পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - (গোলামদের স্বাধীনতা প্রদান)
৩১৯৮-[১] ’উরওয়াহ্ (রহঃ) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জনৈকা দাসী) বারীরাহ্ সম্পর্কে তাঁকে (’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে) বললেন, তাকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দাও। বারীরাহ্-এর স্বামীও দাস ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (বিবাহ সম্পর্ক রাখা বা বিচ্ছেদের) অধিকার দিলেন, এতে বারীরাহ্ (বিবাহ বিচ্ছেদ করে) নিজেকে মুক্ত করল। (রাবী বলেন) যদি সে (স্বামী) স্বাধীন হতো, তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে (বারীরাহ্-কে) স্বীয় অধিকার দিতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ [خِيَارُ الْمَمْلُوْكِيْنَ]
عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهَا فِي بَرِيرَةَ: «خُذِيهَا فَأَعْتِقِيهَا» . وَكَانَ زَوْجُهَا عَبْدًا فَخَيَّرَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاخْتَارَتْ نَفسهَا وَلَو كَانَ حرا لم يخيرها
ব্যাখ্যা: বারীরাহ্ (নাম্নী দাসী) হাদীসে প্রসিদ্ধ একটি নাম। তার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারে রয়েছে। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে নির্দেশ করেন, তুমি বারীরাহ্-কে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। বারীরাহ্-এর স্বামীও ছিল দাস। স্বাধীনা মুসলিম মহিলা দাস স্বামীর বিবাহ বন্ধনে থাকা না থাকার অধিকার রাখে। সুতরাং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যখন বারীরাহ্-কে স্বাধীন করে দিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাহ্-কে তার দাস স্বামীকে স্বামী হিসেবে বহাল রাখা অথবা তার নিকট থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার অধিকার বা ইখতিয়ার দিলেন। তিনিও সে ইখতিয়ার গ্রহণ করে তার বিবাহ বন্ধন ভেঙ্গে পৃথক হয়ে গেলেন। তার স্বামী মুগীস কত কান্নাকাটি করে তার পিছনে পিছনে ফিরলেন কিন্তু বারীরাহ্ তাকে আর গ্রহণই করলেন না।
সুনানু আবী দাঊদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে অন্য একটি বর্ণনা রয়েছে, বারীরাহ্-কে যখন স্বাধীন করা হয় তখন তার স্বামী দাস নয় বরং স্বাধীনই ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঐ ইখতিয়ার দিয়েছিলেন। বারীরাহ্ তখন বললেন, আমি তার সাথে থাকা পছন্দ করি না, কারণ সে আমাকে অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে।
উভয়বিধ হাদীসের ভিত্তিতে ইমামদের নিমেণাক্ত বক্তব্য স্মর্তব্য:
* স্বামী দাস হলে সর্বসম্মতভাবে স্ত্রী ইখতিয়ার পাবে।
* স্বামী মুসলিম হলে মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ প্রমুখ ইমামদের মতে স্ত্রীর ইখতিয়ার থাকবে না, কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে এ অবস্থাতেও তার ইখতিয়ার থাকবে। আবূ দাঊদে বর্ণিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস তার পক্ষে প্রামাণ্য দলীল।
* কিন্তু স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যদি একসাথে মুক্ত বা স্বাধীন হয় তখন এই ইখতিয়ার থাকে না। অথবা স্বামী যদি স্বাধীন হয় তখন স্ত্রী স্বাধীনা হোক অথবা দাসী হোক তার বিবাহ বন্ধন ভঙ্গ করার কোনো ইখতিয়ার থাকে না। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২৭৯; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৫০৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - (গোলামদের স্বাধীনতা প্রদান)
৩১৯৯-[২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরাহ্-এর স্বামী মুগীস হাবশী (কালো) ক্রীতদাস ছিল। আমি যেন সে দৃশ্য এখনও দেখছি, যখন মুগীস মদীনার অলিগলিতে (বারীরাহ্-এর পেছনে পেছনে) অশ্রুসিক্ত নয়নে দাড়ি ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এটা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে বলেন, হে ’আব্বাস! বারীরাহ্-এর প্রতি মুগীস-এর গভীর প্রেমাসক্ত এবং মুগীস-এর প্রতি বারীরাহ্-এর অনীহা দেখে তোমার কি বিস্ময়বোধ হয় না! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাহ্-কে বললেন, তুমি যদি তাকে পুনরায় গ্রহণ কর (এটা কতই না উত্তম হয়)? তখন বারীরাহ্ বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাকে নির্দেশ করছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তো সুপারিশ করছি মাত্র। বারীরাহ্ বলল, তবে আমার তার কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী)[1]
بَابٌ [خِيَارُ الْمَمْلُوْكِيْنَ]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ زَوْجُ بَرِيرَةَ عبدا أسود يُقَالُ لَهُ مُغِيثٌ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَطُوفُ خلفهَا فِي سِكَك الْمَدِينَة يبكي وَدُمُوعُهُ تَسِيلُ عَلَى لِحْيَتِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَىَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْعَبَّاسِ: «يَا عَبَّاسُ أَلَا تَعْجَبُ مِنْ حُبِّ مُغِيثٍ بَرِيرَةَ؟ وَمِنْ بُغْضٍ بَرِيرَة مغيثاً؟» فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ راجعته» فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَأْمُرُنِي؟ قَالَ: «إِنَّمَا أَشْفَعُ» قَالَتْ: لَا حَاجَةَ لِي فِيهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ