পরিচ্ছেদঃ ২২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৪৮-[১০] ’আবদুল্লাহ আস্ সুনাবিহী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সূর্য উঠে তখন এর সঙ্গে শায়ত্বনের (শয়তানের) শিং থাকে। তারপর সূর্য উপরে উঠে গেলে শায়ত্বনের (শয়তানের) শিং তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার যখন দুপুর হয়, শায়ত্বন (শয়তান) সূর্যের নিকট আসে। আবার সূর্য ঢলে গেলে শায়ত্বন (শয়তান) এর থেকে পৃথক হয়ে যায়। আবার সূর্য ডুবার মুহূর্তে শায়ত্বন (শয়তান) তার নিকট আসে। সূর্য ডুবে গেলে শায়ত্বন (শয়তান) তার হতে পৃথক হয়ে যায়। এসব সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (মালিক, আহমাদ, নাসায়ী)[1]

عَن عبد الله الصنَابحِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّمْسَ تَطْلُعُ وَمَعَهَا قَرْنُ الشَّيْطَانِ فَإِذَا ارْتَفَعَتْ فَارَقَهَا ثُمَّ إِذَا اسْتَوَتْ قَارَنَهَا فَإِذا زَالَت فَارقهَا فَإِذَا دَنَتْ لِلْغُرُوبِ قَارَنَهَا فَإِذَا غَرَبَتْ فَارَقَهَا» . وَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ فِي تِلْكَ السَّاعَاتِ. رَوَاهُ مَالِكٌ وَأحمد وَالنَّسَائِيّ

عن عبد الله الصنابحي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الشمس تطلع ومعها قرن الشيطان فاذا ارتفعت فارقها ثم اذا استوت قارنها فاذا زالت فارقها فاذا دنت للغروب قارنها فاذا غربت فارقها» . ونهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الصلاة في تلك الساعات. رواه مالك واحمد والنساىي

ব্যাখ্যা: (وَمَعَهَا قَرْنُ الشَّيْطَانِ) ‘তার (সূর্যের) সাথে শায়ত্বনের (শয়তানের) শিং থাকে’ অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সময় শায়ত্বন (শয়তান) সূর্যের নিকটবতী হয় যাতে সূর্য তার মাথার দুই পাশের মাঝ দিয়ে উদিত হয়। শায়ত্বনের (শয়তানের) এতে উদ্দেশ্য এই যে, এ সময় যারা সূর্যকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে তা যেন শায়ত্বনের (শয়তানের) উদ্দেশে হয়। অতএব যারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে তারা যেন এ সময়ে সালাত আদায় না করে যাতে শায়ত্বনের (শয়তানের) ‘ইবাদাতকারীর সাথে তার সাদৃশ্য না ঘটে।

(ثُمَّ إِذَا اسْتَوَتْ قَارَنَهَا) অতঃপর সূর্য যখন মাথার উপরে উঠে শায়ত্বন (শয়তান) আবার তার (সূর্যের) সাথে মিলিত হয়’। পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় শায়ত্বন (শয়তান) সূর্যের সাথে মিলিত হয়। এখানে এ অংশটুকু অতিরিক্ত পাওয়া গেল যে, সূর্য মাথার উপরে উঠার সময়ও শায়ত্বন (শয়তান) তার নিকটবর্তী হয়। আর এ সময়ে অর্থাৎ ঠিক দ্বি-প্রহরের সময় সালাত নিষিদ্ধের এটি আরেকটি কারণ যা পূর্বে বর্ণিত কারণ’। তখন জাহান্নাম প্রজ্জ্বলিত করা হয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এ সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করতেন। ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এ সময়ে আমাদের সালাত আদায় করা থেকে বারণ করা হত। আবূ সা‘ঈদ মাকবূরী বলেনঃ লোকজনকে এ সময়ে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতে দেখেছি।

যুরকানী বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ। যদিও হাদীসটি মুরসাল তথাপি তা অনেক হাদীস দ্বারা সমর্থিত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৪৯-[১১] আবূ বাসরাহ্ আল গিফারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুখাম্মাস নামক স্থানে ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তারপর বললেন, এ সালাতটি তোমাদের পূর্বের মানুষের ওপরও অবশ্য পালনীয় বিধান করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা নষ্ট করে দিয়েছে। কাজেই যে লোক এ সালাতের ব্যাপারে যত্নবান হবে সে দ্বিগুণ প্রতিদান পাবে। (তিনি এ কথাও বলেছেন,) ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর আর কোন সালাত নেই, যে পর্যন্ত শাহিদ উদিত না হবে। আর শাহিদ হলো তারকা। (মুসলিম)[1]

وَعَن أبي بصرة الْغِفَارِيّ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمُخَمَّصِ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَالَ: «إِنَّ هَذِهِ صَلَاةٌ عُرِضَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَضَيَّعُوهَا فَمَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَ لَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ وَلَا صَلَاةَ بَعْدَهَا حَتَّى يَطْلُعَ الشَّاهِدُ» . وَالشَّاهِد النَّجْم. رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي بصرة الغفاري قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بالمخمص صلاة العصر فقال: «ان هذه صلاة عرضت على من كان قبلكم فضيعوها فمن حافظ عليها كان له اجره مرتين ولا صلاة بعدها حتى يطلع الشاهد» . والشاهد النجم. رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَضَيَّعُوهَا) ‘তা তারা বিনষ্ট করেছে’। অর্থাৎ তারা এর হক আদায় করেনি তা সংরক্ষণ করেনি।

(فَمَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَ لَه أَجْرُه مَرَّتَيْنِ) ‘যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করবে সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে’ একটি পুরস্কার পূর্ববতীতের বিপরীতে তা সংরক্ষণ করার জন্য। আরেকটি পুরস্কার অন্যান্য সালাতের ন্যায় তা আদায় করার জন্য।

(الشَّاهِد النَّجْم) শাহিদ অর্থ তারকা, এ তারকাকে শাহিদ এজন্য বলা হয় যে, তা রাত্রি আগমনের সাক্ষ্য দানকারী। আর এজন্যই মাগরিবের সালাতকে সালাতুশ্ শাহিদ বলা হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৫০-[১২] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি মানুষদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা তো একটি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছ। আর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গ পেয়েছি। তবে আমরা তাঁকে এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে দেখিনি। বরং তিনি তো ’আসরের সমাপ্তির পরে এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী)[1]

وَعَن مُعَاوِيَة قَالَ: إِنَّكُمْ لَتُصَلُّونَ صَلَاةً لَقَدْ صَحِبْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا رَأَيْنَاهُ يُصَلِّيهِمَا وَلَقَدْ نَهَى عَنْهُمَا يَعْنِي الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَصْر. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن معاوية قال: انكم لتصلون صلاة لقد صحبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فما رايناه يصليهما ولقد نهى عنهما يعني الركعتين بعد العصر. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর বক্তব্য এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে যে, তিনি যাদের উদ্দেশ্য করে এ বক্তব্য দিয়েছিলেন তারা ‘আসরের পরে নিয়মিত নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন যেভাবে যুহরের পরে তারা নিয়মিত নফল সালাত আদায় করতেন। তিনি যা অস্বীকার করছেন যে, তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সালাত আদায় করতে দেখেননি কিন্তু অন্যরা তা সাব্যস্ত করেছেন। আর সাব্যস্তকারীর বক্তব্য অস্বীকারকারীর বক্তব্যের উপর প্রাধান্য পাবে।

যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ তিনি ঐ দুই রাক্‘আত সালাত মসজিদে আদায় করতেন না। তবে সাব্যস্তকারীর বর্ণনার মধ্যে আর অস্বীকারকারীর বক্তব্যের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা যারা ঐ দু’ রাক্‘আত সাব্যস্ত করেছেন তাতে কারণ বর্ণিত হয়েছে। অতএব কারণবশতঃ তা আদায় করা যাবে। আর কারণ না থাকলে তা নিষিদ্ধই থেকে যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৫১-[১৩] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কাবা ঘরের দরজার উপর উঠে বলেছেন, যিনি আমাকে জানেন তিনি তো জানেননি। আর যারা আমাকে জানেন না তারা জেনে রাখুক, আমি ’জুনদুব’। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করার পর সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত এবং ’আসরের সালাতের পর সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নেই, একমাত্র মক্কায়, একমাত্র মক্কায়, একমাত্র মক্কায়। (আহমাদ, রযীন)[1]

وَعَن أبي ذَر قَالَ وَقَدْ صَعِدَ عَلَى دَرَجَةِ الْكَعْبَةِ: مَنْ عَرَفَنِي فَقَدْ عَرَفَنِي وَمَنْ لَمْ يَعْرِفْنِي فَأَنَا جُنْدُبٌ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا صَلَاةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَلَا بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ إِلَّا بِمَكَّةَ إِلَّا بِمَكَّةَ إِلَّا بِمَكَّةَ» . رَوَاهُ أَحْمد ورزين

وعن ابي ذر قال وقد صعد على درجة الكعبة: من عرفني فقد عرفني ومن لم يعرفني فانا جندب سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «لا صلاة بعد الصبح حتى تطلع الشمس ولا بعد العصر حتى تغرب الشمس الا بمكة الا بمكة الا بمكة» . رواه احمد ورزين

ব্যাখ্যা: ইমাম যায়লা‘ঈ বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত এ হাদীসটি চারটি দোষে দোষীঃ

  1. মুজাহিদ (রহঃ) ও আবূ যার  (রাঃ)-এর মাঝে বিচ্ছিন্নতা, অর্থাৎ মুজাহিদ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে হাদীস শুনেননি।
  2. এর সানাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
  3. রাবী ইবনু মুয়াম্মিল য‘ঈফ।
  4. আফরার মাওলা হুমায়দ দুর্বল রাবী।

তবে ইবনু ‘আবদুল বার তামহীদ নামক গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটি যদিও শক্তিশালী নয় আফরার মাওলা হুমায়দ-এর দুর্বলতার কারণে এবং মুজাহিদ আবূ যার (রাঃ) থেকে হাদীস শুনেনি, তথাপি পূর্বের জুবায়র ইবনু মুত্‘ইম বর্ণিত (১০৫২) হাদীস এটিকে শক্তিশালী করে। তাছাড়া জমহূর ‘আলিমগণ এ হাদীসের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। অতএব হাদীসটি ‘আমলযোগ্য।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে