পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়া‘দা বা প্রতিশ্রুতি
৪৮৭৯-[২] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তাঁর শুভ্রতা প্রকাশ পেয়েছিল। ’আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান(রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তেরোটি সবল উট দিতে আদেশ করেছিলেন। আমরা সে উটগুলো আনতে গেলাম। আমাদের কাছে তাঁর ইন্তিকালের সংবাদ পৌঁছল, তখন আমাদেরকে কোনকিছু দেয়া হলো না। অতঃপর যখন আবূ বকর সিদ্দীক(রাঃ) খলীফাহ্ নির্বাচিত হলেন, তখন তিনি ঘোষণা করলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কারো সাথে কোন ওয়া’দা করে থাকেন, তবে সে যেন আমার কাছে আসে। তখন আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম এবং এ ঘটনা তাঁকে জানালাম। তিনি আমাদেরকে তা (তেরোটি উট) দিয়ে দিতে আদেশ করলেন। (তিরমিযী)[1]
عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبْيَضَ قَدْ شَابَ وَكَانَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ يُشْبِهُهُ وَأَمَرَ لَنَا بِثَلَاثَةَ عَشَرَ قَلُوصًا فَذَهَبْنَا نَقْبِضُهَا فَأَتَانَا مَوْتُهُ فَلَمْ يُعْطُونَا شَيْئًا. فَلَمَّا قَامَ أَبُو بَكْرٍ قَالَ: مَنْ كَانَتْ لَهُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِدَةٌ فَلْيَجِئْ فَقُمْتُ إِلَيْهِ فَأَخْبَرْتُهُ فَأَمَرَ لَنَا بِهَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبْيَضَ) আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি ছিলেন সাদা রঙের লালচে আর তার কোন কোন দাড়ি পেকে গিয়েছিল অথবা তার ভিতর বার্ধক্যে ছাপ ছিল।
(وَكَانَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ يُشْبِهُهٗ) ‘আলী (রাঃ)-এর ছেলে হাসান (রাঃ) ছিলেন, দেখতে তার মতই। আর তিনি আমাদেরকে তিন উষ্ট্রি ভর্তি করে দিতে বলেছেন। তাই আমরা তার দায়িত্বশীলের নিকট তা গ্রহণ করতে যাচ্ছিলাম তখন আমাদের কাছে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছে। ফলে আমাদেরকে কিছুই দেয়া হলো না। এ দ্বারা বুঝা যায় দান, সাদাকা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মালিক হওয়া যায় না।
(فَلَمَّا قَامَ أَبُو بَكْرٍ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) খিলাফাতের দায়িত্ব নিলেন। তিনি বললেন, যার জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোন ওয়া‘দা করা ছিল সে যেন আমার কাছে আসে তথা আমাদের কাছে আসলে আমরা তা পূর্ণ করে দিব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়া‘দা বা প্রতিশ্রুতি
৪৮৮০-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবুল হাসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নুবুওয়াত লাভের পূর্বে একদিন আমি তাঁর কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করি, যার কিছু মূল্য পরিশোধ করতে বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তাঁর সাথে ওয়া’দা করেছিলাম যে, আমি অবশিষ্ট দাম নিয়ে তাঁর নির্ধারিত স্থানে এসে উপস্থিত হব। আমি এ প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিনদিন পরে আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম, তিনি সে নির্দিষ্ট স্থানেই আছেন। আমাকে দেখে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিনদিন যাবৎ তোমার অপেক্ষা করছি। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবদুল কারীম’’ নামের বর্ণনাকারী মাজহূল বা অপরিচিত।
وَعَن عبدِ الله بن أبي الحَسْماءِ قَالَ: بَايَعْتُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يُبْعَثَ وَبَقِيَتْ لَهُ بَقِيَّةٌ فَوَعَدْتُهُ أَنْ آتِيَهُ بِهَا فِي مَكَانِهِ فَنَسِيتُ فَذَكَرْتُ بَعْدَ ثَلَاثٍ فَإِذَا هُوَ فِي مَكَانِهِ فَقَالَ: «لَقَدْ شَقَقْتَ عَلَيَّ أَنَا هَهُنَا مُنْذُ ثَلَاثٍ أنتظرك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (بَايَعْتُ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে কিছু কিনেছি নুবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে এবং উক্ত ক্রয়কৃত বস্তুর কিছু মূল্য বাকী ছিল। আমি তাকে ওয়া‘দা দিয়েছিলাম যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে তার নিকট আসব এবং তা পরিশোধ করে দিব। কিন্তু আমি সেই ওয়া‘দার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তিনদিন পর আমার স্মরণ হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে উক্ত স্থানে এসে দেখি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত স্থানে অবস্থান করছেন। এখানে থেকে বুঝা যায় ওয়া‘দা বাস্তবায়ন এবং তা পূর্ণ করা মুস্তাহাব।
(فَقَالَ:لَقَدْ شَقَقْتَ) অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আমাকে কষ্টে ফেলে দিয়েছ। আমি এখানে তিনদিন থেকে অপেক্ষা করছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা মূল্য প্রাপ্তির জন্য ছিল না, সেটা ছিল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জেনে রাখা ভালো যে, ওয়া‘দা রক্ষা করার ব্যাপারে প্রত্যেক ধর্মেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী সকল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হিফাযাত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفّٰى ‘‘আর ইব্রাহীমের (কিতাবের খবর) যে (ইব্রাহীম) ছিল পুরোপুরি দায়িত্ব পালনকারী’’- (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩ : ৩৭)। তার ছেলে ইসমা‘ঈল (আ.) -এর প্রশংসা করে বলেন- إِنَّه كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ ‘‘...সে ছিল ওয়া‘দা রক্ষায় (দৃঢ়) সত্যবাদী...’’- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯ : ৫৪)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সকল ‘আলিম এ ব্যাপারে একমত যে, যদি কেউ কারো সাথে এমন বিষয়ের ওয়া‘দা করে যা হারাম নয় তা পালন করা উচিত। এটা কি ওয়াজিব না মুস্তাহাব- এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে, ইমাম শাফি‘ঈ এবং আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুমাল্লাহ) এবং জামহূর ‘আলিমের মতে এটা মুস্তাহাব। যদি ছেড়ে দেয় তাহলে তার ফাযীলাত ছুটে যাবে এবং সে কঠিন মাকরূহ কাজ করবে তবে গুনাহগার হবে না।
আবার একদল ‘আলিমের মতে এটা ওয়াজিব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৮৮)
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়া‘দা বা প্রতিশ্রুতি
৪৮৮১-[৪] যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, আর তার এ অভিপ্রায় থাকে যে, সে প্রতিশ্রুতি পালন করবে। অতঃপর কোন কারণবশতঃ প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারল না এবং সময় মতো এলো না, তবে তার পাপ হবে না। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবুল নু‘মান ও আবূ ওয়াক্কাস’’ নামে দু’জন মাজহূল বা অপরিচিত বর্ণনাকারী আছে। দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৪৪৭ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ। আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৪৯৪০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৩৫৯।
وَعَن زيد بن أَرقم عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا وَعَدَ الرَّجُلُ أَخَاهُ وَمِنْ نِيَّتِهِ أَنْ يَفِيَ لَهُ فَلَمْ يَفِ وَلِمَ يَجِئْ لِلْمِيعَادِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যাঃ (إِذَا وَعَدَ الرَّجُلُ أَخَاهُ وَمِنْ نِيَّتِه أَنْ يَفِيَ) যদি কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে কোন ব্যাপারে ওয়া‘দা করে থাকে আর তা পালন করার নিয়্যাতও রাখে কিন্তু কোন কারণবশতঃ তা পালন করতে না পারে এবং উক্ত ওয়া‘দার স্থানে পৌঁছতে না পারে তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না।
এ হাদীসের শিক্ষা হলো, কেউ যদি খাঁটিভাবে নিয়্যাত করে তাহলে উক্ত ওয়া‘দা কোন কারণে পালন করতে না পারে তাহলেও সে সাওয়াব পাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়া‘দা বা প্রতিশ্রুতি
৪৮৮২-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমার মা আমাকে ডাকলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে বসা ছিলেন। মা বললেনঃ এদিকে এসো, তোমাকে কিছু দেব। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকে বললেনঃ তুমি তাকে কি দিতে ইচ্ছা করেছ? তিনি বললেনঃ আমি তাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছা করেছি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার ’আমলনামায় একটি মিথ্যা কথা লেখা হত। (ইমাম আবূ দাঊদ এবং বায়হাক্বী’ ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَن عبدِ الله بن عامرٍ قَالَ: دَعَتْنِي أُمِّي يَوْمًا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ فِي بَيْتِنَا فَقَالَتْ: هَا تَعَالَ أُعْطِيكَ. فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَرَدْتِ أَنْ تُعْطِيهِ؟» قَالَتْ: أَرَدْتُ أَنْ أُعْطِيَهُ تَمْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّكِ لَوْ لَمْ تُعْطِيهِ شَيْئًا كُتِبَتْ عَلَيْكِ كَذِبَةٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (دَعَتْنِي) আমাকে ডাকলেন। (وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদের ঘরে বলছিলেন। সে বাক্যটি অবস্থামূলক ব্যাখ্যা করছে। (فَقَالَتْ: هَا) অতঃপর বললেন, নাও গ্রহণ কর। هَا শব্দটি সতর্কমূলক হিসেবে ব্যবহৃত।
(تَعَالَ) ‘আসো’ শব্দটি কথাকে আরো জোড়ালো করেছে। (أُعْطِيكَ) আমি তোমাকে কিছু দিব। (مَا أَرَدْتِ أَنْ تُعْطِيهِ؟) তুমি তাকে কি জিনিস দিতে চাচ্ছ? (أَمَا إِنَّكِ لَوْ لَمْ تُعْطِيهِ شَيْئًا) সাবধান! তুমি যদি তাকে কিছুই না দাও। এ বাক্যে أَمَا শব্দটি সতর্কমূল হিসেবে ব্যবহৃত। (كُتِبَتْ عَلَيْكِ كَذِبَةٌ) তাহলে তোমাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে অথবা এক প্রকার মিথ্যার আশ্রয় নিবে।
এ হাদীসের শিক্ষা হলো : সন্তান কান্নাকাটি করার সময় মানুষ মুখে যা বলে, যেমন কোন কিছু দেয়া মিথ্যা আশ্বাস অথবা ভয়-ভীতি দেখানো ইত্যাদি হারাম মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৮৩)