পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)
৩০৭৬-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ওয়াসিয়্যাত করে মারা গেছে সে সত্যপথ ও সুন্নাতের উপর মারা গেছে, মুত্তাক্বী ও শহীদরূপে মারা গেছে এবং আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছে। (ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ عَلَى وَصِيَّةٍ مَاتَ عَلَى سَبِيلٍ وَسُنَّةٍ وَمَاتَ عَلَى تُقًى وَشَهَادَةٍ وَمَاتَ مَغْفُورًا لَهُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: ওয়াসিয়্যাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযীলাতের এ কথা বলেছেন। ওয়াসিয়্যাত করে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়।
প্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি সরল-সঠিক ও শক্তিশালী ভিত্তির উপর মৃত্যুবরণ করে।
দ্বিতীয়তঃ এমন সুন্নাতের উপর সে মৃত্যুবরণ করে যা রবের নিকট গ্রহণীয় এবং রোমাঞ্চকর।
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থেকে তাকওয়ার মানদণ্ডের উপরে মৃত্যুবরণ করে।
চতুর্থতঃ ওয়াসিয়্যাতকারী শাহীদী মর্যাদা নিয়ে মারা যায়। সর্বশেষ ঐ ওয়াসিয়্যাতকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। যা হলো প্রকৃত উদ্দেশ্য। তবে সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা করা হয়। কেননা কবীরা গুনাহ থেকে মুক্তির পথ হলো তাওবাহ্। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)
৩০৭৭-[৮] ’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতা ও দাদা পরম্পরায় বর্ণনা করেন যে, ’আস্ ইবনু ওয়ায়িল (প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হওয়ায়) ওয়াসিয়্যাত করে যান যে, তার পক্ষ হতে যেন একশত ক্রীতদাস মুক্ত করা হয়। তদনুসারে তার পুত্র হিশাম পঞ্চাশটি ক্রীতদাস মুক্ত করেন। অতঃপর তাঁর পুত্র ’আমর বাকি পঞ্চাশটি স্বাধীন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তবে বললেন, আমি স্বাধীন করব না যতক্ষণ না এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করব। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা তার পক্ষ হতে একশত ক্রীতদাস মুক্ত করার ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন আর বাকী রয়েছে পঞ্চাশটি; আমি কি তার পক্ষ হতে তা মুক্ত করব? এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি মুসলিম হতো, আর তোমরা তার পক্ষ হতে তা মুক্ত করতে অথবা দান-সাদাকা করতে বা হজ্জ/হজ করতে, তাহলে তার নিকট তার সাওয়াব পৌঁছত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ الْعَاصَ بْنَ وَائِلٍ أَوْصَى أَنْ يُعْتَقَ عَنْهُ مِائَةُ رَقَبَةٍ فَأَعْتَقَ ابْنُهُ هِشَامٌ خَمْسِينَ رَقَبَةً فَأَرَادَ ابْنُهُ عَمْرٌو أَنْ يُعْتِقَ عَنهُ الْخمسين الْبَاقِيَة فَقَالَ: حَتَّى أَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي أَوْصَى أَنْ يُعْتَقَ عَنْهُ مِائَةُ رَقَبَةٍ وَإِنَّ هِشَامًا أَعْتَقَ عَنْهُ خَمْسِينَ وَبَقِيَتْ عَلَيْهِ خَمْسُونَ رَقَبَةً أَفَأَعْتِقُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّه لَو كَانَ مُسلما فأعتقتم عَنْهُ أَوْ تَصَدَّقْتَمْ عَنْهُ أَوْ حَجَجْتَمْ عَنْهُ بلغه ذَلِك» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে কোনো কাফিরের ওয়াসিয়্যাত, তার মুসলিম ওয়ালীর জন্য পালন করার বিধান প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে। ‘আস ইবনু ওয়ায়িল ছিলেন একজন কাফির। যিনি ইসলামী যুগ পেয়েও ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তিনি তার ওয়ারিসদেরকে তার মৃত্যুর পর তার পক্ষ থেকে একশত গোলাম আযাদ করতে ওয়াসিয়্যাত করেন। তখন তার ছেলে হিশাম তার পক্ষ থেকে পঞ্চাশটি গোলাম আযাদ করে দেন। আর হিশাম তিনি ছিলেন, প্রাথমিককালে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। তিনি মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করে পরবর্তীতে বর্তমান ইথিওপিয়ায় হিজরত করেন। অতঃপর তার অপর পুত্র ‘আমরও পঞ্চাশটি গোলাম আযাদ করার ইচ্ছা করেন, ‘আমর পঞ্চম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন, তিনি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করার মনঃস্থির করলেন যে, তার কাফির পিতার পক্ষ থেকে গোলাম আযাদ করা বৈধ কিনা? অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার পিতা একশত গোলাম আযাদ করার জন্য ওয়াসিয়্যাত করে যান, হিশাম পঞ্চাশটি গোলাম তার পক্ষ থেকে আযাদ করে দিয়েছেন, বাকী পঞ্চাশটি গোলাম আমি কি তার পক্ষ থেকে আযাদ করে দিব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি সে মুসলিম হতো আর তুমি তার পক্ষ থেকে গোলাম আযাদ করতে, সাদাকা প্রদান করতে এবং হজ্জ/হজ আদায় করতে তবে সে সাওয়াব পেত। কিন্তু সে মুসলিম না হয়ে মারা যাওয়ার কারণে এসব তার কোনো উপকার হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৮০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)
৩০৭৮-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওয়ারিসদের উত্তরাধিকারের অংশ কেটেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার জান্নাতের উত্তরাধিকারীর অংশ কেটে নিবেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَطَعَ مِيرَاثَ وَارِثِهِ قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার ওয়ারিসকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি আশায় থাকে, সে তার পূর্বসুরীদের থেকে মীরাস পাবে, পরিশেষে যখন ঐ ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে বঞ্চিত করে তখন আল্লাহ তা‘আলাও ঐ ব্যক্তিকে (যিনি ওয়ারিসকে বঞ্চিত করেছেন তাকে) তার সর্বশেষ প্রত্যাশা জান্নাতপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেন।
‘আল্লামা রাগিব বলেনঃ কোনরূপ চুক্তি ব্যতিরেকে অন্যের থেকে কারো নিকট সম্পদের স্থানান্তরকে الْوِرَاثَةُ (ওয়ারাসাহ্) বলা হয়। এ কারণেই উক্ত প্রক্রিয়াকে الْمُنْتَقِلِ عَنِ الْمَيِّتِ ‘‘মৃত ব্যক্তির স্থানান্তরকৃত সম্পদ’’ নামকরণ করা হয়। কেউ কেউ বলেনঃ কোনো কষ্ট-পরিশ্রম ব্যতীত যা অর্জিত হয় তা-ই ‘ওয়ারাসাহ্’। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْ أُورِثْتُمُوْهَا ‘‘এই হলো জান্নাত তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করা হয়েছে’’- (সূরা আয্ যুখরুফ ৪৩ : ৭২)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ওয়াসিয়্যাত (অন্তিম উপদেশ বা নির্দেশ)
৩০৭৯-[১০] আর বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর শু’আবুল ঈমানে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন।[1]
] وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي
شُعَبِ الْإِيمَانِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ