পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৮৫-[১০] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখন্ড মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক আমার কাছে এলো, যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে (বয়সে) বড়। আমি আমার মিসওয়াকটি ছোটজনকে দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হলো, বড়জনকেই দিন। অতঃপর আমি তা বড়জনকেই দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَرَانِي فِي الْمَنَامِ أَتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ فَجَاءَنِي رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الْأَصْغَرَ مِنْهُمَا فَقِيلَ لي: كبر فَدَفَعته إِلَى الْأَكْبَر مِنْهُمَا
ব্যাখ্যা: সহীহ মুসলিমে উল্লেখ হয়েছে, যা দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এ বিষয়টি ঘুমন্তাবস্থায় ছিল।
ইমাম আহমাদ ও বায়হাক্বী হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করে তা বড়জনকে দিলেন, অতঃপর বললেন জিবরীল (আঃ) আমাকে এভাবে আদেশ করেছেন।’’
অতএব উক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে।
এ বিষয়টির আরো প্রমাণ পাওয়া যায়, আবূ দাঊদে যা তিনি (ইমাম আবূ দাঊদ) হাসান সানাদে বর্ণনা করেছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করতেন এবং তাঁর নিকটে দু’জন ব্যক্তি থাকতো, যাদের একজন অপরজনের চেয়ে বড়। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মিসওয়াকের ফাযীলাতের বিষয়ে ওয়াহী করা হলো।
উপরোক্ত হাদীস দু’টির মাঝে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, এ ঘটনাটি ঘটেছে জাগ্রত অবস্থায়, কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থার বিষয়টি বলেছেন।
এ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য যে বিষয়টি ওয়াহীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। যার কতক অংশ কেউ বর্ণনা করেছেন আর কতক অংশ বর্ণনা করেননি।
উল্লেখ্য যে, দু’জনের মধ্যে ছোটজনকে মিসওয়াক প্রদানের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ছোটজন ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে অথবা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। যার ফলে জিবরীল (আঃ) বড়জনকে তা (মিসওয়াক) প্রদান করতে বলেন।
স্মর্তব্য যে, এ হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের দুধ পান করানোর হাদীসের বিপরীত নয় যে, হাদীসে তাঁর বামপাশে আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও এদের মতো বিশিষ্ট সাহাবীগণকে রেখে ছোটজন (সাহাবী)-কে প্রথমে দুধের পাত্র প্রদান করলেন।
কারণ- তাঁরা (সাহাবীরা) সকলেই ছিলেন তাঁর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম পাশে। আর ছোট সাহাবী ছিলেন তাঁর ডান পাশে। আর এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘ডান দিক থেকে শুরু কর।’’
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৮৬-[১১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখনই জিবরীল (আঃ) আমার কাছে আসতেন আমাকে মিসওয়াক করার তাগিদ দিতেন; এমনকি আমার ভয় হলো যে, (মিসওয়াক করার দরুন) আমার মুখের সম্মুখভাগ যেন আবার ক্ষত-বিক্ষত না করে ফেলি। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا جَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَطُّ إِلَّا أَمَرَنِي بِالسِّوَاكِ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ أُحْفِيَ مُقَدِّمَ فِيَّ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে মিসওয়াকের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি মিসওয়াকের ফলে তার মাড়ির গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) অপসারিত হওয়ার আশংকা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৮৭-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে মিসওয়াকের (গুরুত্ব ও ফাযীলাতের) ব্যাপারে অনেক বেশী বললাম। (বুখারী)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ أَكْثَرْتُ عَلَيْكُمْ فِي السِّوَاك» رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বেশি বেশি মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ দান করা হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আঃ) এর ওয়াসিয়্যাত অনুপাতে সাহাবীগণকে বেশি বেশি মিসওয়াক করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৮৮-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করছিলেন। তখন তাঁর কাছে দু’জন লোক উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। তখন মিসওয়াকের ফাযীলাত সম্পর্কে ওয়াহী নাযিল হলো- তাদের মধ্যে বড়জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে মিসওয়াকটি দিন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَنُّ وَعِنْدَهُ رَجُلَانِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ فَأُوحِيَ إِلَيْهِ فِي فَضْلِ السِّوَاكِ أَنْ كَبِّرْ أَعْطِ السِّوَاك أكبرهما. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় মিসওয়াক, খাবার, পান করা, কথা বলা এবং বাহনে আরোহণসহ সকল ক্ষেত্রে কয়েকজন থাকলে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে মাজলিসের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সেক্ষেত্রে ডান দিক থেকে আরম্ভ করবে। বিষয়টি সুন্নাত যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৮৯-[১৪] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সালাতের জন্য (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময়) মিসওয়াক করা হয় তার ফাযীলাত সত্তর গুণ বেশী সে সালাতের চেয়ে যে সালাতে মিসওয়াক করা হয়নি। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَفْضُلُ الصَّلَاةُ الَّتِي يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلَاةِ الَّتِي لَا يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِينَ ضعفا» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: হাদীসে এ সংখ্যা দ্বারা আধিক্য বুঝানো হয়েছে অথবা সত্তরই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ- যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মিসওয়াক করে আদা করা হয় তার মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মিসওয়াক করা প্রসঙ্গে
৩৯০-[১৫] আবূ সালামাহ্ (রহঃ) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমি যদি উম্মাতকে কষ্টে ফেলার আশংকা না করতাম তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করতে হুকুম (ফরয) করতাম এবং ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রাতের এক-তৃতীয়াংশে পিছিয়ে দিতাম। তিনি [আবূ সালামাহ্ (রাঃ)] বলেন, (আমি দেখেছি) যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ)সালাতে উপস্থিত হতেন। তার মিসওয়াক স্বীয় কানে আটকানো থাকত, যেখানে লেখকের কলম থাকে ঠিক তদ্রূপ। যখনই তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখনই মিসওয়াক করতেন। তারপর তা আবার সেখানে (কানে) রেখে দিতেন। (তিরমিযী)
আবূ দাঊদ ’ইশার সালাত পিছিয়ে দিতাম’ বাক্য ছাড়া বাকীটুকু বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসকে হাসান সহীহ বলেছেন।[1]
وَعَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ وَلَأَخَّرْتُ صَلَاةَ الْعِشَاءِ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ» قَالَ فَكَانَ زَيْدُ بْنُ خَالِدٍ يَشْهَدُ الصَّلَوَاتِ فِي الْمَسْجِدِ وَسِوَاكُهُ عَلَى أُذُنِهِ مَوْضِعَ الْقَلَمِ مِنْ أُذُنِ الْكَاتِبِ لَا يَقُومُ إِلَى الصَّلَاةِ إِلَّا اسْتَنَّ ثُمَّ رَدَّهُ إِلَى مَوْضِعِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ: «وَلَأَخَّرْتُ صَلَاةَ الْعِشَاءِ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ» . وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حسن صَحِيح
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি সালাতুল ‘ইশা আবশ্যকীয়ভাবে বিলম্বে পড়তে নির্দেশ দিতাম। বর্ণনাকারী (আবূ সালামাহ্) বলেনঃ যায়দ ইবনু খালিদ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) জামা‘আতের সাথে আদায়ের জন্য মসজিদে উপস্থিত হতেন এবং তার মিসওয়াকটি সর্বদা কানে গুঁজে রাখতেন।
(لَا يَقُومُ إِلَى الصَّلَاةِ اِلَّا أُسْتَنَّ) বাহ্যিক হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি সালাতের জন্য মিসওয়াক করতেন।
মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ উক্ত হাদীস দ্বারা উপযুক্ত দলীল সাব্যস্ত হয় না। কেননা যায়দ ইবনু খালিদ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, অন্য কেউ (হাদীসটি) বর্ণনা করেননি।
শায়খ ‘উবায়দুল্লাহ রহমান মুবারকপূরী (রহঃ) বলেনঃ আমি বলছি, উক্ত হাদীস যায়দ ইবনু খালিদ একাকীভাবে বর্ণনা করেননি বরং এ সম্পর্কিত হাদীস আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মিসওয়াকগুলো তাদের কানের উপর থাকতো। প্রত্যেক সালাতের সময় তারা মিসওয়াক করে নিতেন।
এছাড়াও সাহাবী ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীগণের থেকে বর্ণিত আছে তারা বিকাল বেলা ঘুরাফেরা করতেন আর তাদের মিসওয়াকগুলো তাদের কানেই রাখতেন।