পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২১-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি ফুঁকের মধ্যখানে দূরত্ব হবে চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আবূ হুরায়রাহ্! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি উত্তর দিতে অপারগ। (অর্থাৎ আমি জানি না) তারা প্রশ্ন করল, চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি উত্তর দিতে অস্বীকার করি। লোকেরা প্রশ্ন করল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি জবাব দিতে অস্বীকার করি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তখন মৃত দেহগুলো এমনভাবে জীবিত হয়ে উঠবে, যেমনিভাবে (বৃষ্টির পানিতে) ঘাস-লতা ইত্যাদি গজিয়ে উঠে। অতঃপর তিনি (সা.) বলেছেন, মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের একটি হাড় ছাড়া মানবদেহের সকল কিছুই মাটিতে গলে বিলীন হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের দিন সেই হাড্ডি হতে গোটা দেহের পুনর্গঠন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আর মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (নবী সা.) বলেছেন: মাটি আদম সন্তানের প্রতিটি অংশ খেয়ে ফেলবে, তবে তার মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ খাবে না। তা হতেই মানবদেহ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং (কিয়ামতের দিন) তা হতে তাকে পত্তন করা হবে।
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالُوا: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ. «ثُمَّ يَنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءٌ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْبَقْلُ» قَالَ: «وَلَيْسَ مِنَ الْإِنْسَانِ شَيْءٌ لَا يَبْلَى إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الْخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يركب»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4814) و مسلم (141 / 2955، (7414) و الروایۃ الثانیۃ 142 / 2955)، (7415) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ) দু' ফুঁকের মাঝে অর্থাৎ মেরে ফেলার ফুক ও জীবিত করার ফুঁকের মাঝে ব্যবধান হবে চল্লিশ।
(أَبَيْتُ) অস্বীকার করলাম। অর্থাৎ আমি জবাব দানে অপারগ হলাম। কারণ আমি জানি না কোনটি সঠিক। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলা দু ফুকের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান চল্লিশ বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা আমি জানি না, সেটা চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর? তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপরে মিথ্যা বলা থেকে এবং যা আমি জানি না সেটা সম্পর্কে বর্ণনা থেকে বিরত থাকলাম। ফাতহুল বারী ভাষ্যকার বলেন, (أَبَيْتُ) এর অর্থ হলো চল্লিশ সংখ্যা থেকে উদ্দেশ্য দিন, না মাস, না বছর তা নিশ্চিতভাবে বলতে রাযী হলাম না বরং আমি নিশ্চিতভাবে বললাম যে, তা শুধু চল্লিশই ছিল।
(فَيَنْبُتُونَ) বৃষ্টিতে সৃষ্টজীবের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, এ ঘটনা ঘটবে দ্বিতীয় ফুৎকার দেয়ার পরে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ) বানী আদম-এর দেহের সকল অংশকেই মাটি খেয়ে ফেলবে শুধু একটি হাড্ডি ব্যতীত। এটা বিশেষ হাড্ডি। যেমন বিশেষভাবে নবী-রাসূলদের দেহকে মাটিতে খাওয়া আল্লাহ তা'আলা হারাম করেছেন।
(عَجْبَ الذَّنَبِ) আইন বর্ণে যবর ও জিম বর্ণে সুকূন যোগে এটা এমন সূক্ষ্ম-মিহি হাড্ডি যা পৃষ্ঠদেশের সর্বনিন্মে অবস্থিত। আর সেটা হলো মেরুদণ্ডের হাড়ের নীচের মাথা। আদম সন্তানের এই হাড্ডি সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়। আর এ অংশটুকু অবশিষ্ট থেকে যায় যাতে তার উপর সৃষ্টজীবকে পুনরায় গঠন করা যায়। (ফাতহুল বারী ১৮ খণ্ড, হা. ২৯৫৫)
মিশকাতের (উর্দু অনুবাদে) ব্যাখ্যায় অনুরূপ লিখা হয়েছে, (عَجْبَ الذَّنَبِ) এমন হাড্ডিকে বলা হয় যেখান থেকে জানোয়ারদের লেজ বের হয়। মানব শরীরের এই হাড্ডিকে নিতম্বের হাড় বলা হয়। মানুষের সমস্ত দেহ মাটিতে মিশে যাবে কিন্তু এ হাড্ডি ব্যতীত। মায়ের পেটে মানুষকে সৃষ্টি করার সময় প্রথমে এখান থেকে শুরু করা হয়। কিয়ামতের সময় এ হাড্ডি থেকে দেহ গঠন করা শুরু হবে। সমস্ত দেহের অঙ্গগুলো এর সাথে যুক্ত হয়ে যেমন দেহ ছিল তেমনভাবে প্রস্তুত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৬)।
মিরকাত ভাষ্যকার বলেন, কোন হাদীসে এসেছে, এ অংশকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয় এবং এ অংশ সর্বশেষ জীর্ণ করা হয়। এর রহস্য হলো এটা মানবদেহের ভিত্তি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২২-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন জমিনকে মুষ্ঠির মধ্যে নিয়ে নেবেন, আর আকাশকে ডান হাতে পেঁচিয়ে নেবেন। অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ, দুনিয়ার বাদশাহগণ কোথায়? (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَقْبِضُ اللَّهُ الْأَرْضَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَطْوِي السَّمَاءَ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوكُ الْأَرْضِ؟ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4812) و مسلم (23 / 2787)، (7050) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (الْمَلِكُ) এখানে দুটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। (এক) এর অর্থ ক্ষমতা। তখন সেটা আল্লাহর সত্তাগত গুণ হিসেবে গণ্য হবে। (দুই) তার অর্থ জোর খাটানো বা পরিবর্তন করা। তখন এটা কর্মগত গুণ হিসেবে ধর্তব্য হবে। এ হাদীসে আল্লাহর ডান হাতের প্রমাণ বিদ্যমান যা আল্লাহর জাতের গুণের অন্যতম। তবে তার হাত কোন মাখলুকের হাতের মতো নয়, যেমনটি মুজাসসামাহ তথা কায়াবাদীগণ আকৃতি বর্ণনা করে থাকে। এ হাদীস দ্বারা জামিয়াদের মতো খণ্ডন হয়ে যায়। কারণ সব সৃষ্টি মরে যাওয়ার পরে ধ্বংস হয়ে গেলে কোন কিছু আর মাখলুক হিসেবে থাকে না, তাহলে কিভাবে আল্লাহর কালামকে মাখলুক বলা যাবে? যখন কেউ থাকবে না তখন আল্লাহ বলবেন: আজ কার রাজত্ব? যখন কেউ উত্তর দেয়ার থাকবে না। তখন আল্লাহ তা'আলা নিজেই নিজের উত্তর দিয়ে বলবেন, প্রতাপশালী এক আল্লাহর জন্যই সবকিছু। আর যারা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তা'আলা কথাকে সৃষ্টি করেন, অতঃপর যাকে ইচ্ছা তাকে শুনিয়ে থাকেন তাদের মতটিও এর দ্বারা বাতিল হয়ে যায়। কারণ যখন আল্লাহ তা'আলা এ কথা বলবেন তখন কোন মাখলুক জীবিত থাকবে না। সেজন্য তিনি নিজেই স্বীয় উত্তর দিয়ে বলবেন, (..لِلّٰهِ الۡوَاحِدِ الۡقَهَّارِ) “অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার অধিকারী এক ও একক আল্লাহর”- (সূরাহ্ ইউসুফ ১২: ৩৯, সোয়াদ ৩৮: ৫, আহ্ যুমার ৩৯: ৪, আল মু'মিন ৪০: ১৬)। অতএব প্রমাণ হলো যে, তিনি এসব কথা বলবেন। আর তার কথাগুলো হচ্ছে। তাঁর সত্তাগতগুণ যা মাখলুক নয়।
ইসহাক ইবনু রহ্ওয়াই বলেন: এ কথা সঠিক যে, কুল মাখলুক ধ্বংস হবার পরে আল্লাহ বলবেন, আজ কার রাজত্ব? যখন এর উত্তর কেউ দিবে না তখন আল্লাহ স্বীয় জবাবে বলবেন, (..لِلّٰهِ الۡوَاحِدِ الۡقَهَّارِ) ..”প্রবল পরাক্রান্ত এক আল্লাহর”- (সূরাহ্ আল মু'মিন ৪০: ১৬)।
হিশাম ইবনু উবায়দুল্লাহ -এর বর্ণনায় রয়েছে: তিনি বলেন, যখন সমস্ত সৃষ্টিজীব মারা যাবে এবং আল্লাহ ব্যতীত যখন কেউ বাকী থাকবে না, তখন আল্লাহ বলবেন, (لِمَنِ الۡمُلۡکُ الۡیَوۡمَ) “আজ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কার?” (সূরাহ্ আল মু'মিন ৪০: ১৬)। কিন্তু কেউ এর উত্তর দিবে না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা নিজের কথার জবাব নিজে দিয়ে বলবেন, (..ِلِلّٰهِ الۡوَاحِدُ الۡقَهَّارُ)। অতএব এটা আল্লাহ তা'আলার কথা এতে কারো সন্দেহ নেই। আর এটা কোন ওয়াহীও নয়। কারণ সব প্রাণ মৃত্যুর করাল গ্রাসে নিপতিত হয়েছে, অতএব আল্লাহ নিজেই এর উত্তর দিবেন। (ফাতহুল বারী ১৩ খণ্ড, হা. ৭৩৮২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৩-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন আসমানসমূহকে গুটিয়ে নেবেন, অতঃপর তাকে ডান হাতে রেখে বলবেন, আমিই বাদশাহ, কোথায় দুনিয়ার অহংকারী ও স্বৈরাচারী যালিমরা? অতঃপর বাম হাতে জমিনসমূহকে গুটিয়ে নিবেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, অপর হাতে নিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ, কোথায় স্বৈরাচারী অবিচার ও অহংকারীগণ। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: قا ل رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَطْوِي اللَّهُ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟ ثُمَّ يَطْوِي الْأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ - وَفِي رِوَايَة: يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْأُخْرَى - ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أينَ الجبَّارونَ أينَ المتكبِّرونَ؟ . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (24 / 2788)، (7051) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আল্লাহর দুই হাতকে কুদরত অর্থে প্রয়োগ করা বাতিল ব্যাখ্যা। আর এ কাজকে দুই হাত দ্বারা সমাধা করার ইঙ্গিত হাদীসে দেয়া হয়েছে। কারণ আমাদের কাজকর্ম দুই হাত দ্বারাই সম্পাদন হয়। তাই যা দিয়ে বুঝব তা দ্বারা আমাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। যাতে আমাদের অন্তকরণে বিষয়টি আরো অধিক স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এখানে ডান ও বাম হাতের উল্লেখ হয়েছে যাতে উদাহরণটি পূর্ণতা লাভ করে। কারণ আমরা যা কিছু ভালো তা ডান হাত দ্বারা সমাধা করি এবং অন্যগুলো বাম হাত দ্বারা সম্পাদন করি। আর আমাদের ক্ষেত্রে ডান হাত বেশি শক্তিশালী যতটুকু শক্তিশালী বাম হাত নয়। বুঝা গেল, আসমানসমূহ জমিনের তুলনায় বেশি বড় তাই তাকে ডান হাতের সাথে যুক্ত করা হয়েছে এবং জমিনকে বাম হাতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যদিও আল্লাহর কোন হাতেই কোন কিছু ভারী নয় এবং কোন হাত দুর্বল নয়। আর আল্লাহ তা'আলা এমন গুণে গুণান্বিত নন যে, কোন কিছু তার নিকটে অধিক ভারী বা কঠিন। (শারহু নাবাবী ১৭ খণ্ড, হা, ২৭৮৮)
সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করলেন, অতঃপর হাতকে মুড়ালেন ও খুললেন। এ হাদীস থেকে ভালোভাবে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে যে হাতের উল্লেখ রয়েছে তা দ্বারা হাতই উদ্দেশ্য। কিন্তু এই হাতকে কুদরতের ব্যাখ্যা করা বাতিল। এজন্য যে, নবী (সা.) সাহাবীদেরকে হাত, মুষ্টিবদ্ধ করে দেখিয়েছেন। এতে তাদের কোন আশ্চর্যের কারণ ছিল না। এতেই বুঝা গেল, সাহাবীদের ও আক্বীদাহ্ এটাই ছিল। আরো বুঝা গেল আল্লাহ তা'আলা যেমন স্বীয় সত্তার ক্ষেত্রে যেভাবে গুণান্বিত, অনুরূপভাবে হাত মুবারকের ক্ষেত্রেও তেমনভাবে গুণান্বিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৪-[8] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ইয়াহূদী পাদ্রি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে) পেয়েছি যে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। জমিনকে এক আঙ্গুলের উপর, পর্বতমালা ও গাছসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এবং কাদা-মাটিকে এক আঙ্গুলের উপর, আর অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিজগতকে এক আঙ্গুলের উপর রাখবেন। অতঃপর এ সমস্ত কিছুকে নাড়া দিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ, আমিই আল্লাহ! ইয়াহুদী পাদ্রির কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বিস্ময়ে হয়ে হেসে ফেললেন, তিনি যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। অতঃপর তিনি (সা.) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- (وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ ٭ۖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ) - “আল্লাহ তা’আলার যতটুকু সম্মান করা দরকার ছিল তারা ততটুকু সম্মান করেনি, অথচ কিয়ামতের দিন সম্পূর্ণ পৃথিবী তাঁর মুষ্টিতে থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী ডান হাতে গুটানো থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে"- (সূরা আয যুমার ৩৯: ৬৭)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: جَاءَ حَبْرٌ مِنَ الْيَهُودِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْأَرَضِينَ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْجِبَالَ وَالشَّجَرَ عَلَى أُصْبُعٍ وَالْمَاءَ وَالثَّرَى عَلَى أُصْبُعٍ وَسَائِرَ الْخَلْقِ علىأصبع ثُمَّ يَهُزُّهُنَّ فَيَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَنَا اللَّهُ. فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَجُّبًا مِمَّا قَالَ الْحَبْرُ تَصْدِيقًا لَهُ. ثُمَّ قَرَأَ: (وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يشركُونَ) مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4811) و مسلم (19 / 2786)، (7046) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইয়াহুদী ‘আলিমের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিস্মিত হয়ে হাসলেন এটা তার কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য নয় বরং তাকে সত্যায়ন করার জন্য এবং তার কথার সঠিকতাকে জানার জন্য। (وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ) এর অর্থ মানুষ আল্লাহকে যেভাবে চেনা দরকার সেভাবে চেনে না। যেভাবে সম্মান করা প্রয়োজন। সেভাবে সম্মান দেখায় না এবং যেভাবে তার উপাসনা করা উচিত সে মতো উপাসনা করে না। এ হাদীস দ্বারা আল্লাহ তা'আলার আঙ্গুলের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। যেমনভাবে কুরআন ও হাদীস থেকে তাঁর হাতের প্রমাণ রয়েছে। এর পূর্বেও বলা হয়েছে যে, আল্লাহর গুণাবলি সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ব্যাপারে সালাফে সালিহীনদের ‘আক্বীদাহ্ এই যে, তারা এসব হাদীসকে প্রকাশ্য অর্থের উপর গ্রহণ করেন এবং তার উপর ঈমান আনেন।
আল্লাহ তা'আলার আকৃতিতে আল্লাহ তা'আলার ওপর সোপর্দ করেন এবং সাদৃশ্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন। কোন কোন যুক্তিবিদ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইয়াহুদী ‘আলিমের কথাকে রদ করার জন্য হেসেছিলেন, কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। কারণ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্উদ-সহ বড় বড় ফকীহ সাহাবী স্বয়ং এ রিওয়ায়াতে সত্যায়ন করেছেন। যদি তিনি (সা.) তার রূপদান করাকে বাধা দিতেন তাহলে নবী (সা.) এ আয়াত পাঠ করতেন না। অতএব পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে, ঐ এসব যুক্তিবাদীরা চিন্তাভাবনা না করে মনের বশে পড়ে যা ইচ্ছা বলেছেন। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, আল্লাহ তা'আলার নাম ও গুণাবলি কী কী তা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। অর্থাৎ যেসব নাম ও গুণাবলি কুরআন ও হাদীসে এসেছে সেগুলো স্বীকার করা এবং যা প্রমাণিত নয় তা না বলা উচিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৮)।
ক্বাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় আঙ্গুলকে মুষ্টিবদ্ধ করলেন এবং সম্প্রসারিত করলেন আসমান ও জমিনকে মুষ্টিবদ্ধ ও সম্প্রসারিত করা হবে শুধুমাত্র মাখলুকের সাথে এর উদাহরণ দেয়ার জন্য।
তিনি আরো বলেন: আল্লাহ তা'আলার গুণাবলি সম্পর্কিত মুশকিল হাদীসগুলোর দ্বারা নবী (সা.)-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত। আমরা আল্লাহ ও তার গুণাবলির উপর বিশ্বাস রাখি। তার সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্য দেই না। কারণ কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে,
(لَیۡسَ کَمِثۡلِهٖ شَیۡءٌ ۚ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ) - “কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন”- (সূরাহ আশ শূরা ৪২: ১১)। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে যা নিশ্চিত হয়েছেন তা সঠিক ও সত্য। তার জ্ঞান সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানব তা মহান আল্লাহরই অনুগ্রহে আর যা আমাদের নিকটে অস্পষ্ট থাকবে তার উপর আমরা ঈমান আনব। আর এর প্রকৃত জ্ঞানকে মহান আল্লাহর। নিকটে সোপর্দ করব। (শারহুন নাবাবী ১৭ খণ্ড, হা. ২৭৮৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৫-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম (يَوْمَ تُبَدَّلُ الأرضُ غيرَ الأَرْض والسَّماواتُ) “যেদিন এ জমিনকে আরেক জমিনে রূপান্তরিত করা হবে এবং আকাশমণ্ডলীকে আরেক আকাশে”- (সূরাহ ইবরাহীম ১৪: ৪৮)। সেদিন সকল মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, ’পুলসিরাতের উপর। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَوْلِهِ: (يَوْمَ تُبَدَّلُ الأرضُ غيرَ الأَرْض والسَّماواتُ) فَأَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: «عَلَى الصِّرَاطِ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (29 / 2791)، (7056) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (تُبَدَّلُ الأرضُ...) শারহুস্ সুন্নাতে রয়েছে (تُبَدَّلُ) বলা হয় কোন জিনিসের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া এবং (إِبْدَال) বলা হয় কোন কিছুকে অন্য জায়গায় স্থাপন করা।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ পরিবর্তন কখনো সত্তা বা অস্তিত্বে হয়ে থাকে। যেমন তোমার কথা (بَدَّلْتُ الدَّرَاهِمَ دَنَانِيرَ) আমি দিরহামকে দীনারে পরিবর্তন করলাম। আবার কখনো পরিবর্তন গুণের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন তোমার কথা (بَدَّلْتُ الْحَالَقَةَ خَاتَمًا) আমি আংটাকে আংটিতে রূপান্তরিত করলাম। যখন তুমি সেটাকে গলিয়ে আংটিতে পরিবর্তন করবে। জমিনের পরিবর্তন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, এ পরিবর্তনটা আসমান-জমিনের গুণের মধ্যে হবে। যেমন শিঙ্গার প্রসিদ্ধ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা জমিনকে সমতল করে উকাযী চামড়ার মতো টানবেন যাতে কোন উচু নীচু না থাকে। আবার কেউ বলেন, পরিবর্তনটা অস্তিত্বে হবে। তখন জমিনকে অন্য এক অপরিচিতরূপে পরিবর্তন করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি মারফু হাদীসে রয়েছে মানুষকে সাদা রঙের জমিনের উপর জমায়েত করা হবে তাতে খুনাখুনি ও পাপের কাজ হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: কিয়ামতের দিন মানুষকে চ্যাপ্টা ও গোলাকার রুটির মতো সাদা মাটির জমিনে একত্রিত করা হবে। যেখানে কারো কোন চিহ্ন থাকবে না। (সহীহুল বুখারী)
‘আমর ইবনু মায়মূন (রাঃ) বলেন: এ জমিন পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তা হবে সাদা রূপার মতো যাতে থাকবে না কোন রক্তারক্তি, না থাকবে কোন পাপকর্ম। ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেদিন জমিন রৌপ্যের ন্যায় সাদা বরণ ধারণ করবে। আরেক বর্ণনায় রয়েছে, ঐ দিন জমিন ময়দার ন্যায় সাদা হবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সেদিন জমিন হবে রৌপ্যের এবং আসমান হবে স্বর্ণের। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) বলেন, সেদিন আসমান বাগান হয়ে থাকবে।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্'উদ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন সারা জমিন আগুন হয়ে যাবে। এর পিছনে থাকবে জান্নাত, যার নি'আমাতরাশি বাইরে থেকে দেখা যাবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর ৪র্থ খণ্ড, মাকতাবাতুস্ সফা, সূরাহ্ ইবরাহীম ৪৮ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
(الصِّرَاطِ) জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলকে সিরাত বলা হয়। যখন মানুষেরা হিসাবের জন্য অবস্থানস্থল ত্যাগ করার পর পুলের নিকট অন্ধকারে পৌছবে। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো যখন আসমান-জমিনকে পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষেরা কোথায় থাকবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা পুলের নিকট অন্ধকারের মধ্যে থাকবে। আর এ স্থানে মুনাফিকরা মু'মিনদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং মুমিনদের পিছে পড়বে ও মু'মিনরা এগিয়ে যাবে। তাদের মাঝে একটা দেয়ালের আড় হয়ে যাবে যাতে তারা মু'মিনদের নিকটে পৌছতে বাধাপ্রাপ্ত হয় । ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) মাসরূক-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা'আলা মানুষদেরকে কিয়ামতের দিন সমবেত করবেন, অতঃপর তাদেরকে স্বীয় ‘আমলের পরিমাণ অনুসারে নূর দান করবেন, কাউকে এর চাইতেও বেশি, কাউকে তার ডান হাতে খেজুর গাছের সমান দান করবেন, কাউকে তার ডান হাতে এর চাইতে কম। এমনকি সর্বশেষ জনকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে নূর দান করা হবে যা একবার জ্বলে উঠবে আর একবার নিভে যাবে। যখন তা আলো দিবে তখন সে তার পা এগিয়ে নিবে। আর যখন নিভে যাবে সে দাড়িয়ে পড়বে। তারপর সে এবং অন্যরা পুলসিরাত পার হবে। পুল হবে তরবারির ধারের মত পিচ্ছিল ও স্খলনকারী।
তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের নূর অনুসারে পার হও। তাদের মধ্যে কেউ তারকা ছুটার গতির ন্যায়, কেউ বাতাসের গতির মতো, কেউ চোখের পলকে, আবার কেউ পুরুষদের দৌড়ের গতিতে। আবার কেউ ধীরে দৌড়ে পার হয়ে যাবে। তারা সবাই আমল অনুযায়ী পার হবে। এভাবে শেষে এক ব্যক্তি আসবে যার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের উপরে নূর থাকবে। এক হাত পড়ে যাবে আর এক হাত লেগে থাকবে এক পা পড়ে যাবে এবং এক পা লেগে থাকবে। আগুন তার পার্শ্বদেশকে ধরে ফেলবে। রাবী বলেন: অতঃপর তারা মুক্তি পাবেন। যখন তারা এখান থেকে রেহাই পাবে তখন তারা বলবে, আলহামদুলিল্লা-হ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তোমার কাছ থেকে মুক্তি দিয়েছেন তোমাকে দেখিয়ে দেয়ার পর। আর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা আমাদের এমন বস্তু দিয়েছেন যা আর কাউকে প্রদান করেননি। (হাকিম হা. ৩৪২৪, ৮৭৫১; শারহুল আকীদাতুত্ তহাবীয়া পৃ. ৩৪১-৪২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৬-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে পেঁচিয়ে নেয়া হবে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب النفخ فِي الصُّور )
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ مُكَوَّرَانِ يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3200) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (التَّكْوِير) অর্থ (اللَّفُّ) গুটানো, জড়ানো, মোড়ানো। এখান থেকেই (تَكْوِيرُ الْعِمَامَةِ) (পাগড়ি পেঁচানো)। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (یُکَوِّرُ الَّیۡلَ عَلَی النَّهَارِ) “রাত দিনকে ঢেকে নেয়”- (সূরা আয যুমার ৩৯: ৫)।
এটা একত্রিত হওয়ার অর্থে ব্যবহৃর হয়। যেমন কুরআনে এসেছে, (وَ جُمِعَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ) “সূর্য আর চাঁদকে একত্রে জুড়ে দেয়া হবে”- (সূরাহ আল কিয়া-মাহ্ ৭৫:৯)।
‘আল্লামাহ্ তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এখানে কয়েক অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে- (এক) একত্রিত হওয়া বা মোড়ানো অর্থে। (দুই) উত্তোলন অর্থে। (তিন) যখন কোন কিছুকে নিক্ষেপ করে তখন তারা বলে, (طَعْنَةٌ مُكَوَّرَةٌ مِنْ كَوَّرِهِ) অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রকে নিজ কক্ষপথ থেকে নিক্ষেপ করা হবে। এই অর্থ অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা কোন কোন বর্ণনার শেষে (مُكَوَّرَانِ فِي النَّارِ) “জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে” রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইবনু ওয়াহহাব কিতাবুল আহওয়ালে’ ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার-এর সূত্রে আল্লাহর বাণী (وَ جُمِعَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ) “সূর্য আর চাঁদকে একত্রে জুড়ে দেয়া হবে”- (সূরাহ্ আল কিয়া-মাহ্ ৭৫: ৯); এর ব্যাখ্যায় বলেন, কিয়ামতের দিন চন্দ্র-সূর্যকে একত্রিত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ দুটোকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশে জাহান্নামে ফেলা হবে না। বরং দুনিয়াতে যারা এ দুটোর ইবাদত করেছে, তাদেরকে তিরস্কার করার জন্য। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, চন্দ্র ও সূর্যের 'ইবাদত করা বাতিল ছিল। কেউ কেউ বলেন, এ দুটোকে জাহান্নাম থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেথায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (ফাতহুল বারী হা. ৩২০০)
সূর্য ও চন্দ্রকে জড়ানো হবে যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং এ পৃথিবী ধ্বংস হবে। তখন আর আলোর কোন প্রয়োজন থাকবে না। আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, এগুলোর ক্ষতি ও ধ্বংসের কারণে এর উপাসনাকারীরা লজ্জিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭৮)