পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৩-[১৭] ইবনু ফিরাসী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার পিতা) ফিরাসী (রাঃ)বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি মানুষের কাছে হাত পাততে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। (বরং সর্বাবস্থায়) আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। তবে (কোন কঠিন প্রয়োজনে) কিছু চাওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়লে নেক মানুষের নিকট চাইবে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
عَنِ ابْنِ الْفِرَاسِيِّ أَنَّ الْفِرَاسِيَّ قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْأَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وَإِن كنت لابد فسل الصَّالِحين» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে বলেন, কারো নিকট যদি তোমকে একান্ত চাইতেই হয়, তাহলে নেক বা সৎ মানুষের নিকট চাবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে তুলনামূলক উত্তম এবং তোমার প্রয়োজন মেটাতে মনের দিক থেকে সক্ষম। কারণ এই যে, সৎ মানুষ সাওয়ালকারীকে বঞ্চিত করে না এবং সে যা দেয় তা মনের সন্তুষ্টিচিত্তে হালাল বস্ত্ত থেকে দেয়। উপরন্তু সে তোমার জন্য দু‘আ করবে যা কবূল করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৪-[১৮] ইবনুস্ সা’ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করলেন। আমি যাকাত আদায়ের কাজ শেষ করলাম। যাকাতের মাল ’উমারের কাছে পৌঁছিয়ে দিলে তিনি আমাকে যাকাত আদায়ের বিনিময় গ্রহণ করতে বললেন। (এ কথা শুনে) আমি বললাম, এ কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমি করেছি। তাই এ কাজের বিনিময় আল্লাহর যিম্মায়। ’উমার (রাঃ) বললেন, তোমাকে যা দেয়া হচ্ছে গ্রহণ করো। কারণ আমিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় যাকাত আদায় করেছি। তিনি এর বিনিময় দিতে চাইলে আমিও এ কথাই বলেছিলাম, যা আজ তুমি বলছ। (তখন) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, যখন কোন জিনিস চাওয়া ছাড়া তোমাকে দেয়া হবে, তা গ্রহণ করে খাবে। (আর খাবার পর যা তোমার নিকট বেঁচে থাকবে) তা আল্লাহর পথে খরচ করবে। (মুসলিম, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن ابْن السَّاعِدِيّ الْمَالِكِي أَنه قَالَ: استعملني عمر بن الْخطاب رَضِي الله عَنْهُم عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْهَا وَأَدَّيْتُهَا إِلَيْهِ أَمَرَ لِي بِعُمَالَةٍ فَقُلْتُ إِنَّمَا عَمِلْتُ لِلَّهِ وَأجْرِي على الله فَقَالَ خُذْ مَا أُعْطِيتَ فَإِنِّي قَدْ عَمِلْتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَمَّلَنِي فَقُلْتُ مِثْلَ قَوْلِكَ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أُعْطِيتَ شَيْئا من غير أَن تسْأَل فَكل وَتصدق» . رَوَاهُ مُسلم وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: হাদীসের শেষাংশে বলা হয়েছেঃ সাওয়াল করা (ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া) ব্যতীত তোমাকে কোন জিনিস দেয়া হলে তা খাবে এবং দান করবে। অর্থাৎ তা গ্রহণ করবে প্রত্যাখ্যান করবে না এবং নিজে খাওয়া ও সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার ব্যাপারে যা ইচ্ছা তাই করবে। আরো বলা হয়েছে যে, তুমি তোমার দরিদ্রাবস্থায় খাবে এবং ধনাঢ্যাবস্থায় সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে দিবে। মুনযিরী বলেছেন, দীন এবং দুনিয়াবীর ব্যাপারে যে একজন মুসলিমের কোন প্রকার দায়িত্ব পালন করে তার মজুরী বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয আছে। অনুরূপ ব্যাখ্যা আল্লামা শাওকানীও করেছেন। ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ বলেনঃ কোন ব্যক্তি যদি বিনা শর্তে এবং বিনিময় না নেয়ার উদ্দেশে কোন কাজ করে, অতঃপর তাকে ঐ কাজের প্রেক্ষক্ষতে কোন জিনিস দেয়া হয় তা ঐ ব্যক্তিকে অত্যন্ত আনন্দ প্রদান করে, অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি প্রাপ্ত জিনিসে আনন্দবোধ করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৫-[১৯] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ’আরাফার দিন এক ব্যক্তিকে লোকজনের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে শুনলেন। তিনি তাকে বললেন, আজকের এই দিনে এই জায়গায় তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে হাত পাতছো? তারপর তিনি তাকে চাবুক দিয়ে মারলেন। (রযীন)
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ يَوْمَ عَرَفَةَ رَجُلًا يَسْأَلُ النَّاسَ فَقَالَ: أَفِي هَذَا الْيَوْمِ: وَفِي هَذَا الْمَكَانِ تسْأَل من يغر الله؟ فخفقه بِالدرةِ. رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত আজকের এই দিনে এবং এই সময়ের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, দু‘আ কবূলের সময় এবং এই স্থানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে তুচ্ছ জিনিস যেমন দুপুরের অথবা রাতের একটু খাবারের জন্য সওয়াল করছ (ভিক্ষাবৃত্তি করা বা চাওয়া)? আল্লামা ত্বীবী বলেছেন, আজ এই দিনে এবং এই স্থানে অর্থাৎ ‘আরাফার দিনে ও স্থানে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নিকট কোন কিছু সওয়াল করা মোটেই ঠিক নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৬-[২০] ’উমার ফারূক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি লোকদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, হে লোকেরা! মনে রাখবে লোভ লালসা এক রকমের মুখাপেক্ষিতা। আর মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা, ধনী হবার লক্ষণ। মানুষ যখন অন্যের কাছে কোন কিছু আশা করা ত্যাগ করে, তখন সে স্বনির্ভর হয়। (রযীন)
وَعَن عمر رَضِي الله عَنهُ قَالَ: تَعْلَمُنَّ أَيُّهَا النَّاسُ أَنَّ الطَّمَعَ فَقْرٌ وَأَنَّ الْإِيَاسَ غِنًى وَأَنَّ الْمَرْءَ إِذَا يَئِسَ عَن شَيْء اسْتغنى عَنهُ. رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: ইমাম আহমাদ, বায়হাক্বী এবং হাকিম হাদীসটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, একজন ব্যক্তি আল্লাহর নাবীর নিকট এসে বলছে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনি ওয়াসিয়্যাত করুন। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে বলেন, অন্যের হাতে যা আছে তা থেকে তুমি নিরাশা থাকবে অর্থাৎ অন্যের সম্পদের লোভ করবে না। কারণ লোভ বা লালসা হচ্ছে দরিদ্রের প্রতীক।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৭-[২১] সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেছেন, যে আমার সাথে এ ওয়া’দা করবে যে, সে কারো কাছে ভিক্ষার হাত বাড়াবে না। আমি তার জন্য জান্নাতের ওয়া’দা করতে পারি। সাওবান বলেন, আমি। ফলে তিনি কারো কাছে কোন কিছু চাইতেন না (বস্তুতঃ সাওবান যত অভাবেই থাকুক, কারো কাছে আর কোনদিন হাত পাতেননি।)। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَكْفُلُ لِي أَنْ لَا يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا فَأَتَكَفَّلَ لَهُ بِالْجَنَّةِ؟» فَقَالَ ثَوْبَانُ: أَنَا فَكَانَ لَا يَسْأَلُ أَحَدًا شَيْئا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের যিম্মাদার হবেন, সাওবান এ কথা শুনে তিনি কোন দিন কারো নিকট কিছুই চাননি। এমনকি তিনি যখন কোন প্রাণীর উপর আরোহিত অবস্থায় থাকতেন আর তার হাত থেকে চাবুক নীচে পড়ে যেত, তখন কোন ব্যক্তিকে চাবুকটি উঠিয়ে দিতেও বলতেন না। যেমন পরের (১৮৫৮ নং) হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের সহযোগিতামূলক কিছু চাইতেও নিষেধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যার জন্য কিছু চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
১৮৫৮-[২২] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ডেকে এনে আমার ওপর শর্তারোপ করে বললেন, তুমি কারো কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। আমি বললাম, আচ্ছা। তারপর তিনি বললেন, এমনকি তোমার হাতের লাঠিটাও যদি পড়ে যায় কাউকে উঠিয়ে দিতে বলবে না। বরং তুমি নিজে নেমে তা উঠিয়ে নেবে। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: دَعَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَشْتَرِطُ عَلَيَّ: «أَنْ لَا تَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا» قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: «وَلَا سَوْطَكَ إِنْ سَقَطَ مِنْكَ حَتَّى تنزل إِلَيْهِ فتأخذه» . رَوَاهُ أَحْمَدُ