পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭২৩-[৯] ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মূল্য বাড়ার উদ্দেশে হারামে খাদ্যশস্য জমা করে রাখা হলো ইলহাদ (সত্য হতে সরে যাওয়া, ধর্মবিমুখতা করা, হারামে অপবিত্র বা নিষিদ্ধ কাজ করা)। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «احْتِكَارُ الطَّعَامِ فِي الْحَرَمِ إِلْحَادٌ فِيهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (اِحْتِكَارُ الطَّعَامِ) ‘‘দাম বৃদ্ধির উদ্দেশে খাদ্য-দ্রব্য আটকিয়ে রাখা।’’
‘আল্লামা মানাবী বলেনঃ সাধারণভাবে সকল খাদ্য উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য প্রধান প্রধান খাদ্য-দ্রব্য ক্রয় করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে বেশী মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশে আটকিয়ে রাখা। ইমাম শাফি‘ঈর মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য বাজারে যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় তখন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে আটকিয়ে রাখা নিষিদ্ধ।
(فِى الْحَرَمِ) হারাম এলাকায়। অর্থাৎ- মক্কার হারাম এলাকার জন্য এ নিষেধাজ্ঞা। আলক্বামী বলেনঃ ইলহাদের মূল অর্থ কোন দিকে ঝুকে পড়া। সকল প্রকার যুলুম ও ছোট-বড় সকল পাপ এ ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। অন্যায় সর্বস্থানে নিষিদ্ধ ও অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও মক্কার হারাম এলাকাতে তা হারাম বলার উদ্দেশ্য হলো তাতে পাপের কাজ করা অন্যান্য এলাকার চাইতে হারাম এলাকায় পাপের কাজ করার গুনাহ অধিক। যেমন- হারামের বাইরে কোন অপরাধ করার ইচ্ছা করলেই তার জন্য কোন জবাবদিহি করতে হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন না করে। কিন্তু হারাম এলাকায় অপরাধ করার ইচ্ছা করলেই তার জন্য জবাবদিহি করতে যদিও তা বাস্তবায়ন না করা হয়। কারো নিকট নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির সময় পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭২৪-[১০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কি উত্তম শহর তুমি! তুমি আমার কত পছন্দনীয়! যদি আমার জাতি আমাকে তোমার থেকে বিতাড়িত না করতো, তবে আমি কক্ষনো তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও বাস করতাম না। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। তবে সানাদ হিসেবে গরীব।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَكَّةَ: «مَا أَطْيَبَكِ مِنْ بَلَدٍ وَأَحَبَّكِ إِلَيَّ وَلَوْلَا أَنَّ قَوْمِي أَخْرَجُونِي مِنْكِ مَا سَكَنْتُ غَيْرَكِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب إِسْنَادًا
ব্যাখ্যা: (لَوْلَا أَنَّ قَوْمِىْ أَخْرَجُوْنِىْ مِنْكِ مَا سَكَنْتُ غَيْرَكِ) ‘‘আমার জাতি যদি আমাকে তোমা থেকে বের করে না দিত তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও বাস করতাম না।’’ অর্থাৎ- আমার জাতি যদি আমাকে বের করে দেয়ার কারণ না হয়ে দাঁড়াতো তাহলে আমি মক্কাতেই বাস করতাম।
এ হাদীসটি জমহূরের মতের পক্ষে দলীল যে, মদীনার চাইতে মক্কার মর্যাদা বেশী। তবে ইমাম মালিক-এর মতে মদীনার মর্যাদা বেশী।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭২৫-[১১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আদী ইবনু হামরা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হায্ওয়ারাহ্’য় দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেছি, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ (হে মক্কা!) আল্লাহর কসম! তুমি হলো আল্লাহর সর্বোত্তম জমিন ও আল্লাহর নিকট আল্লাহর জমিনের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় জমিন। যদি আমি তোমার কাছ থেকে বিতাড়িত না হতাম, তাহলে (তোমাকে ছেড়ে) কক্ষনো অন্যত্র বের হতাম না। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ حَمْرَاءَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقِفًا عَلَى الْحَزْوَرَةِ فَقَالَ: «وَاللَّهِ إِنَّكِ لَخَيْرُ أَرْضِ اللَّهِ وَأَحَبُّ اللَّهِ إِلَى اللَّهِ وَلَوْلَا أَنِّي أُخْرِجْتُ مِنْكِ مَا خرجْتُ» . رَوَاهُ الترمذيُّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ وَاقِفًا عَلَى الْحَزْوَرَةِ) ‘‘আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হায্ওয়ারাহ্-তে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেছি।’’ হায্ওয়ারাহ্ মক্কার একটি স্থানের নাম। হায্ওয়াহ্’র আসল অর্থ ছোট টিলা। এ স্থানে টিলা ছিল বলে ঐ স্থানের এ নামকরণ করা হয়েছে।
(وَاللّٰهِ إِنَّكِ لَخَيْرُ أَرْضِ اللّٰهِ) ‘‘আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি আল্লাহর জমিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।’’ এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মক্কার মর্যাদা মদীনার চেয়ে বেশী।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীসে এ দলীল পাওয়া যায় যে, মক্কা সাধারণভাবেই সকল জায়গার চাইতে মর্যাদাবান এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা অধিক প্রিয়। এটা তাদেরও দলীল যারা বলেন মদীনার চাইতে মক্কা বেশী মর্যাদাবান। ‘আল্লামা দিম্ইয়ারী বলেনঃ হাদীস হিসেবে যা বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, তারা আমাকে আমার প্রিয় স্থান থেকে বের করে দিয়েছে তাই তুমি আমাকে তোমার প্রিয় স্থানে আবাসন বানিয়ে দাও।’’
এ সম্পর্কে ইবনু ‘আবদুল বার বলেছেনঃ হাদীসটি মুনকার তথা বানোয়াট এতে কোন দ্বিমত নেই। ইবনু দাহ্ইয়াহ্ তাঁর ‘‘তানবীর’’ নামক গ্রন্থে বলেনঃ সকলের ঐকমত্য অনুযায়ী এ হাদীসটি বাতিল। তবে হ্যাঁ, বাসস্থান হিসেবে মদীনাহ্ উত্তম।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদীনার কালের গ্রাস ও কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে যে অবস্থান করবে ক্বিয়ামাত দিবসে আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। কিন্তু মক্কাতে বসবাস করা সম্পর্কে এ ধরনের কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন যে, যার পক্ষে মদীনাতে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব হয় সে যেন তাতে মৃত্যুবরণ করে। যে ব্যক্তি তাতে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব। তবে মদীনার মর্যাদা তার নিজস্ব কোন মর্যাদা নয়। বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদ্যমানতার জন্য তার মর্যাদা। পক্ষান্তরে মক্কার মর্যাদা তার নিজস্ব মর্যাদা। এমনিভাবে বায়তুল্লাহতে সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায়ের সাওয়াব অন্য জায়গায় সালাত আদায়ের তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশী মর্যাদাসম্পন্ন। আর মদীনার মসজিদে নাবাবীতে সালাতের সাওয়াব মাত্র এক হাজার গুণ বেশী।