পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪০৭-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন স্যান্ডেল (জুতা) পরিধান করতে দেখেছি, যাতে পশম ছিল না। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْبَسُ النِّعَالَ الَّتِي ليسَ فِيهَا شعرٌ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চামড়ার জুতা পরিধান করা ও ওটার প্রতি ভালোবাসা থেকে সর্বাবস্থায় তা পরিধান করা বৈধতার দলীল গ্রহণ করেছেন। আর আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন যে, তিনি বাশির ইবনু খাসাসিয়্যাহ্-এর বর্ণিত হাদীসের কারণে কবরস্থানে জুতা পরিধান করে আসা অপছন্দ করতেন। উক্ত হাদীসে রয়েছে তিনি [বাশির ইবনু খাসাসিয়্যাহ্ (রাঃ)] বলেনঃ আমি একবার জুতা পড়ে কবরস্থানে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার পেছন থেকে ডেকে বললো, ‘‘হে চামড়ার জুতা পরিহিত ব্যক্তি! এ জায়গায় আসলে জুতা খুলতে হয়। এ হাদীসটি আহমাদ ও আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন, আর হাকিম এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন। আর এ থেকে উল্লেখিত দলীলও গ্রহণ করেছেন। ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ‘‘জুতায় নাপাকি থাকলে তা কবরস্থানে খুলে ফেলা বৈধ। অবশ্য হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তিকে যখন কবর দিয়ে লোকজন প্রত্যাবর্তন করে তখন মৃতব্যক্তি লোকজনদের পায়ের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। আর এ হাদীস প্রমাণ করে যে, কবরস্থানে জুতা পরিধান করে যাওয়া বৈধ।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে জুতা পরিধান করে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর মসজিদে জুতা পরিধান করে প্রবেশ করা বৈধ হলে কবরস্থানে এটা বৈধ হওয়া তো আরো অগ্রগণ্য। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৫১)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪০৮-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্যান্ডেলে দু’টি ফিতা ছিল। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: إِنَّ نَعْلَ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم كَانَ لَهَا قبالان
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্যান্ডেলের দু’টি ফিতা ছিল যা পায়ের দুই অঙ্গুলির মাঝে আটকিয়ে রাখতেন। পায়ের দুই অঙ্গুলি বলতে মধ্যম ও তার সাথে মিলিত অঙ্গুলিকে বুঝানো হয়েছে।
আল জাযুরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্যান্ডেলের দু’টি ফিতা ছিল, একটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলির মাঝে আটকিয়ে রাখতেন এবং দু’টি ফিতার অপর দুই প্রান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পায়ের পিঠের বেল্টের সঙ্গে আটকিয়ে রাখতেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৩০)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪০৯-[৩] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন এক যুদ্ধে বলতে শুনেছি, তোমরা জুতা বেশি বেশি ব্যবহার করো। কেননা যে মানুষ জুতা ব্যবহার করে, সে যেন বাহনের উপরেই থাকে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا يَقُولُ: «اسْتَكْثِرُوا مِنَ النِّعَالِ فَإِنَّ الرَّجُلَ لَا يَزَالُ رَاكِبًا مَا انتعَلَ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ নিশ্চয় জুতা পরে পথ চলা সওয়ারীর রাস্তায় কাঁটা বা কষ্টদায়ক বস্তু হতে পা নিরাপদ থাকে। আলোচ্য হাদীসের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় যে, মুসাফির ব্যক্তিকে জুতা পরিধান কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সম্পর্কে সতর্ক করা মুস্তাহাব এবং আমীর কিংবা নেতার জন্য তার অনুসারীদের কল্যাণের নাসীহাত করা মুস্তাহাব। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৯৬)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪১০-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন জুতা পরিধান করে, সে যেন ডান পা হতে আরম্ভ করে, আর যখন খুলবে, তখন যেন বাম পা হতে শুরু করে। যাতে জুতা পরার সময় ডান পা প্রথমে হয় এবং খোলার সময় শেষে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا انْتَعَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيُمْنَى وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدَأْ بِالشِّمَالِ لِتَكُنِ الْيُمْنَى أَوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَآخِرَهُمَا تُنْزَعُ»
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসের তিনটি ফিকহী মাসআলাহ্ রয়েছে :
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যপূর্ণ প্রতিটি কাজে যথাক্রমে- জুতা, মোজা ও জামা পরিধান করা এবং মাথা মুন্ডানো ও মাথা আঁচড়ানো, গোফ ছাঁটা ও বগলের লোম উঠানো, মিসওয়াক করা ও সুরমা লাগানো, নখ কাটা, উযূ করা, গোসল করা, তায়াম্মুম করা, মসজিদে প্রবেশ করা, পায়খানা থেকে বের হওয়া, দান-খয়রাত করা ও ভালো কিছু গ্রহণ করা ইত্যাদি এসব কাজে ডান দিক থেকে করা মুস্তাহাব।
২. উপরিউক্ত কাজের বিপরীত কার্যপ্রণালী যথাক্রমে : জুতা, মোজা ও জামা কাপড় খোলা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, পায়খানায় প্রবেশ করা, ইস্তিঞ্জা করা, লিঙ্গ স্পর্শ করাসহ নানাবিধ নিম্নপর্যায়ের কাজগুলোর ক্ষেত্রে বাম দিক থেকে শুরু করা মুস্তাহাব।
৩. এক জুতা কিংবা এক মোজা পরিধান করে পথ চলা মাকরূহ। যার দলীলে উল্লেখিত হাদীসসহ আরো একাধিক হাদীস। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৯৭)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪১১-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না চলে। হয় উভয় পা খালি রাখবে নয় উভয় পায়ে জুতা পরবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَمْشِي أَحَدُكُمْ فِي نعلٍ واحدةٍ ليُحفيهُما جَمِيعًا أَو لينعلهما جَمِيعًا»
ব্যাখ্যাঃ খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ আলোচ্য হাদীসে একপায়ে জুতা পরে চলা নিষেধ হওয়ার হিকমাত হলো শারী‘আতে জুতা পরিধান করার বিধান এসেছে, পা-কে জমিনের অনিষ্টতা থেকে বেঁচে রাখার জন্য। যখন এক পা খালি থাকবে তখন পথ চলা ব্যক্তি এক পা জমিনের অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ রাখতে পারবে অন্যটি নয়। কেউ কেউ বলেন, এক পায়ে জুতা পরে চলার কারণে ব্যক্তি তাঁর নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি সুবিচার করতে পারে না তথা যথাযথ যত্ন নিতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জানেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৩২)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পাদুকা সম্পর্কীয় বর্ণনা
৪৪১২-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, সে যেন একখানা জুতা পরে না চলে, যতক্ষণ না অপর জুতার ফিতা ঠিক করে নেয় এবং একখানা কাপড় দ্বারা ইহ্তিবা অবস্থায় না বসে এবং এক কাপড়ে যেন গোটা শরীর জড়িয়ে না রাখে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا انْقَطَعَ شِسْعُ نَعْلِهِ فَلَا يَمْشِ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ حَتَّى يُصْلِحَ شِسْعَهُ وَلَا يَمْشِ فِي خُفٍّ وَاحِدٍ وَلَا يأكلْ بِشمَالِهِ وَلَا يجتبي بِالثَّوْبِ الْوَاحِدِ وَلَا يَلْتَحِفِ الصَّمَّاءَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ