পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে
৩০৩১-[১৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বাশীর (রাঃ)-এর স্ত্রী [’আমরাহ্ বিনতু রওয়াহাহ্ (রাঃ)] বাশীরকে বলল, আমার ছেলেকে তোমার ক্রীতদাসটি দান কর এবং এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাক্ষী রাখিও। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুকের মেয়ে আমার নিকট আবদার করেছে, আমি যেন তার ছেলেকে আমার ক্রীতদাসটি দান করি এবং বলেছে, ’এ ব্যাপারে যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাক্ষীও রাখি।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার অন্য ভাই আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদের প্রত্যেককেই কি এর অনুরূপ দান করেছে? সে বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে এটা ন্যায়সঙ্গত নয়। আর আমি হক ব্যতীত অন্য কিছুর উপরে সাক্ষী হই না। (মুসলিম)[1]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَتِ امْرَأَةُ بَشِيرٍ: انْحَلِ ابْنِي غُلَامَكَ وَأَشْهِدْ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنَّ ابْنَةَ فُلَانٍ سَأَلَتْنِي أَنْ أَنْحَلَ ابْنَهَا غُلَامِي وَقَالَتْ: أَشْهِدْ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَلَهُ إِخْوَةٌ؟» قَالَ: نَعَمْ قَالَ: «أَفَكُلَّهُمْ أَعْطَيْتَهُمْ مِثْلَ مَا أَعْطَيْتَهُ؟» قَالَ: لَا قَالَ: «فَلَيْسَ يَصْلُحُ هَذَا وَإِنِّي لَا أَشْهَدُ إِلَّا على حق» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: শিক্ষণীয় বিষয়-
(১) সন্তানাদিকে দানের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা প্রতিটি ব্যক্তির ওপর আবশ্যক।
(২) কোনো প্রশ্নকারীর উত্তর দেয়ার পূর্বে ঐ প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনাময় সমস্যাগুলো সম্পর্কে যে কোনো পন্থায় জেনে নেয়া।
(৩) অন্যায়ের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া বৈধ না।
(৪) কোনো সাক্ষ্যর প্রয়োজন হলে সৎ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখা। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে
৩০৩২-[১৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোনো নতুন ফল-মূল আনা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা স্বীয় দুই চোখের উপরে ও দুই ঠোটে লাগাতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! যেভাবে তুমি আমাদেরকে এর প্রথমটি দেখিয়েছ সেভাবে এর শেষটিও দেখাও। অতঃপর তা তাঁর নিকট যে সমস্ত শিশু থাকত তাদেরকে দিয়ে দিতেন। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُتِيَ بِبَاكُورَةِ الْفَاكِهَةِ وَضَعَهَا عَلَى عَيْنَيْهِ وَعَلَى شَفَتَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهُمَّ كَمَا أَرَيْتَنَا أَوَّلَهُ فَأَرِنَا آخِرَهُ» ثُمَّ يُعْطِيهَا مَنْ يَكُونُ عِنْدَهُ مِنَ الصِّبْيَانِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي الدَّعْوَات الْكَبِير
ব্যাখ্যা: (بِبَاكُورَةِ الْفَاكِهَةِ) নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে- প্রতিটি বস্তুর প্রথম অবস্থা হচ্ছে সে বস্তুর (بَاكُورَة) (বাকূরাহ্)।
(وَضَعَهَا عَلٰى عَيْنَيْهِ) অর্থাৎ তাঁর ওপর আল্লাহর অনুগ্রহের মহত্ব বর্ণনার্থে তা চোখে মলতেন।
(وَعَلٰى شَفَتَيْهِ) অর্থাৎ- আল্লাহ তাঁর ওপর যা দান করেছেন তার কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে তাতে চুমু দিতেন।
(وَقَالَ : «اَللَّهُمَّ كَمَا أَرَيْتَنَا أَوَّلَه فَأَرِنَا اٰخِرَه») অর্থাৎ- দুনিয়াতে দেখিয়েছ তখন দু‘আ হবে দীর্ঘস্থায়ী অর্থে অথবা পরকালে তখন ইঙ্গিত হবে ঐ দিকে যে, পরকালের জীবন একমাত্র প্রকৃত জীবন, আর দুনিয়ার সাচ্ছন্দ্য নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং তা পরকালীন সাচ্ছন্দ্যের নমুনা।
(مِنَ الصِّبْيَانِ) কেননা ফলের প্রতি তাদের ঝোঁক সর্বাধিক এবং ফল ও শিশুর মাঝে পূর্ণাঙ্গ সামঞ্জস্য। ত্বীবী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ফল কেবল শিশুকে দিতেন, শিশু ও বৃক্ষের প্রথম ফলের মাঝে সামঞ্জস্য থাকার কারণে। আর তা এ দিকে হতে যে, শিশু অন্তরের ফল এবং মানুষের সূচনা।
জাযারী হিসন নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রথম ফল দেখতেন তখন বলতেন,
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مَنَابِتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا
অর্থাৎ- ‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ফলে বরকত দিন, আমাদেরকে আমাদের স্থানে বরকত দিন, আমাদেরকে আমাদের সা‘তে বরকত দিন, আমাদেরকে আমাদের মুদ্দে বরকত দিন।’’
অতঃপর তাঁর কাছে যখন ফল নিয়ে আসা হত তখন উপস্থিত সবচেয়ে ছোট বাচ্চাকে ডাকতেন, অতঃপর ঐ ফল তাকে দিতেন। একে মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ প্রত্যেকেই আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)