পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শিশুর বালেগ হওয়া ও ছোট বেলায় তাদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে
৩৩৭৮-[৩] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। জনৈকা রমণী এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ আমার পুত্র, আমার পেট তাঁর জন্য খাদ্যভাণ্ডার ছিল, আমার বুক ছিল তাঁর মশক বা পানপাত্র স্বরূপ এবং আমার কোল ছিল তার দোলনা স্বরূপ। কিন্তু তার পিতা আমাকে তালাক দিয়েছে এবং এমতাবস্থায় তাকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত রমণীকে বললেন, ঐ সন্তান প্রতিপালনে তুমিই অধিক হকদার, যতক্ষণ না তোমার অন্যত্র বিবাহ হয়। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ امْرَأَةً قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنِي هَذَا كَانَ بَطْنِي لَهُ وِعَاءً وَثَدْيِي لَهُ سِقَاءً وَحِجْرِي لَهُ حِوَاءً وَإِنَّ أَبَاهُ طَلَّقَنِي وَأَرَادَ أَنْ يَنْزِعَهُ مِنِّي فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْتِ أَحَقُّ بِهِ مَا لم تنكحي» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (كَانَ بَطْنِىْ لَه وِعَاءً) ‘‘আমার পেট তার পাত্র ছিল।’’ অর্থাৎ গর্ভ ধারণের সময় আমার পেট তাকে ধারণ করেছে। তাই পেটকে পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
(وَثَدْيِىْ لَه سِقَاءً) ‘‘এবং আমার স্তন তার মশক ছিল।’’ অর্থাৎ দুধ পান করার সময় আমার স্তন থেকেই সে পান করেছে। আমার স্তন তার দুধের পাত্র ছিল।
(وَحِجْرِىْ لَه حِوَاءً) ‘‘এবং আমার কোল তার আশ্রয়স্থল।’’ অর্থাৎ কোল তাকে হিফাযাত ও সংরক্ষণ করেছে।
এসব কথা বলে মায়ের উদ্দেশ্য হলো, সে তার বাচ্চাকে পাওয়ার অগ্রাধিকার রাখে; কেননা এসব গুণের কোনোটিই পিতার মাঝে নেই।
(أَنْتِ أَحَقُّ بِه مَا لَمْ تَنْكَحِىْ) অর্থাৎ তোমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তুমিই বাচ্চার অধিক হকদার।
এ হাদীসের আলোকে ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্য যে, পিতা ও মায়ের মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এবং সন্তান লালন নিয়ে মা ও পিতার মাঝে বিবাদ তথা উভয়ে ছেলেকে নিজের রাখা নিয়ে টানটানি দেখা দিলে বাচ্চা লালনের অধিকার মায়ের। মায়ের দাবী সত্ত্বে পিতা বাচ্চা পাওয়ার অধিকার রাখেন না। বাচ্চার প্রতি স্নেহ-মমতা পিতার তুলনায় মায়ের অধিক বলেই শারী‘আত মাকে এই অধিকার দিয়েছে। তবে মায়ের এই অধিকার অন্যত্র বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত। কেননা অন্য বিবাহে আবদ্ধ হলে তার জন্য বাচ্চার সঠিক রক্ষনাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই অন্যত্র বিবাহ হলে মায়ের এই অধিকার বাতিল হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত তাকে অধিকার দিয়েছেন। তবে মায়ের এই অধিকার বাচ্চার ভালো মন্দ পার্থক্যের বয়সের পূর্ব পর্যন্ত। ভালো মন্দ পার্থক্যের বয়সে বাচ্চা উপনীত হয়ে গেলে বাচ্চাকেই পিতা মাতার কোনো জনকে বেছে নিতে অবকাশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেমন আমরা সামনের হাদীসে দেখতে পাব। তাই সেই হাদীসের আলোকে মায়ের অগ্রাধিকারের বিষয়টি বাচ্চার ভালো মন্দ পার্থক্যের বুঝ আসার পূর্ব পর্যন্ত নির্ধারিত হয়ে যায়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৭৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শিশুর বালেগ হওয়া ও ছোট বেলায় তাদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে
৩৩৭৯-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বালককে তার পিতা ও মায়ের মধ্যে একজনকে (লালন-পালনের উদ্দেশে) বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيَّرَ غُلَامًا بَيْنَ أَبِيهِ وَأمه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে আমরা দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাকে পিতা-মাতার মাঝে যাকে ইচ্ছা নির্বাচন করে বেছে নেয়ার অবকাশ দিয়েছেন। অর্থাৎ বাচ্চার মাঝে বিবেচনাবোধ এসে গেলে সে যাকে অবলম্বন করবে সেই বাচ্চাকে লালনের অধিকার রাখবে। তবে এই বিবেচনাবোধের বয়স বা সময় কোন্টি- এ নিয়ে ‘উলামাদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কারো মতে বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে এই অবকাশ দেয়া হবে। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে- ‘‘ইয়াতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২)
এ আয়াতে যেমন সম্পদ পৌঁছিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ইয়াতীমকে বুঝদার ধরা হয়েছে, তদ্রূপ পিতা-মাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
আবার কেউ কেউ বলেন, বাচ্চার মাঝে ভালো-মন্দের পার্থক্যের জ্ঞান এসে গেলেই তাকে পিতা-মাতার কোনো একজনকে বেছে নেয়ার অধিকার থাকবে। বাচ্চা যার সঙ্গে থাকতে চাইবে সেই তাকে লালন করবে। শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর এটি মত। তবে শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে বাচ্চার এই জ্ঞানের বয়স সাত অথবা আট ধরা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৫৭)
পরিচ্ছেদঃ ১৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শিশুর বালেগ হওয়া ও ছোট বেলায় তাদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে
৩৩৮০-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা রমণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ সে আমাকে পানাহার করায়, আমার উপকার করে ও আমার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করে দেয়। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বালককে বললেন, এই তোমার পিতা, ঐ তোমার মা, তুমি যার কাছে ইচ্ছা যেতে পার। অতঃপর সে তার মায়ের হাত ধরে চলে গেল। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعنهُ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: إِنَّ زَوْجِي يُرِيدُ أَنْ يَذْهَبَ بِابْنِي وَقَدْ سَقَانِي وَنَفَعَنِي فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا أَبُوكَ وَهَذِهِ أُمُّكَ فَخُذْ بِيَدِ أَيِّهِمَا شِئْتَ» . فَأَخَذَ بِيَدِ أُمِّهِ فَانْطَلَقَتْ بِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: (وَقَدْ سَقَانِىْ وَنَفَعَنِىْ) ‘‘সে আমাকে পান করায় এবং আমার উপকারে আসে।’’ এ কথা বলে মহিলার উদ্দেশ্য তার ছেলে এমন বয়সে উপনীত হয়েছে যে, সে মায়ের সেবা করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পিতা-মাতার দু’জনের যার সাথে ইচ্ছা যেতে বললেন।
এ হাদীস থেকে এই কথা প্রমাণ হয় যে, বাচ্চার মাঝে বুঝ এসে গেলে সে যার সাথে থাকতে চাইবে তার সাথেই দিতে হবে। এর পূর্ব পর্যন্ত মায়ের একক অধিকার থাকবে।