمَا إِنَّهُمْ يَتَّقُونَ بِوُجُوهِهِمْ كُلَّ حَدَبٍ وَشَوْكٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3142 وقال : حسن) * علی بن زید بن جدعان : ضعیف ، و شیخہ مجھول و لاصل الحدیث شواھد عند البخاری (6522) و مسلم (2861)، (7202) وغیرھما ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (صِنْفًا مُشَاةً) একদল পায়ে হেঁটে আসবে, তারা এমন মু'মিন যারা সৎ ‘আমলের সাথে মন্দকে মিশ্রিত করেছে। এক শ্রেণি উটের উপরে আরোহণ করবে, তারা অগ্রগামীপূর্ণ মু'মিন। আসলে (مُشَاةً) বা পদব্রজে গমনকারী দ্বারা শুরু করেছেন তাদেরকে সান্তনা দেয়ার জন্য। যেমন আল্লাহর বাণীতে বলা হয়েছে, (.. فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِهٖ..) “...অতঃপর তাদের কতক নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছে...”- (সূরাহ্ আল ফা-ত্বির ৩৫: ৩২)।
অন্যত্র বলা হয়েছে, (..یَهَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ اِنَاثًا..) “...যাকে চান তাকে কন্যা সন্তান দান করেন..."- (সূরা আশ শূরা- ৪২: ৪৯)। অথবা প্রথমত তাদের ক্ষমার প্রয়োজন থাকার কারণে।
তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করেন কেন অগ্রগামীদের পূর্বে পদব্রজে গমনকারীদেরকে উল্লেখ করেছেন? এর উত্তরে আমরা বলব যে, ঈমানদারদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে।
(كَيْفَ يَمْشُونَ عَلَى وُجُوهِهِمْ؟) কিভাবে তারা মুখের উপর ভর দিয়ে চলবে? এ ব্যাপারে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, (..وَ نَحۡشُرُهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عَلٰی وُجُوۡهِهِمۡ عُمۡیًا وَّ بُکۡمًا وَّ صُمًّا..)“...কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে একত্রিত করব তাদের মুখের উপর ভর করে চলা অবস্থায় অন্ধ, বোবা ও বধির অবস্থায়...”(সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭: ৯৭); তাঁর সংবাদ সত্য ওয়াদা সত্য এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(يَتّاقُونَ) অর্থাৎ তারা আত্মরক্ষা করবে এবং বেঁচে থাকতে চাইবে সব উঁচু-নীচু ও কষ্টকর জায়গা থেকে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো, তারা মুখের মাধ্যমে বাঁচতে চাইবে। এর দ্বারা তাদের অপমানজনক অবস্থা ও কঠিন কষ্টের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় হেঁটে যেতে ও রাস্তায় কষ্টদায়ক বস্তু থেকে বাঁচতে হাত ও পায়ের পরিবর্তে মুখমণ্ডল ব্যবহার করবে। এটা এজন্য যে, যে সত্তা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন ও পরিমিত আহার দান করেছেন তাঁকে তারা সিজদাহ্ করেনি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খণ্ড, হা. ৩১৪২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪৭-[১৬] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কিয়ামতের দৃশ্যটি এমনভাবে দেখতে পছন্দ করে যে, তা তার চোখের সামনে উপস্থিত সে যেন (إِذا الشَّمسُ كُوِّرَتْ) “যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে”- (সূরাহ্ আত্ তাকভীর ৮১: ১); এবং (إِذا السَّماءُ انفطرَتْ)“যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে”- (সূরা আল ইনফিত্বা-র ৮২: ১); ও (إِذا السَّماءُ انشقَّتْ) “যখন আকাশ ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে”- (সূরা আল ইনশিক্বাক ৮৪: ১); এ সূরাহ্ কয়েকটি (মর্ম বুঝে) পাঠ করে। (আহমাদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَشْر)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُ رَأْيُ عَيْنٍ فليَقرأْ: (إِذا الشَّمسُ كُوِّرَتْ) و (إِذا السَّماءُ انفطرَتْ) و (إِذا السَّماءُ انشقَّتْ) رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (2 / 27 ح 4806) و الترمذی (3333) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসের অবস্থা ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনে সন্তুষ্ট হতে চায়।
(كَأَنَّهُ رَأْيُ عَيْنٍ) স্বচোখে দেখা বা চোখের সামনে দেখা। যেমন তুমি বলে থাক (جَيَلْتُ الشَّيْءَ رَأْيَ عَيْنِكَ وَبِمَرْاى مِنْكَ) আমি বস্তুটিকে তোমার চোখের সামনে রাখলাম যাতে তুমি দেখতে পার।
(إِذا الشَّمسُ كُوِّرَتْ) হাফিয ইবনু কাসীর-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ (أَظْلَمَتْ) অন্ধকার হয়ে পড়বে। মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যখন তা বিলীন ও অন্তর্হিত হবে। আওফী, মুজাহিদ ও যহ্হাক একই অর্থ বলেন। কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: যখন তার আলো দূরীভূত হবে। (كُوِّرَتْ)-এর ব্যাখ্যায় রাবী ইবনু হাস্সাম বলেন, যখন তাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। আবূ সালিহ বলেন, এর অর্থ যখন তাকে নিক্ষেপ করা হবে এবং উল্টানো হবে। যায়দ ইবনু আসালাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জমিনে নিপতিত হবে। ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমাদের নিকট সঠিক ব্যাখ্যা হলো, কোন বস্তুকে অপর বস্তুর সাথে একত্রিত করাকে (تَكْوِيرُ) বলা হয়। এখান থেকে (تَكْوِيرُ الْعِمَامَة) পাগড়ির কোন অংশকে অন্য অংশের সাথে মিলানো।
তখন আল্লাহর বাণী, (كُوِّرَتْ) এর অর্থ হবে তার কিছু অংশ অন্য অংশের সাথে একত্রিত করা। অতঃপর তা লেপ্টিয়ে নিক্ষেপ করা। যখন এরূপ করা হবে তখন তা আলোহীন হয়ে পড়বে। হাফিয ইবনু কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (انفطرَتْ) অর্থ (انشقَّتْ) বিদীর্ণ হওয়া এবং (انشقَّتْ) অর্থ (انْصَدَعَتْ) ফেটে যাবে; এ সূরাগুলো উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো এগুলোতে কিয়ামত দিবসের ভয়াবহ আতঙ্কজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৮ম খণ্ড, হা. ৩৩৩৩)