পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৩-[১০] লুবাবাহ্ ইবনু ’আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’জুমু’আর দিন’’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তা’আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু’আর দিনকে ভয় করে। (ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ أَبِي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَيِّدُ الْأَيَّامِ وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ يَوْمِ الْأَضْحَى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيهِ خَمْسُ خِلَالٍ: خَلَقَ اللَّهُ فِيهِ آدَمَ وَأَهْبَطَ اللَّهُ فِيهِ آدَمُ إِلَى الْأَرْضِ وَفِيهِ تَوَفَّى اللَّهُ آدَمَ وَفِيهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ الْعَبْدُ فِيهَا شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ مَا لَمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيهِ تَقُومُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلَا سَمَاءٍ وَلَا أَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَحْرٍ إِلَّا هُوَ مُشْفِقٌ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: সকল প্রাণীই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হওয়ার আতঙ্কে ভীত অবস্থায় থাকবে। আর তারা সে ব্যাপারে অবগত, আর এটাও জানে যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) জুমু‘আর দিনেই সংঘটিত হবে, তবে তার মাঝে ও ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) মাঝের ব্যবধান সম্পর্কে মাখলূক অবগত নয়। কিন্তু তারপরও ঊর্ধ্বতন মালায়িকাহ্ এ ভয় বা ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) ভয় থেকে মুক্ত নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৪-[১১] ইমাম আহমাদ সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ থেকে এভাবে নকল করেছেন যে, আনসারদের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, আমাকে জুমু’আর দিন সম্পর্কে বলুন। এতে কি আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এতে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (বাকী হাদীস বর্ণনা পূর্ববৎ)[1]
وَرَوَى أَحْمَدُ عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ: أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَخْبِرْنَا عَنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مَاذَا فِيهِ مِنَ الْخَيْرِ؟ قَالَ: «فِيهِ خَمْسُ خلال» وسَاق الحَدِيث
ব্যাখ্যা: (وَرَوى أَحْمَدُ عَنْ سَعْدِ بْنِ مُعَاذ) মিরকাতসহ অন্যান্য গ্রন্থের মাতানেও অনুরূপ রয়েছে এবং কোন কোন নুসখাতে سعيد بن معاذ (সা‘ঈদ ইবনু মু‘আয) রয়েছে। তবে উভয় নুসখাতে ভুল রয়েছে, কারণ বর্ণনায় এমন কেউ নেই যার নাম سعيد بن معاذ (সা‘ঈদ ইবনু মু‘আয), আর এ হাদীসেও سَعْدِ بْنِ مُعَاذ (সা‘দ ইবনু মু‘আয) নামক কোন রাবী নেই। বরং সানাদে যিনি রয়েছেন, তিনি সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্। সুতরাং সঠিক হলো সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্। যেমন- মুসনাদে আহমাদ (৫ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা), মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ (২য় খন্ড, ১৬৩ পৃঃ), আত্ তারগীব (১ম খন্ড, ২১৪ পৃঃ), ফাতহুল বারী (৪র্থ খন্ড, ৫০৩ পৃঃ)-এ উল্লেখ রয়েছে।
মুনযির (রহঃ) আবী লুবাবাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করার পর সানাদ সম্পর্কে বলেন, সুনান ইবনু মাজাহ্ ও আহমাদ-এ বর্ণিত রয়েছে এবং বাযযার (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘উক্বায়ল (রহঃ)-এর সূত্রে সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। আর অবশিষ্ট রাবীগুলো শক্তিশালী (নির্ভরযোগ্য) ও প্রসিদ্ধ।
(مَاذَا فِيهِ مِنَ الْخَيْرِ) আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, এটি প্রমাণ করে যে, এ বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত মর্যাদাকর যা জুমু‘আর দিনের ফাযীলাতকে আবশ্যক করে।
প্রকাশ থাকে যে, এখানে পাঁচ বৈশিষ্ট্য দ্বারা পাঁচে সীমাবদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়। কারণ ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ)-এর আলোচনা অতিবাহিত হয়েছে এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে, يَوْمَ الْجُمُعَةِ বা জুমু‘আর দিনের ৩৩টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৫-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ’’জুমু’আর দিন’’ জুমু’আহ্ নাম কি কারণে রাখা হলো? তিনি বললেন, যেহেতু এ দিনে (১) তোমাদের পিতা আদমের মাটি একত্র করে খামির করা হয়েছে। (২) এ দিনে প্রথম শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। (৩) এ দিনে দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। (৪) এ দিনেই কঠিন পাকড়াও হবে। তাছাড়া (৫) এ দিনের শেষ তিন প্রহরে এমন একটি সময় আছে যে কেউ আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করলে তা কবূল করা হয়। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قِيلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِأَيِّ شَيْءٍ سُمِّيَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ؟ قَالَ: «لِأَنَّ فِيهَا طُبِعَتْ طِينَةُ أَبِيكَ آدَمَ وَفِيهَا الصَّعْقَةُ وَالْبَعْثَةُ وَفِيهَا الْبَطْشَةُ وَفِي آخِرِ ثَلَاثِ سَاعَاتٍ مِنْهَا سَاعَةٌ مَنْ دَعَا الله فِيهَا اسْتُجِيبَ لَهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (وَفِيْهَا الصَّعْقَةُ) প্রথম চিৎকার বা আওয়াজ যাতে দুনিয়াবাসী সবাই মৃত্যুবরণ করবে। (وَالْبَطْشَةُ) এখানে بَا-তে যের ও যাবার উভয় পন্থায় পড়া যায়, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দ্বিতীয় ফুঁৎকার যাতে সমস্ত মৃত দেহ জীবিত হবে।
(وَفِيْهَا الْبَطْشَةُ) অর্থাৎ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসের শক্ত পাকড়াও। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মৃত্যুর পর পূর্ণ জীবন ও হাশ্রের (হাশরের) পরের পাকড়াও। আল্লামা ক্বারী (রহঃ) বলেনঃ সম্ভবত এ কথায় তার সমাধা হতে পারে যে, সেটার শেষে একটি সময় (فى اخرها ساعة) এ কথাটি তার পূর্ববর্তী দু’টি সময়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করছে, তার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এবং এটার উপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে, যা এ বিষয়ে প্রমাণিত হাদীসগুলোর সমর্থক তা হলো (بأنها آخر ساعة بعد العصر) নিশ্চয় সেটার সর্বশেষ সময় হলো ‘আসরের পর।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৬-[১৩] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু’আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দেয়া হয়। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَإِنَّهُ مَشْهُودٌ تَشْهَدُهُ الْمَلَائِكَةُ وَإِنَّ أحدا لن يُصَلِّي عَلَيَّ إِلَّا عُرِضَتْ عَلَيَّ صَلَاتُهُ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهَا» قَالَ: قُلْتُ: وَبَعْدَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে শার‘ঈ বিধান রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর জুমু‘আর দিনে বেশী বেশী দরূদ পড়া শারী‘আত সম্মত এবং তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছানো হয় এবং তিনি তাঁর ক্ববরে জীবিত রয়েছেন। অবশ্য ‘উলামাদের একটি দল এটাই গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্য বায়হাক্বী ও সুয়ূতী (রহঃ) রয়েছেন, তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পরও জীবিত রয়েছেন। এমনকি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মাতের আনুগত্যে আনন্দিত হন। কিন্তু আমাদের (জমহূর ‘উলামাহ্, মুহাদ্দিসগণ, চার ইমামগণসহ সকলেই) নিকট তাঁর জীবিত থাকাটা হায়াতে বারযাখিয়্যাহ্ বা বারযাখী জীবন, এটি দৃশ্যমান দুনিয়ার জীবন নয়। কেননা তাঁর আত্মা ইল্লীয়্যিনে সুউচ্চ-সুমহান বন্ধুর নিকট রয়েছে এবং তাঁর দেহ মুবারাকের সাথে অতীবও পবিত্রতার সম্পৃক্ততা শাহীদ ব্যক্তির দেহের সাথে আত্মার সম্পৃক্ততার তুলনায় অধিক মজবুত-দৃঢ় উন্নত। সহীহ হাদীসগুলোতে যা রয়েছে তা ব্যতীত দুনিয়ার জীবনের কোন হুকুম তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৭-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। (আহমাদ, তিরমিযী; তিনি [ইমাম তিরমিযী] বলেন, এ হাদীসটি গরীব। এর সানাদ মুত্তাসিল নয়।)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلَّا وَقَاهُ اللَّهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَاده بِمُتَّصِل
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসের সমর্থনে আবূ নু‘আয়ম তাঁর হুল্ইয়াহ্ গ্রন্থে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন কিংবা রাতে মারা যাবে তাকে ক্ববরের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দেয়া হবে এবং সে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন শাহীদি ঝান্ডা নিয়ে আসবে। হুমায়দী (রহঃ) তার তারগিব গ্রন্থে আইয়্যাস ইবনু বাকির হতে বর্ণনা করেছেন যে, যে জুমু‘আর দিনে মৃত্যুবরণ করবে তার জন্য শাহীদের সাওয়াব লেখা হবে এবং ক্ববরের ফিতনাহ্ থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। ইবনু ক্বইয়্যূম জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘উমার (রাঃ) ইবনু মূসা আল ওয়াজিহী এটি এককভাবে বর্ণনা করেছে, ‘‘সে য‘ঈফ’’।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৮-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নি’আমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩)। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ইয়াহূদী বসা ছিল। সে ইবনু ’আব্বাসকে বলল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতটি দু’ঈদের দিন, বিদায় হাজ্জ (হজ/হজ্জ) ও ’আরাফার জুমু’আর দিন নাযিল হয়েছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَرَأَ: (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لكم دينكُمْ)
الْآيَةَ وَعِنْدَهُ يَهُودِيٌّ فَقَالَ: لَوْ نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عَلَيْنَا لَاتَّخَذْنَاهَا عِيدًا فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَإِنَّهَا نزلت فِي يَوْم عيدين فِي وَيَوْم جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ অর্থাৎ ‘‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম’’ এর অর্থ হলো হালাল-হারাম জানার ব্যাপারে এবং ‘আক্বাইদের নীতিমালা, ক্বিয়াসের নিয়ম-কানুন এবং ইজতিহাদের মৌলিক নীতিমালা জানার ক্ষেত্রে যার দিকে মুসলিম মাত্র সকলেই মুখাপেক্ষী হবে। কেউ বলেছেন, সেটার বিধি-বিধানগুলো, ফরযগুলো ও শার‘ঈ নীতিমালা- সেটার পর আর হালাল-হারাম অবতীর্ণ হবে না।
এখানে (الْايَةَ) আয়াত বলতে আল্লাহ তা‘আলার কথা أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ অর্থাৎ হিদায়াত ও তাওফীক বা সক্ষমতা, অথবা দিনের পরিপূর্ণতা, অথবা মক্কা বিজয় ও তাতে নিরাপদে প্রবেশ করা। কেউ বলেছেন, তোমাদের দুনিয়াবী সকল বিষয়। ورضيت অর্থাৎ আমি নির্বাচিত করেছি, لكم الإسلام ديناً বাক্যটি حال বা অবস্থাবাচক, অর্থাৎ সকল দীনের মাঝে সেটাকে তোমাদের জন্য নির্বাচিত করেছি এবং ঘোষণা দিয়েছি যে, সেটাই একমাত্র মনোনীত ধর্ম।
হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এ ইয়াহূদী লোক হলো কা‘ব আল আহবার। সেটাই মুসাদ্দাদ তার মুসনাদে, তাবারী তাঁর তাফসীরে, ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
(في يوم جمعة يوم عرفة) মিশকাতের অন্য নুসখা ও আত্ তিরমিযীতে রয়েছে- (في يوم جمعة) অর্থাৎ আলিফ-লাম যোগে, এটি পূর্ববর্তী বাক্যের বদল অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে কারীমা এমন দিনে অবতীর্ণ করেছেন, যা আমাদের নিজের জন্য ঈদ না হলেও তা মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে আমাদের নিকট ঈদ। কেননা তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নাযিল হয়েছে জুমু‘আর দিন ‘আরাফায়। তাবারীতে ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে,
(في يوم جمعة يوم عرفة) অর্থাৎ তা নাযিল হয়েছে জুমু‘আর দিন ‘আরাফায়। ‘‘আল হামদুলিল্লা-হ’’ উভয়টি আমাদের জন্য ঈদ। ত্ববারানীতে রয়েছে يَوْم عيدين ‘‘উভয়টি আমাদের জন্য ঈদ’’। আলোচ্য হাদীসটি জুমু‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্বের দলীল, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী এবং মু’মিনদেরকে সংবাদ দিলেন নিশ্চয় তিনি তাদের জন্য দীন পরিপূর্ণ করেছেন। সুতরাং তারা এর অতিরিক্ত কোন বিষয়ের মুখাপেক্ষী হবে না, সুতরাং দীন তাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ এবং নি‘আমাত পরিপূর্ণ। আর যেদিনে এ আয়াত অবতীর্ণ হলো তার জন্য তো মহান শ্রেষ্ঠত্ব থাকবেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জুমু‘আর সালাত
১৩৬৯-[১৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস আসলে এ দু’আ পড়তেন, ’’হে আল্লাহ! রজব ও শা’বান মাসের (’ইবাদাতে) আমাদেরকে বারাকাত দান করো। আর আমাদেরকে রমাযান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ’’জুমু’আর রাত আলোকিত রাত। জুমু’আর দিন আলোকিত দিন।’’ (বায়হাক্বী’র দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ» قَالَ: وَكَانَ يَقُولُ: «لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ لَيْلَةٌ أَغَرُّ وَيَوْمُ الْجُمُعَةِ يَوْمٌ أَزْهَرُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
ব্যাখ্যা: (إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ) অর্থাৎ এখানে রজব বলতে সে মাস যা হারাম মাসগুলোর একটি। কেউ বলেছেন, এটি গায়র মুন সারিক। (اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا.....) অর্থাৎ আমাদের আনুগত্যে ও ‘ইবাদাতে, বারাকাত দান করুন। এ দু’ মাসে বেশী বেশী ‘আমলুস সালিহ করার তাওফীক্ব দান করুন। পূর্ণ রমাযানকে পাইয়ে দিন এবং তাতে সিয়াম ও ক্বিয়ামের সক্ষমতা দান করুন।