পরিচ্ছেদঃ ৩. ওযু করার নিয়ম ও ওযুর পূর্ণতা।
৪২৬-(৩/২২৬) আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ) ..... উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ’আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪৫)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
পাত্রের বাইরে হাত ধোয়ার বিধান
পাত্রের বাইরে দু'হাতের উপর পানি ঢেলে হাত ধোয়ার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন হুকুম হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে মতভেদ পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার বিধান এ বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা, মালিক ও শাফেয়ী রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, অযুতে এ দু'টিই সুন্নাত। ইমাম আহমাদ ইবন আবী লাইলা ও দাউদ আয যাহেরী বলেন, দু'টোই ফরয। ইমাম আবু সাওর, আবূ উবাইদ ও আহলে যাহেরদের অপর গোষ্ঠীর নিকট কুলি করা সুন্নাত কিন্তু নাকে পানি নেয়া ফরয।
মাথা কতটুকু মাসেহ করবে?
মাথা মাসাহ করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের আলেমগণের ঐকমতা রয়েছে। অনুরূপভাবে পূর্ণ মাথা মাসাহ করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারেও তাদের ঐকমত্য রয়েছে কিন্তু মাথার কতটুকু মাসাহ করা ফরয তা নির্ধারণে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালিক ও আহমাদ রাহিমাহুমাল্লাহার মতে পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ফরয।
ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী বলেন, মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই। ফরয আদায় হয়ে যাবে; এ কিছু অংশ নির্ধারণে তারা আবার মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা বলেন, এক-চতুর্থাংশ এবং মালেকী মাযহাবের কারো কারো মতে এক-তৃতীয়াংশ। তবে ইমাম শাফেয়ী কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। বরং তার নিকট মাসাহ বলতে যা বুঝায় তা হলেই হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে যে, পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও মাথার কিছু অংশ মাসাহ করা যথেষ্ট মনে করেছেন তেমন প্রমাণ নেই। যেখানে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার সামনের অংশ মাসাহ করেছেন সেখানেও এসেছে যে, তিনি বাকী মাথার মাসাহ করার জন্য পাগড়ীর উপর তা সম্পন্ন করেছেন। (আর পাগড়ীর ওপর মাসাহ তখনই হবে যখন তা মুহান্নাক বা গলার নিচ দিয়ে পেঁচ দিয়ে শক্ত করে মজবুতভাবে আটকে পাগড়ী বাঁধা হবে।)
অযুতে আবশ্যকীয় কাজ
"উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এ হাদীসটি অযুর বর্ণনার ক্ষেত্রে অনন্য। এ হাদীসটি যদি আমরা কুরআনুল কারীমের সূরা আল-মায়েদাহ'র ৬নং আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেখি, তখন অযুতে কী কী করা অত্যাবশ্যক তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। সে হিসেবে অযুতে নিম্নোক্ত কাজগুলো অত্যাবশ্যক
১. মুখমণ্ডল ধৌত করা, আর মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ। যেমনটি এ হাদীসে এসেছে।
২. কনুইসহ দুহাত ধৌত করা।
৩. মাথা মাসাহ করা আর দু'কান মাথারই অংশ।
৪. দু'পা ধৌত করা।
তাছাড়া আরো যেগুলো বাস্তবেই এসে যায় কিন্তু কুরআনে শব্দ দিয়ে উল্লেখ করা হয়নি, তা হচ্ছে
৫. ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বজায় রাখা। কেননা আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং দু'অঙ্গ ধোয়ার মধ্যে একটি মাসাহ করার বিষয় উল্লেখ করেছেন যা ক্রমবিন্যাস আবশ্যক হওয়া বুঝায়।
৬. অযু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার সাথে সাথেই বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে করেছেন।
অনুরূপভাবে আরো একটি কাজ রয়েছে যা করার আবশ্যকতা কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে:
৭. নিয়ত করা, অর্থাৎ অন্তরে সুদৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে সালাতে দাঁড়ানো।
হাদীসের শিক্ষা
১. অযুর পানির পাত্রে হাত ঢুকানোর পূর্বে তিনবার তা বাইরে ধুয়ে ফেলাই হচ্ছে বৈধ নিয়ম।
২. অযুর অঙ্গ ধোয়ার জন্য ডান হাত ব্যবহার করাই শরীআতসম্মত পদ্ধতি।
৩. কুলি, নাকে পানি নেয়া, নাকের পানি ঝাড়ার বিষয়টি এভাবে ক্রমান্বয়ে করা হবে।
৪. মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন পার্শ্ব দিক থেকে এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত এবং লম্বায় মাথার চুল গজানোর স্থান থেকে থুতনী পর্যন্ত পুরো জায়গায় সম্পন্ন হয়। আর তা তিনবার করা সুন্নাত। মনে রাখা দরকার নাক ও মুখ চেহারার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, আরবদের নিকট চেহারা হচ্ছে যা দেখা করার সময় সামনে প্রতিভাত হয়ে থাকে।
৫. দু'হাত কনুই সমেত তিনবার ধৌত করাই শরীআতসম্মত। আগে হাত ধৌত করলেও এখন আবারও পূর্ণ হাত কনুই সমেত তিনবার ধৌত করা বিধিসম্মত।
৬. পুরো মাথা একবার মাসাহ করতে হবে। দু'হাত দিয়ে মাথার সামনের দিক থেকে পিছনে নিবে, তারপর পিছন দিক থেকে সামনে আসবে।
৭. দু'পা টাখনু সমেত তিনবার ধৌত করবেন।
৮. এসব কাজের মধ্যে তারতীব বা ক্রমধারা অনুসরণ করতে হবে; কারণ আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৌত করার বিষয়াবলির মাঝখানে মাসাহ করার জিনিস উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা বুঝা যায় এ তারতীব রক্ষা করা জরুরী।
৯. হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতিটিই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযু করার পূর্ণ পদ্ধতি।
১০. অযুর পরে দু'রাক'আত সালাত আদায় করা বিধিসম্মত।
১১. আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া। তাছাড়া ইখলাসের সাথে তা পালন করা। যদি দুনিয়ার জিনিস তাতে ঘটে যায় তখন তা কবুল নাও হতে পারে। আর কারো সালাতের মধ্যে দুনিয়ার জিনিসের অনুপ্রবেশ ঘটলে সে যদি তা তাড়াতে সক্ষম হয় তবে সেটার জন্য তার সাওয়াব রয়েছে।
১২. পূর্ণ অযুর সাওয়াব অনেক। কারণ এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
১৩. হাদীসে উক্ত সাওয়াব পেতে হলে দু'টি জিনিস লাগবে- (ক) যেভাবে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু পূর্ণাঙ্গ অযু করে দেখিয়েছেন সে রকম অযু করা। (খ) তারপর দু' রাকআত সালাত পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করা। এ দু'টি মিলেই ক্ষমার ঘোষণা। তবে আলেমগণ বলেন, এ ক্ষমা কেবল ছোট ছোট গুনাহের জন্য। বড় বা কবীরা গুনাহের জন্য তাওবাহ লাগবে।
* এই হাদীস হতে আরো শিক্ষণীয় বিষয়:
১। এটি একটি মহা হাদীস, এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ওজু করার মৌলিক বিবরণ। তাই সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত, তারা যেন ওজু করার এই মৌলিক বিবরণটির জ্ঞান লাভ করে ও যত্ন করে। তবে জেনে রাখা দরকার যে, একবার মাত্র মাথা মাসাহ করার সাথে সাথে দুই কানেরও মাসাহ করতে হবে। কেননা কান দুইটি তো হলো মাথারই অংশ।
২। ওজু এবং নামাজ হলো মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তাই যে ব্যক্তি ওজু করবে, তার উচিত যে, সে যেন ওজু করার পর দুই রাকাআত নামাজ পড়ে।
৩। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন ওজু করার শেষে এই দোয়াটি পাঠ করে।
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।
যেহেতু আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে:
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
(অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।)
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।
[দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭ – (২২৪) ]।
باب صِفَةِ الْوُضُوءِ وَكَمَالِهِ
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى التُّجِيبِيُّ قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَزِيدَ اللَّيْثِيَّ، أَخْبَرَهُ أَنَّ حُمْرَانَ مَوْلَى عُثْمَانَ أَخْبَرَهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ - رضى الله عنه - دَعَا بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْمِرْفَقِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ غَسَلَ الْيُسْرَى مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ عُلَمَاؤُنَا يَقُولُونَ هَذَا الْوُضُوءُ أَسْبَغُ مَا يَتَوَضَّأُ بِهِ أَحَدٌ لِلصَّلاَةِ .
Chapter: The description of wudu’ and its perfection
Humran, the freed slave of 'Uthman, said: Uthman b. 'Affan called for ablution water and this is how he performed the ablution. He washed his hands thrice. He then rinsed his mouth and cleaned his nose with water (three times). He then washed his face three times, then washed his right arm up to the elbow three times, then washed his left arm like that, then wiped his head; then washed his right foot up to the ankle three times, then washed his left foot like that, and then said: I saw the Messenger of Allah (ﷺ) perform ablution like this ablution of mine. Then the Messenger of Allah (ﷺ) said: He who performs ablution like this ablution of mine and then stood up (for prayer) and offered two rak'ahs of prayer without allowing his thoughts to be distracted, all his previous sins are expiated. Ibn Shihab said: Our scholars remarked: This is the most complete of the ablutions performed for prayer.
পরিচ্ছেদঃ ৩. ওযু করার নিয়ম ও ওযুর পূর্ণতা।
৪২৭-(৪/...) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... উসমান এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উসমান ইবনু আফফানকে দেখেছেন তিনি ওযুর জন্যে এক পাত্র পানি আনিয়ে দু’হাতের উপর ঢেলে তিনবার ধুলেন। তারপর ডানহাত পানির পাত্রে প্রবেশ করিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন, এরপর তিনবার মুখমণ্ডল এবং তিনবার দু’হাতের কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর উভয় পা (গোড়ালি পর্যন্ত) তিনবার ধুয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করার পর এমনভাবে দুরাকাআত সালাত আদায় করবে যাতে তা অন্তরে কোন কল্পনার উদয় হয়নি; তবে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪৬)
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। এটি একটি মহা হাদীস, এর মধ্যে সন্নিবেশিত হয়েছে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ওজু করার মৌলিক বিবরণ। তাই সমস্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত, তারা যেন ওজু করার এই মৌলিক বিবরণটির জ্ঞান লাভ করে ও যত্ন করে। তবে জেনে রাখা দরকার যে, একবার মাত্র মাথা মাসাহ করার সাথে সাথে দুই কানেরও মাসাহ করতে হবে। কেননা কান দুইটি তো হলো মাথারই অংশ।
২। ওজু এবং নামাজ হলো মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তাই যে ব্যক্তি ওজু করবে, তার উচিত যে, সে যেন ওজু করার পর দুই রাকাআত নামাজ পড়ে।
৩। মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন ওজু করার শেষে এই দোয়াটি পাঠ করে।
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।
যেহেতু আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে:
"أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ".
(অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর অতি প্রিয় মানুষ ও দূত।)
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”।
[দেখতে পারা যায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭ – (২২৪) ]।
باب صِفَةِ الْوُضُوءِ وَكَمَالِهِ
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ حُمْرَانَ، مَوْلَى عُثْمَانَ أَنَّهُ رَأَى عُثْمَانَ دَعَا بِإِنَاءٍ فَأَفْرَغَ عَلَى كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ فَغَسَلَهُمَا ثُمَّ أَدْخَلَ يَمِينَهُ فِي الإِنَاءِ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " .
Chapter: The description of wudu’ and its perfection
Humran, the freed slave of 'Uthman said: I saw Uthman call for a vessel (of water) and poured water over his hands three times and then washed them. Then he put his right hand in the vessel and rinsed his mouth and cleaned his nose. Then he washed his face three times and his hands up to the elbow three times; then wiped his head, then washed his feet three times. Then he said that the Messenger of Allah (ﷺ) had said: He who performed ablution like this ablution of mine and offered two raklahs of prayer without allowing his thoughts to be distracted, all his previous sins would be expiated.