পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)
৩২৩৫-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের মাঝে ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে পালা বণ্টন করতেন এবং বলতেন, ’’হে আল্লাহ! আমার সাধ্যমত (এই বিষয়ের) বণ্টন করলাম, আর যে ব্যাপারে তোমার আয়ত্তে ও আমার সাধ্যাতীত (মনের দুর্বলতা ও ভালোবাসার দরুন), সে বিষয়ে তুমি আমাকে অপরাধী করিও না’’। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْسِمُ بَيْنَ نِسَائِهِ فَيَعْدِلُ وَيَقُولُ: «اللَّهُمَّ هَذَا قَسْمِي فِيمَا أَمْلِكُ فَلَا تَلُمْنِي فِيمَا تَمْلِكُ وَلَا أَمْلِكُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিষয়েই তার স্ত্রীদের মধ্যে সমবণ্টন করতেন, বিশেষ করে রাত্রি যাপনের পালা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণরূপে ইনসাফভিত্তিক ফায়সালা করতেন। কোনো ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের কারো বিশেষ কিছু গুণাবলীর কারণে তার প্রতি স্বামীর অধিক ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এটা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর এটা ইনসাফের পরিপন্থীও নয়। তবু তিনি এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করতেন এবং নিজের অপারগতা প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন, ‘‘হে আল্লাহ! স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ করা বা বাহ্যিক সমতা রক্ষা করা যেহেতু আমার আয়ত্তাধীন, আমি তা করছি, কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি হৃদয়ের টান বা অধিক ভালোবাসা এটা আমার আয়ত্তের বাহিরে। হে আল্লাহ! তুমিই তো মানুষের কলব বা হৃদয় পরিবর্তনের মালিক, সুতরাং তুমি যে বিষয়ের মালিক সে বিষয় তুমি আমার অপরাধ ধরো না এবং আমাকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করো না।’’
ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ প্রকাশ্য হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, স্ত্রীদের কারো প্রতি অধিক ভালোবাসা বা হৃদয়ের টান ছাড়া অন্যান্য বিষয় ইনসাফ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আয়ত্তের এবং ক্ষমতার মধ্যে ছিল। সুতরাং সেগুলোর মধ্যে ইনসাফ ও সমতা বিধান তার জন্যও আবশ্যক ছিল। তবে মেলামেশা ও আলিঙ্গনে সমতা বজায় (সর্বসম্মতভাবে) আবশ্যক নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১৪০; ফাতহুল কাদীর ৩য় খন্ড, ৩০০পৃঃ; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভাগ-বণ্টন (সহধর্মিণীদের মধ্যে পালা নিরূপণ প্রসঙ্গে)
৩২৩৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ سَاقِطٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: যার দুই বা ততোধিক স্ত্রী থাকবে তার জন্য ওয়াজিব স্ত্রীদের খাদ্য বস্ত্র এবং তাদের কাছে রাত্রিযাপনে ন্যায়বিচার বা সমতা রক্ষা করা। যে এটা করবে না, সে গুনাহগার হবে। হাদীসে বলা হয়েছে, সে কিয়ামতের দিন একদিকে অবশ তথা প্যারালাইসিসগ্রস্ত হয়ে উঠবে। কেউ কেউ বলেছেন, হাশরের ময়দানের লোকেরা তাকে এ অবস্থায় দেখতে থাকবে, ফলে এটা হবে তার জন্য লজ্জাষ্কর ব্যাপার এবং বেশী শাস্তি। হাদীসে দু’জন স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু দু’জন এখানে সীমাবদ্ধ নয়, তিন বা চারজন স্ত্রীর বেলায়ও সমতা রক্ষা আবশ্যক, অন্যথায় তার বেলায়ও একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
স্ত্রীদের একজন যদি স্বাধীন অন্যজন দাসী হয় তাহলে স্বাধীন ও দাসীর ক্ষেত্রে বণ্টন ব্যবস্থা অনুযায়ী সমতা বণ্টিত হবে।
(বর্তমানে দাসীর প্রথা নেই, সুতরাং এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো না)। (সম্পাদক)
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে স্ত্রীদের মধ্যে রাত্রি যাপনে অবশ্যই সমতা রক্ষা করতে হবে; কিন্তু সঙ্গম, আলিঙ্গন ইত্যাদিতে সমতা রক্ষা আবশ্যক নয়। কারণ এটা নির্ভর করে ব্যক্তির সুস্থতা, উদ্যম, প্রফুল্লাতা, মানসিকতা, পরিবেশ ইত্যাদির উপর। এতদসত্ত্বেও কখনো কখনো তা ওয়াজিব হয়ে যায়। অর্থাৎ সঙ্গম না করলে কোনো একজন পাপে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা হয়ে পড়লে তখন সঙ্গম করা আবশ্যক হয়ে যায়। আর স্বাভাবিকভাবে আবশ্যক না হলেও একেবারে পরিহার করা বৈধ নয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১৩৩; তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১৪১; মিরকাতুল মাফাতীহ)