পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়ামের ইফতারের বিবরণ
২০৭৯-[৪] উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা (রাঃ) এলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন। আর উম্মু হানী (রাঃ) ছিলেন তাঁর ডান পাশে। এ সময় একটি দাসী হাতে একটি পাত্র নিয়ে এলো। এতে কিছু পানীয় ছিল। দাসীটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পান পাত্রটি রাখল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখান থেকে কিছু পান করে তা উম্মু হানীকে দিলেন। উম্মু হানী (রাঃ)-ও ঐ পাত্র হতে কিছু পান করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ইফতার করে ফেলেছি। অথচ আমি সায়িম ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি রমাযান (রমজান) মাসের কোন সওম বা মানৎ কাযা করছিলে? উম্মু হানী (রাঃ) বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, নফল সওম হলে কোন অসুবিধা নেই- (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারিমী)।
ইমাম আহমদ ও আত্ তিরমিযীর এক বর্ণনায় এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আর এতে আরো আছে, তখন উম্মু হানী (রাঃ) বললেন, আপনার জানা থাকতে পারে যে, আমি সায়িম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ নফল সায়িম নিজের নাফসের মালিক (সে রাখতেও পারে ভাঙতেও পারে)।[1]
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ الْفَتْحِ فَتْحِ مَكَّةَ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَجَلَسَتْ عَلَى يَسَارِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمُّ هَانِئٍ عَنْ يَمِينِهِ فَجَاءَتِ الْوَلِيدَةُ بِإِنَاءٍ فِيهِ شَرَابٌ فَنَاوَلَتْهُ فَشَرِبَ مِنْهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ أُمَّ هَانِئٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقَدْ أَفْطَرْتُ وَكُنْتُ صَائِمَةً فَقَالَ لَهَا: «أَكُنْتِ تَقْضِينَ شَيْئًا؟» قَالَتْ: لَا. قَالَ: «فَلَا يَضُرُّكِ إِنْ كَانَ تَطَوُّعًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لِأَحْمَدَ وَالتِّرْمِذِيِّ نَحْوُهُ وَفِيهِ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَا إِنِّي كُنْتُ صَائِمَةً فَقَالَ: «الصَّائِم أَمِيرُ نَفْسِهِ إِنْ شَاءَ صَامَ وَإِنْ شَاءَ أفطر»
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এখানে এই বর্ণনায় রয়েছে যে, নফল সিয়াম ভঙ্গ করলে তা কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে কাযার কথা উল্লেখ করেননি। যদি তা ওয়াজিব হত অবশ্যই বর্ণনা করতেন। অবশ্য পূর্বে আহমাদ, নাসায়ী, দারাকুত্বনী, দারিমী, ত্বহাবী ও বায়হাক্বীর বর্ণনায় অতিবাহিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, নফল সিয়ামের কাযা ওয়াজিব নয়, তা ঐচ্ছিক। ইমাম তিরমিযী এ পর্বের হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, সহাবায়ে কিরামদের কতক বিদ্বানদের মাঝে ‘আমল রয়েছে যে, নফল সিয়াম ভঙ্গ করলে তার জন্য কাযা ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব।
আর এটাই সুফ্ইয়ান আস্ সাওরী, আহমাদ, ইসহাক, শাফি‘ঈ (রহঃ) এদের কথা। আমি বলব, (মির্‘আত প্রণেতা) এটা মুজাহিদ, ত্বাউস এবং ইবনু ‘আব্বাস-এর কথা। আর সালমান, আবূ দারদা (রাঃ) ও অন্যান্যদের থেকে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়ামের ইফতারের বিবরণ
২০৮০-[৫] যুহরী ’উরওয়াহ্ হতে এবং ’উরওয়াহ্ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি ও হাফসাহ্ দু’জনেই সওমে ছিলাম। আমাদের সামনে খাবার আনা হলো। খাবার দেখে আমাদের লোভ হলো। আমরা সওমে খেয়ে নিলাম। অতঃপর হাফসা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সওমে ছিলাম। আমাদের সামনে খাবার আনা হলে আমাদের লোভ হলো। তাই খেয়ে ফেললাম (আমাদের ব্যাপারে এখন হুকুম কী?) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অন্য একদিন তা কাযা করে নিও- (তিরমিযী)।
আর (হাদীসের) হাফেযদের একদল যুহরী হতে, যুহরী ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (তাতে ’উরওয়াহ্ হতে উল্লেখ করা হয়নি।) এটাই বেশী সহীহ। হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ যুমায়ল হতে উদ্ধৃত করেছেন। যুমায়ল ছিলেন ’উরওয়ার আযাদ করা গোলাম। যুমায়ল ’উরওয়াহ্ হতে, আর উরওয়াহ্ ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[1]
وَعَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كُنْتُ أَنَا وَحَفْصَةُ صَائِمَتَيْنِ فَعَرَضَ لَنَا طَعَامٌ اشْتَهَيْنَاهُ فَأَكَلَنَا مِنْهُ فَقَالَتْ حَفْصَةُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا صَائِمَتَيْنِ فَعُرِضَ لَنَا طَعَامٌ اشْتَهَيْنَاهُ فَأَكَلَنَا مِنْهُ. قَالَ: «اقْضِيَا يَوْمًا آخَرَ مَكَانَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَ جَمَاعَةً مِنَ الْحُفَّاظِ رَوَوْا عَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ عَائِشَةَ مُرْسَلًا وَلَمْ يذكرُوا فِيهِ عَن عُرْوَة وَهَذَا أصح
وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ عَنْ زُمَيْلٍ مَوْلَى عُرْوَةَ عَن عُرْوَة عَن عَائِشَة
ব্যাখ্যা: অবশ্য এ হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করা যায় যে, নফল সিয়াম ভঙ্গ করলে উক্ত সিয়ামের কাযা আবশ্যক। কিন্তু হাদীস য‘ঈফ। আর যদি বিশুদ্ধ হয় তাহলে এ হাদীস ও উম্মু হানী (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের মাঝে সমন্বয় করে বলা যায় যে, এ হাদীসে কাযার প্রতি নির্দেশটা মুস্তাহাবের জন্য (ওয়াজিবের জন্য নয়)।
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়ামের ইফতারের বিবরণ
২০৮১-[৬] উম্মু ’উমারাহ্ বিনতু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু ’উমারার ওখানে গেলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাবার আনলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মু ’উমারাহ্-কে বললেন, তুমিও খাও। উম্মু উমারাহ্ বললেন, আমি তো সায়িম। তিনি বললেন, যখন কোন সায়িমের সামনে খাওয়া হয় (তখন তারও খেতে লোভ হয়, সওম রাখা তার জন্য কষ্ট কর হয়), তখন যতক্ষণ খাবার গ্রহণকারী খাবার খেতে থাকে ততক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তার ওপর রহমত বর্ষণ করতে থাকেন। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
وَعَن أم عمَارَة بنت كَعْب إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا فَدَعَتْ لَهُ بِطَعَامٍ فَقَالَ لَهَا: «كُلِي» . فَقَالَتْ: إِنِّي صَائِمَةٌ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الصَّائِمَ إِذَا أُكِلَ عِنْدَهُ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يَفْرَغُوا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ الصَّائِمَ إِذَا أُكِلَ عِنْدَه) অর্থাৎ- সায়িম ব্যক্তির উপস্থিতিতে দিনের বেলায় খাদ্যগ্রহণ। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে, সায়িম ব্যক্তির নিকট কোন লোক যখন খাদ্য খাবে, তখন (صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ) অর্থাৎ- মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তাদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কারণ তার নিকট খাদ্যের উপস্থিতি খাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি করে দেয়। সুতরাং যখন সে তার খাওয়ার চাহিদা দমন করে এবং নিজেকে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য বাধা দিয়ে রাখে তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।