পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০২-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ’ইসতিসকার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (বৃষ্টির জন্য সালাত) আদায়ের জন্য ঈদগাহের দিকে গমন করলেন। তিনি ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হবার সময় তাঁর গায়ের চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। চাদরের ডানদিক তিনি বাম কাঁধের উপর এবং বামদিক ডান কাঁধের উপর রাখলেন। এরপর আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْمُصَلَّى فَاسْتَسْقَى وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ حِينَ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَجَعَلَ عِطَافَهُ الْأَيْمَنَ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْسَرِ وَجَعَلَ عِطَافَهُ الْأَيْسَرَ عَلَى عَاتِقِهِ الْأَيْمَنِ ثُمَّ دَعَا الله. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ دَعَا اللهَ) তিনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করতেন অনাবৃষ্টি দূরীভূত হোক এবং বৃষ্টি বর্ষণ হোক। আর হাদীসে চাদর ঘুরানোর পদ্ধতি বর্ণনা হয়েছে যে চাদরের ডান প্রান্তকে বাম দিকে করবে আর বাম প্রান্তকে ডান দিকে করবে আর এখানে সালাতের কথা উল্লেখ করেননি সম্ভবত রাবী ভুলে গেছেন এজন্য সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০৩-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসক্বার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তখন তাঁর গায়ে ছিল একটি চারকোণ বিশিষ্ট কালো চাদর। তিনি এ চাদরটির নীচের দিক উপরের দিকে উঠিয়ে আনতে চাইলেন। কিন্তু কাজটি কষ্টসাধ্য হবার কারণে চাদরটি দু’কাঁধের উপর ঘুরিয়ে দিলেন। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن عبد الله بن زيد أَنَّهُ قَالَ: اسْتَسْقَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ خَمِيصَةٌ لَهُ سَوْدَاءُ فَأَرَادَ أَنْ يَأْخُذَ أَسْفَلَهَا فَيَجْعَلَهُ أَعْلَاهَا فَلَمَّا ثَقُلَتْ قَلَبَهَا عَلَى عَاتِقَيْهِ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ
পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০৪-[৮] ’উমায়র মাওলা আবূ লাহম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আহজা-রুয্ যায়ত’ নামক জায়গার কাছে ’যাওরার’ নিকটবর্তী স্থানে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতে দেখেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে দু’হাত চেহারা পর্যন্ত উত্তোলন করে বৃষ্টির জন্য দু’আ করছিলেন; কিন্তু তাঁর হাত (উপরের দিকে) মাথা পার হয়ে যায়নি। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসায়ী একইভাবে বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَن عُمَيْر مولى آبي اللَّحْم أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَسْقِي عِنْدَ أَحْجَارِ الزَّيْتِ قَرِيبًا مِنَ الزَّوْرَاءِ قَائِمًا يَدْعُو يَسْتَسْقِي رَافِعًا يَدَيْهِ قِبَلَ وَجْهِهِ لَا يُجَاوِزُ بِهِمَا رَأْسَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وروى التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: ইমাম আবূ হানীফাহ্ এ হাদীস হতে প্রমাণ করেন ইস্তিসক্বার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সুন্নাহ না, কেননা এখানে সালাতের কথা উল্লেখ নেই। ইতিপূর্বে এর জবাব আলোচনা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০৫-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন অতি সাধারণ পোশাক পরিধান করে, বিনয়-বিনম্র অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে করতে ইসতিসক্বার সালাতের জন্য বের হয়ে গেলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْنِي فِي الِاسْتِسْقَاءِ مُتَبَذِّلًا مُتَوَاضِعًا مُتَخَشِّعًا مُتَضَرِّعًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (مُتَبَذِّلًا) সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাক ছেড়ে ইউনিফর্ম জাতীয় পোশাক পরিধান করে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া এবং প্রয়োজনকে প্রকাশ করা। নিহায়াহ্ গ্রন্থে تَبَذُّل-এর অর্থ বলা হয়েছে সৌন্দর্য ও সৌন্দর্য অবস্থান ছেড়ে বিনয়ীভাব প্রকাশ করা।
(مُتَخَشِّعًا) আল্লামা শাওকানী বলেন, ভয় বিহ্বল প্রকাশ করা আল্লাহর নিকট যা আছে তা পাওয়ার একটা মাধ্যমও।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০৬-[১০] ’আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাদা বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু’আ করার সময় বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মাসক্বি ’ইবা-দাকা ওয়াবাহী মাতাকা ওয়ানশুর রহমতাকা ওয়াআহয়ি বালাদাকাল মাইয়্যিত’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাদেরকে, তোমার পশুদেরকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। তোমার মৃত জমিনকে জীবিত করো)। (মালিক, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَسْقَى قَالَ: «اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهِيمَتَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ» . رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ) আপনার রহমাতকে বিস্তৃত করুন। রহমাত দ্বারা উদ্দেশ্য কল্যাণকর ও বারাকাতপূর্ণ বৃষ্টি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِيْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ بَعْدِ مَا قَنَطُوْا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهٗ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيْدُ
‘‘মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমাত ছড়িয়ে দেন।’’ (সূরাহ্ আশ্ শূরা ৪২ : ২৮)
(وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ) ‘মৃত জনপদকে সজীব করুন।’ যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘অতএব, তোমরা আল্লাহর রহমাতের ফল দেখে নাও কিভাবে তিনি মৃত্তিকার মৃত্যুর পর জীবিত করেন’’- (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০ : ৫০)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘‘আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চায়িত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূখন্ডের দিকে পরিচালিত করি। অতঃপর তা দ্বারা সে ভূখন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই’’- (সূরাহ্ ফা-ত্বির ৩৫ : ৯)।
অন্যস্থানে আল্লাহ বলেন, ‘‘আর আমি বৃষ্টি দ্বারা মৃত জমিনকে জীবিত করি’’- (সূরাহ্ ক্বাফ ৫০ : ১১)। হাদীস প্রমাণ করে ইস্তিসক্বার সময় সংশ্লিষ্ট দু‘আ করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ৫২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বৃষ্টির জন্য সালাত
১৫০৭-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইসতিসক্বার সালাতে হাত বাড়িয়ে এ কথা বলতে দেখেছি ’’হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি দাও। যে পানি সুপেয়, ফসল উৎপাদনকারী, উপকারী, অনিষ্টকারী নয়। দ্রুত আগমনকারী। বিলম্বকারী নয়।’’ (বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা বলতে না বলতেই) তাদের ওপর আকাশ বর্ষণ শুরু করে দিলো। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوَاكِئُ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيثًا مَرِيئًا مُرِيعًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ» . قَالَ: فَأَطْبَقَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (مَرِيْئًا) তৃপ্তিকর বৃষ্টিকর যার পরিণাম প্রশংসিত আর এমন বৃষ্টি যাতে কোন ক্ষতি নেই যেমন বন্যা ও বিল্ডিং ধ্বস ইত্যাদি।