পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
অর্থাৎ, আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক। (সূরা হাশর ৭) তিনি আরো বলেন,
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থাৎ, সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজম ৩-৪)
তিনি আরো বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الآخِر
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহ্যাব ২১) তিনি আরো বলেন,
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً
অর্থাৎ, কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদণ্ডবিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বামত্মঃকরণে তা মেনে নেয়। (সূরা নিসা ৬৫) তিনি আরো বলেন,
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ قَالَ العلماء : معناه إِلَى الكتاب والسُنّة
অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯)
উলামাগণ বলেন, এর অর্থ হলঃ কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও। তিনি আরো বলেন,
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ الله
অর্থাৎ, যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসা ৮০)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ صِراطِ اللهِ
অর্থাৎ, আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথ প্রদর্শন কর---সেই আল্লাহর পথ। (সূরা আশ-শুরা ৫২)
তিনি আরো বলেন,
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থাৎ, সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্বাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। (সূরা নূর ৬৩) তিনি আরো বলেন,
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ
অর্থাৎ, আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা আহযাব ৩৪)
(১৪৮৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ, সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা হতে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ دَعُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ إِنَّمَا أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَثْرَةُ سُؤالِهِمْ واخْتِلافُهُمْ عَلَى أنْبيَائِهِمْ فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْء فَاجْتَنِبُوهُ وَإِذَا أمَرْتُكُمْ بأمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৮৬) আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ’’আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত ক’রে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।
আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)।
عَنْ أَبِي نَجيحٍ العِرباضِ بنِ سَارِيَةَ قَالَ : وَعَظَنَا رسولُ اللهِ ﷺ مَوعظةً بَليغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأوْصِنَا، قَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإنْ تَأمَّر عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافاً كَثيراً فَعَليْكُمْ بسُنَّتِي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِيِّنَ عَضُّوا عَلَيْهَا بالنَّواجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فإنَّ كلَّ بدعة ضلالة رواه أَبُو داود والترمذي وَقالَ حديث حَسَنٌ صَحِيْحٌ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৮৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ’হে আল্লাহর রসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাত যেতে অস্বীকার করবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ أبَى قيلَ : وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৮৮) আবূ মুসলিম মতান্তরে আবূ ইয়াস সালামাহ ইবনে আমর ইবনে আকওয়া’ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল। তিনি বললেন, তুমি তোমার ডান হাতে খাও। সে বলল, ’আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন, তুমি যেন না পারো। একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।
عَنْ أَبِي مُسلِمٍ وَقِيلَ : أَبي إيَاسٍ سَلَمَةَ بنِ عَمرِو بنِ الأكوَعِ أَنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ الله ﷺ بِشِمَالِهِ فَقَالَ كُلْ بِيَمِينكَ قَالَ : لاَ أسْتَطيعُ قَالَ لاَ استَطَعْتَ مَا مَنَعَهُ إلاَّ الكِبْرُ فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৮৯) নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের (নামাযের) কাতার অবশ্যই সোজা কর, নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারা পরিবর্তন ক’রে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।) (বুখারী ৭১৭, মুসলিম ১০০৬)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি তার দ্বারা তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা তাঁর নিকট থেকে এর গুরুত্ব বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন তিনি (নামায পড়ার জন্য) বের হয়ে তিনি (ইমামের জায়গায়) দাঁড়ালেন। এমনকি তিনি তকবীর বলে নামায শুরু করতে যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে দেখলেন যে, সে তার বুক কাতার থেকে বের করে রেখেছে। সুতরাং তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, নচেৎ তিনি তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।) (মুসলিম ১০০৭)
عَنْ أَبِي عَبدِ الله النُّعمَانِ بنِ بَشِير رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ يقول لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ متفقٌ عليه
وَفِيْ رِوَايَةٍ لمسلم : كَانَ رَسُول الله ﷺ يُسَوِّي صُفُوفَنَا حَتَّى كأنَّما يُسَوِّي بِهَا القِدَاحَ حَتَّى إِذَا رَأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمَّ خَرَجَ يَوماً فقامَ حَتَّى كَادَ أنْ يُكَبِّرَ فرأَى رَجلاً بَادياً صَدْرُهُ فَقَالَ عِبَادَ الله لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯০) আবূ মূসা (রাঃ) বলেন যে, মদীনায় রাতের বেলায় একটি ঘর তার বাসিন্দা সমেত পুড়ে গেল। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের সংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি বললেন, এই আগুন তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমোতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দাও।
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ : احْتَرقَ بَيْتٌ بالمَدِينَةِ عَلَى أهْلِهِ مِنَ اللَّيلِ فَلَمَّا حُدِّثَ رسولُ الله ﷺ بشَأنِهِمْ قَالَ إنَّ هذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ فَإِذَا نِمْتُمْ فَأطْفِئُوهَا عَنْكُمْ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯১) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা যমীনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সবজি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তাআলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।
عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إنَّ مَثَلَ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى والعِلْم كَمَثَلِ غَيثٍ أَصَابَ أرْضاً فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفةٌ طَيِّبَةٌ قَبِلَتِ المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ والعُشْبَ الكَثِيرَ وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أمسَكَتِ المَاء فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ فَشَربُوا مِنْهَا وَسَقُوا وَزَرَعُوا وَأَصَابَ طَائفةً مِنْهَا أخْرَى إنَّمَا هِيَ قيعَانٌ لا تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ في دِينِ اللهِ وَنَفَعَهُ بمَا بَعَثَنِي الله بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأساً وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯২) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।
عَن جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أوْقَدَ نَاراً فَجَعَلَ الجَنَادِبُ والفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا وَأَنَا آخذٌ بحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَأنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدَيَّ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৩) জাবের (রাঃ) বলেন, একদিন একদল ফিরিশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফিরিশতাগণ একে অপরকে বলতে লাগলেন, ’তোমাদের এই বন্ধুর একটি উপমা আছে, অতএব তোমরা সেটি বর্ণনা কর।’ তখন তাঁদের কেউ বললেন, ’তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন।’ তাঁদের কেউ বললেন, ’তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত।’ তখন তাঁরা বললেন, ’তাঁর উপমা হল; এক ব্যক্তি একটি গৃহ নির্মাণ করে খাবারের দস্তরখানা প্রস্তুত করে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনার জন্য একজন আহবায়ককে প্রেরণ করল। অতঃপর যে ঐ আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল।
আর যে আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল না, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল না।’ অতঃপর তাঁরা আপোসে বললেন, ’তোমরা এই উপমার তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন।’ এবারও তাঁদের কেউ বললেন, ’তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন।’ তাঁদের কেউ বললেন, ’তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত।’ তখন তাঁরা বললেন, ’ঐ গৃহ হল জান্নাত। ঐ আহবায়ক হলেন মুহাম্মাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করবে, সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের নাফরমানি করবে, সে আসলে আল্লাহরই নাফরমানি করবে। আর মুহাম্মদ হলেন মানুষের (মুমিন ও কাফেরের) মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী (মানদণ্ড)।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَال: جَاءَتْ مَلَائِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ وَهُوَ نَائِمٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلًا فَاضْرِبُوا لَهُ مَثَلًا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنْ الْمَأْدُبَةِ وَمَنْ لَمْ يُجِبْ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلْ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنْ الْمَأْدُبَةِ فَقَالُوا أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا فَالدَّارُ الْجَنَّةُ وَالدَّاعِي مُحَمَّدٌ ﷺ فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا ﷺ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا ﷺ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمُحَمَّدٌ ﷺ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৪) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার এবং যে জিনিস দিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এই যে, এক ব্যক্তি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে বলল, ’হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার এই দু’ চোখে একদল শত্রুসৈন্য দেখে আসছি এবং আমি হচ্ছি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং তোমরা (বাঁচার জন্য) তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর।’ এ কথা শুনে তার সম্প্রদায়ের কিছু লোক তার কথা মেনে নিয়ে রাতারাতি পলায়ন করল এবং এতে তারা ধীরে-সুস্থে যেতে পারল, আর (শত্রুর কবল থেকে) মুক্তিও পেল। পক্ষান্তরে অন্য একদল লোক তার সেই কথাকে মিথ্যা মনে করল। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে রাত্রিবাস করল। কিন্তু ভোর হতেই শত্রুসৈন্য তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিল। এই হল সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার আনুগত্য করে আমি যা আনয়ন করেছি তার অনুসরণ করে এবং সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার অবাধ্য হয় এবং আমার আনীত সত্য বিষয়কে মিথ্যায়ন করে।
عَنْ أَبِى مُوسَى عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ مَثَلِى وَمَثَلَ مَا بَعَثَنِىَ اللهُ بِهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمَهُ فَقَالَ يَا قَوْمِ إِنِّى رَأَيْتُ الْجَيْشَ بِعَيْنَىَّ وَإِنِّى أَنَا النَّذِيرُ الْعُرْيَانُ فَالنَّجَاءَ فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ فَأَدْلَجُوا فَانْطَلَقُوا عَلَى مُهْلَتِهِمْ وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ فَصَبَّحَهُمُ الْجَيْشُ فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِى وَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِى وَكَذَّبَ مَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الْحَقِّ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ’’হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ’যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ’হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’ কিন্তু আমাকে বলা হবে, ’এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’ (এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বানদা (ঈসা (আঃ)) বলেছিলেন, ’’যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেÿক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ’নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’ (বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম ৭৩৮০)
وعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُما قَالَ : قَامَ فِينَا رَسُول الله ﷺ بِمَوعِظَةٍ فَقَالَ يَا أيُّهَا النَّاسُ إنَّكُمْ مَحْشُورونَ إِلَى الله تَعَالَى حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْداً عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ -ألا وَإنَّ أَوَّلَ الخَلائِقِ يُكْسى يَومَ القِيَامَةِ إبراهيمُ ﷺ أَلاَ وَإِنَّهُ سَيُجَاءُ بِرجَالٍ مِنْ أُمَّتي فَيُؤخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشَّمالِ فَأَقُولُ : يَا رَبِّ أصْحَابِي فَيُقَالُ : إنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا أحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأقُولُ كَمَا قَالَ العَبدُ الصَّالِحُ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيداً مَا دُمْتُ فِيهِمْ إِلَى قولِهِ: العَزِيزُ الحَكِيمُ -فَيُقَالُ لِي : إنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৬) আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না এবং শত্রুকে ঘায়েলও করা যায় না। বরং তাতে চোখ নষ্ট হয় ও দাঁত ভাঙ্গে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ইবনে মুগাফ্ফাল (রাঃ) এর এক আত্মীয় দুই আঙ্গুল দিয়ে কাঁকর ছুঁড়ছিল। তা দেখে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঐভাবে) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না। কিন্তু সে আবার ঐ কাজ করতে লাগল। তখন তিনি বলে উঠলেন, ’আমি তোমাকে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন আবার তুমি ছুঁড়তে লাগলে? যাও! তোমার সাথে আর কথাই বলব না।’
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ قَالَ : نَهَى رَسُولُ الله ﷺ عَنِ الخَذْفِ، وَقَالَإنَّهُ لاَ يَقْتُلُ الصَّيْدَ وَلاَ يَنْكَأُ العَدُوَّ وإنَّهُ يَفْقَأُ العَيْنَ وَيَكْسِرُ السِّنَّ متفقٌ عليه
وَفِيْ رِوَايَةٍ : أنَّ قَريباً لابْنِ مُغَفَّل خَذَفَ فَنَهَاهُ وَقالَ : إنَّ رَسُول الله ﷺ نَهَى عَن الخَذْفِ وَقَالَ إنَّهَا لاَ تَصِيدُ صَيداً ثُمَّ عادَ فَقَالَ : أُحَدِّثُكَ أنَّ رسولَ الله ﷺ نَهَى عَنْهُ ثُمَّ عُدْتَ تَخذفُ؟ لا أُكَلِّمُكَ أَبَداً
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৭) আবেস ইবনে রাবীআহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) কে ’হাজরে আসওয়াদ’ চুমতে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, ’আমি সুনিশ্চিত জানি যে, তুমি একটা পাথর; তুমি না উপকার করতে পার, আর না অপকার? আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমাকে চুমতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমতাম না।
وعَن عَابِسِ بنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأيْتُ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ يُقَبِّلُ الحَجَرَ - يَعْنِي : الأسْوَدَ - وَيَقُولُ: إني أَعْلَمُ أنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَولا أنِّي رَأيْتُ رَسُولَ الله ﷺ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৮) আদী বিন হাতেম (রাঃ) বলেন, একদা আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তখন আমার গলায় স্বর্ণের ক্রুশ ছিল। তা দেখে তিনি বললেন, হে আদী! তোমার দেহ থেকে এই প্রতিমা খুলে ফেলো। আমি শুনলাম তিনি সূরা তওবার এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পণ্ডিত-পুরোহিতদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (তওবাঃ ৩১) (আমি বললাম, আল্লাহ তো ইবাদতের কথা বলেছেন। কিন্তু ওরা তো পাদরীদের ইবাদত করত না।) তিনি বললেন, ’’ওরা তাদের ইবাদত করত না। কিন্তু তারা যা হালাল বলত, ওরা তাই হালাল এবং যা হারাম বলত, তাই হারাম বলে মেনে নিত।’’ (আদী বললেন, জী হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাই হল তাদের ইবাদত করা।)
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي عُنُقِي صَلِيبٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ يَا عَدِيُّ اطْرَحْ عَنْكَ هَذَا الْوَثَنَ وَسَمِعْتُهُ يَقْرَأُ فِي سُورَةِ بَرَاءَةَ : (اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللهِ) قَالَ أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَعْبُدُونَهُمْ وَلَكِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا أَحَلُّوا لَهُمْ شَيْئًا اسْتَحَلُّوهُ وَإِذَا حَرَّمُوا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوهُ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৯) মিকদাম বিন মা’দিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ’তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ أَنَّهُ قَالَ أَلاَ إِنِّى أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلاَ يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ ألاَ وَإنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ الله فَهُوَ مِثلُ مَا حَرَّم الله
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০০) আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। ’হওয’ (কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَرَكْتُ فيكُمْ شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُما كِتابَ الله وسُنَّتي وَلَنْ يَتَفَرَّقا حَتَّى يَرِدا عَلَيَّ الحَوْضَ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, বিদায়ী হজ্জে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাঝে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ’’শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এই মাটিতে তার উপাসনা হবে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত তোমরা যে সমস্ত কর্মসমূহকে অবজ্ঞা কর, তাতে তার আনুগত্য করা হবে—এ নিয়ে সে সন্তুষ্ট। সুতরাং তোমরা সতর্ক থেকো! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ النَّاسَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَ: قَدْ يَئِسَ الشَّيْطَانُ بِأَنْ يُعْبَدَ بِأَرْضِكُمْ وَلَكِنَّهُ رَضِيَ أَنْ يُطَاعَ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِمَّا تُحَاقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، فَاحْذَرُوا يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০২) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এই কুরআন (কিয়ামতে) সুপারিশকারী; এর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে। যে ব্যক্তি এর অনুসরণ করবে সে তাকে জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাবে। আর যে তাকে বর্জন করবে অথবা তার থেকে বিমুখ হবে তাকে ঘাড়-ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ قَالَ إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ شَافِعٌ مُشَفِّعٌ مَنِ اتَّبِعَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَنْ تَرَكَهُ أَوْ أَعْرَضَ عَنْهُ أَوْ كَلِمَةً نَحْوُهَا زَجَّ فِيْ قَفَاهُ إِلَى النَّارِ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৩) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক কর্মের উদ্যম আছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় এবং যার নিরুদ্যমতা এ ছাড়া অন্য কিছুতে (সুন্নাত বর্জনে) অতিক্রম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لِكُلِّ عَمَلٍ شِرَّةٌ وَلِكُلِّ شِرَّةٍ فَتْرَةٌ فَمَنْ كَانَتْ فَتْرَتُهُ إِلَى سُنَّتِي فَقَدْ أَفْلَحَ وَمَنْ كَانَتْ إِلَى غَيْرِ ذَلِكَ فَقَدْ هَلَكَ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৪) আনাস (রাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ’আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন ক’রে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ’আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’
দ্বিতীয়জন বললেন, ’আমি সারা জীবন সিয়াম রাখব, কখনো সিয়াম ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ’আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ’’তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) সিয়াম রাখি এবং সিয়াম ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ ﷺ فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ ﷺ قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلَا أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلَا أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّي لَأَخْشَاكُمْ لِلهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي