পরিচ্ছেদঃ ১৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)
৩০৬৭-[২৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে উত্তরাধিকার জাহিলিয়্যাত যুগে বণ্টিত হয়েছে, তা জাহিলিয়্যাতের বণ্টন অনুসারেই থাকবে। আর ইসলামের যুগে যে উত্তরাধিকার পেয়েছে, তা ইসলামী শারী’আহ্ অনুসারেই বণ্টিত হবে। (ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا كَانَ مِنْ مِيرَاثٍ قُسِّمَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ عَلَى قِسْمَةِ الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا كَانَ مِنْ مِيرَاثٍ أَدْرَكَهُ الْإِسْلَامُ فَهُوَ عَلَى قِسْمَةِ الْإِسْلَامِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন- জাহিলী যুগে মীরাসের যে বণ্টন পদ্ধতি ছিল, এটা জাহিলিয়্যাতের বণ্টননীতির উপরই থাকবে। আর যে মীরাস ইসলামকে পেয়ে গেছে, তথা যে মীরাস ইসলামী যুগে বণ্টন হবে সেটা ইসলামী মূলনীতির উপরই বণ্টন হবে। জাহিলী যুগের বণ্টননীতি সুস্পষ্টভাবে ইসলামী যুগের বণ্টননীতির বিপরীত ছিল। তাই কোনো লোক যদি মীরাসের আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে জাহিলী যুগের নিয়মানুসারে সম্পদের বণ্টন করে তাহলে মীরাসের বিধান নাযিল হওয়ার পর পুনরায় ইসলামী নীতিতে বণ্টনের প্রয়োজন নেই এবং মীরাসের আয়াত নাযিলের পর জাহিলী নিয়মে সম্পদ বণ্টন চলবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)
৩০৬৮-[২৮] মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর ইবনু হাযম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি তাঁর পিতা (আবূ বকর ইবনু হাযম)-কে অনেকবার বলতে শুনেছেন, ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব বলতেন, কি আশ্চর্য! ফুফু (ভাইয়ের পুত্র বা মেয়ের) মাওরূস হয় অথচ সে (তাদের) ওয়ারিস হয় না। (মালিক)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَاهُ كَثِيرًا يَقُولُ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ يَقُولُ: عَجَبًا لِلْعَمَّةِ تُورَثُ وَلَا تَرث. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর বর্ণনা করেছেন, তিনি তার পিতা আবূ বাকর (রাঃ)-কে খুব বেশি বলতে শুনেছেন যে, ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) বলতেন, ফুফুদের জন্য আশ্চর্যের বিষয় হলো তার ভাইয়ের পুত্র থেকে ওয়ারিস হয় কিন্তু তারা (ফুফুরা) ভাতিজাদেরকে ওয়ারিস বানায় না, অর্থাৎ ফুফুরা হলো রক্তসম্পর্কীয় ওয়ারিস। তারা মৃত ব্যক্তির এমন ওয়ারিস যাদের কোনো অংশের বর্ণনা কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাতে রসূলে নেই ও তারা মৃত ব্যক্তির আসাবাও নয়। ফুফুরা ভাইয়ের পুত্র থেকে সম্পদ পাবে কিনা- এ বিষয়ে সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবি-তাবি‘ঈদের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষেত হয়। তবে অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় মদীনাবাসীর কিছু লোক ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব-এর এই উক্তি দিয়ে ফুফীদের জন্য দুই-তৃতীয়াংশের দ্বারা ফায়সালা করতেন। তবে অধিকাংশ মুহাক্কিক ‘উলামায়ে কিরাম ফুফীদের ওয়ারিস হওয়ার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)
৩০৬৯-[২৯] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’ফারায়িয’ শিক্ষা লাভ কর। ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) অতিরিক্ত বলেছেন, তালাক ও হজে/হজ্জের মাসায়িলও। অতঃপর উভয়ে বলেছেন, কেননা তা তোমাদের দীনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। (দারিমী)[1]
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَزَادَ ابْنُ مَسْعُودٍ: وَالطَّلَاقَ وَالْحَجَّ قَالَا: فَإِنَّهُ من دينكُمْ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব ‘ইলমুল ফারায়িয শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। কেননা এটা দীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইবনু মাস্‘ঊদ ‘ইলমুল ফারায়িযের সাথে সাথে তালাক ও হজ্জ/হজ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের কথাও বলেছেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস «تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ، فَإِنَّه نِصْفُ الْعِلْمِ» ‘‘তোমরা ‘ইলমুল ফারায়িয শিক্ষা গ্রহণ কর এবং এটা মানুষকেও শিক্ষা দাও। কেননা এটা সমস্ত ‘ইলমের অর্ধেক।’’ ‘ইলমুল ফারায়িয সকল জ্ঞানের অর্ধেক, এটা অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করার জন্যে বলা হয়েছে। মানুষের জীবন-মৃত্যু দু’টি অবস্থার মধ্যে মৃত্যুর সাথে এই জ্ঞানটির সংশ্লিষ্টতার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি বলেছেন। কেননা মানুষের দু’টি অবস্থা হয়ত জীবন নতুবা মরণ যাবতীয় ‘ইলম জীবিত অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। আর মীরাসটা মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট। আর এটা দু’টি অবস্থার একটি, তাই এটাকে জ্ঞানের অর্ধেক বলেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)