পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা
২৮৮৩-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় পদার্পণ করলেন, তখন মদীনাবাসীগণ এক, দুই এবং তিন বছরের মেয়াদে বিভিন্ন রকমের ফল ক্রয়-বিক্রয় করতো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করবে, অতঃপর তার উচিত অগ্রিম দেয়া নির্ধারিত পরিমাপে (ওযনে) এবং নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السَّلَمِ وَالرَّهْنِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَهُمْ يُسْلِفُونَ فِي الثِّمَارِ السَّنَةَ وَالسَّنَتَيْنِ وَالثَّلَاثِ فَقَالَ: «مَنْ سلف فِي شَيْءٍ فَلْيُسْلِفْ فِي كَيْلٍ مَعْلُومٍ وَوَزْنٍ مَعْلُوم إِلَى أجل مَعْلُوم»
ব্যাখ্যা: এখানে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (অর্থাৎ পণ্য লেনদেন হবে মূল্য বিলম্বে পরিশোধের শর্তে) করা বৈধ তবে শর্ত হলো, ওযন পরিমাণ ও পরিমাণ নির্ধারিত হতে হবে। যদি কাপড় কেনা-বেচা হয়, তা নির্ধারিত থাকতে হবে। আর যদি লেনদেন সংখ্যার ভিত্তিতে হয় যেমন, প্রাণী; তবে এর সংখ্যা নির্ধারিত হতে হবে। পক্ষান্তরে কোনো বিষয়ে অজ্ঞাত বা কোনো ধরনের অস্পষ্টতা থাকলে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হয়ে যাবে। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬০৪)
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা
২৮৮৪-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ইয়াহূদীর নিকট হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য বাকিতে ক্রয় করেছেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এবং তাঁর লৌহবর্ম ঐ ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السَّلَمِ وَالرَّهْنِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتِ: اشْتَرَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا من يَهُودِيٍّ إِلَى أَجَلٍ وَرَهَنَهُ دِرْعًا لَهُ مِنْ حَدِيد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে তাদের কথা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে যে, যারা বলে বাকীতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো কিছু বন্ধক রাখা বৈধ নয়। ইসমা‘ঈলী (রহঃ) ত্বরিক ইবনু নামীর (রহঃ)-এর সূত্রে আ‘মাশ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি ইব্রাহীম আন্ নাখ‘ঈ (রহঃ)-কে বলল, সা‘দ বিন যুবায়র (রহঃ) বলেছেন যে, বাকী বিক্রিতে বন্ধক রাখা এটা সুদের সমতুল্য। তিনি (ইবরাহীম নাখ‘ঈ) তার কথা এ হাদীসের ভিত্তিতে প্রত্যাখ্যান করলেন। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা
২৮৮৫-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের সময় তাঁর লৌহবর্ম ৩০ সা’ (প্রায় তিন মণ) যবের বিনিময়ে এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রাখা ছিল। (বুখারী)[1]
بَابُ السَّلَمِ وَالرَّهْنِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِيٍّ بِثَلَاثِينَ صَاعا من شعير. رَوَاهُ البُخَارِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - অগ্রিম বিক্রয় করা এবং বন্ধক রাখা
২৮৮৬-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহণের পশু বন্ধক রাখলে, তার উপর আরোহণ করা যাবে, অবশ্য এর ব্যয়ভারও বহন করতে হবে। তবে দুগ্ধবতী পশু বন্ধক রাখলে, এর দুগ্ধ দোহন (পান) করা যাবে, তখন এর ব্যয়ভারও বহন করতে হবে। আরোহণের এবং দুধ পান করার অধিকার যার রয়েছে তাকেই ব্যয়ভার বহন করতে হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ السَّلَمِ وَالرَّهْنِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الظَّهْرُ يُرْكَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا وَلَبَنُ الدَّرِّ يُشْرَبُ بِنَفَقَتِهِ إِذَا كَانَ مَرْهُونًا وَعَلَى الَّذِي يركب وَيشْرب النَّفَقَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এখানে তাদের পক্ষে দলীল রয়েছে, যারা বলেনঃ বন্ধককৃত প্রাণীর পিঠে সওয়ার হওয়া এবং তার দুধ দোহন করা বৈধ। এ ক্ষেত্রে মালিকের অনুমতির প্রয়োজন নেই। আর এটাই আহমাদ, ইসহক এবং একদল ‘উলামার মত। তারা বলেন যে, বন্ধকী প্রাণীর পিঠে সওয়ার ও তার দুধ দোহন করা বৈধ তবে শর্ত হলো, তার পেছনে যতটুকু খরচ হবে সে খরচ অনুপাতে তা থেকে উপকার গ্রহণ বৈধ। এ দু’টি ছাড়া অন্য কোনো উপকার গ্রহণ বৈধ নয়। ‘আল্লামা ইবনু ‘আব্দিল বার (রহঃ)-এর বক্তব্য হলো, হাদীসটি মানসূখ। দলীল- ইবনু ‘উমার কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, ‘‘কারো প্রাণীর দুধ দোহন করো না তার অনুমতি ব্যতীত’’।
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ মূল কথা হলো, হাদীসটি মুহকাম, মানসূখ নয়। সুতরাং এটি শার্‘ঈ বিধান হতে পরিত্যাজ্য নয়। এটা এ মর্মে সুস্পষ্ট দলীল, বন্ধকী প্রাণীর উপর সওয়ারী হওয়া ও দুধ পান করা তার প্রতি খরচ অনুযায়ী বৈধ। আল্লাহই ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫১২; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১২৫৪)