পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৫৮-[২] ’উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ফাত্বিমাহ্ বিনতু আবূ হুবায়শ (রাঃ)হতে বর্ণনা করেছেন যে, ফাত্বিমাহ্ সব সময় ইস্তিহাযাহ্ রোগে ভুগতেন। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলে দিয়েছেন, যখন হায়যের রক্ত আসবে তখন তা কালো হয়, যা সহজে চিনা যায়। এ রক্ত দেখলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে না। আর (হায়যের রং) ভিন্ন রকম হলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। কারণ এটা রগবিশেষের রক্ত। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ أَبِي حُبَيْشٍ: أَنَّهَا كَانَتْ تُسْتَحَاضُ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا كَانَ دم الْحيض فَإِنَّهُ دم أسود يعرف فَأَمْسِكِي عَنِ الصَّلَاةِ فَإِذَا كَانَ الْآخَرُ فَتَوَضَّئِي وَصَلِّي فَإِنِّمَا هُوَ عِرْقٌ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: হায়যের রক্তের রং কালো। সুতরাং কালো রং দেখলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে। আর অন্য রংয়ের রক্ত দেখলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৫৯-[৩] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে জনৈকা নারীর ঋতুস্রাব হতে লাগলো। উম্মু সালামাহ্ তার ব্যাপারটি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ অবস্থায় তার দেখতে হবে গতমাসে যে কয়দিন তার হায়য থাকতো, ঐ কয়দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে বিরত থাকবে। যখন সে পরিমাণ দিন শেষ হয়ে যাবে, সে গোসল করবে। এরপর কাপড়ের টুকরো দিয়ে নেংটি বেঁধে সালাত আদায় করবে। (মালিক, আবূ দাঊদ, দারিমী ও নাসায়ী)[1]
وَعَن أم سَلمَة: إِنَّ امْرَأَةً كَانَتْ تُهْرَاقُ الدَّمَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَفْتَتْ لَهَا أم سَلمَة رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: «لِتَنْظُرْ عَدَدَ اللَّيَالِي وَالْأَيَّامِ الَّتِي كَانَتْ تَحِيضُهُنَّ مِنَ الشَّهْرِ قَبْلَ أَنْ يُصِيبَهَا الَّذِي أَصَابَهَا فَلْتَتْرُكِ الصَّلَاةَ قَدْرَ ذَلِكَ مِنَ الشَّهْرِ فَإِذَا خلفت ذَلِك فلتغتسل ثمَّ لتستثفر بِثَوْب ثمَّ لتصل» . رَوَاهُ مَالك وَأَبُو دَاوُد والدارمي وروى النَّسَائِيّ مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: মুসতাহাযা মহিলা যাদের মাসিক রক্ত একাধারে নির্গত হতে থাকে সে পূর্বের নির্ধারিত দিনগুলো পার হলে গোসল করে কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৬০-[৪] ’আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে, ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা’ঈন বলেন, ’আদী এর দাদার নাম দীনার, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসতাহাযা স্ত্রীলোক সম্পর্কে বলেছেন, সে হায়যগ্রস্ত অবস্থা থাকাকালীন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে। অতঃপর মেয়াদ শেষে গোসল করবে এবং প্রত্যেক সালাতের সময় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে। আর সওম (রোযা) পালন করবে ও সালাত আদায় করবে। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ - قَالَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ: جَدُّ عَدِيٍّ اسْمُهُ دِينَارٌ - عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ فِي الْمُسْتَحَاضَةِ: «تَدَعُ الصَّلَاةَ أَيَّامَ أَقْرَائِهَا الَّتِي كَانَتْ تَحِيضُ فِيهَا ثُمَّ تَغْتَسِلُ وَتَتَوَضَّأُ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ وَتَصُومُ وَتُصَلِّي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: মুসতাহাযা মহিলা তার প্রতি মাসে নির্ধারিত দিন যা পূর্বে হায়য আসতো ঐ দিন অতিবাহিত হলে গোসল করবে এবং প্রত্যেক সালাতের সময় উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং সওম পালন করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - রক্তপ্রদর রোগিণী
৫৬১-[৫] হামনাহ্ বিনতু জাহশ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ অবস্থার কথা বলতে ও এর মাস্আলাহ্ জানতে আসলাম। আমি তাঁকে আমার বোন যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর ঘরে পেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি ইস্তিহাযার গুরুতর রোগে ভুগছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? এ কারণে আমি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)-সিয়াম ঠিকমত করতে পারছি না। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাকে সেখানে পট্টি দিতে উপদেশ দিচ্ছি, তা রক্ত রোধ করবে। হামনাহ্ (রাঃ)বললেন, তা তো এ দিয়ে থামবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি তার উপর কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে। তিনি বলেন, তা এর চেয়েও অধিক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি পট্টির নীচে কাপড়ের লেঙ্গট বেঁধে নিবে। তিনি বললেন, হে আল্লাহ রসূল! এটা আরো বেশী গুরুতর। আমার পানির স্রোতের ন্যায় রক্তক্ষরণ হয়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তোমাকে আমি দু’টি নির্দেশ দিচ্ছি। এর যে কোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি দু’টোই করতে পারো তাহলে তুমিই অধিক বুঝবে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, চিন্তা করবে না, এটা শায়ত্বনের (শয়তানের) অনিষ্ট সাধনের চেষ্টার একটি অনিষ্ট সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রথম নির্দেশ- তুমি তোমার এ সময়ের ছয়দিন অথবা সাতদিন হায়য হিসেবে ধরবে। প্রকৃত বিষয়, আল্লাহর জানা আছে। অতঃপর গোসল করবে। শেষে যখন তুমি মনে করবে, তুমি পাক ও পবিত্র হয়ে গেছ, মাসের বাকী তেইশ রাত-দিন অথবা চবিবশ রাত-দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকবে এবং সিয়ামও পালন করবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর এভাবে প্রতি মাসে তুমি হিসাব করে চলবে যেভাবে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা তাদের হায়যের সময়কে ’হায়য’ ও তুহুর-এর সময়কে গণ্য করে।
দ্বিতীয় নির্দেশ- আর তুমি যদি সক্ষম হও, যুহরকে পিছিয়ে দিতে ও ’আসরকে এগিয়ে আনতে তাহলে এক গোসলে যুহর ও ’আসরকে একত্রে আদায় করবে। এভাবে মাগরিবকে পিছিয়ে নিবে ও ’ইশাকে এগিয়ে আনবে, তারপর একই গোসলের মাধ্যমে উভয় সালাতকে একসাথে আদায় করবে। আর ফজরের (ফজরের) জন্যও গোসল করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পূর্ণ করবে এবং সওমও রাখবে। সারকথা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তিন গোসলে আদায় করবে। তারপর দু’ ওয়াক্ত সালাতকে একত্রে আদায় করবে। তুমি যদি এ নিয়মে করতে পারো, তাহলে তা-ই করবে। হামনাহ্ বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর শেষ নির্দেশটা আমার নিকট তোমার জন্য বেশী পছন্দনীয়। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَن حمْنَة بنت جحش قَالَتْ: كُنْتُ أُسْتَحَاضُ حَيْضَةً كَثِيرَةً شَدِيدَةً فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْتَفْتِيهِ وَأُخْبِرُهُ فَوَجَدْتُهُ فِي بَيْتِ أُخْتِي زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُسْتَحَاضُ حَيْضَةً كَثِيرَةً شَدِيدَةً فَمَا تَأْمُرُنِي فِيهَا؟ قَدْ مَنَعَتْنِي الصَّلَاةَ وَالصِّيَامَ. قَالَ: «أَنْعَتُ لَكِ الْكُرْسُفَ فَإِنَّهُ يُذْهِبُ الدَّمَ» . قَالَتْ: هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «فَتَلَجَّمِي» قَالَتْ هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «فَاتَّخِذِي ثَوْبًا» قَالَتْ هُوَ أَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ إِنَّمَا أَثُجُّ ثَجًّا. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَآمُرُكِ بِأَمْرَيْنِ أَيَّهُمَا صَنَعْتِ أَجَزَأَ عَنْكِ مِنَ الْآخَرِ وَإِنْ قَوِيتِ عَلَيْهِمَا فَأَنت أعلم» فَقَالَ لَهَا: إِنَّمَا هَذِهِ رَكْضَةٌ مِنْ رَكَضَاتِ الشَّيْطَانِ فتحيضي سِتَّة أَيَّام أَو سَبْعَة أَيَّام فِي عِلْمِ اللَّهِ ثُمَّ اغْتَسِلِي حَتَّى إِذَا رَأَيْتِ أَنَّكِ قَدْ طَهُرْتِ وَاسْتَنْقَأْتِ فَصَلِّي ثَلَاثًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً أَوْ أَرْبَعًا وَعِشْرِينَ لَيْلَةً وَأَيَّامَهَا وصومي وَصلي فَإِن ذَلِك يجزئك وَكَذَلِكَ فافعلي كَمَا تَحِيضُ النِّسَاءُ وَكَمَا يَطْهُرْنَ مِيقَاتُ حَيْضِهِنَّ وَطُهْرِهِنَّ وَإِنْ قَوِيتِ عَلَى أَنْ تُؤَخِّرِينَ الظُّهْرَ وتعجليين الْعَصْر فتغتسلين وتجمعين الصَّلَاتَيْنِ: الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ وَتُؤَخِّرِينَ الْمَغْرِبَ وَتُعَجِّلِينَ الْعِشَاءَ ثُمَّ تَغْتَسِلِينَ وَتَجْمَعِينَ بَيْنَ الصَّلَاتَيْنِ فَافْعَلِي وَتَغْتَسِلِينَ مَعَ الْفَجْرِ فَافْعَلِي وَصُومِي إِنْ قَدَرْتِ عَلَى ذَلِكَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَهَذَا أَعْجَبُ الْأَمْرَيْنِ إِلَيَّ» . رَوَاهُ أَحْمَدَ وَأَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, ইস্তিহাযাহ্ রক্ত খুবই বেশী নির্গত হলে কাপড়ের পট্টি বেঁধে নেবে। আর যুহর ও ‘আসরের সালাতের জন্য গোসল করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জমা করবে এবং মাগরিব ও ‘ইশার জন্য গোসল করবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জমা করবে। আর ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য গোসল করে সালাত আদায় করবে।