পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৫৯-[৫] ’আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে কতিপয় লোকের মধ্যে জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ’’আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ কেবলমাত্র হজের ইহরাম বেঁধেছিলাম।’’ ’আত্বা বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজের চার তারিখ পার হবার পর সকালে মক্কায় আসলেন এবং আমাদেরকে ইহরাম ছেড়ে হালাল হতে নির্দেশ দিলেন। ’আত্বা জাবিরের মাধ্যমে বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এ কথাও) বলেছেন, ’’তোমরা হালাল হও এবং স্বীয় স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করো’’। ’আত্বা আরো বলেন, এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বাধ্য করলেন না; বরং স্ত্রীদেরকে তাদের জন্য হালাল করে দিলেন। (জাবির বলেন,) তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম, আমাদের ও ’আরাফাতে উপস্থিত হবার মধ্যে যখন মাত্র পাঁচদিন বাকী, এমন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে স্ত্রীর সাথে মিলতে অনুমতি দিলেন, তবে কি আমরা ’আরাফাতে উপস্থিত হবো আর আমাদের লিঙ্গ থেকে শুক্র ঝরতে থাকবে? ’আত্বা বলেন, তখন জাবির (রাঃ) নিজের হাত নেড়ে ইশারা করলেন, আমি যেন তাঁর হাত নাড়ার ইঙ্গিত এখনো দেখছি।
জাবির (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন (ভাষণ দানের উদ্দেশে) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ’’তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের অপেক্ষা আল্লাহকে বেশি ভয় করি, তোমাদের অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী এবং তোমাদের অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান। আমি যদি কুরবানীর পশু সাথে না আনতাম, আমিও তোমাদের ন্যায় ইহরাম ভেঙ্গে হালাল হয়ে যেতাম। আর আমি যদি আমার ব্যাপারে পূর্বে বুঝতে পারতাম, যা আমি পরে বুঝেছি, তাহলে আমি কক্ষনো কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসতাম না। সুতরাং তোমরা (ইহরাম ভেঙ্গে) হালাল হয়ে যাও।’’ তাই আমরা হালাল হয়ে গেলাম এবং তাঁর কথা শুনলাম ও তাঁর কথামোতো কাজ করলাম।
’আত্বা (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, এ সময় ’আলী (রাঃ) তাঁর কর্মস্থল হতে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছো। ’আলী(রাঃ) বললেন, ’’আমি ইহরাম বেঁধেছি, যার জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বেঁধেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তবে তুমি কুরবানী কর এবং ইহরাম অবস্থায় থাক। জাবির (রাঃ) বলেন, ’আলী (রাঃ) তার সাথে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছিলেন। (জাবির (রাঃ) বলেন) এ সময় সুরাক্বাহ্ ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! (হজের সাথে ’উমরা করা কি) আমাদের শুধু এ বছরের জন্য, নাকি চিরকালের জন্যে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, চিরকালের জন্য। (মুসলিম)[1]
[বিঃ দ্রঃ এ অধ্যায়ে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ নেই (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّانِىْ)]
عَنْ عَطَاءٍ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ فِي نَاسٍ مَعِي قَالَ: أَهْلَلْنَا أَصْحَابَ مُحَمَّد بِالْحَجِّ خَالِصًا وَحْدَهُ قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ جَابِرٌ: فَقَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُبْحَ رَابِعَةٍ مَضَتْ مِنْ ذِي الْحِجَّةِ فَأَمَرَنَا أَنْ نَحِلَّ قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ: «حِلُّوا وَأَصِيبُوا النِّسَاءَ» . قَالَ عَطَاءٌ: وَلَمْ يَعْزِمْ عَلَيْهِمْ وَلَكِنْ أَحَلَّهُنَّ لَهُمْ فَقُلْنَا لَمَّا لَمْ يَكُنْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ عَرَفَةَ إِلَّا خَمْسٌ أَمَرَنَا أَنْ نُفْضِيَ إِلَى نِسَائِنَا فَنَأْتِيَ عرَفَةَ تَقْطُرُ مَذَاكِيرُنَا الْمَنِيَّ. قَالَ: «قَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّي أَتْقَاكُمْ لِلَّهِ وَأَصْدَقُكُمْ وَأَبَرُّكُمْ وَلَوْلَا هَدْيِي لَحَلَلْتُ كَمَا تَحِلُّونَ وَلَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْيَ فَحِلُّوا» فَحَلَلْنَا وَسَمِعْنَا وَأَطَعْنَا قَالَ عَطَاءٌ: قَالَ جَابِرٌ: فَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنْ سِعَايَتِهِ فَقَالَ: بِمَ أَهْلَلْتَ؟ قَالَ بِمَا أَهَلَّ بِهِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَأَهْدِ وَامْكُثْ حَرَامًا» قَالَ: وَأَهْدَى لَهُ عَلِيٌّ هَدْيًا فَقَالَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ألعامنا هَذَا أم لأبد؟ قَالَ: «لأبد» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (بِالْحَجِّ خَالِصًا وَحْدَه) ‘‘শুধুমাত্র হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলাম।’’ অর্থাৎ- সবাই শুধুমাত্র হজ্জের ইহরামই বেঁধেছিলাম। এর সাথে ‘উমরা ছিল না। জাবির (রাঃ)-এর এ বক্তব্য তার বুঝ অনুসারে দিয়েছেন। অর্থাৎ- তিনি যা বুঝেছেন তাই বলেছেন। কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে রয়েছে- ‘‘আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম, আমাদের মধ্যে কেউ শুধুমাত্র ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিল। আবার কেউ হজ্জ/হজ ও ‘উমরার ইহরাম একত্রে বেঁধে ছিল। আবার কেউ শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিল। অথবা জাবির (রাঃ) ‘আসহাব’ শব্দ দ্বারা অধিকাংশ সাহাবী বুঝিয়েছেন।
(فَأَمَرَنَا أَنْ نَحِلَّ) ‘‘তিনি আমাদেরকে হালাল হওয়ার নির্দেশ দিলেন।’’ অর্থাৎ- হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করে ‘উমরার কাজ সম্পাদন করে হালাল হতে বললেন।
(وَلَكِنْ أَحَلَّهُنَّ لَهُمْ) ‘‘তবে তিনি তাদেরকে তাদের জন্য হালাল করে দিলেন।’’ অর্থাৎ- হজ্জকে ‘উমরাতে রূপান্তর করা যে রকম বাধ্যতামূলক করেছিলেন কিন্তু স্ত্রীদের সাথে মিলিত হওয়া তেমন বাধ্যতামূলক করেননি। বরং ‘উমরা সম্পাদনের পর তাদের স্ত্রীগণের সাথে মিলিত হওয়া তাদের জন্য হালাল ছিল।
(تَقْطُرُ مَذَاكِيرُنَا الْمَنِىَّ) ‘‘আমাদের পুরুষাঙ্গ থেকে মনি নির্গত হতে থাকবে।’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্ত্রী সহবাসের অব্যাহতি পরেই আমরা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধব। আর এ বিষয়টি জাহিলী যুগে দোষণীয় ছিল এবং তা হজ্জের ত্রুটি হিসেবে গণ্য করা হত।
(وَلَوْلَا هَدْيِيْ لَحَلَلْتُ كَمَا تَحِلُّونَ) ‘‘যদি আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকত তবে আমিও হালাল হয়ে যেতাম যেভাবে তোমরা হালাল হলে।’’ অর্থাৎ- আমি তোমাদেরকে যে কাজের নির্দেশ দিয়েছি আমিও তাই করতাম যদি আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকত। হাদীসটি প্রমাণ করে কুরবানীর পশু সাথে থাকাটাই হালাল হওয়ার জন্য বাধা। অতএব কুরবানীর পশু সাথে থাকলে সে হালাল হতে পারবে না তার ইহরাম যে ধরনেরই হোক না কেন।
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ
২৫৬০-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের চার বা পাঁচ তারিখে আমার কাছে রাগান্বিত অবস্থায় আসলেন। এ সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লার রসূল! কে আপনাকে রাগান্বিত করলো? আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান না, আমি (কিছু) লোকদেরকে একটা বিষয়ে আদেশ করেছি? আর তারা এ ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করছে। যদি আমি আমার ব্যাপারে প্রথমে বুঝতে পারতাম যা পরে বুঝেছি, তাহলে কক্ষনো আমি কুরবানীর পশু সাথে করে নিয়ে আসতাম না; বরং পরে তা কিনে নিতাম। অতঃপর আমিও তাদের ন্যায় হালাল হয়ে যেতাম। (মুসলিম)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَرْبَعٍ مَضَيْنَ مِنْ ذِي الْحِجَّةِ أَوْ خَمْسٍ فَدَخَلَ عَلَيَّ وَهُوَ غَضْبَانُ فَقُلْتُ: مَنْ أَغْضَبَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ. قَالَ: «أَو مَا شَعَرْتِ أَنِّي أَمَرْتُ النَّاسَ بِأَمْرٍ فَإِذَا هُمْ يَتَرَدَّدُونَ وَلَوْ أَنِّي اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا سُقْتُ الْهَدْيَ مَعِي حَتَّى أَشْتَرِيَهُ ثمَّ أُحلُّ كَمَا حلُّوا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (لأربع أو خمس) ‘‘যিলহজ্জ মাসের চারদিন অথবা পাঁচদিন অতিবাহিত হওয়ার পর।’’ এ সন্দেহ হয়তো ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নিজেরই। এজন্য যে তারিখ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। অথবা ‘আয়িশাহ্ থেকে বর্ণনাকারী সন্দেহে পতিত হয়েছেন তিনি কি বলেছিলেন? চার তারিখ না পাঁচ তারিখ?
(فَدَخَلَ عَلَىَّ وَهُوَ غَضْبَانُ) ‘‘তিনি রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন।’’ এ রাগের কারণ ছিল হজ্জের ইহরামকে ‘উমরাতে রূপান্তর করতে সাহাবীগণের বিলম্বের কারণে এবং তার নির্দেশ পালনে সংশয়ের মধ্যে নিপতিত হওয়ার জন্যে।
(فَإِذَا هُمْ يَتَرَدَّدُونَ) ‘‘আর তারা সংশয়ে নিপতিত হয়।’’ অর্থাৎ- আদেশ পালন করে আনুগত্য করতে তারা সংশয় করে অথবা তারা মনে করলো এমন করলে তা তাদের হজ্জের জন্য ক্ষতিকর হবে।