পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লায়লাতুল কদর
২০৯১-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি ’কদর রাত’ পাই, এতে আমি কী দু’আ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলবে, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা ’আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া’, ফা’ফু ’আন্নী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।) (আহমদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী; আর ইমাম তিরমিযী এটিকে সহীহ বলেছেন)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَيُّ لَيْلَةٍ الْقَدْرِ مَا أَقُولُ فِيهَا؟ قَالَ: قُولِي: اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعَفُ عَنِّي . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه وَالتِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে দলীল রয়েছে যে, (لَيْلَةُ الْقَدْرِ) ‘‘লায়লাতুল কদর’’ অর্থাৎ- মর্যাদাবান রাতে উপরোল্লিখিত শব্দের দ্বারা দু‘আ করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লায়লাতুল কদর
২০৯২-[১০] আবূ বকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা লায়লাতুল কদরকে (রমাযান (রমজান) মাসের) অবশিষ্ট নবম রাতে, অর্থাৎ- ২৯তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অর্থাৎ- ২৭তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে, অর্থাৎ- ২৫তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে, অর্থাৎ- ২৩তম রাতে; অথবা শেষ রাতে খোঁজ করো। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْتَمِسُوهَا يَعْنَى لَيْلَة الْقدر فِي تسع بَقينَ أَو فِي سبع بَقينَ أَو فِي خمس بَقينَ أَوْ ثَلَاثٍ أَوْ آخِرِ لَيْلَةٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: কতক ‘উলামাগণ বলে থাকেন যে, মাস যখন ২৯ হবে তখন (লায়লাতুল কদরের) প্রথম রাত হবে ২১ তারিখ, দ্বিতীয়টি ২৩ রাত, তৃতীয়টি ২৫ রাত, চতুর্থটি ২৭তম রাত এবং বেজোড় রাতের হাদীসগুলোর মধ্যে এ সংক্রান্ত হাদীসের আধিক্য থাকায় এটি (২৭তম রাত) উত্তম। আমরা বলব, উল্লেখিত সংখ্যার কোনটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার দলীল নেই। আর উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বেজোড় সংখ্যার সকল রাত (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রাত) উদ্দেশ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লায়লাতুল কদর
২০৯৩-[১১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তা প্রত্যেক রমাযানে আসে। (আবূ দাঊদ। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, সুফ্ইয়ান ও শু’বাহ্ আবূ ইসহাক হতে, তিনি মাওকূফ হিসেবে এ হাদীসটি ইবনু ’উমার হতে বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ فَقَالَ: «هِيَ فِي كُلِّ رَمَضَانَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَقَالَ: رَوَاهُ سُفْيَان وَشعْبَة عَن أبي إِسْحَق مَوْقُوفا على ابْن عمر
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি দু’টি বিষয়ে সম্ভাবনা রাখে।
১. নিশ্চয়ই তা বছরগুলোর মধ্য হতে প্রতি রমাযানের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। সুতরাং তা (লায়লাতুল কদর) রমাযানের সাথে খাস। অতএব অন্য সকল মাসে তা গণ্য হবে না।
২. রমাযানের প্রত্যেক রাতের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। সুতরাং রমাযানের শেষের কিছু অংশের সাথে তা খাস হবে না। অর্থাৎ- পুরো রমাযানই লায়লাতুল কদর। ‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় যা আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, লায়লাতুল কদরটা রমাযানের সকল রাতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে হাদীসটি পূর্ণ বক্তব্য নয়। যেমন ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মাওকূফ ও মারফূ' হওয়ার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। যদি তা মাওকূফ হয় তবে তা নস বা পূর্ণ হুকুম নয়। আর আমার [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ)] নিকট প্রাধান্যযোগ্য মত হল, ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-এর উল্লেখিত দু’টি বিষয়ের প্রথমটি। কারণ একাধিক বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট হাদীস থেকে জানা যায় যে, লায়লাতুল কদর রমাযানের শেষ দশকের সাথে নির্দিষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লায়লাতুল কদর
২০৯৪-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! গ্রামে-গঞ্জে আমার বাড়ী। ওখানেই আমি বসবাস করি। আলহামদুলিল্লাহ্ ওখানেই সালাতও আদায় করি। অতএব রমাযানের একটি নির্দিষ্ট রাতের কথা বলে দিন, (যে রাতে আমি সে রাত খুঁজতে) আপনার এ মসজিদে আসতে পারি। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আচ্ছা তুমি তবে (রমাযান (রমজান) মাসের) ২৩ তারিখ দিবাগত রাতে এসো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর কেউ তাঁর ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, আপনার পিতা তখন কি করতেন? ছেলে উত্তরে বলল, তিনি ’আসরের সালাত আদায়ের সময় মসজিদে প্রবেশ করতেন ফজরের সালাত আদায়ের আগে (প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া) কোন কাজে বের হতেন না। ফজরের সালাত শেষে মসজিদের দরজায় নিজের বাহনটি প্রস্তুত পেতেন। এরপর বাহনটিতে বসতেন এবং নিজের গ্রামে চলে যেতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُنَيْسٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي بَادِيَةً أَكُونُ فِيهَا وَأَنا أُصَلِّي فِيهَا بِحَمْد الله فَمُرْنِي بِلَيْلَةٍ أَنْزِلُهَا إِلَى هَذَا الْمَسْجِدِ فَقَالَ: «انْزِلْ لَيْلَة ثَلَاث وَعشْرين» . قيل لِابْنِهِ: كَيْفَ كَانَ أَبُوكَ يَصْنَعُ؟ قَالَ: كَانَ يَدْخُلُ الْمَسْجِدَ إِذَا صَلَّى الْعَصْرَ فَلَا يَخْرُجُ مِنْهُ لِحَاجَةٍ حَتَّى يُصَلِّيَ الصُّبْحَ فَإِذَا صَلَّى الصُّبْحَ وَجَدَ دَابَّتَهُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ فَجَلَسَ عَلَيْهَا وَلحق بباديته. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: লায়লাতুল কদর রমাযানের ২৩তম রাত হওয়ার দিকে সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের একটি দল মত দিয়েছেন। হাফেয আসকালানী (রহঃ) বলেন, মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বিশুদ্ধ সনাদে বর্ণিত রয়েছে যে, লায়লাতুল কদর রমাযানের ২৩তম রাত। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, যে লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন ২৩তম রাতে তা অনুসন্ধান করে। তিনি বলেন, আইয়ূব (রাঃ) ২৩তম দিনে গোসল করতেন এবং সুগন্ধি লাগাতেন।