পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা
৪৫৯৮-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যার কিছু শিখল, সে যেন জাদুর কিছু অংশ হাসিল করল। সুতরাং সে যত বেশি জ্যোতির্বিদ্যা শিখল ততবেশি জাদুবিদ্যাই অর্জন করল। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (مَنِ اقْتَبَسَ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি গ্রহণ করল, অর্জন করল, শিক্ষা লাভ করল। (عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ) অর্থাৎ তার শিক্ষা ভাণ্ডার হতে কিছু শিক্ষা অথবা তার জ্ঞান ভাণ্ডার হতে কোন মাস্আলাহ্।
(مَا زَادَ) অর্থাৎ সে যত বেশি জ্যোতির্বিদ্যা অর্জন করবে, তার জাদুর শাখা-প্রশাখা তত বেশি বিস্তার লাভ করবে। মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) এ কথা বলেন।
‘আল্লামা সিন্দী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ জ্যোতিবির্দ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, জাদুও তত বৃদ্ধি পাবে।
এটাও বলা হয়ে থাকে যে, এটি বর্ণনাকারীর কথারও সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি খারাবী বর্ণনা করেছেন।
ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জ্যোতির্বিদ্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, জ্যোতির্বিদগণ দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জন করে, আর এমন নতুন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করে যা এখনও ঘটেনি। যেমন- বৃষ্টি আসার জ্ঞান, মূল্য পরিবর্তন হওয়ার জ্ঞান। তবে তার দ্বারা যদি সে সালাতের সময় ক্বিবলার দিক জানে, তবে নিষেধের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’ গ্রন্থে এসেছে, জ্যোতির্বিদ্যাকে নাকচ করা হয়েছে। এর কারণ হলো, জ্যোতির্বিদগণ এমন নতুন ঘটনা জানে বলে দাবী করে যা এখনো ঘটেনি। কখনো ভবিষ্যৎ ঘটনা জানার দাবী করে। যেমন- ঝড় কখন হবে তারা তা বলে দেয়, বৃষ্টির পানি আসার সংবাদ দেয়, বরফ পড়ার সংবাদ দেয়, গরম ও শীত আসার সংবাদ দেয় এবং মূল্য পরিবর্তনের ও সংবাদ দেয় ইত্যাদি। আর তারা বিশ্বাস করে যে, নক্ষত্র চলাচলের, তা একত্রিত ও আলাদা হওয়ার জ্ঞান থাকার কারণে তা বলতে পারে। এটি এমন একটা জ্ঞান যা মহান আল্লাহ নিজের জন্য রেখে দিয়েছেন। তিনি ছাড়া কেউ তা জানে না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ إِنَّ اللهَ عِنْدَه عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ ‘‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটেই আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন’’- (সূরাহ্ লুকমান ৩১ : ৩৪)। জ্যোর্তিবিদ্যার মাধ্যমে অস্ত যাওয়ার জ্ঞান, ক্বিবলার জ্ঞান অর্জন করলে তা নিষেধের আওতায় পড়বে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَهُوَ الَّذِىْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ‘‘তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্য নক্ষত্রসমূহের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা জল-স্থলের অন্ধকারে সেগুলো দ্বারা রাস্তা নির্ণয় করতে পারো’’ - (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ৯৭)। মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ ‘‘আর তারা নক্ষত্র দ্বারা পথ চলে থাকে’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১৬)। মহান আল্লাহ উল্লেখিত আয়াতে যে সংবাদ দিলেন তা হলো, নক্ষত্রসমূহ সময় ও রাস্তা চেনার মাধ্যম। আর যদি সেগুলো না থাকত তবে মানুষ ক্বিবলার দিক ঠিক করতে পারত না।
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, তোমরা জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা কর, যে বিদ্যা দ্বারা তোমরা ক্বিবলাহ্ ও পথ চিনতে পারবে, অতঃপর তোমরা থেমে যাও (শিক্ষা বন্ধ করে দাও)। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯০৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা
৪৫৯৯-[৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষের কাছে যায় এবং সে যা কিছু বলে তা বিশ্বাস করে অথবা যে ব্যক্তি ঋতুমতী অবস্থায় নিজের স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে কিংবা যে ব্যক্তি স্ত্রীর পিছন দ্বার দিয়ে সহবাস করে, সে ঐ জিনিস হতে সম্পর্কহীন হয়ে গেল, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَتَى كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ أَوْ أَتَى امْرَأَتَهُ حَائِضًا أَو أَتَى امْرَأَته من دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ লিসান-এর মধ্যে এসেছে, যে দুনিয়াতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ বলে দেয় এবং গোপন বিষয় জানার দাবী করে তাকে كاهن ( জ্যোতিষী) বলে। জাহিলী যুগে ‘আরবে জ্যোতিষী পাওয়া যেত।
আর যে দাবী করে যে, তাকে জিনে সংবাদ দিয়ে যায়। যে বিশ্বাস করে যে, সে কতিপয় কারণ থেকে অনেক কিছু বলে দিতে পারে, সে (তার কাছে আগমনকারীর) কাজ, তার অবস্থা দেখে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। আর এ শ্রেণীকে বলে عراف বা গণক। যে দাবী করে হারানোর জিনিস কোথায় আছে, চুরি হয়ে যাওয়া জিনিস কোথায় আছে তা বলে দিতে পারে।
‘আল্লামা আযহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের পূর্বে আরবে كهانة জ্যোতির্বিদ ছিল। যখন আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী করে পাঠালেন, আর আসমান উল্কাপি- দ্বারা পাহারা নিযুক্ত করেন, আর জীন-শয়তানদেরকে সংবাদ চুরি করে জ্যোতির্বিদদের কাছে পৌঁছাতে নিষেধ করেন, তখন জ্যোতির্বিদ্যা বাতিল হয়ে গেল। আর মহান আল্লাহ সেই কুরআনের মাধ্যমে জ্যোতির্বিদ্যাকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন যা দিয়ে তিনি হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করেছেন। আর তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওয়াহীর মাধ্যমে যা ইচ্ছা গায়বের কোন জ্ঞান জানিয়ে দিলেন যা আয়ত্ব করতে জানতে জ্যোতির্বিদগণ ব্যর্থ হল। সুতরাং প্রশংসা ও অনুগ্রহে বর্তমানে জ্যোতির্বিদ্যা নেই। আল কুরআন তার অভাব পূরণ করে দিয়েছে (তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে)।
ইবনুল ‘আসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (مَنْ أَتٰى كَاهِنًا) অর্থাৎ জ্যোতিষী, গণক এবং জ্যোতির্বিদ যে কারো কাছে আসুক না কেন। (أَوْ أَتَى امْرَأَتَهٗ) অর্থাৎ সহবাস করতে। (من دُبُرِهَا) অর্থাৎ হায়য অবস্থায় হোক বা পবিত্র অবস্থায় হোক। (فَقَدْ بَرِئَ) অর্থাৎ কুফরী করল। এটি ধমক ও শাস্তির ভয় দেখানোর জন্য।
(‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৯০০; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)